1

1 ঈশ্বর পুত্র যীশু খ্রীষ্টের সুসমাচারের সুচনা:

2 ভাববাদী যিশাইয়র পুস্তকে য়েমন লেখা আছে, ‘শোন! আমি নিজের সহায়কে তোমার আগে পাঠাবো৷ সে তোমার জন্য পথ প্রস্তুত করবে৷’ মালাখি 3:1

3 ‘মরুপ্রান্তরে একজনের রব ঘোষণা করছে, ‘তোমরা প্রভুর জন্য পথ প্রস্তুত কর, তাঁর জন্য পথ সরল কর৷” যিশাইয় 40:3

4 তাই বাপ্তিস্মদাতা য়োহন এলেন, তিনি মরুপ্রান্তরে লোকদের বাপ্তাইজ করছিলেন৷ তিনি প্রচার করেছিলেন য়েন লোকেরা পাপের ক্ষমা পাবার জন্য মন-ফেরায় ও বাপ্তিস্ম নেয়৷

5 তাতে যিহূদিযা ও জেরুশালেমের সমস্ত মানুষ তাঁর কাছে য়েতে শুরু করল৷ তারা নিজের নিজের পাপ স্বীকার করে যর্দন নদীতে তাঁর কাছে বাপ্তাইজ হতে লাগল৷

6 য়োহন উটের লোমের তৈরী কাপড় পরতেন৷ তাঁর কোমরে চামড়ার কোমর বন্ধনী ছিল এবং তিনি পঙ্গপাল ও বনমধু খেতেন৷

7 তিনি প্রচার করতেন, ‘আমার পরে এমন একজন আসছেন, যিনি আমার থেকে শক্তিমান, আমি নীচু হয়ে তাঁর পায়ের জুতোর ফিতে খোলার য়োগ্য নই৷

8 আমি তোমাদের জলে বাপ্তাইজ করলাম কিন্তু তিনি তোমাদের পবিত্র আত্মায় বাপ্তাইজ করবেন৷’

9 সেই সময় যীশু গালীলের নাসরত্ থেকে এলেন আর য়োহন তাঁকে যর্দন নদীতে বাপ্তাইজ করলেন৷

10 জল থেকে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে তিনি দেখলেন, আকাশ দুভাগ হয়ে গেল এবং পবিত্র আত্মা কপোতের মতো তাঁর ওপর নেমে আসছেন৷

11 আর স্বর্গ থেকে এই রব শোনা গেল, ‘তুমিই আমার প্রিয় পুত্র৷ আমি তোমাতে খুবই সন্তুষ্ট৷’

12 এরপরই আত্মা যীশুকে প্রান্তরে নিয়ে গেলেন৷

13 সেখানে তিনি চল্লিশ দিন ছিলেন, সেই সময় শয়তান তাঁকে প্রলুধ্ধ করছিল৷ তিনি বন্য পশুদের সঙ্গে থাকতেন আর স্বর্গদূতরা এসে তাঁর সেবা করতেন৷

14 য়োহন কারাগারে বন্দী হবার পর যীশু গালীলে গেলেন; আর সেখানে তিনি ঈশ্বরের সুসমাচার প্রচার করলেন৷

15 যীশু বললেন, ‘সময় এসে গেছে; ঈশ্বরের রাজ্য খুব কাছে৷ তোমরা পাপের পথ থেকে মন ফেরাও এবং ঈশ্বরের সুসমাচারে বিশ্বাস কর৷’

16 গালীলহ্রদের পাশ দিয়ে য়েতে য়েতে যীশু শিমোন এবং তার ভাই আন্দরিয়কে ্ব্রদে জাল ফেলতে দেখলেন, কারণ তাঁরা মাছ ধরতেন৷

17 যীশু তাঁদের বললেন, ‘ওহে তোমরা আমার সঙ্গে এস, আমি তোমাদের মাছ নয়, ঈশ্বরের জন্য মানুষ ধরতে শেখাব৷’

18 আর তখনই শিমোন এবং আন্দরিয় তাঁদের জাল ফেলে রেখে যীশুকে অনুসরণ করলেন৷

19 এরপর তিনি কিছুটা দূর গালীলহ্রদের পাশ দিয়ে এগিয়ে গেলে সিবদিয়ের ছেলে যাকোব ও তার ভাই য়োহনকে দেখতে পেলেন৷ তাঁরা তাঁদের নৌকায় বসে জাল ঠিক করছিলেন৷

20 যীশু তাদের ডাকলেন, তারাও সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের বাবা সিবদিয়কে ভাড়াটে মজুরদের সঙ্গে নৌকায় রেখে যীশুর সঙ্গে চললেন৷

21 এরপর তাঁরা কফরনাহূম শহরে গেলেন৷ পরদিন শনিবার সকালে, অর্থাত্ বিশ্রামবারে তিনি সমাজ-গৃহে গিয়ে লোকদের শিক্ষা দিতে শুরু করলেন৷

22 যীশুর শিক্ষা শুনে সবাই আশ্চর্য হলেন, কারণ তিনি ব্যবস্থার শিক্ষকের মতো নয় কিন্তু সম্পূর্ণ কর্ত্তৃত্ব সম্পন্ন ব্যক্তির মতোই শিক্ষা দিতেন৷

23 সেই সমাজ-গৃহে হঠাত্ অশুচি আত্মায় পাওযা এক ব্যক্তি চেঁচিয়ে বলল,

24 ‘হে নাসরতীয় যীশু! আপনি আমাদের কাছে কি চান? আপনি কি আমাদের ধ্বংস করতে এসেছেন? আমি জানি আপনি কে, আপনি ঈশ্বরের সেই পবিত্র ব্যক্তি!’

25 কিন্তু যীশু তাকে ধমক দিয়ে বললেন, ‘চুপ কর! এই লোকটার ভেতর থেকে বেরিয়ে এসো!’

26 সঙ্গে সঙ্গে সেই অশুচি আত্মা ঐ লোকটাকে দুমড়ে মুচড়ে প্রচণ্ড জোরে চিত্‌কার করে লোকটির মধ্যে থেকে বেরিয়ে এল৷

27 এতে প্রত্যেকে অবাক হয়ে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগল, ‘এ কি ব্যাপার? এটা কি একটা নতুন শিক্ষা? সম্পূর্ণ কর্ত্তৃত্বের সঙ্গে তিনি শিক্ষা দেন, এমনকি অশুচি আত্মাদের আদেশ করেন এবং তারা তাঁর আদেশ মানে৷’

28 আর গালীলের সমস্ত অঞ্চলে তাঁর কথা ছড়িয়ে পড়ল৷

29 তখন যীশু ও তাঁর শিষ্যরা সমাজ-গৃহ ছেড়ে যাকোব এবং য়োহনকে সঙ্গে নিয়ে সোজা শিমোন এবং আন্দরিয়ের বাড়িতে গেলেন৷৷

30 সেখানে শিমোনের শাশুড়ী জ্বরে শয়্য়াশাযী ছিলেন৷ তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে শিমোনের শাশুড়ীর জ্বরের কথা যীশুকে বললেন৷

31 যীশু তাঁর কাছে গেলেন এবং তাঁর হাত ধরে উঠিয়ে বসালেন, সঙ্গে সঙ্গে তাঁর জ্বর ছেড়ে গেল এবং তিনি তাঁদের সেবা করতে লাগলেন৷

32 সূর্য় অস্ত যাওযার পর সন্ধ্য়ে হলে, লোকেরা অনেক অসুস্থ ও ভূতে পাওযা লোককে যীশুর কাছে নিয়ে এল৷

33 আর শহরের সমস্ত লোক সেই বাড়ির দরজায় জমা হল৷

34 তিনি বহু অসুস্থ রোগীকে নানা প্রকার রোগ থেকে সুস্থ করলেন এবং লোকদের মধ্যে থেকে বহু ভূত তাড়ালেন৷ কিন্তু তিনি ভুতদের কোন কথা বলতে দিলেন না, কারণ তারা তাঁকে চিনত৷

35 পরের দিন ভোর হবার আগে, রাত থাকতে থাকতে তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লেন আর নির্জন স্থানে গিয়ে প্রার্থনায় কাটালেন৷

36 শিমোন ও তাঁর সঙ্গী যাঁরা যীশুর সঙ্গে ছিলেন, তাঁকে খুঁজতে বেরিয়ে পড়লেন৷

37 পরে যীশুকে দেখতে পেয়ে বললেন, ‘সবাই আপনার খোঁজ করছে৷’

38 কিন্তু তিনি তাদের বললেন, ‘চল, আমরা অন্য শহরে যাই৷ য়েন সেখানেও আমি প্রচার করতে পারি, কারণ সেই জন্যই আমি এসেছি৷’

39 তাই তিনি সমস্ত গালীল প্রদেশে বিভিন্ন সমাজ-গৃহে গিয়ে প্রচার করতে ও ভূত ছাড়াতে লাগলেন৷

40 একদিন এক কুষ্ঠরোগী তাঁর কাছে এসে হাঁটু গেড়ে বিনীতভাবে তাঁর সাহায্য চাইল৷ সে যীশুকে বলল, ‘আপনি ইচ্ছে করলে আমাকে ভাল করে দিতে পারেন৷’

41 যীশু তার প্রতি মমতায় পূর্ণ হয়ে হাত বাড়িয়ে তাকে স্পর্শ করে বললেন, ‘আমি তা-ই চাই, তুমি ভাল হয়ে যাও৷’

42 আর সঙ্গে সঙ্গে তার কুষ্ঠ রোগ তাকে ছেড়ে গেল এবং সে সুস্থ হল৷

43 যীশু তাকে তখনই বিদায় দিলেন৷

44 তিনি তাকে দৃঢ়ভাবে বললেন, ‘দেখ, একথা কাউকে বলো না, কিন্তু যাজকের কাছে নিজেকে দেখাও এবং কুষ্ঠরোগ থেকে সুস্থ হওযার জন্য মোশির বিধান৷ অনুযাযী ঈশ্বরকে উপহার দাও, এতে সকলে জানতে পারবে য়ে তুমি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়েছ৷’

45 কিন্তু সে বাইরে গিয়ে তার সুস্থ হওযার কথা এত বেশী প্রচার করতে ও চারদিকে বলতে লাগল য়ে যীশু আর প্রকাশ্যে কোন শহরে প্রবেশ করতে পারলেন না৷ কাজেই তিনি শহরের বাইরে নির্জনে থেকে গেলেন আর লোকরা চারদিক থেকে তাঁর কাছে আসতে লাগল৷

2

1 কয়েকদিন পরে তিনি কফরনাহূমে ফিরে এলে এই খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল য়ে তিনি বাড়ি ফিরে এসেছেন৷

2 এর ফলে এত লোক জড় হল য়ে সেখানে তিল ধারণেরও জায়গা রইল না, এমনকি দরজার বাইরেও এতটুকু জায়গা রইল না৷ তিনি তাদের কাছে ঈশ্বরের বাক্য প্রচার করতে লাগলেন৷

3 সেই সময় চারজন লোক খাটে করে এক পঙ্গুকে তাঁর কাছে নিয়ে এল৷

4 তারা সেই পঙ্গু লোকটিকে যীশুর কাছে নিয়ে য়েতে পারল না, তাই যীশু য়েখানে ছিলেন সেখানকার ছাদের কিছু টালি খুলে ফাঁকা করে, ঠিক তাঁর সামনে খাটিযা সমেত সেই পঙ্গু লোকটিকে নামিয়ে দিল৷

5 তাদের বিশ্বাস দেখে যীশু সেই পঙ্গু লোকটিকে বললেন, ‘বাছা, তোমার সব পাপের ক্ষমা হল৷’

6 সেখানে কিছু ব্যবস্থার শিক্ষক বসে ছিলেন, তাঁরা মনে মনে ভাবতে লাগলেন,

7 ‘এ লোকটি এমন কথা বলছে কেন? এ য়ে ঈশ্বর নিন্দা করছে; ঈশ্বর ছাড়া আর কে পাপ ক্ষমা করতে পারেন?’

8 যীশু নিজের আত্মায় ব্যবস্থার শিক্ষকদের মনের কথা জানতে পেরে তখনই তাদের বললেন, ‘তোমরা এসব কথা ভাবছ কেন?

9 কোনটা বলা সহজ, ‘তোমার পাপ ক্ষমা করা হল’ অথবা ওঠ, তোমার খাটিযা নিয়ে চলে যাও?’

10 কিন্তু পৃথিবীতে পাপ ক্ষমা করার ক্ষমতা য়ে মানবপুত্রের আছে এটা আমি তোমাদের প্রমাণ করে দেব৷’ তাই তিনি সেই পঙ্গু লোকটিকে বললেন,

11 ‘আমি তোমায় বলছি ওঠ! তোমার খাটিযাটি তুলে নিয়ে তোমার ঘরে চলে যাও৷’

12 সে উঠে দাঁড়াল এবং সঙ্গে সঙ্গে তার খাটিযাটি তুলে নিয়ে সকলের সামনে দিয়ে হেঁটে বেরিয়ে গেল৷ এতে সকলে আশ্চর্য হয়ে ঈশ্বরের প্রশংসা করে বলল, ‘এর আগে আমরা এমন কখনও দেখিনি৷’

13 এরপর তিনি আবারহ্রদের ধারে ফিরে গেলে, সমস্ত লোক তাঁর কাছে এল, আর তিনি তাদের শিক্ষা দিতে লাগলেন৷

14 পরে তিনি পথে য়েতে য়েতে দেখলেন, এক কর আদায়কারী, আলফেয়ের ছেলে লেবি কর আদায়ের ঘরে বসে আছেন৷ তিনি তাকে বললেন, ‘এস, আমার সাথে চল৷’ তা শুনে লেবি উঠে পড়লেন এবং যীশুর সঙ্গে গেলেন৷

15 পরে তিনি লেবির বাড়িতে এসে খেতে বসলেন, আর অনেক কর আদায়কারী এবং মন্দ লোক যীশুর ও তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে খেতে বসল, কারণ তাদের মধ্যে অনেকেই তাঁর অনুগামী ছিল৷

16 কিন্তু ফরীশী দলের ব্যবস্থার শিক্ষকরা যীশুকে কর আদায়কারী ও মন্দ লোকদের সঙ্গে খেতে দেখে তাঁর শিষ্যদের বললেন, ‘যীশু কর আদায়কারী ও মন্দ লোকদের সঙ্গে খেতে বসেন কেন?’

17 এই কথা শুনে যীশু তাদের বললেন, ‘সুস্থ লোকের চিকিত্‌সকের প্রযোজন নেই, কিন্তু রোগীদের জন্যই চিকিত্‌সকের প্রযোজন৷ আমি ধার্মিকদের নয়, কিন্তু পাপীদের ডাকতে এসেছি৷’

18 সেই সময় য়োহনের শিষ্যরা এবং ফরীশীরা উপোস করছিলেন৷ তাই কিছু লোক যীশুর কাছে এসে তাঁকে বলল, ‘য়োহনের এবং ফরীশীদের শিষ্যরা উপোস করে; কিন্তু আপনার শিষ্যরা উপোস করে না কেন?’

19 যীশু তাদের বললেন, ‘বর সঙ্গে থাকতে কি বিয়ে বাড়ির অতিথিরা উপোস করতে পারে? য়েহেতু বর তাদের সঙ্গে আছে তাই তারা উপোস করে না৷

20 কিন্তু এমন সময় আসবে যখন বরকে তাদের কাছ থেকে নিয়ে যাওযা হবে; আর সেই দিন তারা উপোস করবে৷

21 ‘পুরানো কাপড়ে কেউ নতুন কাপড়ের টুকরো দিয়ে তালি দেয় না; তালি দিলে সেই নতুন কাপড়টি পুরানো কাপড় থেকে ছিঁড়ে বেরিয়ে আসে আর ছেঁড়া জায়গাটি আরো বড় হয়ে যায়৷

22 পুরানো চামড়ার থলিতে কেউ নতুন দ্রাক্ষারস ঢালে না, ঢাললে থলি ফেটে যায়, তাতে দ্রাক্ষারস এবং চামড়ার থলি দুটোই নষ্ট হয়ে যায়৷ নতুন দ্রাক্ষারসের জন্য নতুন থলিরই প্রযোজন৷’

23 কোন এক বিশ্রামবারে যীশু শস্য ক্ষেত্রের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন; আর তাঁর শিষ্যেরা য়েতে য়েতে শষ্য়ের শীষ ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছিলেন৷

24 এতে ফরীশীরা তাঁকে বলল, ‘দেখ, বিশ্রামবারে তোমার শিষ্যেরা এমন কাজ কেন করছে, যা করা উচিত নয়?’

25 তিনি তাদের বললেন, ‘দাযূদ ও তাঁর সঙ্গীরা খাবারের অভাবে ক্ষুধার্ত হয়ে কি করেছিলেন তোমরা কি পড় নি?

26 অবিযাথর যখন প্রধান যাজক ছিলেন সেই সময় দাযূদ কেমন করে ঈশ্বরের গৃহে গিয়ে য়ে রুটি যাজক ছাড়া অন্য আর কারো খাওযা বিধি-সম্মত ছিল না, তা নিজে খেয়েছিলেন ও তাঁর সঙ্গীদের খাইয়েছিলেন?’

27 যীশু তাদের আরো বললেন, ‘মানুষের জন্যই বিশ্রামবারের সৃষ্টি হয়েছে, কিন্তু বিশ্রামবারের জন্য মানুষ সৃষ্ট হয়. নি৷

28 তাই মানবপুত্র বিশ্রামবারেরও প্রভু৷’

3

1 আবার তিনি সমাজ-গৃহে গেলেন৷ সেখানে একটা লোক ছিল, যার একটা হাত পঙ্গু হয়ে গিয়েছিল৷

2 তিনি লোকটিকে সুস্থ করেন কি না, তা দেখার জন্য কিছু লোক তাঁর দিকে নজর রাখল, যাতে তাঁর দোষ ধরতে পারে৷

3 যীশু সেই লোকটিকে, যার হাত পঙ্গু হয়ে গেছে তাকে বললেন, ‘সকলের সামনে এসে দাঁড়াও৷’

4 পরে তিনি তাদের বললেন, ‘বিশ্রামবারে লোকের উপকার, না ক্ষতি করা, কোনটি বিধিসম্মত? জীবন রক্ষা করা না জীবন নষ্ট করা, কোনটি বিধিসম্মত? কিন্তু তারা চুপ করে থাকল৷

5 তখন তিনি ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাদের চারিদিকে তাকালেন এবং তাদের কঠোর মনের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে সেই লোকটিকে বললেন, ‘তোমার হাত বাড়াও৷’ সে তার হাত বাড়িয়ে দিলে তার হাত ভাল হয়ে গেল৷

6 ফরীশীরা বেরিয়ে গিয়ে সঙ্গে সঙ্গে হেরোদীয়দের সাথে যীশুর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে লাগল, য়ে কেমন করে তাঁকে হত্যা করতে পারে৷

7 যীশু তাঁর শিষ্যদের নিয়ে গালীলহ্রদের দিকে গেলেন৷ গালীল, যিহূদিযা, জেরুশালেম, ইদোম এমন কি যর্দন নদীর অপর পারে সোর ও সীদোন থেকে বহুলোক তাঁদের পিছনে পিছনে এল৷

8 তিনি য়ে সমস্ত অলৌকিক কাজ করেছিলেন তা শুনে এই বিশাল জনতা তাঁর কাছে এসেছিল৷

9 যাতে ভীড়ের চাপ তাঁর ওপরে না পড়ে, তাই তিনি শিষ্যদের তাঁর জন্য একটা ছোট নৌকা প্রস্তুত রাখতে বললেন৷

10 তিনি বহুলোককে সুস্থ করেছিলেন, তাই সমস্ত রোগী তাঁকে স্পর্শ করার জন্য ঠেলাঠেলি করছিল৷

11 অশুচি আত্মায় পাওযা রোগীরা তাঁকে দেখতে পেলেই তাঁর পায়ের সামনে পড়ে চেঁচিয়ে বলত, ‘আপনি ঈশ্বরের পুত্র৷’

12 কিন্তু তিনি তাদের কঠোরভাবে তিরস্কার করতেন যাতে তারা তাঁর পরিচয় না দেয়৷

13 তারপর তিনি পাহাড়ের ওপরে উঠে নিজের ইচ্ছামতো কিছু লোককে কাছে ডাকলে তাঁরা তাঁর কাছে এলেন৷

14 আর তিনি বারোজনকে প্রেরিত পদে নিযোগ করলেন য়েন তাঁরা তাঁর সাথে সাথে থাকে এবং বাক্য প্রচারের জন্য য়েন তিনি তাঁদের পাঠাতে পারেন৷

15 তাঁদের তিনি ভূত ছাড়াবার ক্ষমতাও দিলেন৷

16 তিনি য়ে বারোজনকে মনোনীত করেন তাঁদের নাম শিমোন যাকে তিনি নাম দিলেন পিতর;

17 যাকোব যিনি সিবদিয়ের ছেলে এবং যাকোবের ভাই য়োহন; যাদের তিনি নাম দিয়েছিলেন, বোনেরগশ যার অর্থ ‘মেঘধ্বনির পুত্র৷’

18 আন্দরিয়, ফিলিপ, বর্থলময়, মথি, থোমা, আলফেয়ের ছেলে যাকোব, থদ্দেয়, দেশ-ভক্ত, দলের শিমোন

19 এবং যিহূদা ঈষ্করিযোতীয় য়ে যীশুকে শত্রুর হাতে ধরিয়ে দিয়েছিল৷

20 তিনি ঘরে ফিরে এলে সেখানে আবার এত লোকের ভীড় হল, য়ে তাঁরা খেতেও সময় পেলেন না৷

21 যীশুর বাড়ির লোকরা এইসব বিষয় জানতে পেরে তাঁকে বাড়ি নিয়ে যাবার জন্য এলেন, কারণ লোকরা বলছিল য়ে তিনি পাগল হয়ে গেছেন৷

22 জেরুশালেম থেকে য়ে ব্যবস্থার শিক্ষকরা এসেছিলেন তাঁরা বললেন, ‘যীশুকে বেলসবুবে পেয়েছে, ভুতদের রাজার সাহায্যে যীশু ভূত ছাড়ায়৷’

23 তখন তিনি তাদের কাছে ডেকে দৃষ্টান্ত দিয়ে বলতে শুরু করলেন, ‘কেমন করে শয়তান নিজে শয়তানকে ছাড়াতে পারে?

24 কোন রাজ্য যদি নিজের বিপক্ষে নিজে ভাগ হয়ে যায়, তবে সেই রাজ্য টিকতে পারে না৷

25 আবার কোন পরিবারে যদি পারিবারিক কলহ শুরু হয়, তবে সেই পরিবার এক থাকতে পারে না৷

26 আবার শয়তান যদি নিজের বিরুদ্ধেই নিজে দাঁড়ায় তবে সেও টিকতে পারে না, তার শেষ হবেই৷

27 কেউই একজন শক্তিশালী মানুষের বাড়িতে ঢুকে তার দ্রব্য লুঠ করতে পারে না, যদি না সে সেই শক্তিশালী লোকটিকে আগে বাঁধে৷ আর বাঁধার পরই সে তার ঘর লুঠ করতে পারে৷

28 আমি তোমাদের সত্যি বলছি, মানুষ য়ে সমস্ত পাপ এবং ঈশ্বরের নিন্দা করে সেই সমস্ত পাপের ক্ষমা হতে পারে;

29 কিন্তু যদি কেউ পবিত্র আত্মার নিন্দা করে তবে তার ক্ষমা নেই, তার পাপ চিরস্থাযী৷’

30 তিনি এইসব কথা ব্যবস্থার শিক্ষকদের বললেন, কারণ তারা বলেছিল, তাঁকে অশুচি আত্মায় পেয়েছে৷

31 সেই সময় তাঁর মা ও ভাইরা তাঁর কাছে এলেন এবং বাইরে দাঁড়িয়ে তাঁরা যীশুকে লোক মারফত্ ডেকে পাঠালেন৷

32 তখন তাঁর চারদিকে ভীড় করে য়ে লোকরা বসেছিল, তারা তাঁকে বলল, ‘দেখুন, আপনার মা, ভাই ও বোনেরা আপনার জন্য বাইরে অপেক্ষা করছেন৷’

33 তার উত্তরে তিনি তাদের বললেন, ‘কে আমার মা? আমার ভাইরা বা কারা?’

34 যাঁরা তাঁকে ঘিরে বসেছিল তাদের দিকে তাকিয়ে তিনি বললেন, ‘এরাই আমার মা ও ভাই৷

35 য়ে কেউ ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে, সেই আমার মা, ভাই ও বোন৷’

4

1 পরে আবার তিনিহ্রদের ধারে লোকদের কাছে শিক্ষা দিতে লাগলেন৷ তাতে এত লোক তাঁর কাছে জড়ো হল য়ে, তিনি একটা নৌকায় উঠে বসলেন আরহ্রদের পাড়ে সমস্ত লোকরা এসে ভীড় করল৷

2 তখন দৃষ্টান্তের মাধ্যমে তিনি তাদের উদ্দেশ্যে শিক্ষা দিতে লাগলেন, বললেন,

3 ‘শোন! এক চাষী বীজ বুনতে গেল৷

4 বোনার সময় কতকগুলো বীজ পথের পাশে পড়ল, তাতে পাখিরা এসে তা খেয়ে ফেলল৷

5 আবার কতকগুলো বীজ পাথুরে জমিতে পড়ল, সেখানে বেশী মাটি ছিল না৷ বেশী মাটি না থাকাতে খুব তাড়াতাড়ি বীজ থেকে অঙ্কুর বের হল:

6 কিন্তু সূর্য় ওঠার সাথে সাথে অঙ্কুরগুলো শুকিয়ে গেল, কারণ এর শেকড় গভীরে ছিল না৷

7 কতকগুলো বীজ কাঁটাঝোপের মধ্যে গিয়ে পড়ল, কাঁটাবন বেড়ে গিয়ে চারাগাছগুলোকে বাড়তে দিল না, ফলে সে গাছে কোন ফল হল না৷

8 কতকগুলো বীজ ভাল জমিতে পড়ল এবং তার থেকে অঙ্কুর বের হল, আর তা বেড়ে ফল দিল৷ যা বোনা হয়েছিল তার ত্রিশ গুণ, ষাট গুণ ও একশো গুণ ফল দিল৷’

9 তিনি তাদের বললেন, ‘যার শোনার মত কান আছে সে শুনুক৷’

10 পরে যখন তিনি একা ছিলেন, তাঁর শিষ্যেরা সেই বারোজন প্রেরিতের সাথে তাঁকে তাঁর দৃষ্টান্তের অর্থ জিজ্ঞাসা করলেন৷

11 তখন তিনি তাঁদের বললেন, ‘ঈশ্বরের রাজ্যের নিগূঢ়তত্ত্ব তোমাদের বলা হয়েছে; কিন্তু যাঁরা ঈশ্বরের রাজ্যের বাইরের লোক তাদের কাছে সব কিছুই দৃষ্টান্তের মাধ্যমে বলা হচ্ছে৷

12 যাতে, ‘তারা দেখবে কিন্তু উপলধ্ধি করতে পারবে না৷ তারা শুনবে অথচ বুঝবে না, পাছে তারা ফিরে আসে ও তাদের ক্ষমা করা যায়৷” যিশাইয় 6:9-10

13 তিনি তাদের বললেন, ‘তোমরা কি এই দৃষ্টান্তের অর্থ বুঝতে পার না? তবে কেমন করে অন্য সব দৃষ্টান্ত বুঝবে?

14 সেই চাষী হল সেই লোক, য়ে ঈশ্বরের শিক্ষা মানুষেব কাছে নিয়ে যায়৷

15 কিছু লোক সেই পথের পাশে পড়া বীজের মতো, যাদের মধ্যে ঈশ্বরের শিক্ষা বোনা যায়, আর তারা শোনার সঙ্গে সঙ্গে শয়তান এসে তাদের মন থেকে য়ে শিক্ষা বোনা হয়েছিল তা নিয়ে যায়৷

16 কিছু লোক সেই পাথুরে জমিতে পড়া বীজের মতো, যাঁরা শিক্ষা শোনার সাথে সাথে তা আনন্দে গ্রহণ করে৷

17 কিন্তু তাদের হৃদয়ের গভীরে মূল যায় না, তারা অল্প সময় স্থির থাকে৷ সেই শিক্ষা গ্রহণের জন্য য়েই তাদের ওপর কষ্ট অথবা তাড়না আসে, অমনি তারা সেই পথ ছেড়ে দেয়৷

18 কিছু লোক সেই কাঁটাঝোপে বোনা বীজের মতো যাঁরা শিক্ষা শোনে,

19 কিন্তু সংসারের চিন্তা, অর্থের মাযা ও অন্যান্য বিষয়ের অভিলাষ মনের ভেতর গিয়ে ঐ বাক্য চেপে রাখে, আর তাই তাতে কোন ফল হয় না৷

20 আর কিছু লোক সেই উর্বর জমিতে পড়া বীজের মত, যাঁরা সেই বাক্য সকল শুনে গ্রহণ করে এবং ত্রিশ গুণ, কেউ ষাট গুণ ও কেউ শত গুণ ফল উত্‌পন্ন করে৷’

21 তিনি তাদের আরো বললেন, ‘প্রদীপ জে্বলে কি কেউ ধামা চাপা দিয়ে বা খাটের নীচে রাখে? বাতিদানের ওপরে রাখবার জন্য কি তা জ্বালে না?

22 কারণ এমন গোপন কিছুই নেই যা প্রকাশ করা যাবে না, এমন লুকানো কিছু নেই যা প্রকাশ হবে না৷

23 যদি তোমাদদের কান থাকে তবে শোন!

24 ‘তারপর তিনি তাদের বললেন, তোমরা যা শুনছ সেই বিষয়ে মনোয়োগ দাও৷ য়ে দাঁড়ি-পাল্লায় তুমি মাপবে সেই দাঁড়িপাল্লায় তোমাদের জন্যও মেপে দেওযা হবে, এমনকি আরো বেশী দেওযা হবে৷

25 কারণ যার আছে তাকে আরো দেওযা হবে; আর যার নেই তার যা আছে তাও তার কাছ থেকে কেড়ে নেওযা হবে৷’

26 তিনি আরো বললেন, ‘ঈশ্বরের রাজ্য এইবকম, একজন লোক জমিতে বীজ ছড়াল৷

27 পরে সে দিন রাত ঘুমিয়ে জেগে উঠল; ইতিমধ্যে ঐ বীজ থেকে অঙ্কুর হল ও বাড়তে লাগল; কেমন করে বাড়ছে সে তা জানল না৷

28 জমিতে নিজে থেকে চারা গাছ বড় হতে লাগল৷ প্রথমে অঙ্কুর, তারপর শীষ এবং শীষের মধ্যে সম্পূর্ণ শস্য দানা হল৷

29 সেই ফসল পাকলে পরে সে সাথে সাথে কাস্তে লাগাল কারণ ফসল কাটার সময় হয়েছে৷’

30 যীশু বললেন, ‘আমরা কিসের সাথে ঈশ্বরের রাজ্যের তুলনা করব? কোন্ দৃষ্টান্তের সাহায্যেই বা তা বোঝাব?

31 এটা হল সরষে দানার মতো, সেই বীজ মাটিতে বোনার সময় মাটির সমস্ত বীজের মধ্যে সবচেয়ে ছোট;

32 কিন্তু রোপণ করা হলে তা বাড়তে বাড়তে সমস্ত চারাগাছের থেকে বড় হয়ে ওঠে এবং তাতে লম্বা লম্বা ডালপালা গজায় যাতে পাখিরা তার ছাযার নীচে বাসা বাঁধতে পারে৷’

33 এইরকম আরও অনেক দৃষ্টান্তের সাহায্যে তিনি তাদের কাছে শিক্ষা দিতেন; তিনি তাদের বোঝবার ক্ষমতা অনুসারে শিক্ষা দিতেন,

34 দৃষ্টান্ত ছাড়া তাদের কিছুই বলতেন না; কিন্তু শিষ্যদের সঙ্গে একা থাকার সময়, তিনি তাদের সমস্ত কিছু বুঝিয়ে বলতেন৷

35 ঐদিন সন্ধ্য়ে হলে তিনি শিষ্যদের বললেন, ‘চল, আমরাহ্রদের ওপারে যাই৷’

36 তখন তাঁরা লোকদের বিদায় দিয়ে, তিনি নৌকায় য়ে অবস্থায় বসেছিলেন, তেমনিভাবেই তাঁকে সঙ্গে নিয়ে গেলেন, সেখানে আরও নৌকা তাদের সঙ্গে ছিল৷

37 দেখতে দেখতে প্রচণ্ড ঝড় উঠল এবং ঢেউগুলো নৌকায় এমন আছড়ে পড়তে লাগল য়ে নৌকা জলে ভরে উঠতে লাগল৷

38 সেইসময় যীশু নৌকার পিছন দিকে বালিশে মাথা দিয়ে ঘুমোচ্ছিলেন৷ তাঁরা তাঁকে জাগিয়ে বললেন, ‘গুরু, আপনার কি চিন্তা হচ্ছে না য়ে আমরা সকলে ডুবতে বসেছি?’

39 তখন তিনি জেগে উঠে ঝড়কে ধমক দিলেন ও সমুদ্রকে বললেন, ‘থাম!শান্ত হও!’ সঙ্গে সঙ্গে ঝড় থেমে গেল, আর সবকিছু শান্ত হল৷

40 তখন তিনি তাদের বললেন, ‘তোমরা এত ভীতু কেন? তোমাদের কি এখনও বিশ্বাস হয় নি?’

41 কিন্তু শিষ্যরা আরও ভয় পেয়ে পরস্পরের মধ্যে বলাবলি করতে লাগলেন, ‘ইনি তবে কে? এমন কি ঝড় এবং সমুদ্রও এঁর কথা শোনে৷’

5

1 এরপর যীশু এবং তাঁর শিষ্যরাহ্রদের ওপারেগেরাসেনীদের দেশে এলেন৷

2 তিনি নৌকা থেকে নামার সাথে সাথে একটি লোক কবরস্থান থেকে তাঁর সামনে এল, তাকে অশুচি আত্মায় পেয়েছিল৷

3 সে কবরস্থানে বাস করত, কেউ তাকে শেকল দিয়েও বেঁধে রাখতে পারত না৷

4 লোকে বারবার তাকে বেড়ী ও শেকল দিয়ে বাঁধত; কিন্তু সে শেকল ছিঁড়ে ফেলত এবং বেড়ী ভেঙ্গে টুকরো করত, কেউ তাকে বশ করতে পারত না৷

5 সে রাত দিন সব সময় কবরখানা ও পাহাড়ি জায়গায় থাকত এবং চিত্‌কার করে লোকদের ভয় দেখাত এবং ধারালো পাথর দিয়ে নিজেকে ক্ষত-বিক্ষত করত৷

6 সে দূর থেকে যীশুকে দেখে ছুটে এসে প্রণাম করল৷

7

8

9 তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার নাম কি?’ সে তাঁকে বলল, ‘আমার নাম বাহিনী, কারণ আমরা অনেকগুলো আছি৷’

10 তখন সে যীশুর কাছে মিনতি করতে লাগল, য়েন তিনি তাদের সেই অঞ্চল থেকে তাড়িয়ে না দেন৷

11 সেখানে পর্বতের পাশে একদল শুযোর চরছিল,

12 আর তারা (অশুচি আত্মারা) যীশুকে অনুনয় করে বলল, ‘আমাদের এই শুযোরের পালের মধ্যে ঢুকতে হুকুম দিন৷’

13 তিনি তাদের অনুমতি দিলে সেই অশুচি আত্মারা বের হয়ে শুযোরদের মধ্যে ঢুকে পড়ল৷ তাতে সেই শুযোরের পাল, কমবেশী দুহাজার শুযোর দৌড়ে ঢালু পাড় দিয়ে ্ব্রদে গিয়ে পড়ল এবং ডুবে মরল৷

14 তখন যাঁরা শুযোরগুলোকে চরাচ্ছিল তারা পালিয়ে গেল এবং শহরে ও খামার বাড়িগুলিতে গিয়ে খবর দিল৷ তখন কি হয়েছে তা দেখার জন্য লোকরা এল৷

15 তারা যীশুর কাছে এসে দেখল, সেই অশুচি আত্মায় পাওযা লোকটি, যাকে ভূতে পেয়েছিল, সে কাপড় পরে সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় বসে আছে৷ তাতে তারা ভয় পেল,

16 আর যাঁরা ঐ অশুচি আত্মায় পাওযা লোকটির ও শুযোরের পালের ঘটনা দেখেছিল তারা সমস্ত ঘটনা যা ঘটেছিল তা বলল৷

17 তখন তারা যীশুকে অনুনয় করে তাদের অঞ্চল ছেড়ে চলে য়েতে বলল৷

18 পরে তিনি নৌকায় উঠছেন, এমন সময় য়ে লোকটিকে ভূতে পেয়েছিল, সে তাঁকে অনুনয় করে বলল, য়েন সে তাঁর সঙ্গে থাকতে পারে৷

19 কিন্তু যীশু তাকে অনুমতি দিলেন না, বরং বললেন, ‘তুমি তোমার পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের কাছে ফিরে যাও আর ঈশ্বর তোমার জন্য যা যা করেছেন ও তোমার প্রতি য়ে দযা দেখিয়েছেন তা তাদের বুঝিয়ে বল৷’

20 তখন সে চলে গেল এবং প্রভু তার জন্য যা যা করেছেন, তা দিকাপলি অঞ্চলে প্রচার করতে লাগল, তাতে সকলে অবাক হয়ে গেল৷

21 পরে যীশু নৌকায় আবার হ্রদ পার হয়ে অন্য পাড়ে এলে অনেক লোক তাঁর কাছে ভীড় করল৷ তিনি হ্রদের তীরেই ছিলেন৷

22 আর সমাজগৃহের নেতাদের মধ্যে যাযীর নামে এক ব্যক্তি এসে তাঁকে দেখে তাঁর পায়ে পড়লেন

23 এবং অনেক অনুনয় করে তাঁকে বললেন, ‘আমার মেয়ে মর মর, আপনি এসে মেয়েটির ওপর হাত রাখুন যাতে সে সুস্থ হয় ও বাঁচে৷’

24 তখন তিনি তার সঙ্গে গেলেন৷ বহুলোক তাঁর পেছন পেছন চলল, আর তাঁর চারদিকে ঠেলাঠেলি করতে লাগল৷

25 একটি স্ত্রীলোক বারো বছর ধরে রক্তস্রাব রোগে ভুগছিল৷

26 অনেক চিকিত্‌সকের সাহায্য নিয়ে এবং সর্বস্ব ব্যয় করেও এতটুকু ভাল না হয়ে বরং আরো অসুস্থ হয়ে পড়েছিল৷

27 সে যীশুর বিষয় শুনে ভীড়ের মধ্যে তাঁর পিছন দিকে এসে তাঁর পোশাক স্পর্শ করল৷

28 সে মনে মনে ভেবেছিল, ‘যদি কেবল তাঁর পোশাক ছুঁতে পারি, তবেই আমি সুস্থ হব৷’

29 আর সঙ্গে সঙ্গে তাঁর রক্তস্রাব বন্ধ হল এবং সে তার শরীরে অনুভব করল য়ে সেই রোগ থেকে সুস্থ হয়েছে৷

30 যীশু সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারলেন য়ে তাঁর মধ্য থেকে শক্তি বের হয়েছে৷ তাই ভীড়ের মধ্যে মুখ ফিরিয়ে বললেন, ‘কে আমার পোশাক স্পর্শ করেছে?’

31 তাঁর শিষ্যেরা তাঁকে বললেন, ‘আপনি দেখছেন, লোকরা আপনার ওপরে ঠেলাঠেলি করে পড়ছে, তবু বলছেন, ‘কে আমাকে স্পর্শ করল?”

32 কিন্তু য়ে এই কাজ করেছে, তাকে দেখবার জন্য তিনি চারদিকে দেখতে লাগলেন৷

33 তখন সেই স্ত্রীলোকটি ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে তার প্রতি কি করা হয়েছে তা জানাতে তাঁর পায়ে পড়ল এবং সমস্ত সত্যি কথা তাঁকে বলল৷

34 তখন যীশু তাকে বললেন, ‘তোমার বিশ্বাস তোমাকে ভাল করেছে, শান্তিতে চলে যাও ও তোমার রোগ থেকে সুস্থ থাক৷’

35 তিনি এই কথা বলছেন, সেইসময় সমাজগৃহের নেতা যাযীরের বাড়ি থেকে লোক এসে বলল, ‘আপনার মেয়ে মারা গেছে, গুরুকে আর কষ্ট দেবার কোন কারণ নেই৷’

36 কিন্তু যীশু তাদের কথায় কান না দিয়ে যাযীরকে বললেন, ‘ভয় করো না, কেবল বিশ্বাস রাখো৷’

37 আর তিনি পিতর, যাকোব ও যাকোবের ভাই য়োহনকে ছাড়া আর কাউকে নিজের সঙ্গে য়েতে দিলেন না৷

38 পরে তারা সমাজগৃহের নেতার বাড়িতে এসে দেখলেন সেখানে গোলমাল হচ্ছে, কেউ কেউ শোকে চিত্‌কার করে কাঁদছে ও বিলাপ করছে৷

39 তিনি ভিতরে গিয়ে তাদের বললেন, ‘তোমরা গোলমাল করছ ও কাঁদছ কেন? মেয়েটি তো মরে নি, সে ঘুমিয়ে আছে৷’

40 এতে তারা তাঁকে উপহাস করল৷ কিন্তু তিনি সকলকে বাইরে বার করে দিয়ে, মেয়েটির বাবা, মা ও নিজের শিষ্যদের নিয়ে য়েখানে মেয়েটি ছিল সেখানে গেলেন৷

41 আর মেয়েটির হাত ধরে বললেন, ‘টালিথা কুমী!’ যার অর্থ ‘খুকুমনি, আমি তোমাকে বলছি ওঠ!’

42 মেয়েটি সঙ্গে সঙ্গে উঠে হেঁটে বেড়াতে লাগল৷ তার বয়স তখন বারো বছর ছিল৷ তাই দেখে তারা সকলে খুব আশ্চর্য হয়ে গেল৷

43 পরে তিনি তাদের এই দৃঢ় আদেশ দিলেন যাতে কেউ এটা জানতে না পারে; আর মেয়েটিকে কিছু খেতে দিতে বললেন৷

6

1 পরে যীশু তাঁর শিষ্যদের নিয়ে সেখান থেকে নিজের শহরে চলে এলেন৷

2 এরপর তিনি বিশ্রামবারে সমাজ-গৃহে শিক্ষা দিতে লাগলেন; আর সমস্ত লোক তাঁর শিক্ষা শুনে আশ্চর্য হল৷ তারা বলল, ‘এ কোথা থেকে এ সমস্ত বিজ্ঞতা অর্জন করল? এ কি করে এমন বিজ্ঞতার সঙ্গে কথা বলে? কি করেই বা এইসব অলৌকিক কাজ করে?

3 এ তো সেই ছুতোর মিস্ত্রি এবং মরিয়মের ছেলে; যাকোব, য়োসি, যিহূদা ও শিমোনের ভাই; তাই নয় কি? আর এর বোনেরা কি আমাদের মধ্যে নেই?’ এইসব চিন্তা তাদের মাথায় আসায় তারা তাঁকে গ্রহণ করতে পারল না৷

4 তখন যীশু তাদের বললেন, ‘নিজের শহর ও নিজের আত্মীয় স্বজন এবং পরিজনদের মধ্যে ভাববাদী সম্মানিত হন না৷’

5 তিনি সেখানে কোন অলৌকিক কাজ করতে পারলেন না৷ শুধু কয়েকজন রোগীর ওপর হাত রেখে তাদের সুস্থ করলেন৷

6 তারা য়ে তাঁর ওপর বিশ্বাস করল না, এতে তিনি আশ্চর্য হয়ে গেলেন৷ এর পরে তিনি চারদিকে গ্রামে গ্রামে ঘুরে শিক্ষা দিলেন৷

7 পরে তিনি সেই বারোজনকে ডেকে দুজন দুজন করে তাঁদের পাঠাতে শুরু করলেন এবং তাঁদের অশুচি আত্মার ওপরে ক্ষমতা দান করলেন৷

8 তিনি তাঁদের আদেশ দিলেন য়েন তাঁরা পথে চলবার জন্য একটা লাঠি ছাড়া আর কিছু সঙ্গে না নেয় এবং রুটি, থলে এমনকি কোমরবন্ধনীতে কোন টাকাপয়সা নিতেও বারণ করলেন৷

9 তবে বললেন, পায়ে জুতো পরবে কিন্তু কোন বাড়তি জামা নেবে না৷

10 তিনি আরও বললেন, তোমরা য়ে কোন শহরে য়ে বাড়িতে ঢুকবে, সেই শহর না ছাড়া পর্যন্ত সেই বাড়িতে থেকো৷

11 যদি কোন শহরের লোক তোমাদের গ্রহণ না করে বা তোমাদের কথা না শোনে তবে সেখান থেকে চলে যাবার সময় তাদের উদ্দেশ্যে সাক্ষ্যের জন্য নিজের নিজের পায়ের ধূলো সেখানে ঝেড়ে ফেলো৷

12 পরে তাঁরা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়লেন, প্রচার করতে আরন্ভ করলেন এবং লোকদের মন-ফেরাতে বললেন৷

13 তাঁরা অনেক ভূত ছাড়ালেন ও অনেক লোককে তেল মাখিয়ে সুস্থ করলেন৷

14 যীশুর সুনাম চারদিকে এমন ছড়িয়ে পড়েছিল, য়ে রাজা হেরোদও সে কথা শুনতে পেলেন৷ কিছু লোক বলল, ‘বাপ্তিস্মদাতা য়োহন বেঁচে উঠেছেন, আর সেইজন্যই তিনি এইসব অলৌকিক কাজ করছেন৷’

15 কিন্তু কেউ কেউ বলল, ‘তিনি এলীয়৷’ আবার কেউ কেউ বলল, ‘তিনি প্রাচীনকালের কোন ভাববাদীর মতোই একালের একজন ভাববাদী৷’

16 কিন্তু হেরোদ তাঁর কথা শুনে বললেন, ‘উনি সেই য়োহন, য়াঁর মাথা কেটে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন, তিনিই আবার বেঁচে উঠেছেন৷’

17 হেরোদ নিজের ভাই ফিলিপের স্ত্রী হেরোদিযাকে বিয়ে করেছিলেন, সেই জন্য নিজের লোক পাঠিয়ে য়োহনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে রেখেছিলেন৷

18 কারণ য়োহন হেরোদকে বলেছিলেন, ‘ভাইয়ের স্ত্রীকে নিজের কাছে রাখা ঠিক নয়৷’

19 হেরোদিযা রাগে য়োহনকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল, কিন্তু পারে নি৷

20 কারণ হেরোদ য়োহনকে ধার্মিক এবং পবিত্র লোক জেনে ভয় করতেন, সেইজন্যে তিনি তাঁকে রক্ষা করতেন৷ তাঁর কথা শুনে তিনি অত্যন্ত বিচলিত হতেন তবুও তাঁর কথা শুনতে ভালবাসতেন৷

21 শেষ পর্যন্ত হেরোদিযা যা চেয়েছিলেন সেই সুয়োগ এসে গেল৷ হেরোদ তাঁর জন্মদিনে প্রাসাদের উচ্চপদস্থ কর্মচারী, সেনাবাহিনীর অধ্যক্ষ ও গালীলের গন্যমান্য নাগরিকদের জন্য নৈশভোজের আযোজন করলেন;

22 আর হেরোদিযার মেয়ে এসে রাজা ও নিমন্ত্রিত অতিথিদের নাচ দেখিয়ে মুগ্ধ করল৷ রাজা সেই মেয়েকে বললেন, ‘আমাকে বল তুমি কি চাও? তুমি যা চাইবে তা-ই দেব৷’

23 তিনি শপথ করে আরো বললেন, ‘আমার কাছে যা চাইবে আমি তাই দেব, এমনকি অর্ধেক রাজ্যও দেব৷’

24 তাতে সে বেরিয়ে গিয়ে তার মাকে জিজ্ঞাসা করল, ‘আমি কি চাইব?’ সে বলল, ‘বাপ্তিস্মদাতা য়োহনের মাথা৷’

25 মেয়েটি তাড়াতাড়ি রাজার কাছে ফিরে গেল এবং বলল, ‘আমার ইচ্ছা য়ে, আপনি বাপ্তিস্মদাতা য়োহনের মাথাটি এনে এখনই থালায় করে আমাকে দিন৷’

26 তাতে রাজা হেরোদ দুঃখ পেলেন: কিন্তু নিজের শপথের জন্য এবং ভোজসভার অতিথিদের জন্য তিনি মেয়েকে ফেরাতে চাইলেন না৷

27 তাই রাজা সঙ্গে সঙ্গে একজন সেনাকে য়োহনের মাথা কেটে নিয়ে আসতে পাঠালেন৷ সে কারাগারে গিয়ে তাঁর শিরশ্ছেদ করল,

28 এবং থালায় করে মাথাটি নিয়ে মেয়েটিকে দিল, মেয়েটি তা তার মাকে দিল৷

29 এই সংবাদ শুনে য়োহনের শিষ্যরা এসে, তাঁর দেহটিকে নিয়ে গিয়ে কবর দিলেন৷

30 এরপর য়ে প্রেরিতদের যীশু প্রচার করতে পাঠিয়েছিলেন, তাঁরা যীশুর কাছে ফিরে এসে যা কিছু করেছিলেন ও যা কিছু শিক্ষা দিয়েছিলেন সে সব কথা তাঁকে জানালেন৷

31 তখন তিনি তাঁদের বললেন, ‘তোমরা কোন নির্জন স্থানে গিয়ে একটু বিশ্রাম কর৷’ কারণ এত লোক যাতাযাত করছিল য়ে তাঁদের খাবার সময় হচ্ছিল না৷

32 তাই তাঁরা নৌকা করে কোন নির্জন স্থানে চললেন৷

33 কিন্তু লোকরা তাঁদের য়েতে দেখল এবং অনেকে তাঁদের চিনতে পারল, তাই সমস্ত শহর থেকে লোকেরা বের হয়ে কিনারা ধরে দৌড়ে তাঁদের আগে সেখানে পৌঁছল৷

34 যীশু নৌকা থেকে বাইরে বেরিয়ে বহু লোককে দেখতে পেলেন, তাঁর প্রাণে তাদের জন্য খুবই দযা হল; কারণ তাদের পালকহীন মেষপালের মতো দেখাচ্ছিল৷ তখন তিনি তাদের অনেক বিষয়ে শিক্ষা দিতে লাগলেন৷

35 সেই দিন বেলা প্রায় শেষ হয়ে এলে যীশুর শিষ্যরা এসে তাঁকে বললেন, ‘এটা নির্জন স্থান এবং সন্ধ্যাও ঘনিয়ে এল৷

36 এদের বিদায় করুন; যাতে এরা আশপাশের গ্রামে গিয়ে খাবার কিনতে পারে৷’

37 কিন্তু যীশু তাঁদের বললেন, ‘তোমরাই ওদের খেতে দাও৷’ তাঁরা যীশুকে বললেন, ‘এতো লোককে রুটি কিনে খাওযাতে গেলে তো দুশো দীনার লাগবে৷’

38 তিনি তাঁদের বললেন, ‘তোমাদের কাছে কখানা রুটি আছে খুঁজে দেখ৷’

39 তাঁরা দেখে বললেন, ‘আমাদের কাছে পাঁচখানা রুটি ও দুটো মাছ আছে৷’ তখন তিনি প্রত্যেককে সবুজ ঘাসের উপর বসিয়ে দিতে বললেন৷

40 তাঁরা শ’ শ’ জন এবং পঞ্চাশ পঞ্চাশ জন করে সারি সারি বসে পড়ল৷

41 তখন তিনি সেই পাঁচটা রুটি ও দুটো মাছ নিয়ে স্বর্গের দিকে তাকিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানিয়ে রুটিগুলোকে টুকরো টুকরো করে শিষ্যদের হাতে দিয়ে লোকদের দিতে বললেন৷ আর সেই দুটো মাছকেও টুকরো টুকরো করে সকলকে ভাগ করে দিলেন৷

42 তারা সকলে তৃপ্তির সঙ্গে খেল৷

43 আর যা পড়ে রইল সেই সমস্ত টুকরো রুটি ও মাছে বারোটি টুকরি ভর্তি হয়ে গেল৷

44 যত পুরুষ সেদিন খেয়েছিল, তারা সংখ্যায় পাঁচ হাজার ছিল৷

45 পরে তিনি তাঁর শিষ্যদের নৌকায় উঠে তাঁর আগে ওপারে বৈত্‌সৈদাতে পৌঁছাতে বললেন, সেইসময় তিনি লোকেদের বিদায় দিচ্ছিলেন৷

46 লোকেদের বিদায় করে তিনি প্রার্থনা করবার জন্য পাহাড়ে চলে গেলেন৷

47 সন্ধ্যাকালে নৌকাটিহ্রদের মাঝখানে ছিল এবং তিনি একা ডাঙ্গায় ছিলেন৷

48 তিনি দেখলেন য়ে শিষ্যরা বাতাসের বিরুদ্ধে খুব কষ্টের সঙ্গে দাঁড় টেনে চলেছেন৷ খুব ভোর বেলা প্রায় তিনটে ও ছটার মধ্যে তিনিহ্রদের জলের উপর দিয়ে হেঁটে তাদের কাছে এলেন৷ তিনি তাঁদের পাশ কাটিয়ে এগিয়ে য়েতে চাইলেন৷

49 কিন্তুহ্রদের উপর দিয়ে তাঁকে হাঁটতে দেখে তাঁরা ভাবলেন ভূত, আর এই ভেবে তাঁরা চেঁচিয়ে উঠলেন৷

50 কারণ তাঁরা সকলেই তাঁকে দেখে ভয় পেয়েছিলেন; কিন্তু যীশু সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের বললেন, ‘সাহস করো ! ভয় করো না, এতো আমি!’

51 পরে তিনি তাদের নৌকায় উঠলে ঝড় থেমে গেল৷ তাতে তাঁরা আশ্চর্য হয়ে গেলেন৷

52 কারণ এর আগে তাঁরা পাঁচটা রুটির ঘটনার অর্থ বুঝতে পারেন নি, তাঁদের মন কঠোর হয়ে পড়েছিল৷

53 পরে তাঁরা ্ব্রদ পার হয়ে গিনেষরত্ প্রদেশে এসে নৌকা বাঁধলেন৷

54 তিনি নৌকা থেকে নামলে লোকরা তাঁকে চিনে ফেলল৷

55 তারা ঐ এলাকার সমস্ত অঞ্চলে চারদিকে দৌড়াদৌড়ি করে অসুস্থ লোকদের খাটিযা করে তাঁর কাছে নিয়ে আসতে লাগল৷

56 গ্রামে, শহরে বা পাড়ায় য়েখানে তিনি য়েতেন, সেখানে লোকেরা অসুস্থ রোগীদের এনে বাজারের মধ্যে জড়ো করত৷ তারা মিনতি করত য়েন শুধু যীশুর কাপড়ের ঝালর স্পর্শ করতে পারে৷ আর যাঁরা তাঁর কাপড় স্পর্শ করত তারা সকলেই সুস্থ হয়ে য়েত৷

7

1 কয়েকজন ফরীশী ও ব্যবস্থার শিক্ষক জেরুশালেম থেকে যীশুর কাছে এলেন৷

2 তাঁরা দেখলেন য়ে, তাঁর কয়েকজন শিষ্য হাত না ধুয়ে খাবার খাচ্ছেন৷

3 ফরীশী সম্প্রদায়ের লোকেরা এবং সমস্ত ইহুদীরা প্রাচীন রীতি অনুসারে ভাল করে হাত না ধুয়ে খাবার খেতো না৷

4 আর বাজার থেকে কোন কিছু কিনলে তা বিশেষভাবে না ধুয়ে খেতো না৷ আরও বহু প্রাচীন রীতি নীতি তারা মেনে চলত, য়েমন পানপাত্রটি, কলসী ও পিতলের নানা পাত্র ধোওযা ইত্যাদি৷

5 সেই ফরীশীরা ও ব্যবস্থার শিক্ষকরা যীশুকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আপনার শিষ্যরা প্রাচীন রীতিনীতি অনুসারে চলে না, তারা হাত না ধুয়ে তাদের খাবার খায়, এর কারণ কি?’

6 যীশু তাঁদের বললেন, ‘ভণ্ডরা, ভাববাদী যিশাইয় তোমাদের বিষয়ে ঠিকই বলেছেন, য়েমন লেখা আছে, ‘এই লোকেরা মুখেই শুধু আমাকে সম্মান করে, কিন্তু তাদের মন আমার থেকে অনেক দূরে থাকে৷

7 এরা অনর্থক আমার উপাসনা করে৷ কারণ এরা মানুষের তৈরী রীতি-নীতি ঈশ্বরের আদেশ বলে লোকদের শিক্ষা দেয়৷’যিশাইয় 29:13

8 তোমরা ঈশ্বরের আদেশ অমান্য করে মানুষের প্রচলিত প্রথা পালন করে থাকো৷’

9 যীশু তাদের আরো বললেন, ‘তোমরা নিজেদের ঐতিহ্য় বজায় রাখার জন্য খুব বুদ্ধি খাটিয়ে ঈশ্বরের আদেশ অমান্য করছ৷

10 মোশি বলেছেন, ‘তুমি নিজের বাবা, মাকে সম্মান করো,’ আর ‘য়ে লোকটি বাবা কিংবা মায়ের নিন্দা করবে তার মৃত্যুদণ্ড হবে৷’

11 কিন্তু তোমরা বল লোকটি যদি তার বাবা-মাকে বলে, ‘আমি যা কিছু দিয়ে তোমাদের উপকার করতে পারতাম, তা ঈশ্বরকে উত্‌সর্গ করেছি,’

12 তখন এমন লোককে তোমরা বাবা বা মায়ের জন্য কিছুই করতে দাও না৷

13 ঈশ্বরের বাক্য তোমাদের বংশানুক্রমে পালন করা ঐতিহ্য় দ্বারা তোমরা নিষ্ফল কর৷

14 তিনি সমস্ত লোককে আবার তাঁর কাছে ডেকে বললেন, ‘তোমরা সকলে আমার কথা শোন এবং বোঝ৷

15 মানুষের বাইরে এমন কিছু নেই যা ভেতরে গিয়ে তাকে কলুষিত করতে পারে কিন্তু যা যা মানুষের ভেতর থেকে বের হয় সেটাই মানুষকে কলুষিত করে৷’

16

17 পরে তিনি লোকদের ছেড়ে বাড়িতে ঢুকলে, তাঁর শিষ্যরা তাঁকে সেই দৃষ্টান্তটির অর্থ জিজ্ঞাসা করলেন৷

18 তিনি তাঁদের বললেন, ‘তোমরাও কি অবোধ? তোমরা কি বোঝ না, বাইরে থেকে যা কিছু মানুষের ভেতরে যায় তা তাকে কলুষিত করতে পারে না?

19 কারণ এটা তার অন্তরে য়েতে পারে না, পাকস্থলীতে যায় এবং তারপর দেহের বাইরে গিয়ে পড়ে৷’ এই কথার মাধ্যমে তিনি সমস্ত খাবারকেই শুদ্ধ বললেন৷

20 তিনি আরও বললেন, ‘মানুষের অন্তর থেকে যা বার হয়, সেটাই মানুষকে কলুষিত করে৷

21 কারণ মানুষের ভেতর অর্থাত্ মন থেকে বার হয় কুত্‌সিত চিন্তা, লালসা, চুরি, খুন,

22 য়ৌন পাপ, লোভ, দুষ্টামি, প্রতারণা, অশ্লীলতা, ঈর্ষা, নিন্দা, অভিমান ও অহঙ্কার৷

23 এই সমস্ত খারাপ বিষয় মানুষের ভেতর থেকে বার হয় ও মানুষকে কলুষিত করে৷’

24 পরে তিনি সেই স্থান ছেড়ে সোর অঞ্চলে গিয়ে সেখানে একটা বাড়িতে ঢুকলেন, আর তিনি য়ে সেখানে এসেছেন সেটা গোপন রাখতে চাইলেন: কিন্তু পারলেন না৷

25 যীশুর আসার কথা শুনে একটি স্ত্রীলোক, যার মেয়ের ওপর অশুচি আত্মা ভর করেছিল, সে সঙ্গে সঙ্গে এসে যীশুর পায়ে লুটিয়ে পড়ল৷

26 স্ত্রীলোকটি ছিল জাতিতে গ্রীক, সুরফৈনীকী৷ সে মিনতি করে যীশুকে বলল য়েন তিনি তার মেয়ের ভেতর থেকে ভূতকে তাড়িয়ে দেন৷

27 তিনি স্ত্রীলোকটিকে বললেন, ‘প্রথমে ছেলেমেয়েরা তৃপ্ত হোক, কারণ ছেলেমেয়েদের খাবার নিয়ে কুকুরকে খাওযানো ঠিক নয়৷’

28 তখন সেই স্ত্রীলোকটি বলল, ‘প্রভু এটা সত্য; কিন্তু কুকুররাও তো খাবার টেবিলের নীচে ছেলেমেয়েদের ফেলে দেওযা খাবারের টুকরোগুলো খেতে পায়৷’

29 তখন তিনি তাকে বললেন, ‘তুমি ভালোই বলেছ, বাড়ি যাও, গিয়ে দেখ ভূত তোমার মেয়েকে ছেড়ে চলে গেছে৷

30 তখন সে বাড়ি গিয়ে দেখতে পেল, মেয়েটি বিছানায় শুয়ে আছে এবং ভূত তার মধ্য থেকে বেরিয়ে গেছে৷

31 পরে তিনি সোর থেকে সীদোন হয়ে দিকাপলি অঞ্চলের ভেতর দিয়ে গালীলহ্রদের কাছে ফিরে এলেন৷

32 তখন কিছু লোক একটা বোবা কালাকে তাঁর কাছে এনে তাঁকে তার ওপর হাত রাখতে মিনতি করল৷

33 তিনি তাঁকে ভীড়ের মধ্যে থেকে এক পাশে এনে তার দুই কানে নিজের আঙ্গুল দিলেন৷ তারপর থুথু ফেলে তার জিভ ছুঁলেন৷

34 আর স্বর্গের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, ‘ইপফাথা!’ যার অর্থ ‘খুলে যাক!’

35 সঙ্গে সঙ্গে লোকটি কানে শুনতে পেল, তার জিভের জড়তা কেটে গেল আর সে ভালভাবেই কথা বলতে লাগল৷

36 পরে তিনি তাদের একথা আর কাউকে বলতে নিষেধ করলেন; কিন্তু তিনি যতই বারণ করলেন ততই তারা আরো বেশী করে বলতে লাগল৷

37 যীশুর এই কাজ দেখে তারা অত্যন্ত আশ্চর্য হয়ে গিয়ে বলল, ‘তিনি যা কিছু করেন তা অপূর্ব৷ তিনি কালাকে শোনার শক্তি, বোবাকে কথা বলার শক্তি দেন৷’

8

1 সেই দিনগুলিতে আবার একবার অনেক লোকেরভীড় হল৷ তাদের কাছে খাবার ছিল না, তাই তিনি তাঁর শিষ্যদের ডেকে বললেন,

2 ‘এই লোকদের জন্য আমার মমতা হচ্ছে, কারণ এরা আজ তিনদিন ধরে আমার কাছে রয়েছে, এদের কাছে কিছু খাবার নেই৷

3 যদি আমি এদের ক্ষুধার্ত ও অভুক্ত অবস্থায় বাড়ি পাঠাই, তবে এরা রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে পড়বে৷ এদের মধ্যে কেউ কেউ আবার বহু দূর থেকে এসেছে৷’

4 তাঁর শিষ্যেরা এর উত্তরে বললেন, ‘এই জনমানবহীন জায়গায় আমরা কোথা থেকে এতগুলো লোকের খাবার জোগাড় করব?’

5 তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমাদের কখানা রুটি আছে?’ তারা বলল, ‘সাতখানা৷’

6 তখন তিনি লোকেদের মাটিতে বসতে আদেশ দিলেন৷ পরে সেই সাতটা রুটি তুলে নিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিয়ে রুটি গুলোকে টুকরো টুকরো করে পরিবেশনের জন্য শিষ্যদের হাতে তুলে দিলেন৷ তাঁরাও লোকদের মধ্যে পরিবেশন করলেন৷

7 তাদের কাছে কতগুলো ছোট মাছ ছিল; তিনি সেগুলোর জন্যও ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিয়ে শিষ্যদের বললেন, ‘এগুলো পরিবেশন করে দাও৷’

8 লোকরা খেয়ে তৃপ্তি পেল৷ অবশিষ্ট টুকরো দিয়ে তারা সাতটি ঝুড়ি ভর্তি করল৷

9 সেদিন প্রায় চার হাজার লোক খেয়েছিল৷ এরপর তিনি তাদের বাড়ি পাঠিয়ে দিলেন;

10 আর সঙ্গে সঙ্গে তিনি শিষ্যদের নিয়ে নৌকা করে দল্মনুথা অঞ্চলে চলে এলেন৷

11 পরে সেখানে ফরীশীরা এসে যীশুর সঙ্গে তর্ক জুড়ে দিল৷ তাঁর কাছে আকাশ থেকে কোন অলৌকিক চিহ্ন দেখতে চাইল৷ তাদের উদ্দেশ্য ছিল তাঁকে পরীক্ষা করা৷

12 তখন তিনি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন, ‘এই যুগের লোকরা কেন অলৌকিক চিহ্ন দেখতে চায়? আমি তোমাদের সত্যি বলছি কোন অলৌকিক চিহ্ন এই লোকদের দেখানো হবে না৷’

13 তখন তিনি তাদের ছেড়ে নৌকা করেহ্রদের অপর পারে গেলেন৷

14 কিন্তু শিষ্যেরা রুটি আনতে ভুলে গিয়েছিলেন: নৌকায় তাদের কাছে কেবল একখানা রুটি ছাড়া আর কোন রুটি ছিল না৷

15 তখন তিনি তাদের সতর্ক করে দিয়ে বললেন, ‘সাবধান! তোমরা হেরোদ এবং ফরীশীদের খামিরের বিষয়ে সাবধান থেকো!’

16 তখন তাঁরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে লাগলেন, ‘আমাদের কাছে কোন রুটি নেই৷’

17 তাঁরা যা বলছেন, তা বুঝতে পেরে যীশু বললেন, ‘তোমাদের রুটি নেই বলে কেন আলোচনা করছ? তোমরা এখনও কি দেখ না বা বোঝ না, তোমাদের মন কি এতই কঠিন?

18 চোখ থাকতে কি তোমরা দেখতে পাও না? কান থাকতে কি শুনতে পাও না? আর তোমাদের কি মনেও পড়ে না?

19 যখন আমি পাঁচ হাজার লোকের মধ্যে পাঁচটি রুটি টুকরো করে দিয়েছিলাম: তখন তোমরা কত টুকরি উদ্বৃত্ত রুটির টুকরো কুড়িয়ে নিয়েছিলে?’ তাঁরা বললেন, ‘বারো টুকরি৷’

20 যীশু আবার বললেন, ‘আমি যখন সাতটা রুটি চার হাজার লোকের মধ্যে টুকরো করে দিয়েছিলাম তখন কত টুকরি উদ্বৃত্ত রুটির টুকরো তোমরা তুলে নিয়েছিলে?’ তাঁরা বললেন, ‘সাত টুকরি৷’

21 তখন তিনি তাঁদের বললেন, ‘তোমরা কি এখনও বুঝতে পারছ না?’

22 তারপর তাঁরা বৈত্‌সৈদায় এলেন: আর লোকরা তাঁর কাছে একটা অন্ধ লোককে নিয়ে এসে মিনতি করল যাতে তিনি তাকে স্পর্শ করেন৷

23 তখন তিনি অন্ধ লোকটির হাত ধরে তাকে গ্রামের বাইরে নিয়ে গেলেন৷ তিনি লোকটির চোখে খানিকটা থুথু লাগিয়ে তার ওপরে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কি কিছু দেখতে পাচ্ছ?’

24 সে চোখ তুলে চেয়ে বলল, ‘আমি মানুষ দেখতে পাচ্ছি; গাছের মত দেখতে, তারা ঘুরে বেড়াচ্ছে৷’

25 তখন তিনি আবার তার চোখের ওপর হাত রাখলেন৷ এইবার লোকটি চোখ বড় বড় করে তাকাল৷ তার দৃষ্টিশক্তি সম্পূর্ণভাবে ফিরে পেল এবং সবকিছু স্পষ্টভাবে দেখতে পেল৷

26 তারপর তিনি তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে বললেন, ‘এই গ্রামে য়েও না৷’

27 তারপর যীশু এবং তাঁর শিষ্যরা সেখান থেকে কৈসরিযা ফিলিপীয় অঞ্চলে চলে গেলেন৷ রাস্তার মধ্যে তিনি তাঁর শিষ্যদের জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আমি কে, এ বিষয়ে লোকের কি বলে?’

28 তাঁরা বললেন, ‘অনেকে বলে আপনি, ‘বাপ্তিস্মদাতা য়োহন৷ কেউ কেউ বলে, আপনি এলীয়৷ আবার কেউ কেউ বলে, আপনি ভাববাদীদের মধ্যে একজন৷’

29 তখন তিনি তাঁদের জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কিন্তু তোমরা কি বল, আমি কে?’ পিতর তাঁকে বললেন, ‘আপনি সেই খ্রীষ্ট৷’

30 তখন তিনি তাঁদের সাবধান করে দিয়ে বললেন, ‘তোমরা এ কথা কাউকে বলো না৷’

31 এরপর তিনি তাঁদের এই শিক্ষা দিতে শুরু করলেন য়ে, মানবপুত্রকে অনেক দুঃখ ভোগ করতে হবে এবং বয়স্ক ইহুদী নেতারা, প্রধান যাজক ও ব্যবস্থার শিক্ষকরা তাঁকে প্রত্যাখ্যান করবে, হত্যা করবে এবং মৃত্যুর তিনদিন পর তিনি আবার বেঁচে উঠবেন৷

32 এই কথা তিনি তাঁদের স্পষ্টভাবে বললেন, তাতে পিতর তাঁকে একপাশে নিয়ে গিয়ে অনুয়োগ করতে লাগলেন৷

33 কিন্তু যীশু তাঁর শিষ্যদের দিকে মুখ ফিরিয়ে পিতরকে ধমক দিয়ে বললেন, ‘আমার সামনে থেকে দূর হও, শয়তান! কারণ তুমি ঈশ্বরের ইচ্ছার সমাদর করছ না; তুমি মানুষের মতোই ভেবে এই কথা বলছ৷’

34 এরপর তিনি শিষ্যদেব সঙ্গে অন্যান্য লোকদেরও নিজের কাছে ডেকে বললেন, ‘কেউ যদি আমার সঙ্গে আসতে চায়., সে নিজেকে অস্বীকার করুক এবং তার নিজের ক্রুশ তুলে নিয়ে আমার অনুসারী হোক৷

35 কারণ কেউ যদি নিজের প্রাণ রক্ষা করতে চায় তবে সে তা হারাবে; কিন্তু কেউ যদি আমার এবং সুসমাচারের জন্য নিজের প্রাণ হারায় তবে তার জীবন চিরস্থায়ী হবে৷

36 মানুষ যদি নিজের জীবন হারিয়ে সমস্ত জগত্ লাভ করে তবে তার কি লাভ?

37 কিংবা মানুষ তার প্রাণের বিনিময়ে কি দিতে পারে?

38 য়ে কেউ এই ব্যভিচারী ও পাপীদের যুগে আমাকেএবং আমার শিক্ষাকে লজ্জার বিষয় মনে করে, মানবপুত্র যখন তাঁর পিতার মহিমায় মহিমান্বিত হয়ে পবিত্র স্বর্গদূতদের সঙ্গে ফিরে আসবেন, তখন তিনিও সেই লোকের বিষয়ে লজ্জাবোধ করবেন৷

9

1 তিনি তাঁর শিষ্যদের বললেন, ‘আমি তোমাদের সত্যি বলছি যাঁরা এখানে দাঁড়িয়ে আছে, তদের মধ্যে কয়েকজন আছে, যাঁরা কোনমতেই মৃত্যু দেখবে না; যতক্ষণ পর্যন্ত ঈশ্বরের রাজ্য মহাপরাক্রমের সঙ্গে আসতে না দেখে৷’

2 ছদিন বাদে যীশু পিতর, যাকোব এবং য়োহনকে সঙ্গে করে এক উঁচু পাহাড়ে উঠে গেলেন৷ তাঁদের সামনে তাঁর রূপ পরিবর্তিত হয়ে গেল৷

3 তাঁর পোশাক এত উজ্জ্বল ও শুভ্র হল য়ে পৃথিবীর কোন রজক সেই রকম সাদা করতে পারে না৷

4 তখন মোশি এবং এলীয় তাঁদের সামনে এসে যীশুর সাথে কথা বলতে শুরু করলেন৷

5 তখন পিতর যীশুকে বললেন, ‘গুরুদেব, এখানে আমাদের থাকা ভাল৷ আমরা তিনটি তাঁবু তৈরী করি৷ একটা আপনার জন্য, একটা মোশির জন্য এবং একটা এলীয়র জন্য৷’

6 কারণ কি বলতে হবে তা তিনি জানতেন না, তাঁরা অত্যন্ত ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন৷

7 পরে একখানা মেঘ এসে তাঁদের ছাযা দিয়ে ঢেকে ফেলল; আর সেই মেঘ থেকে এই রব শোনা গেল, ‘ইনি আমার প্রিয় পুত্র৷ তোমরা তাঁর কথা শোন৷’

8 শিষ্যেরা তখনই চারদিকে তাকালেন; কিন্তু যীশু ছাড়া আর কাউকে সেখানে দেখতে পেলেন না৷

9

10 তারা সেই ঘটনার কথা নিজেদের মধ্যেই চেপে রাখলেন; কিন্তু ভাবতে লাগলেন, মৃত্যু থেকে বেঁচে ওঠা কথাটির অর্থ কি হতে পারে৷

11 পরে শিষ্যরা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কেন ব্যবস্থার শিক্ষকরা বলেন য়ে প্রথমে এলীয়কে আসতে হবে?’

12 তিনি তাদের বললেন, ‘হ্যাঁ, এলীয় প্রথমে এসে সব কিছু পুনঃস্থাপন করবেন বটে, কিন্তু মানবপুত্রের বিষয়ে কেন এসব লেখা হয়েছে য়ে তাঁকে অনেক দুঃখ পেতে হবে আর লোকে তাঁকে প্রত্যাখ্যান করবে?

13 কিন্তু আমি তোমাদের বলছি, এলীয়ের বিষয়ে য়েমন লেখা আছে, সেই অনুসারে তিনি এসে গেছেন এবং লোকরা তাঁর প্রতি যা ইচ্ছে তাই করেছে৷’

14 পরে তাঁরা অন্য শিষ্যদের কাছে এসে দেখলেন তাঁদের চারদিকে অনেক লোক আর ব্যবস্থার শিক্ষকরা তাদের সাথে তর্ক করছেন৷

15 তাঁকে দেখামাত্র সমস্ত লোক অবাক হল এবং তাঁর কাছে দৌড়ে গিয়ে তাঁকে প্রণাম জানাতে লাগল৷

16 তিনি তাঁদের জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমরা এদের সঙ্গে কি নিয়ে তর্ক করছ?’

17 তাতে লোকেদের মধ্যে থেকে একজন বলে উঠল, ‘হে গুরু, আমার ছেলেটিকে আপনার কাছে এনেছিলাম৷ তাকে এক বোবা আত্মায় পেয়েছে, সে কথা বলতে পারে না৷

18 সেই আত্মা তাকে য়েখানে ধরে, সেইখানে আছাড় মারে; আর তার মুখে ফেনা ওঠে, সে দাঁত কিড়মিড় করে আর শক্ত হয়ে যায়৷ আমি আপনার শিষ্যদের এই আত্মাটাকে ছাড়াতে বললাম, কিন্তু তাঁরা পারলেন না৷’

19 তখন যীশু তাঁদের বললেন, ‘হে অবিশ্বাসী বংশ, আমাকে আর কতকাল তোমাদের সঙ্গে থাকতে হবে? তোমাদের নিয়ে আর আমি কত ধৈর্য্য ধরব? তাকে আমার কাছে নিয়ে এস৷’

20 তারা তাকে তাঁর কাছে নিয়ে এল৷ যীশুকে দেখামাত্র সেই আত্মা ছেলেটিকে মুচড়ে ধরল; আর সে মাটিতে পড়ে গড়াগড়ি দিতে লাগল, তার মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছিল৷

21 তখন যীশু তার বাবাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এর কতদিন এমন হয়েছে?’ ছেলেটির বাবা বলল, ‘ছেলেবেলা থেকে এরকম হয়েছে৷

22 এই আত্মা একে মেরে ফেলার জন্য অনেকবার আগুনে ও জলে ফেলে দিয়েছে৷ আপনি যদি কিছু করতে পারেন, তবে দযা করে আমাদের উপকার করুন৷’

23 যীশু তাকে বললেন, ‘কি বললে, ‘যদি পারেন! য়ে বিশ্বাস করে তার পক্ষে সবই সন্ভব৷’

24 সঙ্গে সঙ্গে ছেলেটির বাবা চিত্‌কার করে কেঁদে বলল, ‘আমি বিশ্বাস করি! আমার অবিশ্বাসের প্রতিকার করুন!’

25 অনেক লোক সেদিকে আসছে দেখে যীশু সেই অশুচি আত্মাকে ধমকে বললেন, ‘হে বোবা কালার আত্মা, আমি তোমাকে বলছি, এর মধ্যে আর কখনও ঢুকবে না!’

26 তখন সেই আত্মা চেঁচিয়ে তাকে ভয়ঙ্করভাবে মুচড়ে দিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেল৷ তাতে ছেলেটি মড়ার মত হয়ে পড়ল, এমন কি অধিকাংশ লোক বলল, ‘সে মরে গেছে৷’

27 কিন্তু যীশু তার হাত ধরে তুললে সে উঠে দাঁড়াল৷

28 পরে যীশু বাড়ি ফিরে এলে শিষ্যরা তাঁকে একান্তে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আমরা কেন ঐ অশুচি আত্মাকে তাড়াতে পারলাম না?’

29 যীশু তাঁদের বললেন, ‘প্রার্থনা ছাড়া আর কোন কিছুতেই এ আত্মাকে তাড়ানো যায় না৷’

30 পরে সেই স্থান ছেড়ে তাঁরা গালীলের মধ্য দিয়ে চললেন; আর তিনি চাইলেন না য়ে তাঁরা কোথায় আছে সেকথা অন্য কেউ জানুক৷

31 কারণ তখন তিনি তাঁর শিষ্যদের শিক্ষা দিচ্ছিলেন৷ তিনি তাঁদের বললেন, ‘মানবপুত্রকে লোকদের হাতে তুলে দেওযা হবে, এবং তারা তাঁকে হত্যা করবে আর মৃত্যুর তিনদিন পরে তিনি বেঁচে উঠবেন৷’

32 কিন্তু তাঁরা সেই কথা বুঝলেন না এবং এই বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করতেও ভয় পেলেন৷

33 এরপর তাঁরা কফরনাহূমে ফিরে এলেন আর বাড়ির ভেতরে গিয়ে তিনি শিষ্যদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমরা রাস্তায় কি আলোচনা করছিলে?’

34 কিন্তু তাঁরা চুপচাপ থাকলেন কারণ তাঁদের মধ্যে কে সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ এই নিয়ে তর্ক চলছিল৷

35 তখন যীশু বসে সেই বারোজন প্রেরিতদের ডেকে বললেন, ‘কেউ যদি প্রথম হতে চায়, তবে সে সকলের শেষে থাকবে এবং সকলের পরিচারক হবে৷’

36 পরে যীশু একটা শিশুকে নিয়ে তাঁদের মধ্যে দাঁড় করিয়ে দিলেন এবং তাকে কোলে করে তাঁদের বললেন,

37 ‘য়ে কেউ আমার নামে এর মতো কোন শিশুকে গ্রহণ করে, সে আমাকেই গ্রহণ করে৷ আর কেউ যদি আমাকে গ্রহণ করে, সে আমাকে নয়, কিন্তু যিনি (ঈশ্বর) আমাকে পাঠিয়েছেন তাঁকেই গ্রহণ করে৷’

38 য়োহন তাঁকে বললেন, ‘গুরু, আমরা একটি লোককে আপনার নামে ভুত তাড়াতে দেখে তাকে বারণ করেছিলাম, কারণ সে আমাদের লোক নয়৷’

39 কিন্তু যীশু বললেন, ‘তাকে বারণ করো না, কারণ এমন কেউ নেই য়ে আমার নামে অলৌকিক কাজ করে সহজে আমার নিন্দা করতে পরে৷

40 য়ে কেউই আমাদের বিপক্ষে নয় সে আমাদের সপক্ষে৷

41 কেউ যদি খ্রীষ্টের লোক বলে তোমাদেরকে এক ঘটি জল দেয়, আমি তোমাদের সত্যি বলছি, সে কোন মতেই নিজের পুরস্কার থেকে বঞ্চিত হবে না৷

42 ‘আর এই য়ে সাধারণ লোক যাঁরা আমায় বিশ্বাস করে, যদি কেউ তাদের একজনকে পাপের পথে নিয়ে যায়, তবে সেই লোকের গলায় একটা বড় য়াঁতার পাট বেঁধে তাকে সমুদ্রে ফেলে দেওযাই তার পক্ষে ভাল৷

43 তোমার হাত যদি তোমার পাপের কারণ হয়, তবে তাকে কেটে ফেল, কারণ দুই হাত নিয়ে নরকের অনন্ত আগুনে পোড়ার থেকে বরং নুলো হয়ে জীবনে প্রবেশ করা ভাল৷

44

45 তোমার পা যদি তোমার পাপের কারণ হয় তবে তাকে কেটে ফেল, কারণ দুই পা নিয়ে নরকে যাওযার থেকে বরং খোঁড়া হয়ে জীবনে প্রবেশ করা ভাল৷

46

47 আর যদি তোমার চোখ তোমার পাপের কারণ হয়, তবে সে চোখকে উপড়ে ফেল৷ দুচোখ নিয়ে নরকে যাওযার থেকে এক চোখ নিয়ে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করা তোমার পক্ষে ভাল৷

48 নরকে য়ে কীট মানুষকে খায় তারা কখনও মরে না এবং আগুন কখনও নেভে না৷

49 লবণ দেওযার মত প্রত্যেকের ওপর আগুন দেওযা হবে৷

50 ‘লবণ ভাল, কিন্তু লবণ যদি লবণত্ব হারায়, তবে কেমন করে তাকে তোমরা আস্বাদযুক্ত করবে? তোমরা নিজের নিজের মনে লবণ রাখ এবং পরস্পর শান্তিতে থাক৷’

10

1 এরপর যীশু সেই স্থান ছেড়ে যর্দন নদীর অন্য পাড়ে যিহূদিযার অঞ্চলে এলেন৷ আবার লোকরা তাঁর কাছে এল এবং তিনি তাঁর রীতি অনুসারে তাঁদের শিক্ষা দিলেন৷

2 তখন কয়েকজন ফরীশী তাঁর কাছে এসে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘একটি লোকের পক্ষে তার স্ত্রীকে ত্যাগ করা কি আইনত ঠিক?’ তাঁরা তাঁকে পরীক্ষা করার জন্যই এই কথা জিজ্ঞাসা করলেন৷

3 যীশু তাদের প্রশ্নের উত্তরে বললেন ‘এই ব্যাপারে মোশি তোমাদের কি নির্দেশ দিয়েছেন?’

4 তারা বললেন, ‘বিবাহ বিচ্ছেদ পত্র লিখে নিজের স্ত্রীকে পরিত্যাগ করবার অনুমতি মোশি দিয়েছেন৷’

5 যীশু তাঁদের বললেন, ‘তোমাদের কঠিন মনের জন্য তিনি আজ্ঞা লিখেছিলেন৷

6 কিন্তু সৃষ্টির প্রথম থেকেই ‘ঈশ্বর স্ত্রী পুরুষ হিসাবে তাদের তৈরী করেছেন৷’

7 ‘সেইজন্যই মানুষ তার বাবা-মাকে ত্যাগ করে স্ত্রীর প্রতি আসক্ত হয়,

8 আর ঐ দুজন একদেহে পরিণত হয়৷’ তখন তারা আর দুজন নয়, তারা এক৷

9 অতএব ঈশ্বর যাদের য়োগ করে দিয়েছেন, মানুষ তাদের বিচ্ছিন্ন না করুক৷’

10 তারা বাড়িতে এলে শিষ্যেরা তাঁকে সেই বিষয় জিজ্ঞাসা করলেন৷

11 যীশু তাদের বললেন, ‘কেউ যদি নিজের স্ত্রীকে ত্যাগ করে অন্য কাউকে বিয়ে করে তবে সে তার বিরুদ্ধে ব্যভিচার করে৷

12 যদি সেই স্ত্রীলোকটি নিজের স্বামীকে ত্যাগ করে আর একজনকে বিয়ে করে সেও ব্যভিচার করে৷’

13 পরে লোকরা ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের তাঁর কাছে নিয়ে এল, য়েন তিনি তাদের স্পর্শ করেন: কিন্তু শিষ্যরা তাদের ধমক দিলেন৷

14 যীশু তা দেখে ক্রুদ্ধ হলেন এবং তাদের বললেন, ‘ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের আমার কাছে আসতে দাও৷ তাদের বারণ করো না, কারণ এদের মত লোকদের জন্যই তো ঈশ্বরের রাজ্য৷

15 আমি তোমাদের সত্যি বলছি, কেউ যদি ছোট ছেলেমেয়েদের মন নিয়ে ঈশ্বরের রাজ্য গ্রহণ না করে, তবে সে কোনমতেই সেখানে প্রবেশ করতে পারবে না৷’

16 এরপর তিনি তাদের কোলে নিলেন এবং তাদের ওপর হাত রেখে আশীর্বাদ করলেন৷

17 পরে তিনি বেরিয়ে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন, এমন সময় একজন লোক দৌড়ে এসে, তাঁর সামনে হাঁটু গেড়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে সত্ গুরু, অনন্ত জীবন লাভের জন্য আমি কি করব?’

18 তখন যীশু তাকে বললেন, ‘তুমি কেন আমাকে সত্ বলছ? ঈশ্বর ছাড়া আর কেউই সত্ নয়৷

19 তুমি তো ঈশ্বরের সব আদেশ জানো, ‘নরহত্যা কোরো না, ব্যভিচার কোরো না, চুরি কোরো না, বাবা-মাকে সম্মান কোরো৷”

20 লোকটি তাঁকে বলল, ‘হে গুরু, ছোটবেলা থেকে এগুলো আমি পালন করে আসছি৷’

21 যীশু লোকটির দিকে সস্নেহে তাকালেন এবং বললেন, ‘একটা বিষয়ে তোমার ত্রুটি আছে৷ যাও তোমার যা কিছু আছে বিক্রি কর; আর সেই অর্থ গরীবদের মধ্যে বিলিয়ে দাও, তাতে তুমি স্বর্গে ধন পাবে৷ তারপর এসে আমাকে অনুসরণ কর৷’

22 এই কথায় সে মর্মাহত ও দুঃখিত হল এবং ম্লান মুখে চলে গেল, কারণ তার অনেক সম্পত্তি ছিল৷

23 তখন যীশু চারদিকে তাকিয়ে শিষ্যদের বললেন, ‘যাদের ধন আছে তাদের পক্ষে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করা খুবই দুষ্কর!’

24 শিষ্যেরা তাঁর কথা শুনে অবাক হলেন৷ যীশু আবার তাঁদের বললেন, ‘শোন, ঈশ্বরের রাজ্যে যাওযা সত্যিই কষ্টকর৷

25 একজন ধনী লোকের ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করার চেয়ে বরং সূচের ছিদ্র দিয়ে উটের যাওযা সহজ৷’

26 তখন তারা আরও আশ্চর্য হয়ে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করলেন, ‘তবে কারা উদ্ধার পেতে পারে?’

27 তখন যীশু তাদের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘এটা মানুষের পক্ষে অসন্ভব; কিন্তু ঈশ্বরের পক্ষে নয়, কারণ সমস্ত কিছুই ঈশ্বরের পক্ষে সন্ভব৷’

28 তখন পিতর তাঁকে বলতে লাগলেন, ‘দেখুন! আমরা সবকিছু ত্যাগ করে আপনার অনুসারী হয়েছি৷’

29 যীশু বললেন, ‘আমি তোমাদের সত্যি বলছিয়ে কেউ আমার জন্য বা আমার সুসমাচার প্রচারের জন্য বাড়িঘর, ভাইবোন, মা-বাবা, ছেলেমেয়ে জমিজমা ছেড়ে এসেছে,

30 তার বদলে সে এই জগতে তার শতগুণ ফিরে পাবে৷ তাকে তাড়না ভোগ করতে হলেও এই জগতে শতগুণ বাড়িঘর, ভাইবোন, মা, ছেলেমেয়ে এবং জমিজমা পাবে, আর পরবর্তী যুগে পাবে অনন্ত জীবন৷

31 কিন্তু আজ যাঁরা প্রথম, এমন অনেক লোক শেষে পড়বে এবং যাঁরা আজ শেষের তাদের মধ্যে অনেকেপ্রথম হবে৷

32 একদিন তাঁরা রাস্তা দিয়ে জেরুশালেমের দিকে যাচ্ছেন এবং যীশু তাঁদের আগে আগে চলেছেন৷ শিষ্যেরা আশ্চর্য হচ্ছিলেন আর তাঁর সঙ্গে যাঁরা চলছিল, সেই লোকেরা ভীত হল৷ তখন তিনি আবার সেই বারোজন প্রেরিতকে নিয়ে নিজের প্রতি যা যা ঘটবে তা তাদের বলতে লাগলেন৷

33 শোন, ‘আমরা জেরুশালেমে যাচ্ছি আর প্রধান যাজক এবং ব্যবস্থার শিক্ষকের হাতে মানবপুত্রকে সঁপে দেওযা হবে তারা তাকে মৃত্যুদণ্ড দেবে এবং অইহুদীদের হাতে তুলে দেবে৷

34 তারা বিদ্রূপ করবে, তাঁর মুখে থুথু দেবে, তাঁকে চাবুক মারবে এবং হত্যা করবে, আর তিন দিন পরে তিনি আবার বেঁচে উঠবেন৷’

35 পরে সিবদিয়ের ছেলে যাকোব এবং য়োহন তাঁর কাছে এসে বললেন, ‘হে গুরু, আমাদের ইচ্ছা এই, আমরা আপনার কাছে যা চাইব, আপনি আমাদের জন্য তা করবেন৷’

36 যীশু তখন তাঁদের বললেন, ‘তোমাদের ইচ্ছা কি, তোমাদের জন্য আমি কি করব?’

37 তাঁরা তাঁকে বললেন, ‘আমাদের এই বর দান করুন যাতে আপনি মহিমান্বিত হলে আমরা একজন আপনার ডানদিকে আর একজন বাঁ দিকে বসতে পাই৷’

38 যীশু তাঁদের বললেন, ‘তোমরা জান না তোমরা কি চাইছ? আমি য়ে পেযালায় পান করি, তাতে তোমরা কি চুমুক দিতে পারবে বা আমি য়ে বাপ্তিস্মে বাপ্তাইজ হই তাতে কি তোমরা বাপ্তাইজ হতে পারবে?’

39 তাঁরা তাঁকে বললেন, ‘আমরা পারব!’ তখন যীশু তাদের বললেন, ‘আমি য়ে পেযালায় পান করি তাতে তোমরা অবশ্যই চুমুক দেবে এবং আমি য়ে বাপ্তিস্মে বাপ্তাইজ হই তাতে তোমরাও বাপ্তাইজ হবে৷

40 কিন্তু আমার ডান দিকে বা বাঁদিকে বসতে দেবার অধিকার আমার নেই৷ কারা সেখানে বসবে তা আগেই স্থির হয়ে গেছে৷’

41 এই কথা শুনে অন্য দশ জন য়োহন ও যাকোবের প্রতি অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হলেন৷

42 কিন্তু যীশু তাঁদের ডেকে বললেন, ‘তোমরা জান জগতের মধ্যে যাঁরা শাসনকর্তা বলে গন্য, তারা তাদের উপর প্রভুত্ব করে এবং তাদের মধ্যে যাঁরা প্রধান, তারা তাদের উপর কর্ত্তৃত্ব করে৷

43 তোমাদের ক্ষেত্রে সেইরকম হবে না৷ তোমাদের মধ্যে কেউ যদি প্রধান হতে চায়, তবে সে তোমাদের ক্রীতদাস হবে,

44 এবং তোমাদের মধ্যে কেউ যদি প্রধান হতে চায়, সে সকলের দাস হবে৷

45 কারণ বাস্তবে মানবপুত্রও সেবা পেতে আসেন নি, তিনি অন্য়ের সেবা করতেই এসেছেন এবং অনেক মানুষের মুক্তিপণ হিসাবে নিজের জীবন দিতে এসেছেন৷’

46 তারপর তাঁরা যিরীহোতে এলেন৷ তিনি যখন নিজের শিষ্যদের এবং বহুলোকের সাথে যিরীহো ছেড়ে যাচ্ছিলেন, সেই সময় পথের ধারে তীময়ের ছেলে বরতীময় নামে এক অন্ধ ভিখারী বসেছিল৷

47 সে যখন শুনতে পেল য়ে উনি নাসরতীয় যীশু, তখন চেঁচিয়ে বলতে লাগল, ‘হে যীশু, দাযূদের পুত্র, আমার প্রতি দযা করুন৷’

48 তখন বহুলোক ‘চুপ চুপ’ বলে তাকে ধমক দিল৷ কিন্তু সে আরও জোরে চেঁচিয়ে বলতে লাগল, ‘হে দাযূদের পুত্র, আমার প্রতি দযা করুন!’

49 তখন যীশু সেখানে দাঁড়িয়ে পড়ে বললেন, ‘তাকে ডাকো৷’ তারা সেই অন্ধ লোকটিকে ডাকল এবং বলল, ‘ওহে সাহস কর, ওঠ, উনি তোমাকে ডাকছেন৷’

50 তখন সে নিজের পায়ের চাদর ফেলে দিয়ে লাফ দিয়ে উঠে যীশুর কাছে এল৷

51 যীশু তাকে বললেন, ‘তুমি কি চাও, আমি তোমার জন্য কি করব?’ অন্ধ লোকটি তাকে বলল, ‘হে গুরু, আমি য়েন দেখতে পাই৷’

52 তখন যীশু তাকে বললেন, ‘যাও, তোমার বিশ্বাসই তোমায় সুস্থ করল৷’ সঙ্গে সঙ্গে সে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেল এবং রাস্তা দিয়ে যীশুর পেছন পেছন চলতে লাগল৷

11

1 এরপর তাঁরা জেরুশালেমের কাছাকাছি পৌঁছে জৈতুনপর্বতমালায় বৈত্‌ফগী ও বৈথনিযা গ্রামে এলেন৷ সেখানে পৌঁছে তিনি তাঁর শিষ্যদের মধ্যে দুজনকে আগে পাঠিয়ে দিলেন৷

2 তিনি তাঁদের বললেন, ‘তোমরা তোমাদের সামনের ঐ গ্রামে যাও, গ্রামে ঢুকেই দেখবে একটা বাচ্চা গাধা বাঁধা আছে, যাতে কেউ কখনও বসে নি৷ সেই গাধাটাকে খুলে আন৷

3 যদি কেউ তোমাদের জিজ্ঞাসা করে, ‘কেন তুমি গাধাটি খুলছ? তখন তাকে বলবে, ‘এটা প্রভুর কাজে লাগবে আর সে তখনই সেটা পাঠিয়ে দেবে৷’

4 তাঁরা সেখানে গেলেন এবং দেখলেন দরজার কাছে রাস্তার ওপর একটা গাধা বাঁধা আছে৷ তখন তাঁরা দড়িটাকে খুলতে লাগলেন,

5 আর কিছু লোক সেখানে দাঁড়িয়েছিল, তারা তাঁদের বলল, ‘তোমরা কি করছ, গাধার বাচ্চাটাকে খুলছ কেন?’

6 তাতে যীশু য়েমন বলেছিলেন, তাঁরা সেইমতো উত্তর দিলেন, তখন লোকেরা আর কিছু বলল না, গাধার বাচ্চাটাকে নিয়ে য়েতে দিল৷

7 তাঁরা গাধার বাচ্চাটাকে যীশুর কাছে নিয়ে এসে গাধাটির উপরে তাদের জামাকাপড় পেতে দিলেন এবং যীশু তার উপরে বসলেন৷

8 তখন অনেকে তাদের জামাকাপড় রাস্তায় পেতে দিল আর অন্য়েরা মাঠ থেকে পাতা ঝরা গাছের ডালপালা কেটে এনে রাস্তার উপরে ছড়িয়ে দিল৷

9 আর য়ে সমস্ত লোক আগে এবং পেছনে যাচ্ছিল তারা চেঁচিয়ে বলতে লাগল, ‘হোশান্না! ‘ধন্য তিনি, যিনি প্রভুর নামে আসছেন!’গীতসংহিতা 118:25-26

10 আমাদের পিতৃপুরুষ দাযূদের য়ে রাজ্য আসছে, তা ধন্য! হোশান্না! স্বর্গে ঈশ্বরের মহিমা হোক্৷’

11 তিনি জেরুশালেমে ঢুকে মন্দিরে গেলেন৷ সেখানে চারদিকের সমস্ত কিছু লক্ষ্য করলেন; কিন্তু সন্ধ্য়ে হয়ে যাওযায় বারোজন প্রেরিতকে সঙ্গে নিয়ে তিনি বৈথনিযাতে ফিরে গেলেন৷

12 পরের দিন বৈথনিযা ছেড়ে আসার সময় তাঁর খিদে পেল৷

13 দূর থেকে তিনি একটি পাতায় ভরা ডুমুর গাছ দেখে তাতে কিছু ফল পাবেন ভেবে তার কাছে গেলেন, কিন্তু গাছটির কাছে গেলে পাতা ছাড়া আর কিছুই দেখতে পেলেন না; কারণ তখন ডুমুর ফলের মরশুম নয়৷

14 তখন তিনি গাছটিকে বললেন, ‘এখন থেকে তোমার ফল আর কেউ কোন দিন খাবে না!’ এই কথা তাঁর শিষ্যেরা শুনতে পেলেন৷

15 পরে তাঁরা জেরুশালেমে গেলেন; আর মন্দিরের মধ্যে ঢুকে যাঁরা কেনা বেচা করছিল সেইসব ব্যবসাযীদের বের করে দিলেন৷ তিনি পোদ্দারদের টেবিল এবং যাঁরা পায়রা বিক্রি করছিল তাদের আসন উল্টে দিলেন৷

16 তিনি মন্দিরের মধ্যে দিয়ে কাউকে কোন জিনিস নিয়ে য়েতে দিলেন না৷

17 তিনি শিক্ষা দিয়ে তাদের বললেন, ‘এটা কি লেখা নেই ‘আমার মন্দিরকে সমগ্র জাতির উপাসনা গৃহ বলা হবে?” কিন্তু তোমরা এটাকে দস্য়ুদের আস্তানায় পরিণত করেছ৷’

18 প্রধান যাজকরা এবং ব্যবস্থার শিক্ষকরা এই কথা শুনে তাঁকে হত্যা করার রাস্তা খুঁজতে থাকল, কারণ তারা তাঁকে ভয় করত, য়েহেতু তাঁর শিক্ষায় সমগ্র লোক আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিল

19 সেই দিন সন্ধ্য়ে হলেই যীশু ও তাঁর শিষ্যরা মহানগরীর বাইরে গেলেন৷

20 পরের দিন সকালে য়েতে য়েতে তাঁরা দেখলেন, সেই ডুমুর গাছটি মূল থেকে শুকিয়ে গেছে৷

21 পিতর আগের দিনের কথা মনে করে তাঁকে বললেন, ‘হে গুরু, দেখুন, আপনি য়ে ডুমুর গাছটিকে অভিশাপ দিয়েছিলেন সেটি শুকিয়ে গেছে৷’

22 তখন যীশু বললেন, ‘ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখ!

23 আমি তোমাদের সত্যি বলছি, কেউ যদি ঐ পাহাড়কে বলে, ‘উপরে যাও এবং সমুদ্রে গিয়ে পড়,’ আর তার মনে কোন সন্দেহ না থাকে এবং সে যদি বিশ্বাস করে য়ে সে যা বলছে তা হবে, তাহলে ঈশ্বর তার জন্য তাই করবেন৷

24 এইজন্য আমি তোমাদের বলি, তোমরা যা কিছুর জন্য প্রার্থনা কর, যদি বিশ্বাস কর য়ে, তোমরা তা পেয়েছ, তাহলে তোমাদের জন্য তা হবেই৷

25 আর তোমরা যখনই প্রার্থনা করতে দাঁড়াও, যদি কারোর বিরুদ্ধে তোমাদের কোন কথা থাকে, তাকে ক্ষমা কর, যাতে তোমাদের স্বর্গের পিতাও তোমাদের সমস্ত পাপ ক্ষমা করেন৷’

26

27 পরে তাঁরা জেরুশালেমে ফিরে এলেন৷ আর যখন তিনি মন্দিরের মধ্যে দিয়ে হাঁটছেন, সেই সময় প্রধান যাজকরা, ব্যবস্থার শিক্ষকরা ও বয়স্ক ইহুদী নেতারা তাঁর কাছে এলেন৷

28 তাঁরা তাকে বললেন, ‘কোন ক্ষমতায় তুমি এসব করছ? এসব করতে তোমাকে কেই বা এই ক্ষমতা দিয়েছে?’

29 যীশু তাঁদের বললেন, ‘আমি তোমাদের একটা প্রশ্ন করছি, যদি তোমরা উত্তর দিতে পারো, তাহলে আমি তোমাদের বলব কোন ক্ষমতায় এসব করছি৷

30 য়োহন য়ে বাপ্তাইজ করেছিলেন তা করার অধিকার তিনি স্বর্গ থেকে পেয়েছিলেন না মানুষের কাছ থেকে পেয়েছিলেন? আমাকে বলো৷’

31 তখন তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে বললেন, ‘যদি আমরা বলি, ‘স্বর্গ থেকে,’ তাহলে বলবে ‘তবে তোমরা তাকে বিশ্বাস কর নি কেন?’

32 কিন্তু যদি আমরা বলি, ‘মানুষের কাছ থেকে,’ তাহলে জনসাধারণ আমাদের ওপর রেগে যাবে৷’ তাঁরা জনসাধারণকে ভয় করতেন কারণ জনসাধারণের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল য়ে য়োহন একজন ভাববাদী৷

33 তাই তাঁরা যীশুকে বললেন, ‘আমরা জানি না৷’ তখন যীশু তাঁদের বললেন, ‘তবে আমিও কোন্ ক্ষমতায় এসব করছি, তা তোমাদের বলব না৷’

12

1 তখন যীশু দৃষ্টান্ত দিয়ে তাদের কাছে বলতে লাগলেন, ‘একটি লোক দ্রাক্ষা ক্ষেতের চারদিকে বেড়া দিলেন৷ তিনি দ্রাক্ষা মাড়াই করতে একটি গর্ত খুঁড়লেন, একটি উঁচু ঘর তৈরী করলেন এবং সেই ক্ষেত চাষীদের কাছে জমা দিয়ে অন্য দেশে চলে গেলেন৷

2 এরপর চাষীদের কাছে ফলের পাওনা অংশ পাবার জন্য তাদের কাছে ঠিক সময়ে তাঁর চাকরকে পাঠিয়ে দিলেন৷

3 কিন্তু চাষীরা তাকে মারধর করে খালি হাতে ফিরিয়ে দিল৷

4 তিনি আর একজন চাকরকে তাদের কাছে পাঠালেন, তারা তার মাথায় আঘাত করল,

5 এবং তাকে অপমান করল৷ তখন তিনি আর একজন চাকরকে পাঠালেন, তারা তাকে মেরে ফেলল৷ এইভাবে তিনি আরো অনেককে পাঠালেন৷ তারা তাদের মধ্যে কয়েকজনকে মারধোর করল এবং কয়েকজনকে মেরেই ফেলল৷

6 তাঁর একমাত্র প্রিয় পুত্র ছিল৷ তিনি শেষ পর্যন্ত তাঁকেই পাঠালেন, ভাবলেন তারা নিশ্চয়ই তাঁর পুত্রকে সম্মান করবে৷

7 চাষীরা তখন নিজেদের মধ্যে বলাবলি করল, ‘এই তো মালিকের ছেলে, ওর বাবা মরলে ক্ষেতের মালিক তো ওই হবে, এস! একে মেরে ফেল, তাহলে আমরা ক্ষেতের মালিক হব৷

8 তখন তারা তাকে মেরেই ফেলল ও তার মৃতদেহটি দ্রাক্ষা ক্ষেতের বাইরে ফেলে দিল৷

9 তখন সেই দ্রাক্ষা ক্ষেতের মালিক কি করবেন? তিনি এসে চাষীদের মেরে ফেলবেন এবং সেই দ্রাক্ষা ক্ষেতটি অন্যদের দিয়ে দেবেন৷

10 শাস্ত্রের এই কথা কি তোমরা পড় নি, ‘য়ে পাথর রাজমিস্ত্রিরা বাতিল করেছিল সেটিই হয়ে উঠল কোণের প্রধান পাথর?

11 এটা প্রভুই করেছেন, আর আমাদের চোখে এটা খুব চমকপ্রদ৷’গীতসংহিতা 118:22-23

12 তখন তারা তাঁকে গ্রেপ্তার করার চেষ্টা করতে লাগল, কিন্তু লোকদের ভয় পেল, কারণ তারা জানত য়ে দৃষ্টান্তটি তিনি তাদের উদ্দেশ্যেই বলেছেন, তাই তারা তাঁকে ছেড়ে চলে গেল৷

13 পরে ইহুদী নেতারা কয়েকজন ফরীশী এবং হেরোদীয়কে তাঁর কাছে পাঠিয়ে দিল, যাতে তারা যীশুকে কথার ফাঁদে ফেলতে পারে৷

14 তারা এসে তাঁকে বলল, ‘হে গুরু, আমরা জানি আপনিই সত্, এবং আপনি কোন লোককে ভয় করেন না৷ আপনি ঈশ্বরের পথের বিষয়ে সত্য শিক্ষা দেন৷ আচ্ছা, কৈসর সরকারকে কর দেওযা কি উচিত? আমরা দেব, কি দেব না?’

15 তিনি তাদের ভণ্ডামি বুঝতে পেরে বললেন, ‘তোমরা আমায় কেন পরীক্ষা করছ? আমাকে একটি দীনার এনে দেখাও৷’

16 তারা তাঁকে দীনার এনে দিলে তিনি তাদের বললেন, ‘এই মুখ এবং এই নাম কার?’ তারা তাঁকে বলল, ‘কৈসরের প্রতিমূর্তি, কৈসরের নাম৷’

17 তখন যীশু তাদের বললেন, ‘কৈসরের যা তা কৈসরকে দাও৷ আর ঈশ্বরের যা তা ঈশ্বরকে দাও৷’ তখন তারা তাঁর কথা শুনে বিস্ময়ে হতবাক্ হয়ে গেল৷

18 পরে কয়েকজন সদ্দূকী তাঁর কাছে এল যাঁরা বলত পুনরুত্থান বলে কিছু নেই৷ তারা তাঁকে জিজ্ঞেস করল,

19 ‘গুরু, মোশি আমাদের জন্য লিখেছেন, কারও ভাই যদি স্তত্রী রেখে মারা যায়, আর সে যদি কোন ছেলেমেয়ে না রেখে যায় তবে তার ভাই য়েন ঐ বিধবাকে বিয়ে করে নিজের ভাইয়ের বংশ রক্ষা করে৷

20 সাত ভাই ছিল, প্রথম জন একজন স্ত্রীলোককে বিয়ে করল আর সে ছেলেমেয়ে না রেখে মারা গেল৷

21 পরে দ্বিতীয় জন তাকে বিয়ে করল; কিন্তু সেও ছেলেমেয়ে না রেখে মারা গেল৷ তৃতীয় ভাই আগের ভাইয়ের মত বিয়ে করে ছেলেমেয়ে না রেখে মার গেল৷

22 এই সাত ভাইয়ের কেউই কোন ছেলেমেয়ে রেখে যায় নি৷ সবশেষে সেই স্ত্রীলোকটিও মারা গেল৷

23 মৃত্যুর পরে যখন তারা বেঁচে উঠবে, সে তাদের মধ্যে কার স্ত্রী হবে? কারণ তারা সাতজনই তো তাকে বিয়ে করেছিল৷’

24 যীশু তাদের বললেন, ‘তোমরা কেন এই ভুলের মধ্যে রয়েছ? তোমরা না জান শাস্ত্র, না জান ঈশ্বরের শক্তির কথা৷

25 কারণ মৃতদের মধ্যে থেকে পুনরুত্থিত হলে তারা বিয়ে করে না, বা তাদের বিয়ে দেওযা হয় না, বরং তারা স্বর্গে স্বর্গদূতদের মতোই থাকে৷’

26 কিন্তু পুনরুত্থান হবে কিনা এ ব্যাপারে মোশির পুস্তকে লেখা জ্বলন্ত ঝোপের অংশটিতে ঈশ্বর তাকে কি বলেছিলেন তা কি তোমরা পড় নি? তিনি বলেছিলেন, ‘আমি অব্রাহামের ঈশ্বর, ইসহাকের ঈশ্বর এবং যাকোবের ঈশ্বর৷’

27 তিনি মৃতদের ঈশ্বর নন, জীবিতদেরই ঈশ্বর৷ তোমরা বড়ই ভুল করেছ৷’

28 ব্যবস্থার শিক্ষকদের মধ্যে একজন কাছে এসে তাদের আলোচনা শুনলেন৷ যীশু তাদের ঠিক উত্তর দিয়েছেন জেনে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘শাস্ত্রে সমস্ত আদেশের মধ্যে কোনটি প্রধান?’

29 যীশু উত্তর দিলেন, ‘এটাই প্রধান! ‘শোন, হে ইস্রায়েল, আমাদের ঈশ্বর প্রভু একমাত্র প্রভু৷

30 তুমি তোমার সমস্ত হৃদয়, মন, প্রাণ ও সমস্ত শক্তি দিয়ে তোমার ঈশ্বর প্রভুকে ভালবাসবে৷’

31 আর দ্বিতীয় আদেশ হল, এই, ‘তোমার প্রতিবেশীকে নিজের মতো ভালবাসবে৷’ এই আদেশ দুটি থেকে আর কোন বড় আদেশ নেই৷’

32 তখন ব্যবস্থার শিক্ষকরা তাঁকে বললেন, ‘বেশ, গুরু, আপনি ঠিক বলেছেন য়ে ঈশ্বরই প্রভু, তিনি ছাড়া অন্য কেউ নেই৷

33 আর সমস্ত হৃদয়, সমস্ত শক্তি দিয়ে তাঁকে ভালবাসো এবং প্রতিবেশীকে নিজের মতো ভালবাসা হচ্ছে সমস্ত রকম বলিদান ও উত্‌সর্গের থেকে অনেক ভাল৷’

34 তখন তিনি বুদ্ধির সঙ্গে উত্তর দিয়েছেন দেখে যীশু তাঁকে বললেন, ‘ঈশ্বরের রাজ্য থেকে তুমি খুব বেশী দূরে নও৷’ এরপরে তাঁকে কোন কথা জিজ্ঞেস করতে আর কারো সাহস হল না৷

35 যীশু মন্দিরে শিক্ষা দেবার সময় বললেন, ‘ব্যবস্থার শিক্ষকরা কেমন করে বলে য়ে খ্রীষ্ট দাযূদের পুত্র?

36 দাযূদ তো নিজেই পবিত্র আত্মার প্রেরণাতেই এই কথা বলেছেন: ‘প্রভু আমার প্রভুকে বললেন, ‘তুমি আমার ডানদিকে বস যতক্ষণ না তোমার শত্রুদের তোমার পায়ের তলায় রাখি৷’ গীতসংহিতা 110:1

37 দাযূদ নিজেই খ্রীষ্টকে ‘প্রভু’ বলেন৷ তবে কেমন করে খ্রীষ্ট দাযূদের পুত্র হলেন?’ অনেক লোক আনন্দের সাথে তাঁর কথা শুনল৷

38 আর তাঁর শিক্ষায় তিনি তাদের বললেন, ‘ব্যবস্থার শিক্ষকদের থেকে সাবধান, তারা লম্বা লম্বা পোশাক পরতে চায়, হাটে বাজারে লোকদের সম্মান,

39 সমাজগৃহে গুরুত্বপূর্ণ আসন এবং নৈশ ভোজে গুরুত্বপূর্ণ আসন পেতে ভালবাসে৷

40 এই লোকেরাই বিধবাদের বাড়িগুলি আত্মসাত্ করে, আর সেই দোষ ঢাকতে লম্বা লম্বা প্রার্থনা করে৷ ঐ সমস্ত লোকেরা বিচারে আরো কড়া শাস্তি পাবে৷’

41 যীশু দানের বাক্সের সামনে বসে, লোকেরা কেমন করে তাতে টাকা পয়সা ফেলছে তা দেখছিলেন৷ বহু ধনী লোক প্রচুর টাকা পয়সা তার মধ্যে রাখল৷

42 পরে একজন গরীব বিধবা এসে তাতে দুটি তামার মুদ্রা ফেলল, যার মূল্য এক সিকিরও কম৷

43 তখন যীশু নিজের শিষ্যদের কাছে ডেকে বললেন, ‘আমি তোমাদের সত্যি বলছি, দানবাক্সে যাঁরা টাকা পয়সা রেখেছে, তাদের সবার থেকে এই গরীব বিধবা বেশী রাখল৷

44 কারণ তারা সকলে নিজের নিজের অতিরিক্ত অর্থ থেকে কিছু কিছু রেখেছে কিন্তু এই গরীব বিধবা তার যা কিছু সম্বল ছিল, তার সবটুকুই দিয়ে গেল৷’

13

1 যীশু যখন মন্দির ছেড়ে যাচ্ছেন, সেই সময় শিষ্যদের মধ্যে একজন তাঁকে বললেন, ‘হে গুরু, দেখুন কত চমত্‌কার বিশাল বিশাল পাথর ও কত সুন্দর দালান৷’

2 তখন যীশু তাঁকে বললেন, ‘তুমি এইসব বড় বড় দালান দেখছ? এর একটা পাথর আর একটা পাথরের ওপরে থাকবে না; সবই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে৷’

3 পরে তিনি মন্দিরের সামনে জৈতুন পর্বতমালায় বসলে, পিতর, যাকোব, য়োহন এবং আন্দরিয় তাঁকে একা পেয়ে জিজ্ঞাসা করলেন,

4 ‘আমাদের বলুন দেখি, এই সমস্ত ঘটনা কখন ঘটবে? আর কি চিহ্ন দেখেই বা বুঝতে পারব য়ে এই সমস্ত ঘটনা ঘটতে চলেছে?’

5 তখন যীশু তাঁদের বলতে লাগলেন, ‘সতর্ক থেকো, কেউ য়েন তোমাদের না ভোলায়৷

6 সেদিন অনেকে আমার নাম নিয়ে আসবে এবং বলবে, ‘আমিই তিনি’ এবং তারা আরও অনেকের মন ভোলাবে৷

7 কিন্তু তোমরা যখন যুদ্ধের কথা ও যুদ্ধের জনরব শুনবে, তখন অস্থির হযো না; এটা ঘটবেই, কিন্তু তখনও শেষ নয়৷

8 কারণ জাতির বিরুদ্ধে জাতি এবং রাজ্যের বিরুদ্ধে রাজ্য জেগে উঠবে৷ স্থানে স্থানে ভূমিকম্প, দুর্ভিক্ষ হবে৷ এসব কেবল জন্ম যন্ত্রণার আরন্ভ মাত্র৷

9 ‘তোমরা নিজেদের ব্যাপারে সাবধান! লোকে তোমাদের আদালতে হাজির করবে এবং সমাজগৃহের মধ্যে তোমাদের ধরে মারবে৷ আমার জন্য তোমরা দেশের শাসনকর্তা ও রাজাদের কাছে সাক্ষী দেবার জন্য তাদের সামনে দাঁড়াবে৷

10 আর সব কিছু শেষ হবার আগে সমস্ত জাতির কছে সুসমাচার প্রচার করা হবে৷

11 কিন্তু লোকে যখন তোমাদের গ্রেপ্তার করে বিচার সভায় নিয়ে যাবে তখন তাদের সামনে কি বলবে তা আগে থেকে ভেবো না, বরং সেই সময়ে পবিত্র আত্মা যা বলতে বলবেন তাই বলবে৷ কারণ তোমরাই য়ে কথা বলবে তা নয়, পবিত্র আত্মাই তোমাদের মধ্যে দিয়ে কথা বলবেন৷

12 তখন ভাই ভাইকে ও বাবা সন্তানকে মৃত্যুর হাতে তুলে দেবে এবং সন্তানরা বাবা-মার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে তাদের হত্যার জন্য ধরিয়ে দেবে৷

13 আর আমার নামের জন্য সকলে তোমাদের ঘৃণা করবে৷ কিন্তু য়ে শেষ পর্যন্ত স্থির থাকবে সেই রক্ষা পাবে৷

14 ‘যখন তোমরা দেখবে, ‘ধ্বংসের সেই ঘৃণার বস্তু য়েখানে দাঁড়াবার নয় সেখানে দাঁড়িয়ে আছে৷’ পাঠকের বোঝা উচিত্ এর অর্থ কি,’তখন যাঁরা যিহূদিযাতে থাকে তারা পাহাড়ে পালিয়ে যাক৷

15 এবং কেউ যদি ছাদে থাকে, সে য়েন বাড়ি থেকে কোন কিছু নেবার জন্য নীচে না নামে বা ঘরে না ঢোকে৷

16 কেউ যদি মাঠে থাকে, সে য়েন জামাকাপড় নেবার জন্য ফিরে না যায়৷

17 হায়, সেই সময়ে গর্ভবতী বা যাদের কোলে শিশু থাকবে তাদের কত কষ্ট!

18 আর প্রার্থনা কর য়েন এটা শীতকালে না ঘটে,

19 কারণ সেই সময় হবে বড়ই কষ্টের সময়৷ তেমনটি প্রথম যখন ঈশ্বর পৃথিবী সৃষ্টি করলেন, তখন থেকে এখন পর্যন্ত কখনই হয় নি আর কখনও হবেও না৷

20 আর প্রভু যদি সেই দিনের সংখ্যা কমিয়ে না দিতেন, তবে কোন প্রাণই রক্ষা পেত না৷ কিন্তু তিনি যাদের মনোনীত করেছেন, সেই মনোনীতদের জন্য সেই দিনের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছেন৷

21 কেউ যদি তখন তোমাদের বলে, ‘দেখ, খ্রীষ্ট এখানে বা ওখানে আছেন, তোমরা বিশ্বাস কোরো না৷

22 কারণ ভণ্ড খ্রীষ্টেরা এবং ভাববাদীরা উঠবে এবং নানা চিহ্ন ও অলৌকিক কাজ করে দেখাবে, এমন কি সন্ভব হলে মনোনীত লোকদেরও ভোলাবে৷

23 কিন্তু তোমরা সাবধান থেকো৷ আমি তোমাদের আগেই সমস্ত কিছু বলে দিলাম৷

24 ‘কিন্তু সেই সময়, সেই কষ্টের শেষে, ‘সূর্য় অন্ধকার হয়ে যাবে এবং চাঁদ আর আলো দেবে না৷

25 আকাশ থেকে তারা খসে পড়বে, আকাশের সমস্ত শক্তি বিচলিত হবে৷’যিশাইয় 13:10, 34:4

26 ‘তখন লোকেরা দেখবে, মানবপুত্র মহামহিমায় ও পরাক্রমের সঙ্গে মেঘরথে আসছেন৷

27 তখন মানবপুত্র তাঁর স্বর্গদূতদের পাঠিয়ে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আকাশের অন্য প্রান্ত পর্যন্ত চারিবাযু থেকে তাঁর মনোনীত লোকদের সংগ্রহ করবেন৷

28 ‘ডুমুর গাছ থেকে এই দৃষ্টান্ত শেখো; যখন তার শাখা-প্রশাখা কোমল হয়ে পাতা বের করে, তখন তোমরা জানতে পার গরম কাল এসে গেল৷

29 ঠিক তেমনি ঐ সমস্ত ঘটনা ঘটতে দেখলেই তোমরা বুঝতে পারবে য়ে সময় খুব কাছে, এমনকি দরজার সামনে৷

30 আমি তোমাদের সত্যি বলছি, সমস্ত ঘটনা না ঘটা পর্যন্ত এই প্রজন্মের শেষ হবে না৷

31 আকাশ এবং পৃথিবীর লোপ হবে, কিন্তু আমার কথা লোপ কখনও হবে না৷

32 ‘সেই দিনের বা সেই সময়ের কথা কেউ জানে না; স্বর্গদূতরাও নয়, মানবপুত্রও নয়, কেবলমাত্র পিতাই জানেন৷

33 সাবধান! তোমরা সতর্ক থেকো৷ কারণকখন য়ে সেই সময় হবে তোমরা তা জানো না৷

34 সেই দিনটা এমনভাবেই আসবে য়েমন কোন লোক নিজের বাড়ি ছেড়ে বিদেশে বেড়াতে যায় এবং তার চাকরদের দাযিত্ব দিয়ে প্রত্যেকের কাজ ঠিক করে দেয় আর দ্বাররক্ষককে সজাগ থাকতে বলে৷

35 তাই তোমরা সতর্ক থাকবে, কারণ তোমরা জান না কখন বাড়ির মালিক আসবেন, সন্ধ্যাবেলায়, কি মাঝরাতে, কুকড়া ডাকের সময় কি ভোরবেলায়৷

36 হঠাত্ তিনি এসে য়েন না দেখেন য়ে তোমরা ঘুমিয়ে রয়েছ৷

37 আমি তোমাদের যা বলছি, তা সবাইকে বলি, ‘সজাগ থেকো৷”

14

1 দুদিন পরে নিস্তারপর্ব এবং খামিরবিহীন রুটির উত্‌সব পর্ব৷ প্রধান যাজকরা এবং ব্যবস্থার শিক্ষকরা সেই সময়ে তাঁকে কেমন করে ছলে বলে গ্রেপ্তার করে মেরে ফেলতে পারে তারই চেষ্টা করছিলেন৷

2 তাঁরা বললেন, ‘উত্‌সবের সময় আমরা এটা করব না, কারণ তাতে লোকেদের মধ্যে গণ্ডগোল বেধে যাতে পারে৷’

3 যখন তিনি বৈথনিযাতে কুষ্ঠী শিমোনের বাড়িতে ছিলেন, তখন তিনি খেতে বসলে একটি স্ত্রীলোক শ্বেত পাথরের শিশিতে দামী সুগন্ধি জটামাংসীর তেল নিয়ে এল৷ সে শিশিটি ভেঙ্গে তাঁর মাথায় সেই তেল ঢেলে দিল৷

4 কিছু লোক এতে খুব রেগে গিয়ে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করল, ‘সুগন্ধি তেলের অপচয় করা হল কেন?

5 এই তেল তো তিনশো দীনারের বেশী দামে বিক্রি করা য়েত এবং সেই টাকা গরীবদের দেওযা য়েত৷’ আর তারা স্ত্রীলোকটির কঠোর সমালোচনা করল৷

6 কিন্তু যীশু বললেন, ‘ওকে য়েতে দাও৷ তোমরা কেন ওকে দুঃখ দিচ্ছ? সে তো আমার জন্য ভাল কাজই করেছে৷

7 কারণ গরীবরা তোমাদের কাছে সবসময় আসে, তোমরা যখন ইচ্ছা তাদের উপকার করতে পার; কিন্তু আমাকে তোমরা সবসময় পাবে না৷

8 সে যা করতে পারত তাই করেছে৷ সে আগে থেকে সমাধির উদ্দেশ্যে আমার গায়ে সুগন্ধি তেল ঢেলে দিয়েছে৷

9 আমি তোমাদের সত্যি বলছি, জগতে য়েখানেই আমার সুসমাচার প্রচার করা হবে, সেখানেই এই স্ত্রীলোকটির স্মরণার্থে তার কাজের কথা বলা হবে৷’

10 তখন সেই বারোজনের মধ্যে একজন যিহূদা ঈষ্করিযোতীয় প্রধান যাজকদের কাছে যীশুকে ধরিয়ে দেবার মতলবে গেল৷

11 তারা এই কথা শুনে খুব খুশী হলো এবং তাকে টাকা দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিল৷ তখন সে যীশুকে ধরিয়ে দেবার জন্য সুয়োগ খুঁজতে লাগল৷

12 খামিরবিহীন রুটির পর্বের প্রথম দিন, য়েদিন ইহুদীরা মেষ উত্‌সর্গ করত, সেইদিন তাঁর শিষ্যেরা তাঁকে বললেন, ‘আমরা কোথায় গিয়ে আপনার জন্য ভোজ প্রস্তুত করব, আপনার ইচ্ছা কি?’

13 তখন তিনি শিষ্যদের মধ্যে দুজনকে পাঠিয়ে দিয়ে বললেন, ‘তোমরা শহরে যাও, একটা লোক তোমাদের সামনে পড়বে, য়ে এক কলসী জল নিয়ে আসবে, তাকে অনুসরণ কর৷

14 সে য়ে বাড়িতে ঢুকবে সেই বাড়ির মালিককে বলবে, ‘গুরু বলেছেন, সেই অতিথির ঘর কোথায় য়েখানে আমি আমার শিষ্যদের সাথে নিস্তারপর্বের ভোজ খেতে পারি৷’

15 তখন সে ওপরের একটি বড় সাজানো গোছান ঘর দেখিয়ে দেবে৷ সেখানেই আমাদের জন্য ভোজ প্রস্তুত করো৷’

16 পরে শিষ্যরা সেখান থেকে শহরে চলে এলেন৷ তিনি য়েরকম বলেছিলেন তাঁরা ঠিক সেইরকম দেখতে পেলেন; আর নিস্তারপর্বের ভোজের আযোজন সেখানেই করলেন৷

17 সন্ধ্য়ে হলে সেই বারো জন প্রেরিতদের সাথে তিনি সেখানে এলেন৷

18 যখন তাঁরা একসঙ্গে খেতে বসেছেন, যীশু বললেন, ‘আমি তোমাদের সত্যি বলছি, তোমরা যাঁরা আমার সঙ্গে খেতে বসেছ, তোমাদের মধ্যে একজন আমাকে শত্রুর হাতে তুলে দেবে৷’

19 এতে তাঁরা অত্যন্ত দুঃখ পেলেন এবং প্রত্যেকে এক এক করে জিজ্ঞেস করলেন, ‘সে কি আমি?’

20 তিনি তাদের বললেন, ‘এই বারোজনের মধ্যে য়ে জন আমার সঙ্গে বাটিতে রুটি ডুবিয়ে খাচ্ছে সেই সে জন৷

21 মানবপুত্রের ব্যাপারে শাস্ত্রে য়েমন লেখা আছে, ঠিক সেইভাবে তিনি চলে যাবেন৷ কিন্তু ধিক্ সেই লোকটিকে য়ে মানবপুত্রকে শত্রুর হাতে ধরিয়ে দেবে৷ সেই লোকটির জন্ম না হওযাই ভাল ছিল৷

22 তাঁরা যখন খাচ্ছিলেন, সেই সময় তিনি রুটি নিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন৷ রুটি খানি ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে তা শিষ্যদের দিয়ে বললেন, ‘এটা নাও: এটা আমার শরীর৷’

23 তারপর তিনি পেযালা তুলে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিয়ে শিষ্যদের হাতে দিলেন৷ আর তাঁরা সকলে তা থেকে পান করলেন৷

24 তিনি তাঁদের বললেন, ‘এটা আমার নতুন নিয়মের রক্ত যা অনেকের জন্যই পাতিত হবে৷

25 আমি তোমাদের সত্যি বলছি, আমি আর দ্রাক্ষারস পান করব না, যতদিন পর্যন্ত না আমি ঈশ্বরের রাজ্যে সেই দিনে নতুন দ্রাক্ষারস পান না করি৷’

26 এরপর তাঁরা স্তবগান করে জৈতুন পর্বতের দিকে গেলেন৷

27 যীশু তাদের বললেন, ‘তোমরা সকলে বিশ্বাস হারাবে, কারণ শাস্ত্রে লেখা আছে, ‘আমি মেষপালককে আঘাত করব এবং মেষেরা চারদিকে ছড়িয়ে পড়বে৷’সখরিয় 13:7

28 আমি বেঁচে উঠলে, তোমাদের আগে গালীলে যাব৷’

29 পিতর তাঁকে বললেন, ‘এমনকি সকলে বিশ্বাস হারালেও আমি হারাব না৷’

30 তখন যীশু তাঁকে বললেন, ‘আমি সত্যি বলছি, আজ এই রাতেই দুবার মোরগ ডাকার আগে তুমি আমাকে তিনবার অস্বীকার করবে৷’

31 কিন্তু পিতর আরও জোর দিয়ে বললেন, ‘যদি আপনার সঙ্গে মরতেও হয়, তবুও আমি আপনাকে অস্বীকার করব না৷’ বাকি সকলে সেই একই শপথ করলেন৷

32 তখন তাঁরা গেত্‌শিমানী নামে একস্থানে এলেন৷ আর যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন, ‘যতক্ষণ আমি প্রার্থনা করি, তোমরা এখানে বসে থাক৷’

33 পরে তিনি পিতর, যাকোব এবং য়োহনকে সঙ্গে নিয়ে গেলেন, সেসময় ব্যথায় তাঁর আত্মা ব্যাকুল হয়ে উঠল৷

34 তিনি তাঁদের বললেন, ‘আমার প্রাণ মৃত্যু পর্যন্ত উদ্বেগে আচ্ছন্ন৷ তোমরা এখানে থাক আর জেগে থাক৷’

35 পরে কিছুটা এগিয়ে মাটিতে উপুড় হয়ে পড়ে তিনিপ্রার্থনা করলেন য়ে যদি সন্ভব হয় তবে এই দুঃখের সময়টা তাঁর কাছ থেকে সরে যাক৷

36 তিনি বললেন, ‘আব্বা, পিতা তোমার পক্ষে তো সবই সন্ভব৷ এই পানপাত্র আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নাও৷ কিন্তু তবুও আমি যা চাই তা নয়; তোমার ইচ্ছাই পূর্ণ হোক৷’

37 পরে তিনি এসে দেখলেন তাঁরা ঘুমিয়ে পড়েছেন, আর তিনি পিতরকে বললেন, ‘শিমোন তুমি কি ঘুমিয়ে পড়েছ? তুমি একঘন্টাও জেগে থাকতে পারলে না?

38 তোমরা জেগে থাক এবং প্রার্থনা কর, যাতে প্রলুধ্ধ না হও৷ আত্মা ইচ্ছুক কিন্তু শরীর দুর্বল৷’

39 তিনি আবার গেলেন এবং একই কথা বলে প্রার্থনা করলেন৷

40 তারপর ফিরে এসে দেখলেন তাঁরা ঘুমাচ্ছেন, কারণ ঘুমে তাদের চোখ বন্ধ হয়ে আসছিল৷ তাঁরা যীশুর দিকে তাকিয়ে তাঁকে কি বলবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না৷

41 পরে তিনি তৃতীয়বার এসে তাঁদের বললেন, ‘তোমরা কি এখনও ঘুমোচ্ছ, বিশ্রাম করছ? যথেষ্ট হয়েছে৷ সময় হয়ে গেছে৷ দেখ, মানবপুত্রকে বিশ্বাসঘাতকতা করে পাপীদের হাতে তুলে দেওযা হচ্ছে৷

42 ওঠ! আমরা যাই! ঐ দেখ, য়ে আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে সে আসছে৷’

43 আর তিনি যখন কথা বলছিলেন, সেই সময় যিহূদা, সেই বারোজন প্রেরিতের মধ্যে একজন এল৷ আর তার সাথে অনেক লোক তরোয়াল লাঠি নিয়ে এল৷ প্রধান যাজক, ব্যবস্থার শিক্ষক এবং বয়স্ক ইহুদী নেতারা এই লোকদের পাঠিয়েছিলেন৷

44 সেই বিশ্বাসঘাতক যিহূদা তাদের এই সঙ্কেত দিয়েছিল; ‘যাকে আমি চুমু দেব, সেই ঐ লোকটি৷ তোমরা তাকে ধরে পাহারা দিয়ে নিয়ে যাবে৷’

45 সে উপস্থিত হয়েই যীশুর কাছে গিয়ে বলল, ‘গুরু!’ বলেই তাঁকে চুমু দিল৷

46 তখন তারা তাঁকে ধরে গ্রেপ্তার করল৷

47 যাঁরা তাঁর কাছে দাঁড়িয়েছিল তাদের মধ্যে একজন নিজের তরোয়াল বের করে মহাযাজকের চাকরকে আঘাত করে তার কান কেটে দিল৷

48 তখন যীশু তাদের বললেন, ‘তোমরা লাঠি, তরোযাল নিয়ে আমাকে ধরতে এসেছ৷ মনে হচ্ছে আমি একজন দস্য়ু৷

49 আমি প্রতিদিন মন্দিরে তোমাদের মধ্যে থেকেছি ও শিক্ষা দিয়েছি, তখন তো আমায় ধরলে না৷ কিন্তু শাস্ত্রের বাণী সফল হবেই৷’

50 তখন তাঁর সব শিষ্যেরা তাঁকে ফেলে পালিয়ে গেলেন৷

51 আর একজন যুবক উলঙ্গ শরীরে একটি চাদর জড়িয়ে তাঁকে অনুসরণ করল৷ তারা তাকে গ্রেপ্তার করার চেষ্টা করল৷

52 কিন্তু সে চাদরটি ফেলে উলঙ্গ অবস্থায় পালিয়ে গেল৷

53 তখন তারা যীশুকে মহাযাজকের কাছে নিয়ে এল৷ প্রধান যাজকরা, বয়স্ক ইহুদী নেতারা এবং ব্যবস্থার শিক্ষকরা সকলে এক জায়গায় জড়ো হলেন৷

54 আর পিতর দূরে দূরে থেকে যীশুর পেছনে য়েতে য়েতে মহাযাজকের উঠোন পর্যন্ত গেলেন এবং রক্ষীদের সঙ্গে বসে আগুন পোহাতে লাগলেন৷

55 তখন প্রধান যাজকরা এবং মহাসভার সকলেই এমন একজন সাক্ষী খুঁজছিলেন যার কথার জোরে যীশুকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা যায়; কিন্তু তেমন সাক্ষ্য তারা পেলেন না৷

56 কারণ অনেকে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষী দিল বটে কিন্তু তাদের সাক্ষ্য মিলল না৷

57 তখন কিছু লোক তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষী দিয়ে বলল,

58 ‘আমরা তাঁকে বলতে শুনেছি, ‘মানুষের হাতে তৈরী এই মন্দিরটি ভেঙ্গে ফেলব এবং তিন দিনের মধ্যে মানুষের হাত দিয়ে তৈরী নয় এমনই একটি মন্দির আমি গড়ে তুলব৷”

59 কিন্তু এতেও তাদের সাক্ষ্যের প্রমাণ মিলল না৷

60 তখন মহাযাজক সকলের সামনে দাঁড়িয়ে যীশুকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কি কিছুই উত্তর দেবে না? এই সমস্ত লোকরা তোমার বিরুদ্ধে কি সাক্ষ্য দিচ্ছে?’

61 কিন্তু তিনি চুপচাপ থাকলেন, কোন উত্তর দিলেন না৷ আবার মহাযাজক তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কি সেই পরম খ্রীষ্ট পরম ধন্য, ঈশ্বরের পুত্র?’

62 যীশু বললেন, ‘হ্যাঁ, আমিই ঈশ্বরের পুত্র৷ তোমরা একদিন মানবপুত্রকে ঈশ্বরের ডানপাশে বসে থাকতে আকাশের মেঘে আবৃত হয়ে আসতে দেখবে৷’

63 তখন মহাযাজক তাঁর পোশাক ছিঁড়ে বললেন, ‘আমাদের সাক্ষীর আর কি প্রযোজন?

64 তোমরা তো ঈশ্বর নিন্দা শুনলে৷ তোমাদের কি মনে হয়?’ তারা সকলে তাঁকে দোষী স্থির করে বলল, ‘এঁর মৃত্যুদণ্ড হওযা উচিত৷’

65 তখন কেউ কেউ তাঁর মুখে থুথু ছিটিয়ে দিল, তাঁর মুখ ঢেকে ঘুষি মারল এবং বলতে লাগল, ‘ভাববাণী করে বল তো, কে তোমাকে ঘুষি মারল?’ পরে রক্ষীরা তাঁকে মারতে মারতে নিয়ে গেল৷

66 পিতর যখন নীচে উঠোনে ছিলেন, তখন মহাযাজকের একজন চাকরানী এল৷

67 সে পিতরকে আগুন পোহাতে দেখে তাঁর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘তুমিও তো নাসরতীয় যীশুর সঙ্গে ছিলে?’

68 কিন্তু পিতর অস্বীকার করে বললেন, ‘আমি জানি না, আর বুঝতেও পারছি না তুমি কি বলছ?’ এই বলে তিনি বারান্দার দিকে য়েতেই একটা মোরগ ডেকে উঠল৷

69 কিন্তু চাকরানীটা তাকে দেখে, যাঁরা তার কাছে দাঁড়িয়েছিল তাদের বলতে লাগল, ‘এই লোকটি ওদেরই একজন!’

70 তিনি আবার অস্বীকার করলেন৷ কিছুক্ষণ বাদে যাঁরা সেখানে দাঁড়িয়েছিল তারা পিতরকে বলল, ‘সত্যি তুমি তাদের একজন, কারণ তুমি গালীলের লোক৷’

71 তিনি অভিশাপ দিয়ে শপথ করে বলতে লাগলেন, ‘তোমরা য়ে লোকটির কথা বলছ, তাকে আমি চিনি না৷’

72 আর সঙ্গে সঙ্গে দ্বিতীয়বার মোরগটি ডেকে উঠল, তাতে যীশু য়ে কথা বলেছিলেন, ‘মোরগটি দুবার ডাকার আগে তুমি তিনবার আমাকে অস্বীকার করবে’ সে কথা পিতরের মনে পড়ল আর তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন৷

15

1 সকাল হতেই প্রধান যাজকরা, বয়স্ক ইহুদী নেতারা, ব্যবস্থার শিক্ষকরা ও সমস্ত মহাসভার লোকেরা শলাপরামর্শ করলেন৷ তাঁরা যীশুকে বেঁধে পীলাতের কাছে পাঠালেন এবং তাঁর হাতে তুলে দিলেন৷

2 তখন পীলাত তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কি ইহুদীদের রাজা?’ যীশু তাঁকে বললেন, ‘হ্যাঁ, আপনি য়েমন বললেন তেমনই৷’

3 তখন প্রধান যাজকরা যীশুর বিরুদ্ধে নানান দোষের কথা বলতে লাগলেন৷

4 পীলাত তাঁকে আবার জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কি কিছুই উত্তর দেবে না? দেখ, এরা তোমার বিরুদ্ধে কত অভিযোগ করছে!’

5 কিন্তু তবু যীশু কোন উত্তর দিলেন না দেখে পীলাত আশ্চর্য হয়ে গেলেন৷

6 নিস্তারপর্বের সময়ে পীলাত লোকদের ইচ্ছে মতো একজন বন্দীকে মুক্ত করে দিতেন৷

7 সেই সময় বারাব্বা নামে একটি লোক বিদ্রোহীদের সাথে কারাগারে ছিল, যাঁরা বিদ্রোহের সময় অনেক খুন জখম করেছিল৷

8 আর তিনি পীলাত লোকদের জন্য সচরাচর যা করতেন, সেই লোকেরা তাকে তাই করতে বলল৷

9 পীলাত তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইহুদীদের রাজাকে আমি তোমাদের জন্য মুক্ত করে দিই, এটাই কি তোমাদের ইচ্ছা?’

10 কারণ তিনি বুঝতে পেরেছিলেন প্রধান যাজকরা হিংসার বশবর্তী হয়ে যীশুকে তার হাতে তুলে দিয়েছিল৷

11 কিন্তু প্রধান যাজকরা জনতাকে ক্ষেপিয়ে তুলল যাতে তারা যীশুর পরিবর্তে বারাব্বার মুক্তি দাবি করে৷

12 কিন্তু পীলাত আবার তাদের বললেন, ‘তবে তোমরা যাকে ইহুদীদের রাজা বল তাকে কি করব?’

13 তারা চেঁচিয়ে বলল, ‘ওকে ক্রুশে দাও!’

14 কিন্তু তিনি তাদের বললেন, ‘কেন? এ কি মন্দ কাজ করেছে?’ তারা আরও চেঁচিয়ে বলল, ‘ওকে ক্রুশে দাও!’

15 তখন পীলাত লোকদের খুশী করতে বারাব্বাকে তাদের জন্য ছেড়ে দিলেন এবং যীশুকে চাবুক মেরে ক্রুশে বিদ্ধ করবার জন্য তাদের হাতে তুলে দিলেন৷

16 পরে সেনারা প্রাসাদের মধ্যে অর্থাত্ প্রধান শাসনকর্তার সদর দপ্তরের উঠোনে যীশুকে নিয়ে গিয়ে সমস্ত সেনাদের ডাকল৷

17 তারা যীশুকে বেগুনী রঙের কাপড় পরিয়ে দিল এবং কাঁটার মুকুট তৈরী করে তাঁর মাথায় চাপিয়ে দিল৷

18 তারা তাঁকে অভিবাদন জানিয়ে বলতে লাগল, ‘ইহুদীদের রাজা নমস্কার!’

19 তারা তাঁর মাথায় একটা লাঠি দিয়ে বার বার মারতে লাগল ও তাঁর গায়ে থুথু ছিটিয়ে দিল৷ তাঁর সামনে হাঁটু গেড়ে তাঁকে প্রণাম করতে থাকল৷

20 তাঁকে নিয়ে এইভাবে মজা করবার পর তারা ঐ বেগুনী রঙের কাপড় খুলে নিয়ে তাঁর নিজের কাপড় পরিয়ে দিল৷ আর ক্রুশে দেবার জন্য তাঁকে বাইরে নিয়ে গেল৷

21 সেই সময় শিমোন নামে একটা লোক কুরীশীর গ্রামাঞ্চল থেকে সেই পথ ধরে আসছিল৷ সে আলেকসান্দর ও রূফের বাবা৷ সেনারা তাকে যীশুর ক্রুশ বয়ে নিয়ে যাবার জন্য বেগার ধরল৷

22 পরে তারা যীশুকে গলগথা নামে এক জায়গায় নিয়ে এল৷ গলগথার অর্থ ‘মাথার খুলির স্থান৷’

23 তারা তাঁকে গন্ধরস মেশানো দ্রাক্ষারস পান করতে দিল; কিন্তু তিনি তা পান করলেন না৷

24 পরে তারা তাঁকে ক্রুশে বিদ্ধ করল৷ তাঁর কাপড়গুলোকে আলাদা আলাদা করে ঘুঁটি চেলে ঠিক করল কে তাঁর পোশাকের কোন অংশ পাবে৷

25 সকাল ন’টার সময়ে তারা তাঁকে ক্রুশে দিল৷

26 তারা তাঁর ক্রুশের ওপর তাঁর বিরুদ্ধে দোষপত্র লেখা একটা ফলক লাগিয়ে দিয়েছিল৷ তাতে লেখা ছিল, ‘ইহুদীদের রাজা৷’

27 তারা তাঁর সাথে আর দুজন দস্য়ুকে ক্রুশে দিল৷ একজনকে তাঁর ডানদিকে এবং অপরজনকে তার বাঁদিকে৷

28

29 লোকেরা সেই পথ দিয়ে য়েতে য়েতে যীশুর নিন্দা করতে লাগল৷ তারা মাথা নেড়ে বলল, ‘ওহে, তুমি না মন্দির ভেঙ্গে ফেলে তিনদিনের মধ্যে তা আবার গেঁথে তোল?

30 ক্রুশ থেকে নেমে নিজেকে রক্ষা কর৷’

31 ঠিক একইভাবে প্রধান যাজকরা এবং ব্যবস্থার শিক্ষকরা তাঁকে ঠাট্টা করে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করলেন, ‘ঐ লোকটি অন্যদের রক্ষা করত, কিন্তু নিজেকে রক্ষা করতে পারে না৷

32 খ্রীষ্ট, ঐ ইস্রায়েলের রাজা এখন ক্রুশ থেকে নেমে আসুক, তাহলে আমরা বিশ্বাস করব৷’ তাঁর সঙ্গে যাঁরা ক্রুশে বিদ্ধ হয়েছিল, তারাও তাঁকে ঠাট্টা করতে লাগল৷

33 পরে বেলা বারোটা থেকে তিনটে পর্যন্ত সমস্ত দেশ অন্ধকারে ছেয়ে গেল৷

34 আর তিনটের সময় যীশু চিত্‌কার করে উঠলেন, ‘এলোই, এলোই, লামা শবক্তানী?’ যার অর্থ ‘ঈশ্বর আমার, ঈশ্বর আমার, তুমি কেন আমায় ত্যাগ করেছ?’৷

35 যাঁরা তাঁর কাছে দাঁড়িয়েছিল, তাদের মধ্যে কেউ কেউ এই কথা শুনে বলল, ‘দেখ, ও এলীয়কে ডাকছে৷’

36 একজন লোক দৌড়ে গিয়ে একটা স্পঞ্জ এনে সিরকায় ভিজিয়ে নলে করে তাঁর মুখে তুলে ধরে বলল, ‘দেখা যাক, এলীয় ওকে নামাতে আসে কি না৷’

37 পরে যীশু জোরে চিত্‌কার করে উঠে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন৷

38 আর মন্দিরের পর্দা উপর থেকে নীচে পর্যন্ত চিরে দুভাগ হয়ে গেল৷

39 আর য়ে সেনাপতি তাঁর সামনে দাঁড়িয়েছিলেন, তিনি যীশুকে এইভাবে মৃত্যুবরণ করতে দেখে বললেন, ‘সত্যিই ইনি ঈশ্বরের পুত্র ছিলেন৷’

40 কয়েকজন স্ত্রীলোক দূর থেকে দেখছিলেন, তাদের মধ্যে মগ্দলীনী মরিয়ম, শালোমী আর ছোট যাকোব এবং য়োশির মা মরিয়ম সেখানে ছিলেন৷

41 যখন যীশু গালীলে ছিলেন, তখন এই মহিলারা তাঁর সঙ্গে য়েতেন এবং তাঁর দেখাশোনা করতেন৷ আরও বহু স্ত্রীলোক তখন সেখানে ছিলেন যাঁরা যীশুর সাথে জেরুশালেমে এসেছিলেন৷

42 সেই দিনটা ছিল আযোজনের দিন অর্থাত্ বিশ্রামের আগের দিন৷

43 সন্ধ্যাবেলায় আরিমাথিযার য়োষেফ এলেন, তিনি ছিলেন ইহুদী মহাসভার একজন মাননীয় সভ্য়, যিনি ঈশ্বরের রাজ্যের জন্য অপেক্ষা করছিলেন৷ তিনি সাহস করে পীলাতের কাছে গিয়ে সমাধি দেওযার জন্য যীশুর দেহটি চাইলেন৷

44 যীশু এর মধ্যে মারা গেছেন শুনে পীলাত আশ্চর্য হলেন, তিনি তাই সেনাপতিকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন তাঁর মৃত্যু হয়েছে কিনা৷

45 সেনাপতির কাছে মৃত্যুর খবরটি জানতে পেরে তিনি য়োষেফকে যীশুর দেহটি নিয়ে য়েতে দিলেন৷

46 য়োষেফ কিছুটা মসীনা কাপড় কিনে ক্রুশ থেকে যীশুর দেহ নামিয়ে ঐ মসীনা কাপড়ে জড়ালেন এবং পাথর কেটে তৈরী এমন একটা সমাধিগুহার মধ্যে তাঁর দেহটাকে রাখলেন৷ তারপর একটা পাথর গুহার মুখে গড়িয়ে সমাধির মুখটি বন্ধ করে দিলেন৷

47 যীশুকে য়েখানে সমাধি দেওযা হল সেই স্থানটি মরিয়ম মগ্দলীনী ও য়োশির মা মরিয়ম দেখলেন৷

16

1 বিশ্রাম শেষ হলে মরিয়ম মগ্দলীনী, যাকোবের মা মরিয়ম সুগন্ধি মশলা কিনলেন য়েন গিয়ে যীশুর দেহে মাখাতে পারেন৷

2 সপ্তাহের প্রথম দিন ভোরে, ঠিক সূর্য় ওঠার পরই তাঁরা সমাধিগুহার কাছে গেলেন৷

3 তাঁরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছিলেন, ‘কে আমাদের জন্য সমাধিগুহার মুখ থেকে পাথরটি সরিয়ে দেবে?’

4 তখন তাঁরা দেখতে পেলেন য়ে পাথরটা সরানো রয়েছে৷ সেই পাথরটা মস্ত বড় ছিল৷

5 পরে তাঁরা সমাধিগুহার ভিতরে গিয়ে দেখলেন, একজন যুবক ডানদিকে সাদা পোশাক পরে বসে আছেন; তাতে তারা ভয়ে চমকে উঠলেন৷

6 তখন তিনি তাঁদের বললেন, ‘ভয় পেও না৷ তোমরা তো নাসরতীয় যীশুর খোঁজ করছ যাকে ক্রুশে বিদ্ধ করা হয়েছিল? তিনি বেঁচে উঠেছেন! তিনি এখানে নেই৷ দেখ, এখানে তাঁকে রাখা হয়েছিল৷

7 যাও, পিতর ও তাঁর অন্যান্য শিষ্যদের বল গিয়ে, দেখ তিনি তোমাদের আগেই গালীলে যাচ্ছেন৷ তিনি য়েমন তোমাদের বলেছিলেন, ঠিক সেখানে তাঁকে দেখতে পাবে৷’

8 তখন তারা সমাধিগুহা থেকে বেরিয়ে দৌড়ালেন, কারণ তাঁর ভীষণ ভয় পেয়েছিলেন এবং কিছুই বুঝে উঠতে পারলেন না৷ তাঁরা কাউকে কিছু বললেন না, কারণ তাঁরা ভয় পেয়েছিলেন৷

9 তাঁর পুনরুত্থানের পর সপ্তাহের প্রথম দিনে অর্থাত্ রবিবার ভোরে, তিনি প্রথমে মগ্দলীনী মরিয়মকে দেখা দিলেন, যার থেকে তিনি সাতটা ভূতকে তাড়িয়েছিলেন৷

10 মরিয়ম গিয়ে যাঁরা যীশুর সঙ্গে থাকতেন তাঁদের এই কথা বললেন৷ তাঁরা তখনও শোকে কাঁদছিলেন;

11 কিন্তু যখন শুনলেন য়ে যীশু বেঁচে আছেন এবং তাঁকে দেখা দিয়েছেন, তাঁরা ঐ কথা বিশ্বাস করলেন না৷

12 পরে তাদের মধ্যে দুজন যখন গ্রামের দিকে হেঁটে যাচ্ছিলেন এমন সময় তিনি তাঁদের দেখা দিলেন, আর তাঁকে অন্যরকম দেখাল৷

13 তাঁরা গিয়ে অন্য বাকী সব শিষ্যদের এটা জানালেন, কিন্তু তাঁদের কথাতেও তাঁরা বিশ্বাস করলেন না৷

14 পরে সেই এগারোজন শিষ্য যখন খেতে বসেছেন, তিনি তাঁদের কাছে দেখা দিলেন৷ তিনি তাঁদের অবিশ্বাস ও কঠোর মনোভাবের জন্য তিরস্কার করলেন, কারণ তিনি বেঁচে ওঠার পর যাঁরা তাঁকে দেখেছিলেন, তাঁদের কথায়ও তাঁরা বিশ্বাস করেন নি৷

15 আর তিনি তাঁদের বললেন, ‘তোমরা সমস্ত পৃথিবীতে যাও, এবং সব লোকের কাছে সুসমাচার প্রচার কর৷

16 যাঁরা বিশ্বাস করে বাপ্তাইজ হবে, তারা রক্ষা পাবে, কিন্তু যাঁরা বিশ্বাস করবে না, তাদের দোষী সাব্যস্ত করা হবে৷

17 যাঁরা বিশ্বাস করবে এই চিহ্নগুলি তাদের অনুবর্তী হবে৷ আমার নামে তারা ভূত তাড়াবে; নতুন নতুন ভাষায় কথা বলবে;

18 হাতে করে সাপ তুলবে এবং মারাত্মক কিছু খেলেও তাদের কোন ক্ষতি হবে না; আর তারা অসুস্থ লোকের ওপর হাত রাখলে তারা সুস্থ হবে৷’

19 তাঁদের সঙ্গে কথা বলার পর প্রভু যীশুকে স্বর্গে তুলে নেওযা হল এবং তিনি ঈশ্বরের ডানদিকে বসলেন৷

20 আর তাঁরা গিয়ে সব জায়গায় সুসমাচার প্রচার করতে লাগলেন, এবং প্রভু তাঁদের সঙ্গে কাজ করলেন, আর অলৌকিক কাজের মধ্য দিয়ে তাঁর সুসমাচারের সত্যতা প্রমাণ করলেন৷