1

1 মাননীয় থিয়ফিল, আমাদের মধ্যে য়ে সব ঘটনা ঘটেছে সেগুলির বিবরণ লিপিবদ্ধ করার জন্য বহু ব্যক্তি চেষ্টা করেছেন৷

2 তাঁরা সেই একই বিষয় লিখেছেন, যা আমরা জেনেছি তাঁদের কাছ থেকে, যাঁরা প্রথম থেকে নিজেদের চোখে দেখেছেন এবং এই বার্তা ঘোষণা করেছেন৷

3 তাই আমার মনে হল য়ে যখন আমি সেই সব বিষয় প্রথম থেকে ভালভাবে খোঁজ খবর নিয়েছি তখন তা সুন্দরভাবে গুছিয়ে লিখি৷

4 যার ফলে আপনি জানবেন, য়ে বিষয়গুলি আপনাকে জানানো হয়েছে সেগুলি সত্য৷

5 যিহূদিযার রাজা হেরোদের সময়ে সখরিয় নামে একজন যাজক ছিলেন৷ ইনি ছিলেন অবিয়ের দলের যাজকদের একজন৷ সখরিয়র স্ত্রী ইলীশাবেত্ ছিলেন হারোণের বংশধর৷

6 তাঁরা উভয়েই ঈশ্বরের দৃষ্টিতে ধার্মিক ছিলেন৷ প্রভুর সমস্ত আদেশ ও বিধি-ব্যবস্থা তাঁরা নিখুঁতভাবে পালন করতেন৷

7 ইলীশাবেত্ বন্ধ্যা হওযার দরুন তাঁদের কোন সন্তান হয় নি৷ তাঁদের উভয়েরই অনেক বয়স হয়ে গিয়েছিল৷

8 একবার তাঁর দলের যাজকদের ওপর দাযিত্বভার পড়েছিল, তখন সখরিয় যাজক হিসেবে মন্দিরে ঈশ্বরের সেবা করছিলেন৷

9 যাজকদের কার্য়প্রণালী অনুযাযী তাঁকে বেছে নেওযা হয়েছিল য়েন তিনি মন্দিরের মধ্যে গিয়ে প্রভুর সামনে ধূপ জ্বালাতে পারেন৷

10 ধূপ জ্বালাবার সময় বাইরে অনেক লোক জড় হয়ে প্রার্থনা করছিল৷

11 এমন সময় প্রভুর এক স্বর্গদূত সখরিয়র সামনে এসে উপস্থিত হয়ে ধূপবেদীর ডানদিকে দাঁড়ালেন৷

12 সখরিয় সেই স্বর্গদূতকে দেখে চমকে উঠলেন এবং খুব ভয় পেলেন৷

13 কিন্তু স্বর্গদূত তাঁকে বললেন, ‘সখরিয় ভয় পেও না, কারণ তুমি য়ে প্রার্থনা করেছ, ঈশ্বর তা শুনেছেন৷ তোমার স্ত্রী ইলীশাবেতের একটি পুত্র সন্তান হবে, তুমি তার নাম রাখবে য়োহন৷

14 সে তোমার জীবনে আনন্দ ও সুখের কারণ হবে, তার জন্মের দরুণ আরো অনেকে আনন্দিত হবে৷

15 কারণ প্রভুর দৃষ্টিতে য়োহন হবে এক মহান ব্যক্তি৷ সে অবশ্যই দ্রাক্ষারস বা নেশার পানীয় গ্রহণ করবে না৷ জন্মের সময় থেকেই য়োহন পবিত্র আত্মায় পূর্ণ হবে৷

16 ইস্রায়েলীয়দের অনেক লোককেই সে তাদের প্রভু ঈশ্বরের পথে ফেরাবে৷

17 য়োহন এলীয়ের আত্মায় ও শক্তিতে প্রভুর আগে চলবে৷ সে পিতাদের মন তাদের সন্তানদের দিকে ফেরাবে, আর অধার্মিকদের মনের ভাব বদলে ধার্মিক লোকদের মনের ভাবের মতো করবে৷ প্রভুর জন্য সে এইভাবে লোকদের প্রস্তুত করবে৷’

18 তখন সখরিয় সেই স্বর্গদূতকে বললেন, ‘আমি কিভাবে জানব য়ে সত্যিই এসব হবে? কারণ আমি তো বৃদ্ধ হয়ে গেছি, আর আমার স্ত্রীরও অনেক বয়স হয়ে গেছে৷’

19 এর উত্তরে স্বর্গদূত তাঁকে বললেন, ‘আমি গাব্রিয়েল, ঈশ্বরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকি; আর তোমার সঙ্গে কথা বলার জন্য ও তোমাকে এই সুখবর দেবার জন্যই আমাকে পাঠানো হয়েছে৷

20 কিন্তু জেনে রেখো! এইসব ঘটনা ঘটা পর্যন্ত তুমি বোবা হয়ে থাকবে, কথা বলতে পারবে না, কারণ তুমি আমার কথা বিশ্বাস করলে না, কিন্তু আমার এইসব কথা নিরুপিত সময়েই পূর্ণ হবে৷’

21 এদিকে বাইরে লোকেরা সখরিয়র জন্য অপেক্ষা করছিল, তিনি এতক্ষণ পর্যন্ত মন্দিরের মধ্যে কি করছেন একথা ভেবে তারা অবাক হচ্ছিল৷

22 পরে তিনি যখন বেরিয়ে এলেন, তখন লোকদের সঙ্গে কথা বলতে পারলেন না, এতে লোকেরা বুঝতে পারল মন্দিরের মধ্যে তিনি নিশ্চয়ই কোন দর্শন পেয়েছেন৷ তিনি লোকদের ইশারায় তাঁর বক্তব্য বোঝাতে লাগলেন, কিন্তু কোনরকম কথা বলতে পারলেন না৷

23 এরপর দৈনিক সেবাকার্য়ের শেষে তিনি তাঁর বাড়ি ফিরে গেলেন৷

24 এর কিছুক্ষণ পরে তার স্ত্রী ইলীশাবেত্ গর্ভবতী হলেন; আর পাঁচ মাস পর্যন্ত লোক সাক্ষাতে বের হলেন না৷ তিনি বলতেন,

25 ‘এখন প্রভুই এইভাবে আমায় সাহায্য করেছেন! সমাজে আমার য়ে লজ্জা ছিল, কৃপা করে এখন এইভাবে তিনি তা দূর করে দিলেন৷’

26

27

28 গাব্রিয়েল মরিয়মের কাছে এসে বললেন, ‘তোমার মঙ্গল হোক্! প্রভু তোমার প্রতি মুখ তুলে চেয়েছেন, তিনি তোমার সঙ্গে আছেন৷’

29 এই কথা শুনে মরিয়ম খুবই বিচলিত ও অবাক হয়ে ভাবতে লাগলেন, ‘এ কেমন শুভেচ্ছা?’

30 স্বর্গদূত তাঁকে বললেন, ‘মরিয়ম তুমি ভয় পেও না, কারণ ঈশ্বর তোমার ওপর সন্তুষ্ট হয়েছেন৷

31 শোন! তুমি গর্ভবতী হবে আর তোমার এক পুত্র সন্তান হবে৷ তুমি তাঁর নাম রাখবে যীশু৷

32 তিনি হবেন মহান, তাঁকে পরমেশ্বরের পুত্র বলা হবে, আর প্রভু ঈশ্বর তাঁর পিতৃপুরুষ রাজা দাযূদের সিংহাসন তাঁকে দেবেন৷

33 তিনি যাকোবের বংশের লোকদের ওপরে চিরকাল রাজত্ব করবেন, তাঁর রাজত্বের কখনও শেষ হবে না৷’

34 তখন মরিয়ম স্বর্গদূতকে বললেন, ‘এ কেমন করে সন্ভব? কারণ আমি তো কুমারী!’

35 এর উত্তরে স্বর্গদূত বললেন, ‘পবিত্র আত্মা তোমার ওপর অধিষ্ঠান করবেন আর পরমেশ্বরের শক্তি তোমাকে আবৃত করবে; তাই য়ে পবিত্র শিশুটি জন্মগ্রহণ করবে তাঁকে ঈশ্বরের পুত্র বলা হবে৷

36 আর শোন, তোমার আত্মীযা ইলীশাবেত্ যদিও এখন অনেক বৃদ্ধা তবু সে গর্ভে পুত্রসন্তান ধারণ করছে৷ এইস্ত্রীলোকের বিষয়ে লোকে বলত য়ে তার কোন সন্তান হবে না, কিন্তু সে এখন ছমাসের গর্ভবতী৷

37 কারণ ঈশ্বরের পক্ষে কোন কিছুই অসাধ্য নয়!’

38 মরিয়ম বললেন, ‘আমি প্রভুর দাসী৷ আপনি যা বলেছেন আমার জীবনে তাই হোক্!’ এরপর স্বর্গদূত মরিয়মের কাছ থেকে চলে গেলেন৷

39 তখন মরিয়ম উঠে তাড়াতাড়ি করে যিহূদার পার্বত্য অঞ্চলের একটি নগরে গেলেন৷

40 সেখানে সখরিয়র বাড়িতে গিয়ে ইলীশাবেতকে অভিবাদন জানালেন৷

41 ইলীশাবেত্ যখন মরিয়মের সেই অভিবাদন শুনলেন, তখনই তাঁর গর্ভের সন্তানটি আনন্দে নেচে উঠল; আর ইলীশাবেত্ পবিত্র আত্মাতে পূর্ণ হলেন৷

42 এরপর তিনি খুব জোরে জোরে বলতে লাগলেন, ‘সমস্ত স্ত্রীলোকের মধ্যে তুমি ধন্যা, আর তোমার গর্ভে য়ে সন্তান আছেন তিনি ধন্য৷

43 কিন্তু আমার প্রভুর মা য়ে আমার কাছে এসেছেন, এমন সৌভাগ্য আমার কি করে হল?

44 কারণ য়ে মুহূর্তে তোমার কন্ঠস্বর আমি শুনলাম, আমার গর্ভের শিশুটি তখনই নড়ে উঠল৷

45 আর তুমি ধন্যা, কারণ তুমি বিশ্বাস করেছ য়ে প্রভু তোমায় যা বলেছেন তা পূর্ণ হবে৷’

46 তখন মরিয়ম বললেন,

47 ‘আমার আত্মা প্রভুর প্রশংসা করছে, আর আমার আত্মা আমার ত্রাণকর্তা ঈশ্বরকে পেয়ে আনন্দিত৷

48 কারণ তাঁর এই তুচ্ছ দাসীর দিকে তিনি মুখ তুলে চেয়েছেন৷ হ্যাঁ, এখন থেকে সকলেই আমাকে ধন্যা বলবে৷

49 কারণ সেই একমাত্র সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমার জীবনে কত না মহত্ কাজ করেছেন৷ পবিত্র তাঁর নাম৷

50 আর যাঁরা বংশানুক্রমে তাঁর উপাসনা করে তিনি তাদের দযা করেন৷

51 তাঁর বাহুর য়ে পরাক্রম, তা তিনি দেখিয়েছেন৷ যাদের মন অহঙ্কার ও দন্ভপূর্ণ চিন্তায় ভরা, তাদের তিনি ছিন্নভিন্ন করে দেন৷

52 তিনিই শাসকদের সিংহাসনচ্য়ুত করেন, যাঁরা নতনম্র তাদের উন্নত করেন৷

53 ক্ষুধার্তকে তিনি উত্তম দ্রব্য দিয়ে তৃপ্ত করেন; আর বিত্তবানকে নিঃস্ব করে বিদায় করেন৷

54 তিনি তাঁর দাস ইস্রায়েলকে সাহায্য করতে এসেছেন৷

55 য়েমন তিনি আমাদের পূর্বপুরুষদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি তেমনই করবেন৷ অব্রাহাম ও তাঁর বংশের লোকদের চিরকাল দযা করার কথা তিনি মনে রেখেছেন৷’

56 ইলীশাবেতের ঘরে মরিয়ম প্রায় তিনমাস থাকলেন৷ পরে তিনি তাঁর নিজের বাড়িতে ফিরে গেলেন৷

57 ইলীশাবেতের প্রসবের সময় হলে তিনি একটি পুত্র সন্তান প্রসব করলেন৷

58 তাঁর প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনেরা যখন শুনল য়ে প্রভু তাঁর প্রতি কি মহা দযা করেছেন, তখন তারা তাঁর আনন্দে আনন্দিত হল৷

59 শিশুটি যখন আট দিনের, সেইসময় তাঁরা শিশুটিকে নিয়ে সুন্নত করাতে এলেন৷ সবাই শিশুটির বাবার নাম অনুসারে শিশুর নাম সখরিয় রাখার কথা চিন্তা করছিলেন৷

60 কিন্তু তার মা বলে উঠলেন, ‘না! ওর নাম হবে য়োহন৷’

61 তখন তাঁরা ইলীশাবেতকে বললেন, ‘আপনার আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে তো কারও ঐ নাম নেই!’

62 এরপর তারা ইশারা করে ছেলেটির বাবার কাছে জানতে চাইলেন তিনি কি নাম দিতে চান৷

63 সখরিয় ইশারা করে লেখার ফলক চেয়ে নিলেন ও তাতে লিখলেন, ‘ওর নাম য়োহন৷’ এতে তাঁরা সকলে আশ্চর্য হয়ে গেলেন,

64 তখনই সখরিয়র জিভের জড়তা চলে গেল ও মুখ খুলে গেল, আর তিনি ঈশ্বরের প্রশংসা করতে লাগলেন৷

65 আশপাশের সকলে এতে খুব ভয় পেয়ে গেল, যিহূদিযার পার্বত্য অঞ্চলের লোকরা সকলে এবিষয়ে বলাবলি করতে লাগল৷

66 যাঁরা এসব কথা শুনল তারা সকলেই আশ্চর্য হয়ে বলতে লাগল, ‘ভবিষ্যতে এই ছেলেটি কি হবে?’ কারণ প্রভুর শক্তি এর সঙ্গে আছে৷

67 পরে ছেলেটির বাবা সখরিয় পবিত্র আত্মায় পূর্ণ হয়ে ভাববাণী বলতে লাগলেন:

68 ‘ইস্রায়েলের প্রভু ঈশ্বরের প্রশংসা হোক্, কারণ তিনি তাঁর নিজের লোকদের সাহায্য করতে ও তাদের মুক্ত করতে এসেছেন৷

69 আমাদের জন্য তিনি তাঁর দাস দাযূদের বংশে একজন মহাশক্তিসম্পন্ন ত্রাণকর্তাকে দিয়েছেন৷

70 এ বিষয়ে তাঁর পবিত্র ভাববাদীদের মাধ্যমে তিনি বহুপূর্বেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন৷

71 শত্রুদের হাত থেকে ও যাঁরা আমাদের ঘৃণা করে তাদের কবল থেকে উদ্ধার করার প্রতিশ্রুতি৷

72 তিনি বলেছিলেন, আমাদের পিতৃপুরুষদের প্রতি দযা করবেন এবং তিনি সেই প্রতিশ্রুতি স্মরণ করেছেন৷

73 এ সেই প্রতিশ্রুতি যা তিনি আমাদের পিতৃপুরুষ অব্রাহামের কাছে করেছিলেন৷

74 শত্রুদের হাত থেকে আমাদের উদ্ধার করার প্রতিশ্রুতি য়েন আমরা নির্ভয়ে তাঁর সেবা করতে পারি:

75 আর আমাদের জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তাঁর দৃষ্টিতে পবিত্র ও ধার্মিক থেকে তাঁর সেবা করে য়েতে পারি৷

76 এখন হে বালক, তোমাকে বলা হবে পরমেশ্বরের ভাববাদী; কারণ তুমি প্রভুর পথ প্রস্তুত করবার জন্য তাঁর আগে আগে চলবে৷

77 তুমি তাঁর লোকদের বলবে, ঈশ্বরের দযায় তোমরা পাপের ক্ষমা দ্বারা উদ্ধার পাবে৷

78 কারণ আমাদের ঈশ্বরের দযা ও করুণার উর্দ্ধ থেকে এক নতুন দিনের ভোরের আলো আমাদের ওপর ঝরে পড়বে৷

79 যাঁরা অন্ধকার ও মৃত্যুর ছাযায় বসে আছে তাদের ওপর সেই আলো এসে পড়বে; আর তা আমাদের শান্তির পথে পরিচালিত করবে৷’

80 সেই শিশু য়োহন বড় হয়ে উঠতে লাগলেন, আর দিন দিন আত্মায় শক্তিশালী হয়ে উঠতে থাকলেন৷ ইস্রায়েলীয়দের কাছে প্রকাশ্যে বেরিয়ে আসার আগে পর্যন্ত তিনি নির্জন স্থানগুলিতে জীবনযাপন করছিলেন৷

2

1 সেই সময় আগস্ত কৈসর হুকুম জারি করলেন য়ে, রোম সাম্রাজ্যের সব জায়গায় লোক গণনা করা হবে৷

2 এটাই হল সুরিযার রাজ্যপাল কুরীণিয়ের সময়ে প্রথম আদমশুমারি৷

3 আর প্রত্যেকে নিজের নিজের শহরে নাম লেখাবার জন্য গেল৷

4 য়োষেফ ছিলেন রাজা দাযূদের বংশধর, তাই তিনি গালীল প্রদেশের নাসরত্ থেকে রাজা দাযূদের বাসভূমি বৈত্‌লেহমে গেলেন৷

5 য়োষেফ তাঁর বাগ্দত্তা স্ত্রী মরিয়মকে সঙ্গে নিয়ে নাম লেখাতে চললেন৷ এই সময় মরিয়ম ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা৷

6 তাঁরা যখন সেখানে ছিলেন, তখন মরিয়মের প্রসব বেদনা উঠল৷

7 আর মরিয়ম তাঁর প্রথম সন্তান প্রসব করলেন৷ তিনি সদ্য়োজাত সেই শিশুকে কাপড়ের টুকরো দিয়ে জড়িয়ে একটি জাবনা খাবার পাত্রে শুইয়ে রাখলেন, কারণ ঐ নগরের অতিথিশালায় তাঁদের জন্য জায়গা ছিল না৷

8 সেখানে গ্রামের বাইরে মেষপালকেরা রাতে মাঠে তাদের মেষপাল পাহারা দিচ্ছিল৷

9 এমন সময় প্রভুর এক স্বর্গদূত তাদের সামনে উপস্থিত হলে প্রভুর মহিমা চারদিকে উজ্জ্বল হয়ে দেখা দিল৷ এই দেখে মেষপালকরা খুব ভয় পেয়ে গেল৷

10 সেই স্বর্গদূত তাদের বললেন, ‘ভয় নেই, দেখ আমি তোমাদের কাছে এক আনন্দের সংবাদ নিয়ে এসেছি৷ এই সংবাদ সকলের জন্য মহা আনন্দের হবে৷

11 কারণ রাজা দাযূদের নগরে আজ তোমাদের জন্য একজন ত্রাণকর্তার জন্ম হয়েছে৷ তিনি খ্রীষ্ট প্রভু৷

12 আর তোমাদের জন্য এই চিহ্ন রইল, তোমরা দেখবে একটি শিশুকে কাপড়ে জড়িয়ে একটা জাবনা খাবার পাত্রে শুইয়ে রাখা হয়েছে৷’

13 সেই সময় হঠাত্ স্বর্গীয় বাহিনীর এক বিরাট দল ঐ স্বর্গদূতদের সঙ্গে য়োগ দিয়ে ঈশ্বরের প্রশংসা করতে করতে বললেন,

14 ‘স্বর্গে ঈশ্বরের মহিমা, পৃথিবীতে তাঁর প্রীতির পাত্র মনুষ্যদের মধ্যে শান্তি৷’

15 স্বর্গদূতেরা তাদের কাছ থেকে স্বর্গে ফিরে গেলে মেষপালকরা পরস্পর বলাবলি করতে লাগল, ‘চল, আমরা বৈত্‌লেহমে যাই, প্রভু আমাদের য়ে ঘটনার কথা জানালেন সেখানে গিয়ে তা দেখি৷’

16 তারা সেখানে ছুটে গেলে মরিয়ম, য়োষেফ এবং সেই শিশুটিকে একটি জাবনা খাবার পাত্রে শোযানো দেখল৷

17 মেষপালকেরা শিশুটিকে দেখতে পেয়ে, সেই শিশুটির বিষয়ে তাদের যা বলা হয়েছিল সেকথা সকলকে জানাল৷

18 মেষপালকদের মুখে ঐ কথা যাঁরা শুনল তারা সকলে আশ্চর্য হয়ে গেল৷

19 কিন্তু মরিয়ম এই কথা মনের মধ্যে গেঁথে নিয়ে সব সময় এবিষয়ে চিন্তা করতে লাগলেন৷

20 এরপর মেষপালকরা তাদের কাছে যা বলা হয়েছিল সেই অনুসারে সব কিছু দেখে ও শুনে ঈশ্বরের প্রশংসা করতে করতে ঘরে ফিরে গেল৷

21 এর আট দিন পরে সুন্নত করার সময়ে শিশুটির নাম রাখা হল যীশু৷ তাঁর মাতৃগর্ভে আসার আগেই স্বর্গদূত এই নাম রেখেছিলেন৷

22 মোশির বিধি-ব্যবস্থা অনুসারে শুচিকরণ অনুষ্ঠানের সময় হলে তাঁরা যীশুকে জেরুশালেমে নিয়ে গেলেন, য়েন সেখানে প্রভুর সামনে তাঁকে উত্‌সর্গ করতে পারেন৷

23 কারণ প্রভুর বিধি-ব্যবস্থায় লেখা আছে, ‘স্ত্রীলোকের প্রথম সন্তানটি যদি পুত্র হয়, তবে তাকে ‘প্রভুর উদ্দেশ্যে উত্‌সর্গ করতে হবে,”

24 আর প্রভুর বিধি-ব্যবস্থা অনুসারে, ‘এক জোড়া ঘুঘু অথবা দুটি পায়রার বাচ্চা উত্‌সর্গ করতে হবে৷’৷ সুতরাং য়োষেফ এবং মরিয়ম সেইমত কাজ করবার জন্য জেরুশালেমে গেলেন৷

25 জেরুশালেমে সেই সময় শিমিযোন নামে একজন ধার্মিক ও ঈশ্বরভক্ত লোক বাস করতেন৷ তিনি ইস্রায়েলের মুক্তির অপেক্ষায় ছিলেন৷ পবিত্র আত্মা তাঁর ওপর অধিষ্ঠান করছিলেন৷

26 পবিত্র আত্মার মাধ্যমে তাঁর কাছে একথা প্রকাশ করা হয়েছিল য়ে প্রভু খ্রীষ্টকে না দেখা পর্যন্ত তাঁর মৃত্যু হবে না৷

27 পবিত্র আত্মার প্রেরণায় তিনি সেদিন মন্দিরে এসেছিলেন৷ যীশুর বাবা-মা মোশির বিধি-ব্যবস্থা পালন করতে যীশুকে নিয়ে সেখানে এলেন৷

28 তখন শিমিযোন যীশুকে কোলে তুলে নিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিয়ে বললেন,

29 ‘হে প্রভু, তোমার প্রতিশ্রুতি অনুসারে তুমি তোমার দাসকে শান্তিতে বিদায় দাও৷

30 কারণ আমি নিজের চোখে তোমার পরিত্রাণ দেখেছি৷

31 য়ে পরিত্রাণ তুমি সকল লোকের সাক্ষাতেপ্রস্তুত করেছ৷

32 তিনি অইহুদীদের অন্তর আলোকিত করার জন্য আলো; আর তিনিই তোমার প্রজা ইস্রায়েলের জন্য সম্মান আনবেন৷’

33 তাঁর বিষয়ে যা বলা হল তা শুনে য়োষেফ ও মরিয়ম আশ্চর্য হয়ে গেলেন৷

34 এরপর শিমিযোন তাঁদের আশীর্বাদ করে যীশুর মা মরিয়মকে বললেন, ‘ইনি হবেন ইস্রায়েলের মধ্যে বহু লোকের পতন ও উত্থানের কারণ৷ ঈশ্বর হতে আগত এমন চিহ্ন যা বহু লোকই অগ্রাহ্য় করবে৷

35 এতে বহু লোকের হৃদয়ের গোপন চিন্তা প্রকাশ হয়ে পড়বে৷ যা যা ঘটবে তাতে তোমার হৃদয় বিদীর্ণ হবে৷’

36 সেখানে হান্না নামে একজন ভাববাদিনী ছিলেন৷ তিনি আশের গোষ্ঠীর পনুয়েলের কন্যা৷ তাঁর অনেক বয়স হয়েছিল৷ বিবাহের পর সাত বছর তিনি স্বামীর ঘর করেন,

37 তারপর চুরাশি বছর বয়স পর্যন্ত তিনি বৈধব্য জীবনযাপন করেছিলেন৷ মন্দির ছেড়ে তিনি কোথাও য়েতেন না; উপবাস ও প্রার্থনাসহ সেখানে দিন-রাত ঈশ্বরের উপাসনা করতেন৷

38 ঠিক সেই মুহূর্তে তিনি তাঁদের দিকে এগিয়ে এসে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিতে আরন্ভ করলেন; আর যাঁরা জেরুশালেমের মুক্তির অপেক্ষায় ছিল তাদের সকলের কাছে সেই শিশুটির বিষয় বলতে লাগলেন৷

39 প্রভুর বিধি-ব্যবস্থা অনুসারে যা যা করণীয় তা সম্পূর্ণ করে য়োষেফ ও মরিয়ম তাঁদের নিজেদের নগর নাসরতে ফিরে গেলেন৷

40 শিশুটি ক্রমে ক্রমে বেড়ে উঠতে লাগলেন ও বলিষ্ঠ হয়ে উঠলেন৷ তিনি জ্ঞানে পূর্ণ হতে থাকলেন, তাঁর ওপরে ঈশ্বরের আশীর্বাদ ছিল৷

41 নিস্তারপর্ব পালনের জন্য তাঁর মা-বাবা প্রতি বছর জেরুশালেমে য়েতেন৷

42 যীশুর বয়স যখন বারো বছর, তখন তাঁরা যথারীতি সেই পর্বে য়োগ দিতে গেলেন৷

43 পর্বের শেষে তাঁরা যখন বাড়ি ফিরছিলেন, তখন বালক যীশু জেরুশালেমেই রয়ে গেলেন, এবিষয়ে তাঁর মা-বাবা কিছুই জানতে পারলেন না৷

44 তাঁরা মনে করলেন য়ে তিনি দলের সঙ্গেই আছেন৷ তাঁরা এক দিনের পথ চলার পর আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যে তাঁর খোঁজ করতে লাগলেন৷

45 কিন্তু তাঁকে না পেয়ে তাঁরা যীশুর খোঁজ করতে করতে আবার জেরুশালেমে ফিরে গেলেন৷

46 শেষপর্যন্ত তিন দিন পরে মন্দির চত্বরে তাঁর দেখা পেলেন৷ সেখানে তিনি ধর্ম শিক্ষকদের সাথে বসে তাঁদের কথা শুনছিলেন ও তাঁদের নানা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করছিলেন৷

47 যাঁরা তাঁর কথা শুনছিলেন তাঁরা সকলে যীশুর বুদ্ধি আর প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেওযা দেখে অবাক হয়ে গেলেন৷

48 যীশুর মা-বাবা তাঁকেসেখানে দেখে আশ্চর্য হয়ে গেলেন৷ তাঁরমা তাঁকেবললেন, ‘বাছা, তুমি আমাদের সঙ্গে কেন এমন করলে? তোমার বাবা ও আমি ভীষণ ব্যাকুল হয়ে তোমার খোঁজ করে বেড়াচ্ছি৷’

49 যীশু তখন তাঁদের বললেন, ‘তোমরা কেন আমার খোঁজ করছিলে? তোমরা কি জানতে না য়ে য়েখানে আমার পিতার কাজ, সেখানেই আমাকে থাকতে হবে?’

50 কিন্তু তিনি তাঁদের যা বললেন তার অর্থ তাঁরা বুঝতে পারলেন না৷

51 এরপর তিনি তাঁদের সঙ্গে নাসরতে ফিরে গেলেন, আর তাঁদের বাধ্য হয়ে রইলেন৷ তাঁর মা এসব কথা মনের মাঝে গেঁথে রাখলেন৷

52 এইভাবে যীশু বয়সে ও জ্ঞানে বড় হয়ে উঠলেন, আর ঈশ্বর ও মানুষের ভালবাসা লাভ করলেন৷

3

1 তিবিরিয় কৈসরের রাজত্বের পনের বছরের মাথায় যিহূদিযার রাজ্যপাল ছিলেন পন্তীয় পীলাত৷ সেই সময় হেরোদ ছিলেন গালীলের শাসনকর্তা এবং তাঁর ভাই ফিলিপ ছিলেন যিতুরিযা ও ত্রাখোনীতিযার শাসনকর্তা, লুষাণিয় ছিলেন অবিলীনীর শাসনকর্তা৷

2 হামন ও কাযাফা ছিলেন ইহুদীদের মহাযাজক৷ সেই সময় প্রান্তরের মধ্যে সখরিয়র পুত্র য়োহনের কাছে ঈশ্বরের আদেশ এল৷

3 আর তিনি যর্দনের চারপাশে সমস্ত জায়গায় গিয়ে প্রচার করতে লাগলেন য়েন লোকে পাপের ক্ষমা লাভের জন্য মন ফেরায় ও বাপ্তিস্ম নেয়৷

4 ভাববাদী যিশাইয়র পুস্তকে য়েমন লেখা আছে: ‘প্রান্তরের মধ্যে একজনের কন্ঠস্বর ডেকে ডেকে বলছে, ‘প্রভুর জন্য পথ প্রস্তুত কর৷ তার জন্য চলার পথ সোজা কর৷

5 সমস্ত উপত্যকা ভরাট কর, প্রতিটি পর্বত ও উপপর্বত সমান করতে হবে৷ আঁকা-বাঁকা পথ সোজা করতে হবে এবং এবড়ো-খেবড়ো পথ সমান করতে হবে৷

6 তাতে সকল লোকে ঈশ্বরের পরিত্রাণ দেখতে পাবে৷”যিশাইয় 40:3-5

7 তখন বাপ্তিস্ম নেবার জন্য অনেক লোক য়োহনের কাছে আসতে লাগল৷ তিনি তাদের বললেন, ‘হে সাপের বংশধরেরা! ঈশ্বরের কাছ থেকে য়ে ক্রোধ নেমে আসছে তা থেকে বাঁচার জন্য কে তোমাদের সতর্ক করে দিল?

8 তোমরা য়ে মন ফিরিয়েছ তার ফল দেখাও৷ একথা বলতে শুরু করো না, য়ে ‘আরে অব্রাহাম তো আমাদের পিতৃপুরুষ’ কারণ আমি তোমাদের বলছি এই পাথরগুলো থেকে ঈশ্বর অব্রাহামের জন্য সন্তান উত্‌পন্ন করতে পারেন৷

9 গাছের গোড়াতে কুড়ুল লাগানোই আছে, য়ে গাছ ভাল ফল দিচ্ছে না তা কেটে আগুনে ফেলে দেওযা হবে৷’

10 তখন লোকরা তাঁকে জিজ্ঞেস করল, ‘তাহলে আমাদের কি করতে হবে?’

11 এর উত্তরে তিনি তাদের বললেন, ‘যদি কারো দুটো জামা থাকে, তবে যার নেই তাকে য়েন তার থেকে একটি জামা দেয়; আর যার খাবার আছে, সেও অন্য়ের সঙ্গে সেইরকম য়েন ভাগ করে নেয়৷’

12 কয়েকজন কর আদায়কারীও বাপ্তাইজ হবার জন্য এল৷ তারা তাঁকে বলল, ‘গুরু, আমরা কি করব?’

13 তখন তিনি তাদের বললেন, ‘যতটা কর আদায় করার কথা তার চেয়ে বেশী আদায় কোরো না৷’

14 কয়েকজন সৈনিকও তাঁকে জিজ্ঞেস করল, ‘আমাদের কি হবে? আমরা কি করব? তিনি তাদের বললেন, ‘কারো কাছ থেকে জোর করে কোন অর্থ নিও না৷ কারো প্রতি মিথ্যা দোষারোপ করো না৷ তোমাদের যা বেতন তাতেই সন্তুষ্ট থেকো৷’

15 লোকরা মনে মনে আশা করেছিল, ‘য়ে য়োহনই হয়তো তাদের সেই প্রত্যাশিত খ্রীষ্ট৷’

16 তাদের এই রকম চিন্তার জবাবে য়োহন বললেন, ‘আমি তোমাদের জলে বাপ্তাইজ করি, কিন্তু আমার থেকে আরো শক্তিশালী একজন আসছেন, আমি তাঁর জুতোর ফিতে খোলবার য়োগ্য নই৷ তিনিই তোমাদের পবিত্র আত্মায় ও আগুনে বাপ্তাইজ করবেন৷

17 কুলোর বাতাস দিয়ে খামার পরিষ্কার করার জন্য কুলো তাঁর হাতেই আছে, তা দিয়ে তিনি সব শস্য জড়ো করে তাঁর গোলায় তুলবেন আর অনির্বাণ আগুনে তূষ পুড়িয়ে দেবেন৷’

18 আরো বিভিন্ন উপদেশের মাধ্যমে লোকদের উত্‌সাহিত করে য়োহন তাদের কাছে সুসমাচার প্রচার করবেন৷

19 শাসনকর্তা হেরোদ তাঁর ভাইয়ের স্ত্রী হেরোদিযাকে বিয়ে করেছিলেন, এরজন্য এবং এছাড়াও তাঁর আরো অনেক অন্যায় কাজের জন্য য়োহন হেরোদকে তিরস্কার করলেন৷

20 তাতে হেরোদ য়োহনকে বন্দী করে কারাগারে পাঠালেন আর এইভাবে তিনি তাঁর অন্য সব দুষ্কর্মের সঙ্গে এইটিও য়োগ করলেন৷

21 লোকেরা যখন বাপ্তিস্ম নিচ্ছিল সেই সময় একদিন যীশুও বাপ্তিস্ম নিলেন৷ বাপ্তিস্মের পর যীশু যখন প্রার্থনা করছিলেন, তখন স্বর্গ খুলে গেল,

22 আর স্বর্গ থেকে পবিত্র আত্মা কপোতের মতো তাঁর ওপর নেমে এলেন৷ তখন স্বর্গ থেকে এই রব শোনা গেল, ‘তুমি আমার প্রিয় পুত্র, তোমার ওপর আমি খুবই সন্তষ্ট৷’

23 প্রায় ত্রিশ বছর বয়সে যীশু তাঁর কাজ শুরু করেন৷ লোকেরা মনে করত তিনি য়োষেফেরই ছেলে৷ য়োষেফ হলেন এলির ছেলে৷

24 এলি মত্ততের ছেলে৷ মত্তত্ লেবির ছেলে৷ লেবি মল্কির ছেলে৷ মল্কি যান্নায়ের ছেলে৷ যান্না য়োষেফের ছেলে৷

25 য়োষেফ মত্তথিয়ের ছেলে৷ মত্তথিয় আমোসের ছেলে৷ আমোস নহূমের ছেলে৷ নহূম ইষলির ছেলে৷ ইষ্লি নগির ছেলে৷

26 নগি মাটের ছেলে৷ মাট মত্তথিয়ের ছেলে৷ মত্তথিয় শিমিযির ছেলে৷ শিমিযি য়োষেখের ছেলে৷ য়োষেখ য়ূদার ছেলে৷

27 য়ূদা য়োহানার ছেলে৷ য়োহানা রীষার ছেলে৷ ়রীষা সরুব্বাবিলের ছেলে৷ সরুব্বাবিল শল্টীয়েলের ছেলে৷ শল্টীয়েল নেরির ছেলে৷

28 নেরি মল্কির ছেলে৷ মল্কি অদ্দীর ছেলে৷ অদ্দী কোষমের ছেলে৷ কোষম ইল্মাদমের ছেলে৷ ইল্মাদম এরের ছেলে৷

29 এর যিহোশূর ছেলে৷ যিহোশূ ইলীয়েষরের ছেলে৷ ইলীয়েষর য়োরীমের ছেলে৷ য়োরীম মত্ততের ছেলে৷ মত্তত লেবির ছেলে৷

30 লেবি শিমিযোনের ছেলে৷ শিমিযোন য়ূদার ছেলে৷ য়ূদা য়োষেফের ছেলে৷ য়োষেফ য়োনমের ছেলে৷ য়োনম ইলিযাকীমের ছেলে৷

31 ইলিযাকীম মিলেযার ছেলে৷ মিলেযা মিন্নার ছেলে৷ মিন্না মত্তথের ছেলে৷ মত্তথ নাথনের ছেলে৷ নাথন দাযূদের ছেলে৷

32 দাযূদ যিশয়ের ছেলে৷ যিশয় ওবেদের ছেলে৷ ওবেদ বোয়সের ছেলে৷ বোয়স সলমোনের ছেলে৷ সলমোন নহশোনের ছেলে৷

33 নহশোন অম্মীনাদবের ছেলে৷ অম্মীনাদব অদমানের ছেলে৷ অদমান অর্ণির ছেলে৷ অর্ণি হিষ্রোণের ছেলে৷ হিষ্রোণ পেরসের ছেলে৷ পেরস যিহূদার ছেলে৷

34 যিহূদা যাকোবের ছেলে৷ যাকোব ইসহাকের ছেলে৷ ইসহাক অব্রাহামের ছেলে৷ অব্রাহাম তেরূহের ছেলে৷ তেরূহ নাহোরের ছেলে৷

35 নাহোর সরূগের ছেলে৷ সরূগ রিযুর ছেলে৷ রিযু পেলগের ছেলে৷ পেলগ এবরের ছেলে৷ এবর শেলহের ছেলে৷

36 শেলহ কৈননের ছেলে৷ কৈনন অর্ফক্ষদের ছেলে৷ অর্ফক্ষদ শেমের ছেলে৷ শেম নোহের ছেলে৷ নোহ লেমকের ছেলে৷

37 লেমক মথূশেলহের ছেলে৷ মথূশেলহ হনোকের ছেলে৷ হনোক য়েরদের ছেলে৷ য়েরদ মহললেলের ছেলে৷ মহললেল কৈননের ছেলে৷

38 কৈনন ইনোশের ছেলে৷ ইনোশ শেথের ছেলে৷ শেথ আদমের ছেলে৷ আদম ঈশ্বরের ছেলে৷

4

1 এরপর যীশু পবিত্র আত্মায় পূর্ণ হয়ে যর্দন নদী থেকে ফিরে এলেন: আর আত্মার পরিচালনায় প্রান্তরের মধ্যে গেলেন৷

2 সেখানে চল্লিশ দিন ধরে দিযাবল তাঁকে প্রলোভনে ফেলতে চাইল৷ সেই সময় তিনি কিছুই খাদ্য় গ্রহণ করেন নি৷ ঐ সময় পার হয়ে গেলে যীশুর খিদে পেল৷

3 তখন দিযাবল তাঁকে বলল, ‘তুমি যদি ঈশ্বরের পুত্র হও, তবে এই পাথরটিকে রুটি হয়ে য়েতে বল৷’

4 এর উত্তরে যীশু তাকে বললেন, ‘শাস্ত্রে লেখা আছে: ‘মানুষ কেবল রুটিতেই বাঁচে না৷” দ্বিতীয় বিবরণ 8:3

5 এরপর দিযাবল তাঁকে একটা উঁচু জায়গায় নিয়ে গেল আর মুহূর্তের মধ্যে জগতের সমস্ত রাজ্য দেখাল৷

6 দিযাবল যীশুকে বলল, ‘এই সব রাজ্যের পরাক্রম ও মহিমা আমি তোমায় দেব, কারণ এই সমস্তই আমাকে দেওযা হয়েছে, আর আমি যাকে চাই তাকেই এসব দিতে পারি৷

7 এখন তুমি যদি আমার উপাসনা কর তবে এসবই তোমার হবে৷’

8 এর উত্তরে যীশু তাকে বললেন, ‘শাস্ত্রে লেখা আছে: ‘তুমি কেবল তোমার প্রভু ঈশ্বরকেই উপাসনা করবে, কেবল তাঁরই সেবা করবে!’দ্বিতীয় বিবরণ 6:13

9 এরপর দিযাবল তাঁকে জেরুশালেমে নিয়ে গিয়ে মন্দিরের চূড়ার ওপরে দাঁড় করিয়ে বলল, ‘তুমি যদি ঈশ্বরের পুত্র হও, তবে এখান থেকে লাফ দিয়ে নীচে পড়৷

10 কারণ শাস্ত্রে লেখা আছে: ‘ঈশ্বর তাঁর স্বর্গদূতদের তোমার বিষয়ে আদেশ দেবেন য়েন তারা তোমাকে রক্ষা করে৷’ গীতসংহিতা 91:11

11 আরো লেখা আছে: ‘তারা তোমাকে তাদের হাতে করে তুলে ধরবে য়েন তোমার পায়ে পাথরের আঘাত না লাগে৷” গীতসংহিতা 91:12

12 এর উত্তরে যীশু তাকে বললেন, ‘শাস্ত্রে একথাও বলা হয়েছে: ‘তুমি তোমার প্রভু ঈশ্বরের পরীক্ষা কোর না৷”দ্বিতীয় বিবরণ 6:16

13 এইভাবে দিযাবল তাঁকে সমস্ত রকমের প্রলোভনে ফেলার চেষ্টা করে, আরো ভাল সুয়োগের অপেক্ষায় যীশুকে ছেড়ে চলে গেল৷

14 যীশু পবিত্র আত্মার পরিচালনায় গালীলে ফিরে গেলে ঐ সংবাদ সেই অঞ্চলের সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ল৷

15 তিনি তাদের সমাজ-গৃহে শিক্ষা দিতে লাগলেন, আর সবাই তাঁর প্রশংসা করতে লাগল৷

16 এরপর যীশু নাসরতে গেলেন, এখানেই তিনি প্রতিপালিত হয়েছিলেন৷ তাঁর রীতি অনুসারে বিশ্রামবারে তিনি সমাজ-গৃহে গিয়ে সেখানে শাস্ত্র পাঠ করার জন্য উঠে দাঁড়ালেন৷

17 তাঁর হাতে ভাববাদী যিশাইয়র লেখা পুস্তকটি দেওযা হল৷ তিনি পুস্তকটি খুলে সেই অংশটি পেলেন, য়েখানে লেখা আছে:

18 ‘প্রভুর আত্মা আমার ওপর আছেন কারণ দীন দরিদ্রের কাছে সুসমাচার প্রচারের জন্য তিনিই আমায় নিযুক্ত করেছেন৷ তিনি আমাকে বন্দীদের কাছে স্বাধীনতার কথা ও অন্ধদের কাছে দৃষ্টি ফিরে পাবার কথা ঘোষণা করতে পাঠিয়েছেন; আর নির্যাতিতদের মুক্ত করতে বলেছেন৷

19 এছাড়া প্রভুর অনুগ্রহ দানের বত্‌সরের কথা ঘোষণা করতেও পাঠিয়েছেন৷ যিশাইয় 61:1-2

20 এরপর তিনি পুস্তকটি গুটিয়ে সেখানকার সহায়কদের হাতে দিয়ে বসলেন৷ সমাজ-গৃহে যাঁরা সে সময় ছিল, তাদের সকলের দৃষ্টি তাঁর ওপর গিয়ে পড়ল৷

21 তখন তিনি তাদের বললেন, ‘শাস্ত্রের এই কথা যা তোমরা শুনলে তা আজ পূর্ণ হল৷’

22 সকলেই তাঁর খুব প্রশংসা করল, তাঁর মুখে অপূর্ব সব কথা শুনে তারা আশ্চর্য হয়ে গেল৷ তারা বলল, ‘এ কি য়োষেফের ছেলে নয়?’

23 তখন তিনি তাদের বললেন, ‘তোমরা নিশ্চয়ই আমার বিষয়ে প্রচলিত প্রবাদটি বলবে, ‘চিকিত্‌সক, আগে নিজেকে সুস্থ কর৷’ কফরনাহূমে য়ে সমস্ত কাজ করেছ বলে আমরা শুনেছি সে সব এখন এখানে নিজের গ্রামেও কর দেখি!”

24 তারপর যীশু বললেন, ‘আমি তোমাদের সত্যি বলছি, কোন ভাববাদী তাঁর নিজের গ্রামে গ্রাহ্য হন না৷

25 সত্যি বলতে কি এলীয়র সময়ে যখন সাড়ে তিন বছর ধরে আকাশ রুদ্ধ ছিল এবং সারা দেশে ভয়ঙ্কর দুর্ভিক্ষ চলছিল, সেই সময ইস্রায়েল দেশে অনেক বিধবা ছিল৷

26 কিন্তু তাদের কারো কাছে এলীয়কে পাঠানো হয় নি, কেবল সীদোন প্রদেশে সারিফতে সেই বিধবার কাছেই তাঁকে পাঠানো হয়েছিল৷

27 আবার ভাববাদী ইলীশায়ের সময়ে ইস্রায়েল দেশে অনেক কুষ্ঠরোগী ছিল, কিন্তু তাদের কেউ সুস্থ হয় নি, কেবল সুরীয় নামান সুস্থ হয়েছিল৷’

28 এই কথা শুনে সমাজ-গৃহের সমস্ত লোক রেগে আগুন হয়ে গেল৷

29 তারা উঠে যীশুকে নগরের বাইরে বের করে দিল আর নগরটি য়ে পাহাড়ের ওপর ছিল তার শেষ প্রান্তে তাঁকে ঠেলে নিয়ে গেল, য়েন পাহাড়ের চূড়া থেকে তাঁকে নীচে ফেলে দিতে পারে৷

30 কিন্তু তিনি তাদের মাঝখান দিয়ে চলে গেলেন৷

31 এরপর যীশু গালীলের কফরনাহূম শহরে গেলেন৷ সেখানে তিনি বিশ্রামবারে তাদের শিক্ষা দিচ্ছিলেন৷

32 তাঁর দেওযা শিক্ষায় তারা আশ্চর্য হয়ে গেল, কারণ তাঁর শিক্ষা ছিল ক্ষমতাযুক্ত৷

33 সেই সমাজগৃহে অশুচি আত্মায় পাওযা একজন লোক ছিল, সে চিত্‌কার করে বলে উঠল,

34 ‘ওহে নাসরতীয় যীশু! আমাদের কাছে আপনার কি দরকার? আপনি কি আমাদের ধ্বংস করতে এসেছেন? আমি জানি আপনি কে, আপনি ঈশ্বরের পবিত্র ব্যক্তি!’

35 যীশু তাকে ধমক দিয়ে বললেন, ‘চুপ করো! আর ওর মধ্য থেকে বের হয়ে যাও!’ তখন সেই অশুচি আত্মা লোকটিকে সকলের মাঝখানে আছড়ে ফেলে দিয়ে তার কোন ক্ষতি না করে তার মধ্যে থেকে বের হয়ে গেল৷

36 এই দেখে লোকেরা অবাক হয়ে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগল, ‘এর মানে কি? সম্পূর্ণ ক্ষমতা ও কর্ত্তৃত্বের সঙ্গে তিনি অশুচি আত্মাদের হুকুম করেন আর তারা বের হয়ে যায়৷’

37 তাঁর বিষয়ে এই কথা সেই অঞ্চলের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ল৷

38 যীশু সমাজ-গৃহ থেকে বেরিয়ে শিমোনের বাড়িতে গেলেন৷ সেখানে শিমোনের শাশুড়ী খুব জ্বরে ভুগছিলেন, তাই তারা এসে তাঁকে অনুরোধ করল য়েন তিনি তাঁকে সুস্থ করেন৷

39 তখন যীশু তাঁর কাছে দাঁড়িয়ে জ্বরকে ধমক দিলেন, এর ফলে জ্বর ছেড়ে গেল, আর তিনি তখনই উঠে তাদের খাওযা দাওযার ব্যবস্থা করতে লাগলেন৷

40 সূর্য় অস্ত যাবার সময় লোকরা তাদের বন্ধু-বান্ধব ও পরিবারের লোকজন, যাঁরা নানা রোগে অসুস্থ ছিল তাদের যীশুর কাছে নিয়ে এল৷ যীশু তাদের প্রত্যেকের ওপরে হাত রেখে তাদের সুস্থ করলেন৷

41 তাদের অনেকের মধ্যে থেকে ভূত বের হয়ে এল৷ তারা চিত্‌কার করে বলতে লাগল, ‘আপনি ঈশ্বরের পুত্র৷’ কিন্তু তিনি তাদের ধমক দিলেন, তাদের কথা বলতে দিলেন না, কারণ তারা জানত য়ে তিনিই সেই খ্রীষ্ট৷

42 ভোর হলে যীশু সেই জায়গা ছেড়ে এক নির্জন জায়গায় চলে গেলেন৷ কিন্তু বিরাট জনতা তাঁর খোঁজ করতে লাগল; আর তিনি য়েখানে ছিলেন সেখানে এসে হাজির হল এবং তিনি য়েন তাদের কাছ থেকে চলে না যান সেজন্য তাঁকে আটকাতে চেষ্টা করল৷

43 কিন্তু তিনি তাদের বললেন, ‘ঈশ্বরের রাজ্যের এই সুসমাচার আমাকে অন্যান্য শহরেও বলতে হবে, কারণ এরই জন্য আমাকে পাঠানো হয়েছে৷’

44 এরপর তিনি যিহূদিযার বিভিন্ন সমাজ-গৃহে প্রচার করতে লাগলেন৷.

5

1 একদিন যীশু গিনেষরত্হ্রদের ধারে দাঁড়িয়েছিলেন৷ বহুলোক তাঁর চারপাশে ভীড় করে দাঁড়িয়ে ঈশ্বরের শিক্ষা শুনছিল৷

2 তিনি দেখলেন, হ্রদের ধারে দুটি নৌকা দাঁড়িয়ে আছে আর জেলেরা নৌকা থেকে নেমে জাল ধুচ্ছে৷

3 তিনি একটি নৌকায় উঠলেন, সেই নৌকাটি ছিল শিমোনের৷ যীশু তাঁকে তীর থেকে নৌকাটিকে একটু দূরে নিয়ে য়েতে বললেন৷ তারপর তিনি নৌকায় বসে সেখান থেকে লোকদের শিক্ষা দিতে লাগলেন৷

4 তাঁর কথা শেষ হলে তিনি শিমোনকে বললেন, ‘এখন গভীর জলে নৌকা নিয়ে চল, আর সেখানে মাছ ধরার জন্য তোমাদের জাল ফেল৷’

5 শিমোন উত্তর দিলেন, ‘প্রভু, আমরা সারা রাত ধরে কঠোর পরিশ্রম করে কিছুই ধরতে পারি নি; কিন্তু আপনি যখন বলছেন তখন আমি জাল ফেলব৷’

6 তাঁরা জাল ফেললে প্রচুর মাছ জালে ধরা পড়ল৷ মাছের ভারে তাদের জাল ছিঁড়ে যাবার উপক্রম হল৷

7 তখন তাঁরা সাহায্যের জন্য ইশারা করে অন্য নৌকার সঙ্গীদের ডাকলেন৷ সঙ্গীরা এসে দুটো নৌকায় এত মাছ বোঝাই করলেন য়ে সেগুলো ডুবে যাবার উপক্রম হল৷

8

9

10 সিবদিয়ের ছেলে যাকোব ও য়োহন যাঁরা তাঁর ভাগীদার ছিলেন তাঁরাও অবাক হয়ে গিয়েছিলেন৷ তখন যীশু শিমোনকে বললেন, ‘ভয় পেও না, এখন থেকে তুমি মাছ নয় বরং মানুষ ধরবে৷’

11 এরপর তাঁরা নৌকাগুলো তীরে এনে সব কিছু ফেলে রেখে যীশুর সঙ্গে চললেন৷

12 একবার যীশু কোন এক নগরে ছিলেন, সেখানে একজন লোক যার সর্বাঙ্গ কুষ্ঠরোগে ভরে গিয়েছিল, সে যীশুকে দেখে তাঁর সামনে উপুড় হয়ে পড়ে মিনতি করে বলল, ‘প্রভু, আপনি যদি ইচ্ছা করেন তাহলেই আমাকে ভালো করতে পারেন৷’

13 তখন যীশু হাত বাড়িয়ে তাকে ছুঁয়ে বললেন, ‘আমি তা-ই চাই৷ তুমি আরোগ্য লাভ কর!’ আর সঙ্গে সঙ্গে তার কুষ্ঠ ভালো হয়ে গেল৷

14 তখন যীশু তাকে আদেশ করলেন, ‘দেখ, একথা কাউকে বোলো না; কিন্তু যাও, যাজকদের কাছে গিয়ে নিজেকে দেখাও, আর শুচি হবার জন্য মোশির নির্দেশ মতো বলি উত্‌সর্গ কর৷ তুমি য়ে আরোগ্য লাভ করেছ, সবার সামনে এইভাবে তা প্রকাশ কর৷’

15 যীশুর বিষয়ে নানা খবর চতুর্দিকে আরো ছড়িয়ে পড়তে লাগল, আর বহুলোক ভীড় করে তাঁর কথা শুনতে ও রোগ থেকে সুস্থ হবার জন্য তাঁর কাছে আসতে লাগল৷

16 কিন্তু যীশু প্রায়ই নির্জন জায়গায় প্রান্তরের মধ্যে গিয়ে প্রার্থনা করতেন৷

17 একদিন তিনি যখন শিক্ষা দিচ্ছেন তখন সেখানে কয়েকজন ফরীশী ও ব্যবস্থার শিক্ষক বসেছিল৷ এরা গালীল ও যিহূদিযার প্রতিটি নগর ও জেরুশালেম থেকে এসেছিল৷ রোগীদের সুস্থ করার জন্য প্রভুর শক্তি যীশুর মধ্যে ছিল৷

18 সেই সময় কয়েকজন লোক খাটে করে একজন পঙ্গুকে বয়ে নিয়ে এল৷ তারা তাকে ভেতরে যীশুর কাছে নিয়ে যাবার চেষ্টা করছিল;

19 কিন্তু ভীড়ের জন্য ভেতরে যাবার পথ পেল না৷ তখন তারা ছাদে উঠে ছাদের টালি সরিয়ে তাকে তার খাটিযা সমেত লোকদের মাঝে য়েখানে যীশু ছিলেন সেখানে নামিয়ে দিল৷

20 তাদের এই বিশ্বাস দেখে যীশু বললেন, ‘তোমার পাপ ক্ষমা করা হল৷’

21 এই শুনে ইহুদী ব্যবস্থার শিক্ষকরা ও ফরীশীরা নিজেদের মধ্যে মনে মনে ভাবতে লাগল, ‘এই লোকটা কে য়ে ঈশ্বর নিন্দা করছে! একমাত্র ঈশ্বর ছাড়া আর কে পাপ ক্ষমা করতে পারে?’

22 কিন্তু যীশু তাদের মনের চিন্তা বুঝতে পেরে বললেন, ‘তোমরা মনে মনে কেন ঐ কথা ভাবছ?

23 কোনটা বলা সহজ, ‘তোমার পাপ ক্ষমা করা হল,’ না ‘তুমি উঠে হেঁটে বেড়াও?’

24 কিন্তু তোমরা য়েন জানতে পারো য়ে পৃথিবীতে পাপ ক্ষমা করার ক্ষমতা মানবপুত্রের আছে৷’ তাই তিনি পঙ্গু লোকটিকে বললেন, ‘আমি তোমায় বলছি, ওঠো! তোমার খাটিযা তুলে নিয়ে বাড়ি যাও৷’

25 আর লোকটি সঙ্গে সঙ্গে তাদের সামনে উঠে দাঁড়াল আর য়ে খাটিযার ওপর সে শুয়েছিল তা তুলে নিয়ে ঈশ্বরের প্রশংসা করতে করতে বাড়ি চলে গেল৷

26 এই দেখে সবাই খুব আশ্চর্য হয়ে গেল, আর ঈশ্বরের প্রশংসা করতে লাগল৷ তারা ভয় ও ভক্তিতে পূর্ণ হয়ে বলতে লাগল, ‘আজ আমরা এক বিস্ময়কর ঘটনা দেখলাম৷’

27 এই ঘটনার পর যীশু সেখান থেকে বাইরে গেলে কর আদায় করার জায়গায় লেবি নামে একজন কর আদায়কারীকে বসে থাকতে দেখলেন৷ যীশু তাকে বললেন, ‘আমার সঙ্গে এস!’

28 আর লেবি সব কিছু ফেলে রেখে উঠে পড়লেন ও যীশুর সঙ্গে চললেন৷

29 যীশুর জন্য লেবি তাঁর বাড়িতে একটা বড় ভোজের আযোজন করলেন৷ তাদের সঙ্গে অনেক কর আদায়কারী ও অন্যান্য আরো অনেকে খেতে বসল৷

30 তখন ফরীশী ও তাদের ব্যবস্থার শিক্ষকরা যীশুর অনুগামীদের কাছে অভিযোগ করে বলল, ‘তোমরা কেন কর আদায়কারী ও মন্দ লোকদের সঙ্গে ভোজন পান কর?’

31 এর জবাবে যীশু তাদের বললেন, ‘সুস্থ লোকেদের জন্য চিকিত্‌সকের প্রযোজন নেই; কিন্তু যাঁরা অসুস্থ তাদের জন্য চিকিত্‌সকের দরকার আছে৷

32 আমি ধার্মিকদের নয় কিন্তু মন্দ লোকদের ডাকতে এসেছি; য়েন তারা পাপের পথ থেকে ফেরে৷’

33 তারা যীশুকে বলল, ‘য়োহনের অনুগামীরা প্রায়ই প্রার্থনা ও উপবাস করে, ফরীশীদের অনুগামীরাও তা করে; কিন্তু আপনার অনুগামীরা তো সব সময়ই ভোজন পান করছে৷’

34 যীশু তাদের বললেন, ‘বর সঙ্গে থাকতে কি তোমরা বর যাত্রীদের উপোস করে থাকতে বলতে পার?

35 কিন্তু এমন সময় আসছে যখন বরকে তাদের কাছ থেকে সরিয়ে নেওযা হবে আর সেই সময় তারা উপোস করবে৷’

36 তিনি তাদের কাছে একটি দৃষ্টান্তদিয়ে বললেন, ‘নতুন জামা থেকে একটি টুকরো ছিঁড়ে নিয়ে কেউ কি পুরানো জামায় তালি দেয়? যদি কেউ তা করে তবে সে তার নতুন জামাটি ছিঁড়ল, আবার সেই ছেঁড়া কাপড়ের টুকরো পুরানোর সঙ্গে মানাবে না৷

37 পুরানো চামড়ার থলিতে কেউ টাটকা দ্রাক্ষারস রাখে না, রাখলে টাটকা দ্রাক্ষারস চামড়ার থলিটি ফাটিয়ে দেবে তাতে রস ও পড়ে যাবে আর থলি ও নষ্ট হবে৷

38 টাটকা দ্রাক্ষারস নতুন চামড়ার থলিতে রাখাই উচিত;

39 আর পুরানো দ্রাক্ষারস পান করার পর কেউ টাটকা দ্রাক্ষারস পান করতে চায় না, কারণ সে বলে ‘পুরাতনটাই ভাল৷”

6

1 কোন এক বিশ্রামবারে যীশু একটি শস্য ক্ষেতের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন৷ তাঁর শিষ্যরা শীষ ছিঁড়ে হাতে মেড়ে মেড়ে খাচ্ছিলেন৷

2 এই দেখে কয়েকজন ফরীশী বলল, ‘য়ে কাজ করা বিশ্রামবারে বিধি-সম্মত নয় তা তোমরা করছ কেন?’

3 এর উত্তরে যীশু তাদের বললেন, ‘দাযূদ ও তাঁর সঙ্গীদের যখন খিদে পেয়েছিল তখন তাঁরা কি করেছিলেন তা কি তোমরা পড় নি?

4 তিনি তো ঈশ্বরের গৃহে ঢুকে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে নিবেদিত রুটি নিয়ে খেয়েছিলেন, আর তাঁর সঙ্গীদের তা দিয়েছিলেন, যা যাজক ছাড়া অন্য কারো খাওযা বিধি-সম্মত ছিল না৷’

5 যীশু তাদের আরও বললেন, ‘মানবপুত্রই বিশ্রামবারের প্রভু৷’

6 আর এক বিশ্রামবারে তিনি সমাজ-গৃহে গিয়ে শিক্ষা দিতে লাগলেন৷ সেখানে একজন লোক ছিল যার ডান হাতটি শুকিয়ে গিয়েছিল৷

7 তিনি তাকে বিশ্রামবারে সুস্থ করেন কি না দেখার জন্য ব্যবস্থার শিক্ষকরা ও ফরীশীরা তাঁর ওপর নজর রাখছিল, য়েন তারা যীশুর বিরুদ্ধে দোষ দেবার কোন সূত্র খুঁজে পায়৷

8 যীশু তাদের মনের চিন্তা জানতেন, তাই য়ে লোকটির হাত শুকিয়ে গিয়েছিল তাকে বললেন, ‘তুমি সকলের সামনে উঠে দাঁড়াও!’ তখন সেই লোকটি সকলের সামনে উঠে দাঁড়াল৷

9 যীশু তাদের বললেন, ‘আমি তোমাদের একটা প্রশ্ন করি, বিশ্রামবারে কি করা বিধিসম্মত, ভাল করা না ক্ষতি করা? কাউকে প্রাণে বাঁচানো না ধ্বংস করা?’

10 চারপাশে তাদের সকলের দিকে তাকিয়ে তিনি লোকটিকে বললেন, ‘তোমার হাতখানা বাড়াও৷’ সে তাই করলে তার হাত সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হয়ে গেল৷

11 কিন্তু ফরীশী ও ব্যবস্থার শিক্ষকরা রাগে জ্বলতে লাগল৷ তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে লাগল, ‘যীশুর প্রতি কি করা হবে?’

12 যীশু সেই সময় একবার প্রার্থনা করার জন্য একটি পর্বতে গেলেন৷ সারা রাত ধরে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনায় কাটালেন৷

13 সকাল হলে তিনি তাঁর অনুগামীদেব নিজের কাছে ডাকলেন ও তাঁদের মধ্য থেকে বারোজনকে মনোনীত করে তাঁদের ‘প্রেরিত’ পদে নিযোগ করলেন৷ তাঁরা হলেন,

14 শিমোন যার নাম রাখলেন তিনি পিতর আর তাঁর ভাই আন্দরিয়, যাকোব ও য়োহন আর ফিলিপ ও বর্থলময়,

15 মথি, থোমা, আলফেয়ের ছেলে যাকোব, শিমোন য়ে ছিল দেশ ভক্ত দলের লোক৷

16 যাকোবের ছেলে যিহূদা আর যিহূদা ঈষ্করিযোতীয়, য়ে পরে বিশ্বাসঘাতকে পরিণত হয়েছিল৷

17 যীশু তাঁর প্রেরিতদের সঙ্গে নিয়ে পর্বত থেকে নেমে একটা সমতল জায়গায় গিয়ে দাঁড়ালেন৷ সেখানে তাঁর আরো অনুগামী এসে জড়ো হয়েছিল৷ সমস্ত যিহূদা জেরুশালেম এবং সোর সীদোনের সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চল থেকে বিস্তর লোক তাঁর কাছে এসে জড় হল৷

18 তাঁরা তার কথা শুনতে ও তাদের রোগ-ব্যধি থেকে সুস্থ হতে তাঁর কাছে এসেছিল৷ যাঁরা মন্দ আত্মার প্রকোপে কষ্ট পাচ্ছিল তারাও সুস্থ হল৷

19 সকলেই তাঁকে স্পর্শ করার চেষ্টা করতে লাগল, কারণ তাঁর মধ্য থেকে শক্তি বের হয়ে তাদের আরোগ্য দান করছিল৷

20 যীশু তাঁর অনুগামীদের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলেন, ‘দরিদ্রেরা তোমরা ধন্য, কারণ ঈশ্বরের রাজ্য তোমাদেরই৷

21 তোমরা এখন যাঁরা ক্ষুধিত, তারা ধন্য কারণ তোমরা পরিতৃপ্ত হবে৷ তোমরা এখন যাঁরা চোখের জল ফেলছ, তারা ধন্য, কারণ তোমরা আনন্দ করবে৷

22 ‘ধন্য তোমরা যখন মানবপুত্রের লোক বলে অন্য়েরা তোমাদের ঘৃণা করে, সমাজচ্য়ুত করে, অপমান করে, তোমাদের নাম মুখে আনতে চায় না এবং তোমাদেরকে কিছুতেই মেনে নিতে পারে না৷

23 সেই দিন তোমরা আনন্দ কোর, আনন্দে নৃত্য কোর কারণ দেখ স্বর্গে তোমাদের জন্য পুরস্কার সঞ্চিত আছে৷ ওদের পূর্বপুরুষেরা ভাববাদীদের সঙ্গে এই রকমই ব্যবহার করেছে৷

24 কিন্তু ধনী ব্যক্তিরা, ধিক্ তোমাদের, কারণ তোমরা তো এখনই দুঃখ পাচ্ছ৷

25 তোমরা যাঁরা আজ পরিতৃপ্ত, ধিক্ তোমাদের, কারণ তোমরা ক্ষুধার্ত হবে৷ তোমরা যাঁরা আজ হাসছ, ধিক্ তোমাদের, কারণ তোমরা কাঁদবে, শোক করবে৷

26 ধিক্ তোমাদের, যখন সব লোক তোমাদের প্রশংসা করে, কারণ এই সব লোকদের পূর্বপুরুষেরা ভণ্ডভাববাদীদেরও প্রশংসা করত৷

27 ‘তোমরা যাঁরা শুনছ, আমি কিন্তু তোমাদের বলছি, তোমরা তোমাদের শত্রুদের ভালবেসো৷ যাঁরা তোমাদের ঘৃণা করে, তাদের মঙ্গল কোর৷

28 যাঁরা তোমাদের অভিশাপ দেয়, তাদের আশীর্বাদ কোর৷ যাঁরা তোমাদের সঙ্গে দুর্য়্ববহার করে, তাদের জন্যপ্রার্থনা কোর৷

29 কেউ যদি তোমার একগালে চড় মারে, তার কাছে অপর গালটি বাড়িয়ে দাও৷ কেউ যদি তোমার চাদর কেড়ে নেয়, তাকে তোমার জামাটিও নিতে দাও৷

30 তোমার কাছে য়ে চায় তাকে দাও৷ আর তোমার কোন জিনিস যদি কেউ নেয়, তবে তা ফেরত চেও না৷

31 অন্য়ের কাছ থেকে তুমি য়েমন ব্যবহার পেতে চাও, তাদের সঙ্গেও তুমি তেমনি ব্যবহার কোর৷

32 যাঁরা তোমাদের ভালবাসে, তোমরা যদি কেবল তাদেরই ভালবাস, তবে তাতে প্রশংসার কি আছে? কারণ পাপীরাও তো একই রকম করে৷

33 যাঁরা তোমাদের উপকার করে, তোমরা যদি কেবল তাদেরই উপকার কর, তাতে প্রশংসার কি আছে? পাপীরাও তো তাই করে৷

34 যাঁরা ধার শোধ করতে পারে এমন লোকদেরই যদি কেবল তোমরা ধার দাও, তবে তাতে প্রশংসার কি আছে? এমন কি পাপীরাও তা ফিরে পাবার আশায় তাদের মতো পাপীদের ধার দেয়৷

35 কিন্তু তোমরা তোমাদের শত্রুদের ভালবেসো, তাদের মঙ্গল কোর, আর কিছুই ফিরে পাবার আশা না রেখে ধার দিও৷ তাহলে তোমাদের মহাপুরস্কার লাভ হবে, আর তোমরা হবে পরমেশ্বরের সন্তান, কারণ তিনি অকৃতজ্ঞ ও দুষ্টদের প্রতিও দযা করেন৷

36 তোমাদের পিতা, য়েমন দযালু তোমরাও তেমন দযালু হও৷

37 অপরের বিচার কোর না, তাহলে তোমাদেরও বিচারের সম্মুখীন হতে হবে না৷ অপরের দোষ ধরো না, তাহলে তোমাদেরও দোষ ধরা হবে না৷ অন্যকে ক্ষমা কোর, তাহলে তোমাদেরও ক্ষমা করা হবে৷

38 দান কর, প্রতিদান তুমিও পাবে৷ তারা তোমাদের অনেক বেশী করে, চেপে চেপে, ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে উপচে দেবে৷ কারণ অন্য়ের জন্য য়ে মাপে মেপে দিচ্ছ, সেই মাপেই তোমাদের মেপে দেওযা হবে৷’

39 যীশু তাদের কাছে আর একটি দৃষ্টান্ত দিলেন, ‘একজন অন্ধ কি অন্য একজন অন্ধকে পথ দেখাতে পারে? তাহলে কি তারা উভয়েই গর্তে পড়বে না?

40 কোন ছাত্র তার শিক্ষকের উর্দ্ধে নয়; কিন্তু শিক্ষা সম্পূর্ণ হলে প্রত্যেক ছাত্র তাঁর শিক্ষকের মতো হতে পারে৷

41 ‘তোমার ভাইয়ের চোখে য়ে কুটো আছে তুমি সেটা দেখছ, কিন্তু তোমার নিজের চোখে য়ে তক্তা আছে সেটা দেখছ না, কেন?

42 তোমার নিজের চোখে য়ে তক্তা আছে তা যখন লক্ষ্য করছ না, তখন কেমন করে তোমার ভাইকে বলতে পার, ‘ভাই তোমার চোখে য়ে কুটোটা আছে, এস তা বের করে দিই৷’ কেন তুমি একথা বল? ভণ্ড প্রথমে তোমার নিজের চোখ থেকে তক্তা বের করে ফেল, আর তবেই তোমার ভাইয়ের চোখে য়ে কুটো আছে, তা বের করার জন্য স্পষ্ট করে দেখতে পাবে৷

43 ‘কারণ এমন কোন ভাল গাছ নেই যাতে খারাপ ফল ধরে, আবার এমন কোন খারাপ গাছ নেই যাতে ভাল ফল ধরে৷

44 প্রত্যেক গাছকে তার ফল দিয়েই চেনা যায়৷ লোকে কাঁটা-ঝোপ থেকে ডুমুর ফল তোলে না, বা বুনো ঝোপ থেকে দ্রাক্ষা সংগ্রহ করে না৷

45 সত্ লোকের অন্তরের ভাল ভাণ্ডার থেকে ভাল জিনিসই বের হয়৷ আর দুষ্ট লোকের মন্দ অন্তর থেকে মন্দ বিষয়ই বের হয়৷ মানুষের অন্তরে যা থাকে তার মুখ সে কথাই বলে৷

46 ‘তোমরা কেন আমাকে ‘প্রভু, প্রভু বলে ডাক, অথচ আমি যা বলি তা কর না?

47 য়ে কেউ আমার কাছে আসে ও আমার কথা শুনে সেসব পালন করে, সে কার মতো?

48 সে এমন একজন লোকের মতো, য়ে বাড়ি তৈরী করতে গভীর ভাবে খুঁড়ে পাথরের ওপর ভিত গাঁথল৷ তাই যখন বন্যা এল, তখন নদীর জলের ঢেউ এসে সেই বাড়িটিতে আঘাত করল, কিন্তু তা নড়াতে পারল না, কারণ তার ভিত ছিল মজবুত৷

49 য়ে আমার কথা শোনে অথচ সেই মতো কাজ না করে, সে এমন একজন লোকের মতো, য়ে মাটির উপর ভিত ছাড়াই বাড়ি তৈরী করেছিল৷ পরে নদীর স্রোত এসে তাতে আঘাত করলে তখনই বাড়িটা ভেঙ্গে পড়ল এবং একেবারে ধ্বংস হয়ে গেল৷’

7

1 যীশু লোকদের যা বলতে চেয়েছিলেন তা বলা শেষ করে কফরনাহূম শহরে গেলেন৷

2 সেখানে একজন রোমীয় শতপতির এক ক্রীতদাস গুরুতর অসুখে মরনাপন্ন হয়েছিল৷ এই ক্রীতদাসটি শতপতির অতি প্রিয় ছিল৷

3 শতপতি যখন যীশুর কথা শুনতে পেলেন তখন ইহুদীদের কয়েকজন নেতাকে দিয়ে যীশুর কাছে বলে পাঠালেন, য়েন যীশু এসে তার দাসের জীবন রক্ষা করেন৷

4 তারা যীশুর কাছে এসে তাকে বিশেষভাবে অনুরোধ করে বললেন, ‘যার জন্য আপনাকে এই কাজ করতে বলছি, তিনি একজন য়োগ্য লোক৷

5 কারণ তিনি আমাদের লোকদের ভালবাসেন, আর তিনি আমাদের জন্য একটা সমাজ-গৃহ নির্মাণ করে দিয়েছেন৷’

6 তখন যীশু তাদের সঙ্গে গেলেন৷ তিনি যখন সেই বাড়ির কাছাকাছি এসেছেন তখন সেই শতপতি তাঁর বন্ধুদের দিয়ে বলে পাঠালেন, ‘প্রভু আপনি আর কষ্ট করবেন না, কারণ আপনি য়ে আমার বাড়িতে আসেন তার য়োগ্য আমি নই৷

7 এই কারণেই আমি নিজেকে আপনার কাছে যাবার উপযুক্ত মনে করি না৷ আপনি কেবল মুখে বলুন তাতেই আমার ঐ দাস ভাল হয়ে যাবে৷

8 কারণ আমিও একজনের অধীনে কাজ করি, আর আমার অধীনেও সৈনিকেরা কাজ করে৷ আমি যদি কাউকে বলি ‘যাও’ তখন সে যায়, আবার কাউকে যদি বলি ‘এস’ তবে সে আসে৷ আর আমি যখন একজনকে বললি, ‘এটা কর,’ তখন সে তা করে৷’

9 এই কথা শুনে যীশু আশ্চর্য হলেন৷ য়ে সব লোক ভীড় করে তাঁর পিছনে পিছনে আসছিল, তাদের দিকে ফিরে তিনি বললেন, ‘আমি তোমাদের বলছি, এমন কি ইস্রায়েলীয়দের মধ্যেও এত বড় বিশ্বাস আমি কখনও দেখিনি৷’

10 সেনাপতি যাদের পাঠিয়েছিলেন, তারা বাড়ি ফিরে গিয়ে দেখল য়ে সেই চাকর ভাল হয়ে গেছে৷

11 এর অল্প দিন পরেই যীশু নাযিন্নামে এক নগরের দিকে যাচ্ছিলেন৷ তাঁর শিষ্যরা এবং আরও অনেক লোক তাঁর সঙ্গে সঙ্গে যাচ্ছিল৷

12 তিনি যখন সেই নগরের ফটকের কাছাকাছি এসেছেন, তখন একজন মৃত লোককে বয়ে নিয়ে যাওযা হচ্ছিল৷ সেই মৃত লোকটি ছিল তার বিধবা মায়ের একমাত্র পুত্র৷ সেই নগরের অনেক লোক সেই বিধবার সঙ্গে সঙ্গে যাচ্ছিল৷

13 সেই বিধবাকে দেখে তার জন্য প্রভুর খুবই দযা হল৷ তিনি তাকে বললেন, ‘তুমি কেঁদো না৷’

14 তারপর তিনি কাছে এসে শবের খাট ছুঁলেন, তখন যাঁরা মৃতদেহ বয়ে নিয়ে যাচ্ছিল তারা দাঁড়িয়ে পড়ল৷ এমন সময় যীশু বললেন, ‘যুবক, আমি তোমায় বলছি তুমি ওঠো৷’

15 তখন সেই লোকটি উঠে বসল, আর কথা বলতে শুরু করল৷ যীশু তখন তাকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিলেন৷

16 এই দেখে সকলের মন ভয় ও ভক্তিতে পূর্ণ হল৷ তারা ঈশ্বরের প্রশংসা করে বলতে লাগল, ‘আমাদের মধ্যে একজন মহান ভাববাদীর আবির্ভাব হয়েছে৷’ তারা আরও বলতে লাগল, ‘ঈশ্বর তাঁর লোকদের সাহায্য করতে এসেছেন৷’

17 যীশুর বিষয়ে এই সব কথা যিহূদিযায় ও তার আশপাশের সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ল৷

18 বাপ্তিস্মদাতা য়োহনের অনুগামীরা এই সব ঘটনার কথা য়োহনকে জানাল৷ তখন য়োহন তাঁর দুজন অনুগামীকে ডেকে

19 প্রভুর কাছে জিজ্ঞেস করে পাঠালেন য়ে, ‘য়াঁর আগমণের কথা আছে আপনিই কি সেই, না আমরা অন্য কারোর জন্য অপেক্ষা করব?’

20 সেই লোকেরা যীশুর কাছে এসে বলল, ‘বাপ্তিস্মদাতা য়োহন আপনার কাছে আমাদের জিজ্ঞেস করতে পাঠিয়েছেন৷ ‘য়াঁর আসবার কথা আপনিই কি সেই ব্যক্তি, না আমরা অন্য কারো অপেক্ষায় থাকব?”

21 সেই সময় যীশু অনেক লোককে বিভিন্ন রোগ ও ব্যাধি থেকে সুস্থ করছিলেন, অশুচি আত্মায় পাওযা লোকদের ভাল করছিলেন, আর অনেক অন্ধ লোককে দৃষ্টি শক্তি দান করছিলেন৷

22 তখন তিনি তাদের প্রশ্নের জবাবে বললেন, ‘তোমরা যা দেখলে ও শুনলে তা গিয়ে য়োহনকে বল৷ অন্ধেরা দেখতে পাচ্ছে, খোঁড়ারা হাঁটছে, কুষ্ঠ রোগীরা সুস্থ হচ্ছে, বধিরেরা শুনছে, মরা মানুষ বেঁচে উঠছে;আর দরিদ্ররা সুসমাচার শুনতে পাচ্ছে৷

23 ধন্য সেই লোক, য়ে আমাকে গ্রহণ করার জন্য মনে কোন দ্বিধা বোধ করে না৷’

24 য়োহনের কাছ থেকে যাঁরা এসেছিল তারা চলে গেলে পর যীশু সমবেত সেই লোকদের কাছে য়োহনের বিষয়ে বললেন, ‘তোমরা প্রান্তরের মধ্যে কি দেখতে গিয়েছিলে? বাতাসে একটি বেত গাছ দুলছে তাই?

25 তা না হলে কি দেখতে গিয়েছিলে? একজন লোক বেশ জমকালো পোশাক পরা? না৷ যাঁরা দামী জামা কাপড় পরে এবং বিলাসে জীবন কাটায় তারা তো প্রাসাদে থাকে৷

26 তবে তোমরা কি দেখতে গিয়েছিলে? একজন ভাববাদীকে? হ্যাঁ, আমি তোমাদের বলছি, তোমরা য়াঁকে দেখেছ তিনি একজন ভাববাদীর থেকেও মহান৷

27 ইনি সেই লোক য়াঁর বিষয়ে লেখা হয়েছে: ‘দেখ, আমি তোমার আগে আগে আমার এক সহায়কে পাঠাচ্ছি৷ সে তোমার আগে গিয়ে তোমার পথ প্রস্তুত করবে৷’ মালাখি 3:1

28 আমি তোমাদের বলছি, স্ত্রীলোকের গর্ভজাত সকল মানুষের মধ্যে য়োহনের চেয়ে শ্রেষ্ঠ কেউ নেই, তবু ঈশ্বরের রাজ্যে ক্ষুদ্রতম ব্যক্তিও য়োহনের চেয়ে মহান৷’

29 যাঁরা যীশুর প্রচার শুনেছিল, তাদের মধ্যে পাপীষ্ঠরা ও কর আদায়কারীরাও য়োহনের বাপ্তিস্ম নিয়ে স্বীকার করল য়ে ঈশ্বর ন্যায়পরায়ণ৷

30 কিন্তু ফরীশী ও ব্যবস্থার শিক্ষকরা য়োহনের কাছে বাপ্তিস্ম নিতে অস্বীকার করে তাদের জীবনে ঈশ্বরের ইচ্ছাকে অগ্রাহ্য় করল৷

31 ‘তাহলে আমি কিসের সঙ্গে এই যুগের লোকদের তুলনা করব? এরা কেমন ধরণের লোক?

32 এরা ছোট ছেলেদের মতো, যাঁরা হাটে বসে একে অপরকে বলে, ‘আমরা তোমাদের জন্য বাঁশি বাজালাম, কিন্তু তোমরা নাচলে না৷ আমরা তোমাদের জন্য শোকগাথা গাইলাম, কিন্তু তোমরা কাঁদলে না৷’

33 কারণ বাপ্তিস্মদাতা য়োহন এসেছেন, তিনি রুটি খান না আর দ্রাক্ষারস পানও করেন না, আর তোমরা বল, ‘ওকে ভূতে পেয়েছে৷’

34 মানবপুত্র এসে পানাহার করেন; আর তোমরা বল, ‘দেখ! ও পেটুক, মদ্য়পাযী, আবার পাপী ও কর আদায়কারীদের বন্ধু৷’

35 প্রজা তার কাজের দ্বারাই প্রমাণ করে য়ে তা নির্দোষ৷’

36 একদিন একজন ফরীশী তাঁর বাড়িতে যীশুকে নিমন্ত্রণ করল৷ তাই তিনি তার বাড়িতে গিয়ে সেখানে খাবার আসন নিলেন৷

37 সেই নগরে একজন দুশ্চরিত্রা স্ত্রীলোক ছিলেন৷ ফরীশীর বাড়িতে যীশু খেতে এসেছেন জানতে পেরে সে একটা শ্বেত পাথরের শিশিতে করে বহুমূল্য আতর নিয়ে এল৷

38 সে যীশুর পিছনে তাঁর পায়ের কাছে নতজানু হয়ে কেঁদে কেঁদে চোখের জলে তাঁর পা ভিজাতে লাগল৷ তারপর সে তার মাথার চুল দিয়ে তাঁর পা মুছিয়ে দিল, আর তাঁর পায়ে চুমু দিয়ে সেই আতর তাঁর পায়ে ঢেলে দিল৷

39 য়ে ফরীশী যীশুকে নিমন্ত্রণ করেছিল, এই দেখে সে মনে মনে বলল, ‘এই লোকটা যদি ভাববাদী হয় তবে নিশ্চয়ই বুঝতে পারত, য়ে তার পা ছুঁচ্ছে সে কে এবং কি ধরণের স্ত্রীলোক, এবং এও জানতে পারত য়ে স্ত্রীলোকটি পাপী৷’

40 এর জবাবে যীশু তাকে বললেন, ‘শিমোন, তোমাকে আমার কিছু বলার আছে৷’ শিমোন বলল, ‘বেশ তো গুরু, বলুন৷’

41 যীশু বললেন, ‘কোন এক মহাজনের কাছে দুজন লোক টাকা ধারত৷ একজন পাঁচশো রূপোর মুদ্রা আর একজন পঞ্চাশ রূপোর মুদ্রা৷

42 কিন্তু তারা কেউই ঋণ শোধ করতে না পারাতে তিনি দযা করে উভয়ের ঋণই মুকুব করে দিলেন৷ এখন এদের মধ্যে কে তাঁকে বেশী ভালবাসবে?’

43 শিমোন বলল, ‘আমি মনে করি যার বেশী ঋণ মুকুব করা হল সেই৷’ যীশু তাকে বললেন, ‘তুমি ঠিক বলেছ৷’

44 এরপর যীশু সেই স্ত্রীলোকটির দিকে ফিরে শিমোনকে বললেন, ‘তুমি এই স্ত্রীলোকটিকে দেখছ? আমি তোমার বাড়িতে এলাম আর তুমি আমায় পা ধোবার জল পর্যন্ত দিলে না৷ কিন্তু ও চোখের জলে আমার পা ধুইয়ে দিল আর নিজের চুল দিয়ে তা মুছিয়ে দিল৷

45 স্বাগত জানাবার প্রথা অনুসারে তুমি আমায় চুমু দিলে না; কিন্তু আমি আসার পর থেকেই সে আমার পায়ে চুমু দিয়ে চলেছে৷

46 তুমি আমার মাথায় তেল দিয়ে অভিষেক করলে না; কিন্তু সে আমার পায়ে সুগন্ধি আতর ঢেলে তা অভিষিক্ত করল৷

47 এতেই বোঝা যায় য়ে সে বেশী ভালবাসা দেখাচ্ছে, সেইজন্যই আমি বলছি, এর পাপ অনেক হলেও তা ক্ষমা করা হয়েছে; কিন্তু যাকে অল্প ক্ষমা করা হয়, সে অল্প ভালবাসে৷’

48 এরপর যীশু সেই স্ত্রী লোকটিকে বললেন, ‘তোমার পাপের ক্ষমা হল৷’

49 যাঁরা তাঁর সঙ্গে খেতে বসেছিল, তারা পরস্পর বলাবলি করতে লাগল, ‘ইনি কে য়ে পাপ ক্ষমা করেন?’

50 কিন্তু যীশু সেই স্ত্রী লোকটিকে বললেন, ‘তোমার বিশ্বাসই তোমায় মুক্ত করেছে, তোমার শান্তি হোক৷’

8

1 এরপর যীশু গ্রামে ও নগরে নগরে ঘুরে ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করতে লাগলেন; তাঁর সঙ্গে ছিলেন সেই বারোজন প্রেরিত৷

2 এমন কয়েকজনস্ত্রীলোকও তাঁর সঙ্গে ছিলেন, যাঁরা নানারকম রোগ ব্যাধি থেকে সুস্থ হয়েছিলেন ও অশুচি আত্মার কবল থেকে মুক্ত হয়েছিলেন৷ এঁদের মধ্যে ছিলেন মরিয়ম মগ্দলীনী, এর মধ্যে যীশু সাতটি মন্দ আত্মা দূর করে দিয়েছিলেন৷

3 রাজা হেরোদের বাড়ির অধ্যক্ষ কূষেরস্ত্রী শোশন্না ও আরো অনেক স্ত্রীলোক ছিলেন৷ যীশু ও তাঁর শিষ্যদের সেবা যত্নের জন্য এরা নিজেদের টাকা খরচ করতেন৷

4 সেই সময় বিভিন্ন শহর থেকে দলে দলে লোক এসে যীশুর কাছে জড়ো হচ্ছিল, তখন যীশু তাদের উপদেশ দিতে গিয়ে এই দৃষ্টান্তটি বললেন:

5 ‘একজন চাষী বীজ বুনতে গেল৷ সে যখন বীজ বুনছিল তখন কিছু পথের পাশে পড়ল, আর লোকে তা মাড়িয়ে গেল, পাখিতে তা খেয়ে গেল৷

6 কিছু বীজ পাথুরে জমির ওপর পড়ল, সেই বীজগুলো থেকে অঙ্কুর বের হল বটে, কিন্তু মাটিতে রস না থাকায় তা শুকিয়ে গেল৷

7 কিছু বীজ ঝোপের মধ্যে পড়ল৷ কাঁটাগাছ বেড়ে উঠে চারাগুলিকে চেপে দিল৷

8 আবার কিছু বীজ ভাল জমিতে পড়ল, সেগুলি বেড়ে উঠলে যা বোনা হয়েছিল তার একশো গুণ বেশী ফসল হল৷’ এই কথা বলার পর তিনি চিত্‌কার করে বললেন, ‘যার শোনবার মত কান আছে, সে শুনুক৷’

9 তাঁর শিষ্যেরা তাঁকে এই দৃষ্টান্তটির অর্থ কি তা জিজ্ঞেস করলেন৷

10 তখন যীশু তাঁদের বললেন, ‘ঈশ্বরের রাজ্যের নিগূঢ়তত্ত্ব তোমাদের জানতে দেওযা হয়েছে; কিন্তু বাকি সকলের কাছে দৃষ্টান্তের মাধ্যমে বলা হয়েছে: ‘য়েন তারা দেখেও না দেখে, শুনেও না বোঝে৷’যিশাইয় 6:9

11 ‘দৃষ্টান্তটির অর্থ এই, বীজ হল ঈশ্বরের শিক্ষা৷

12 য়ে বীজ পথের ধারে পড়েছিল তা এমন লোকদের বোঝায়, যাঁরা শোনে, তারপর দিযাবল এসে তাদের অন্তর থেকে ঈশ্বরের শিক্ষা হরণ করে নিয়ে যায়, য়েন তারা বিশ্বাস করে মুক্তি না পায়৷

13 য়ে বীজ পাথুরে জমিতে পড়েছিল তা এমন লোকদের বোঝায়, যাঁরা শোনার সঙ্গে সঙ্গে আনন্দের সঙ্গে তা গ্রহণ করে; কিন্তু মাটি না থাকাতে তাদের কোন শিকড় গজায় নি৷ কিছু দিনের জন্য তারা বিশ্বাস করে বটে; কিন্তু কঠিন পরীক্ষার সময় তারা পিছিয়ে যায়৷

14 কাঁটা ঝোপের মধ্যে য়ে বীজ পড়ল তা সেই সব লোককে বোঝায়, যাঁরা শোনে; কিন্তু পরে জগত সংসারের চিন্তা ভাবনা, ধন-সম্পত্তি ও সুখভোগের মধ্যে তা চাপা পড়ে যায়, আর তারা কখনও ভাল ফল উত্‌পন্ন করে না৷

15 য়ে বীজ ভাল জমিতে পড়ল তা হচ্ছে সেই সব লোকের প্রতীক যাদের অন্তর সত্যতা ও সরলতায় ভরা, তারা যখন ঈশ্বরের শিক্ষা শোনে তখন তা ধরে রাখে, আর স্থির থেকে জীবনে ফল উত্‌পন্ন করে৷

16 ‘কেউ বাতি জে্বলে তা কোন পাত্র দিয়ে ঢেকে রাখে না, অথবা খাটের নীচে রাখে না৷ তার পরিবর্তে সে তা বাতিদানের ওপরই রাখে, য়েন ভেতরে যাঁরা আসে তারা আলো দেখতে পায়৷

17 এমন কিছু লুকানো নেই যা প্রকাশ পাবে না, এমন কিছু গোপন নেই যা জানা যাবে না কিংবা আলোয় ফুটে উঠবে না৷

18 তাই কিভাবে শুনছ তাতে মন দাও, কারণ যার আছে তাকে আরো দেওযা হবে৷ আর যার নেই তার যা আছে বলে সে মনে করে, তাও তার কাছ থেকে কেড়ে নেওযা হবে৷

19 এই সময় যীশুর মা ও ভাইরা তাঁকে দেখতে এসেছিলেন; কিন্তুভীড়ের জন্য তাঁরা যীশুর কাছে পৌঁছাতে পারলেন না৷

20 তখন একজন লোক তাঁকে বলল, ‘আপনার মা ও ভাইরা বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন, তাঁরা আপনার সঙ্গে দেখা করতে চান৷’

21 কিন্তু তিনি তাদের বললেন, ‘তারাই আমার মা, আমার ভাই, যাঁরা ঈশ্বরের শিক্ষা শুনে সেই অনুসারে কাজ করে৷’

22 সেই সময় একদিন যীশু তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে নিয়ে একটি নৌকায় উঠলেন৷ তিনি তাঁদের বললেন, ‘চল, আমরাহ্রদের ওপারে যাই৷’ তাঁরা রওনা দিলেন৷

23 নৌকা চলতে থাকলে যীশু নৌকার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়লেন৷হ্রদের মধ্যে হঠাত্ ঝড় উঠল আর তাঁদের নৌকাটি জলে ভর্তি হয়ে য়েতে লাগল, এতে তাঁরা খুবই বিপদে পড়লেন৷

24 তখন শিষ্যরা যীশুর কাছে এসে তাঁকে জাগিয়ে তুলে বললেন, ‘গুরু! গুরু! আমরা য়ে সত্যিই ডুবতে বসেছি৷ তখন যীশু উঠে ঝোড়ো বাতাস ও তুফানকে ধমক দিলেন৷ সঙ্গে সঙ্গে ঝড় ও তুফান থেমে গেল, আর সব কিছু শান্ত হোল৷

25 তখন যীশু তাঁর অনুগামীদের বললেন, ‘তোমাদের বিশ্বাস কোথায়?’ কিন্তু তাঁরা ভয় ও বিস্ময়ে বিহ্বল হয়ে গিয়েছিলেন৷ তাঁরা পরস্পর বলাবলি করতে লাগলেন, ‘ইনি কে য়ে ঝড় এবং সমুদ্রকে হুকুম করেন আর তারা তাঁর কথা শোনে!’

26 এরপর তাঁরা গালীলহ্রদের ওপারে গেরাসেনীদের অঞ্চলে গিয়ে পৌঁছালেন৷

27 যীশু যখন তীরে নামছেন, সেই সময় সেই নগর থেকে একজন লোক তাঁর সামনে এল৷ এই লোকটির মধ্যে অনেকগুলো মন্দ আত্মা ছিল৷ বহুদিন ধরে সে জামা কাপড় পরত না ও বাড়িতে থাকত না কিন্তু কবরখানায় থাকত৷

28

29

30 তখন যীশু তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার নাম কি?’ সে বলল, ‘বাহিনী!’ কারণ অনেকগুলো ভূত একসঙ্গে তার মধ্যে ঢুকেছিল৷

31 তারা যীশুকে মিনতির সুরে বলল, য়েন তিনি তাদের রসাতলে যাওযার হুকুম না করেন৷

32 সেই সময় পাহাড়ের ঢালে একপাল শুযোর চরছিল৷ সেই ভূতরা যীশুকে মিনতি করে বলল য়েন তিনি তাদেরকে ঐ শুযোর পালে ঢোকার অনুমতি দেন৷ যীশু তখন তাদের সেই অনুমতি দিলেন৷

33 তাতে ভূতরা সেই লোকটির ভেতর থেকে বেরিয়ে ঐ শুযোরগুলোর মধ্যে ঢুকল, আর সেই শুযোরের পালহ্রদের ঢাল দিয়ে জোরে দৌড়ে গিয়ে জলে ডুবে মরল৷

34 যাঁরা শুযোরের পাল চরাচ্ছিল, এই ঘটনা দেখে তারা দৌড়ে গিয়ে সেই নগরে ও সারা দেশে এই খবর দিল;

35 আর কি হয়েছে তা দেখবার জন্য লোকেরা বের হয়ে এল৷ তারা যীশুর কাছে এসে দেখল, যার মধ্যে থেকে ভূতগুলো বের হয়েছে সে কাপড় পরে শান্তভাবে যীশুর পায়ের কাছে বসে আছে৷ এই দেখে তারা ভয় পেয়ে গেল৷

36 যাঁরা এই ঘটনা দেখেছিল তারা ঐ লোকদের কাছে বলল, কেমন করে ঐ ভূতে পাওযা লোকটি সুস্থ হল৷

37 তখন গেরাসেনী অঞ্চলের সমস্ত লোক যীশুকে তাদের কাছ থেকে চলে য়েতে অনুরোধ করল, কারণ তারা ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়েছিল৷ তখন যীশু ফিরে যাবার জন্য নৌকায় উঠলেন৷

38 তখন য়ে লোকটির মধ্য থেকে ভূত বের হয়ে গিয়েছিল, সে যীশুর সঙ্গে যাবার জন্য মিনতি করতে লাগল৷ কিন্তু যীশু তাকে অনুমতি দিলেন না৷

39 তিনি বললেন, ‘তুমি বাড়ি ফিরে যাও; আর ঈশ্বর তোমার জন্য যা করেছেন তা সকলকে বল৷’ তখন সে সেখান থেকে চলে গেল, আর যীশু তার জন্য যা করেছেন তা সারা শহর বলে বেড়াতে লাগল৷

40 যীশু যখন ফিরে এলেন তখন এক বিরাট জনতা তাঁকে স্বাগত জানাল, কারণ তারা সকলে যীশুর ফিরে আসার অপেক্ষায় ছিল৷

41 ঠিক সেই সময় যাযীর নামে একজন লোক সেখানে এলেন, ইনি সেখানকার সমাজগৃহের নেতা৷ তিনি যীশুর পায়ের কাছে উপুড় হয়ে পড়ে তাঁকে অনুরোধ করলেন, য়েন যীশু তাঁর সঙ্গে তাঁর বাড়িতে যান৷

42 কারণ তখন তাঁর একমাত্র সন্তান, বারো বছরের মেয়েটি মৃত্যুশয়্য়ায় ছিল৷ যীশু যখন যাচ্ছিলেন, লোকেরা তাঁর চারদিকে ভীড় করে ধাক্কা-ধাক্কি করতে লাগল৷

43 সেই ভীড়ের মধ্যে একজন স্ত্রীলোক ছিল য়ে বারো বছর ধরে রক্তস্রাব রোগে ভুগছিল৷ চিকিত্‌সকদের পিছনে সে তার যথাসর্বস্ব ব্যয় করেছিল, কিন্তু কেউ তাকে ভাল করতে পারে নি৷

44 সে যীশুর পেছন দিকে এসে তাঁর পোশাকের ঝালর স্পর্শ করল, সঙ্গে সঙ্গে তার রক্তস্রাব বন্ধ হয়ে গেল৷

45 তখন যীশু বললেন, ‘কে আমাকে স্পর্শ করল?’ সবাই অস্বীকার করল, তখন পিতর বললেন, ‘গুরু, লোকেরা আপনার চারপাশে ধাক্কা-ধাক্কি করে আপনার ওপর পড়ছে৷’

46 কিন্তু যীশু বললেন, ‘কেউ আমায় স্পর্শ করেছে! কারণ আমি জানি আমার মধ্যে থেকে শক্তি বের হয়েছে৷’

47 সেই স্ত্রীলোকটি যখন দেখল য়ে সে কোনমতে এড়িয়ে য়েতে পারবে না, তখন কাঁপতে কাঁপতে যীশুর কাছে এসে তার সামনে উপুড় হয়ে পড়ল এবং সকলের সামনে বলল কেন সে যীশুকে স্পর্শ করেছে, আর কিভাবে সঙ্গে সঙ্গে ভাল হয়ে গেছে৷

48 তখন যীশু সেই স্ত্রীলোকটিকে বললেন, ‘তোমার বিশ্বাসই তোমাকে সুস্থ করেছে, তোমার শান্তি হোক্৷’

49 তিনি তখনও কথা বলছেন, এমন সময় সমাজ-গৃহের নেতার বাড়ি থেকে একজন এসে বলল, ‘আপনার মেয়ে মারা গেছে! গুরুকে আর কষ্ট দেবেন না৷’

50 যীশু এই কথা শুনতে পেয়ে সমাজ-গৃহের নেতাকে বললেন, ‘ভয় পেও না! কেবল বিশ্বাস কর, সে নিশ্চয়ই সুস্থ হয়ে উঠবে৷’

51 যীশু সেই বাড়িতে পৌঁছে পিতর, যাকোব, য়োহন ও মেয়েটির মা-বাবা ছাড়া আর কাউকে সেই ঘরে ঢুকতে দিলেন না৷

52 সেখানে অনেক লোক মেয়েটির জন্য শোক করছিল ও কাঁদছিল৷ যীশু তাদের বললেন, ‘কান্না বন্ধ কর, কারণ ও তো মরে নি, ও ঘুমোচ্ছে৷’

53 তাঁর কথা শুনে লোকেরা হাসাহাসি করতে লাগল, কারণ তারা জানত মেয়েটি মারা গেছে৷

54 যীশু মেয়েটির হাত ধরে ডাক দিলেন, ‘খুকুমনি ওঠ!’

55 সেই মুহূর্তে তার আত্মা ফিরে এল, আর সে উঠে দাঁড়াল৷ যীশু তাদের আদেশ করলেন, ‘য়েন তাকে কিছু খেতে দেওযা হয়৷’

56 মেয়েটির মা বাবা খুবই অবাক হয়ে গিয়েছিলেন৷ যীশু তাদের বারণ করলেন য়েন তারা এই ঘটনার কথা কাউকে না বলে৷

9

1 যীশু সেই বারোজন প্রেরিতকে ডেকে তাঁদের সব রকমের ভূত তাড়াবার ক্ষমতা ও নানান রোগ ভাল করার ক্ষমতা দিলেন৷

2 এরপর তিনি তাঁদের ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয় প্রচার করতে ও রোগীদের সুস্থ করার জন্য পাঠালেন৷

3 তিনি তাঁদের বললেন, ‘তোমরা যাত্রা পথের জন্য কিছুই নিও না, পথে যাবার জন্য লাঠি, ঝুলি, খাবার বা টাকা পয়সা কিছুই নিও না, এমন কি দুটো জামাও না৷

4 য়ে বাড়িতে তোমরা প্রবেশ করবে, সেই গ্রাম ছেড়ে না যাওযা পর্যন্ত সেই বাড়িতেই থেকো৷

5 য়েখানে লোকেরা তোমাদের স্বাগত জানাবে না সেখানে শহর ছেড়ে অন্যত্র যাবার সময় তাদের বিরুদ্ধে প্রামাণিক সাক্ষ্যস্বরূপ তোমাদের পায়ের ধূলো ঝেড়ে ফেল৷’

6 তখন তাঁরা গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে য়েতে য়েতে ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার ও রোগীদের সুস্থ করতে লাগলেন৷

7 সেই সময় য়ে সব ঘটনা ঘটছিল রাজ্যপাল হেরোদ তা শুনে খুবই বিচলিত হয়ে পড়লেন৷ কারণ কেউ কেউ বলছিল, ‘য়োহন আবার বেঁচে উঠেছেন৷’

8 আবার অনেকে বলছিল, ‘এলীয় পুনরায় আবির্ভূত হয়েছেন৷’ কেউ কেউ বলছিল, ‘প্রাচীনকালের, ভাববাদীদের মধ্যে কোন একজন পুনরায় মৃতদের মধ্য থেকে উত্থাপিত হয়েছেন৷’

9

10 প্রেরিতরা ফিরে এসে তাঁরা কি কি করেছেন তা যীশুকে জানালেন৷ তখন যীশু তাঁদের নিয়ে নিভৃতে বৈত্‌সৈদা নগরে চলে গেলেন৷

11 কিন্তু লোকেরা জানতে পেরে গেল য়ে তিনি কোথায় যাচ্ছেন, আর তারা যীশুর পিছু পিছু চলল৷ যীশুও তাদের সাদরে গ্রহণ করে তাদের কাছে ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয়ে বললেন, আর য়ে সব লোকের রোগ-ব্যাধি ভাল হবার প্রযোজন ছিল, তাদের সুস্থ করলেন৷

12 দিন প্রায় শেষ হয়ে আসছে, এমন সময় সেই বারোজন প্রেরিত যীশুর কাছে ফিরে এসে বললেন, ‘আমরা য়েখানে আছি এটা একটা নির্জন স্থান, তাই এই লোকদের বিদায় দিন য়েন এরা আশপাশের গ্রামে গিয়ে নিজেদের জন্য থাকবার স্থান ও খাবার জোগাড় করে নিতে পারে৷’

13 কিন্তু যীশু তাঁদের বললেন, ‘তোমরাই এদের খেতে দাও৷’ কিন্তু তারা বললেন, ‘আমাদের কাছে তো পাঁচখানা রুটি আর দুটো মাছ ছাড়া আর কিছুই নেই৷ আমরা গিয়ে কি এই সব লোকদের জন্য খাবার কিনে আনব?’

14 সেখানে পুরুষ মানুষই ছিল প্রায় পাঁচ হাজার৷ কিন্তু যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন, ‘ওদেরকে এক এক দলে পঞ্চাশ জন করে বসিয়ে দাও৷’

15 তাঁরা সেই রকমই করলেন, তাদের সকলকেই বসিয়ে দিলেন৷

16 এরপর যীশু সেই পাঁচখানা রুটি ও দুটো মাছ নিয়ে সেগুলোর জন্য স্বর্গের দিকে তাকিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন৷ পরে তিনি সেগুলোকে টুকরো টুকরো করে তা পরিবেশন করার জন্য শিষ্যদের হাতে দিলেন৷

17 সকলে বেশ তৃপ্তি করে খেল, বাকি যা পড়ে রইল তা একসঙ্গে জড় করলে বারোটি টুকরি ভরে গেল৷

18 একদিন যীশু কোন এক জায়গায় নিভৃতে প্রার্থনা করছিলেন৷ তাঁর শিষ্যরা সেখানে এলে তিনি তাঁদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘লোকেরা কি বলে, আমি কে?’

19 তাঁরা বললেন, ‘কেউ কেউ বলে আপনি বাপ্তিস্মদাতা য়োহন, কেউ বা বলে এলীয়, আবার কেউ কেউ বলে প্রাচীনকালের ভাববাদীদের মধ্যে একজন বেঁচে উঠেছেন৷’

20 তিনি তাঁদের বললেন, ‘কিন্তু তোমরা কি বল, আমি কে?’ পিতর বললেন, ‘ঈশ্বরের সেই খ্রীষ্ট৷’

21 তখন তিনি তাঁদের সতর্ক করে দিলেন য়েন একথা তাঁরা কারো কাছে প্রকাশ না করেন৷

22 তিনি আরো বললেন, ‘মানবপুত্রের অনেক দুঃখ ও যাতনা ভোগ করার প্রযোজন আছে; ইহুদী নেতারা, প্রধান যাজকেরা ও ব্যবস্থার শিক্ষকেরা তাঁকে প্রত্যাখ্যান করবে, তারা তাঁকে হত্যা করবে; আর তিন দিনের মাথায় তিনি মৃত্যুলোক থেকে পুনরুত্থিত হবেন৷’

23 পরে তিনি তাঁদের সকলের উদ্দেশ্যে বললেন, ‘যদি কেউ আমার সঙ্গে আসতে চায়, তবে সে নিজেকে অস্বীকার করুক; আর প্রতিদিন নিজের ক্রুশ তুলে নিক এবং আমায় অনুসরণ করুক৷

24 য়ে কেউ নিজের জীবন রক্ষা করতে চায় সে তা হারাবে, কিন্তু য়ে কেউ আমার জন্য নিজের জীবন হারায় সে তা রক্ষা করবে৷

25 সমগ্র জগত্ লাভ করে কেউ যদি নিজেকে ধ্বংস করে তবে তার কি লাভ হল?

26 যদি কেউ আমার জন্য ও আমার শিক্ষার জন্য লজ্জা বোধ করে, তবে যখন মানবপুত্র নিজ মহিমায় এবং পিতা পবিত্র স্বর্গদূতদের মহিমায় আসবেন তখন তিনিও তার জন্য লজ্জিত হবেন৷

27 কিন্তু আমি তোমাদের সত্যি বলছি, এখানে এমন কয়েকজন আছে যাঁরা ঈশ্বরের রাজ্য না দেখা পর্যন্ত মৃত্যুর মুখ দেখবে না৷’

28 এইসব কথা বলার প্রায় আট দিন পর, তিনি পিতর, যাকোব ও য়োহনকে নিয়ে প্রার্থনা করার জন্য একটা পর্বতে গেলেন৷

29 যীশু যখন প্রার্থনা করছিলেন, তখন তাঁর মুখের চেহারা অন্যরকম হয়ে গেল, তাঁর পোশাক আলোক শুভ্র হয়ে উঠল৷

30 দু ব্যক্তি মোশি ও এলীয় মহিমান্বিত হয়ে সেখানে এসে যীশুর সঙ্গে কথা বলতে লাগলেন৷

31 তাঁরা ঈশ্বরের পরিকল্পনা অনুযাযী জেরুশালেমে কিভাবে যীশুর মৃত্যু হবে তাই নিয়ে কথা বলছিলেন৷

32 কিন্তু পিতর ও তাঁর অন্য সঙ্গীরা সেই সময় ঢুলতে ঢুলতে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন৷ তাঁরা জেগে উঠে যীশুকে মহিমান্বিত রূপে দেখতে পেলেন, আর ঐ দুই ব্যক্তিকে যীশুর সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন৷

33 সেই ব্যক্তিরা যখন যীশুর কাছ থেকে চলে যাচ্ছিলেন, তখন পিতর যীশুকে বললেন, ‘গুরু, ভালোই হয়েছে য়ে আমরা এখানে আছি৷ আমরা এখানে তিনটে কুটীর তৈরী করি, একটা আপনার জন্য, একটা মোশির জন্য আর একটা এলিয়র জন্য৷’ তিনি জানতেন না য়ে তিনি কি বলছিলেন৷

34 কিন্তু তিনি যখন এইসব কথা বলছিলেন, সেই সময় এক খণ্ডমেঘ এসে তাঁদের ঢেকে ফেলল, মেঘের মধ্যে প্রবেশ করে তাঁরা ভীত হলেন৷

35 সেই মেঘের মধ্য থেকে এক রব শোনা গেল৷ সেই রব বলল, ‘এই আমার পুত্র, আমার মনোনীত পাত্র, তাঁর কথা শোন৷’

36 সেই রব মিলিয়ে যাবার পরই দেখা গেল কেবল যীশু একা সেখানে রয়েছেন আর শিষ্যরা যা দেখলেন সে বিষয়ে কাউকে কিছু না বলে চুপ করে রইলেন৷

37 পরদিন তাঁরা পর্বত থেকে নেমে এলে বহু লোক যীশুর সঙ্গে দেখা করতে এল,

38 আর সেই সময় ঐ ভীড়ের মধ্য থেকে একটি লোক চিত্‌কার করে বলল, ‘গুরু, আমি আপনাকে মিনতি করছি আপনি আমার এই একমাত্র সন্তানের দিকে একটু দেখুন৷

39 হঠাত্, একটা অশুচি আত্মা তাকে ধরে, আর সে চিত্‌কার করতে থাকে৷ সেই আত্মা যখন তাকে মুচড়ে ধরে তখন তার মুখ থেকে ফেনা কাটতে থাকে৷ এটা সহজে তাকে ছেড়ে য়েতে চায় না, তাকে একবারে ঝাঁঝরা করে দেয়৷

40 আমি আপনার শিষ্যদের কাছে মিনতি করেছিলাম য়েন তাঁরা ঐ অশুচি আত্মাকে তাড়িয়ে দেন, কিন্তু তাঁরা পারলেন না৷’

41 যীশু বললেন, ‘হে অবিশ্বাসী ও পথভ্রষ্ট লোকেরা, আমি আর কতকাল তোমাদের নিয়ে ধৈর্য্য ধরব, কতকালই বা তোমাদের সঙ্গে থাকব?’ যীশু লোকটিকে বললেন, ‘তোমার ছেলেকে এখানে আন৷’

42 ছেলেটা যখন আসছিল, তখন সেই ভূত তাকে আছাড় মারল আর তাতে সে প্রবলভাবে হাত-পা ছোঁড়াছুঁড়ি করতে লাগল৷ যীশু সেই অশুচি আত্মাকে ধমক দিলেন৷ তারপর ছেলেটিকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তার বাবার কাছে ফেরত্ দিলেন৷

43 ঈশ্বর য়ে কত মহান তা দেখে লোকেরা অবাক হয়ে গেল৷ যীশু যা করলেন তা দেখে লোকেরা আশ্চর্য হচ্ছিল, তখন যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন,

44 ‘আমি তোমাদের যা বলছি তা মন দিয়ে শোন, শীঘ্রই মানবপুত্রকে মানুষের হাতে সঁপে দেওযা হবে৷’

45 কিন্তু এ কথার অর্থ কি শিষ্যরা তা বুঝতে পারলেন না৷ এটা তাঁদের কাছে গুপ্ত রয়ে গেল, তাই তাঁরা এর কিছুই উপলদ্ধি করতে পারলেন না৷

46 সেই সময়ই তাঁদের মধ্যে এই বিতর্কের সূত্রপাত হল য়ে কে তাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ৷

47 কিন্তু যীশু তাঁদের মনোভাব বুঝতেপেরে একটি শিশুকে এনে নিজের পাশে দাঁড় করালেন৷

48 তিনি তাঁদের বললেন, ‘য়ে কেউ আমার নামে এই শিশুকে সাদরে গ্রহণ করে, সে আমাকেই গ্রহণ করে; আর য়ে আমাকে সাদরে গ্রহণ করে, সে আমাকে যিনি পাঠিয়েছেন তাঁকেই গ্রহণ করে৷ তোমাদের মধ্যে য়ে সবচেয়ে ছোট, সেই শ্রেষ্ঠ৷’

49 য়োহন বললেন, ‘প্রভু আমরা আপনার নামে একজনকে ভূত তাড়াতে দেখেছি৷ সে আমাদের সঙ্গী নয় বলে আমরা তাকে বারণ করেছি৷’

50 কিন্তু যীশু তাঁকে বললেন, ‘তাকে বারণ কোর না, কারণ য়ে তোমাদের বিপক্ষ নয়, সে তোমাদের সপক্ষ৷’

51 যীশুর স্বর্গে যাবার সময় হয়ে এলে তিনি স্থির চিত্তে জেরুশালেমের দিকে এগিয়ে চললেন৷

52 তিনি তাঁর পৌঁছাবার আগেই সেখানে কিছু বার্তবাহক পাঠালেন৷ তাঁরা গিয়ে শমরীয়দের এক গ্রামে উঠলেন, য়েন যীশুর জন্য সব কিছু ব্যবস্থা করতে পারেন৷

53 কিন্তু যীশু জেরুশালেমে যাবেন বলে স্থির করায় শমরীয়রা তাঁকে গ্রহণ করল না৷

54 যীশুর অনুগামী যাকোব ও য়োহন এই দেখে বললেন, ‘প্রভু, আপনি কি চান য়ে এদের ধ্বংস করার জন্য আমরা আকাশ থেকে আগুন নামিয়ে আনি?’

55 কিন্তু যীশু ফিরে দাঁড়িয়ে তাদের ধমক দিলেন৷

56 তখন তাঁরা অন্য গ্রামে গেলেন৷

57 তাঁরা যখন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন, সেই সময় একজন লোক যীশুকে বলল, ‘আপনি য়েখানেই যান না কেন আমিও আপনার সঙ্গে যাব৷’

58 যীশু তাকে বললেন, ‘শেযালের গর্তআছে, আকাশের পাখিদেরও বাসা আছে, কিন্তু মানবপুত্রের কোথাও মাথা রাখার ঠাঁই নেই৷’

59 আর একজনকে তিনি বললেন, ‘আমায় অনুসরণ কর৷’ কিন্তু সেই লোকটি বলল, ‘আগে গিয়ে আমার বাবাকে কবর দিয়ে আসতে দিন৷’

60 কিন্তু যীশু তাকে বললেন, ‘মৃতরাই তাদের মৃতদের কবর দেবে৷ তুমি গিয়ে বরং ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয় ঘোষণা কর৷’

61 আর একজন লোক বলল, ‘প্রভু, আমি আপনার অনুসারী হব: কিন্তুপ্রথমে আমার বাড়ির সকলকে বিদায় জানিয়ে আসতে দিন৷’

62 কিন্তু যীশু তাকে বললেন, ‘লাঙ্গলে হাত রেখে য়ে পেছন ফিরে তাকায়, সে ঈশ্বরের রাজ্যের য়োগ্য নয়৷’

10

1 এরপর প্রভু আরও বাহাত্তর জন লোককে মনোনীত করলেন৷ তিনি নিজে য়ে সমস্ত নগরে ও য়ে সমস্ত জায়গায় যাবেন বলে ঠিক করেছিলেন, সেই সব জায়গায় তাঁদের দুজন দুজন করে পাঠিয়ে দিলেন৷

2 তিনি তাঁদের বললেন, ‘শস্য প্রচুর হয়েছে, কিন্তু তা কাটার জন্য মজুরের সংখ্যা অল্প, তাই শস্যের যিনি মালিক তাঁর কাছে প্রার্থনা কর, য়েন তিনি তাঁর ফসল কাটার জন্য মজুর পাঠান৷

3 যাও! আর মনে রেখো, নেকড়ে বাঘের মধ্যে ভেড়ার মতোই আমি তোমাদের পাঠাচ্ছি৷

4 তোমরা টাকার বটুযা, থলি বা জুতো সঙ্গে নিও না এবং পথের মধ্যে কাউকে শুভেচ্ছা জানিও না৷

5 য়ে বাড়িতে তোমরা প্রবেশ করবে সেখানে প্রথমে বলবে, ‘এই গৃহে শান্তি হোক!’

6 সেখানে যদি শান্তির পাত্র কেউ থাকে, তবে তোমাদের শান্তি তার সহবর্তী হবে৷ কিন্তু যদি সেরকম কেউ না থাকে, তাহলে তোমাদের শান্তি তোমাদের কাছে ফিরে আসবে৷

7 য়ে বাড়িতে যাবে সেখানেই থেকো, আর তারা যা খেতে দেয় তাই খেও, কারণ য়ে কাজ করে সে বেতন পাবার য়োগ্য৷ এ বাড়ি সে বাড়ি করে ঘুরে বেড়িও না৷

8 তোমরা যখন কোন নগরে প্রবেশ করবে তখন সেই নগরের লোকেরা যদি তোমাদের স্বাগত জানায়, তবে সেখানকার লোকেরা তোমাদের সামনে যা কিছু ধরে, তা খেও৷

9 সেই নগরের রোগীদের সুস্থ কোর ও সেখানকার লোকদের বোল, ‘ঈশ্বরের রাজ্য তোমাদের কাছে এসে পড়েছে৷’

10 তোমরা কোন নগরে প্রবেশ করলে যদি সেই নগরের লোকেরা তোমাদের স্বাগত না জানায়, তবে সেখানকার রাস্তায় বেরিয়ে এসে তোমরা বোল,

11 ‘এমনকি তোমাদের নগরের য়ে ধূলো আমাদের পায়ে লেগেছে তা আমরা তোমাদের বিরুদ্ধে ঝেড়ে ফেললাম; তবে একথা জেনে রেখো য়ে ঈশ্বরের রাজ্য তোমাদের কাছে এসে গেছে৷’

12 আমি তোমাদের বলছি, সেই দিন এই নগরের থেকে সদোমের লোকদের অবস্থা অনেক বেশী সহনীয় হবে৷’

13 ‘কোরাসীন ধিক্ তোমাকে! বৈত্‌সৈদা ধিক্ তোমাকে! তোমাদের মধ্যে য়ে সব অলৌকিক কাজ করা হয়েছে তা যদি সোর ও সীদোনে করা হত, তবে সেখানকার লোকেরা অনেক আগেই চটের বস্ত্র পরে মাথায় ভস্ম ছিটিয়ে অনুতাপ করতে বসত৷

14 যাইহোক, বিচারের দিনে সোর সীদোনের অবস্থা বরং তোমাদের চেয়ে অনেক সহনীয় হবে৷

15 তুমি কফরনাহূম! তুমি কি স্বর্গ পর্যন্ত উন্নীত হবে? না! তোমাকে নরক পর্যন্ত নামানো যাবে!

16 ‘যাঁরা তোমাদের কথা শোনে, তারা আমারই কথা শোনে; আর যাঁরা তোমাদের অগ্রাহ্য় করে, তারা আমাকেই অগ্রাহ্য় করে৷ যাঁরা আমাকে অগ্রাহ্য় করে, তারা যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন তাঁকেই অগ্রাহ্য় করে৷’

17 এরপর সেই বাহাত্তরজন আনন্দের সঙ্গে ফিরে এসে বললেন, ‘প্রভু, আপনার নামে এমন কি ভূতরাও আমাদের বশ্যতা স্বীকার করে!’

18 তখন যীশু তাঁদের বললেন, ‘আমি শয়তানকে বিদ্য়ুত্ ঝলকের মতো আকাশ থেকে পড়তে দেখলাম৷

19 শোন! সাপ ও বিছেকে পায়ে দলবার ক্ষমতা আমি তোমাদের দিয়েছি; আর তোমাদের শত্রুর সমস্ত শক্তির ওপরে ক্ষমতাও আমি তোমাদের দিয়েছি; কোন কিছুই তোমাদের ক্ষতি করতে পারবে না৷

20 তবু আত্মারা য়ে তোমাদের বশীভূত হয়, এ জেনে আনন্দ কোর না; কিন্তু স্বর্গে তোমাদের নাম লেখা হয়েছে বলে আনন্দ কর৷’

21 ঠিক সেই মুহূর্তে পবিত্র আত্মার আনন্দে পূর্ণ হয়ে যীশু বললেন, ‘পিতা, আমি তোমার প্রশংসা করি, কারণ স্বর্গ ও পৃথিবীর প্রভু, তুমি এসব বিষয় জ্ঞানীগুণী ও বুদ্ধিমান লোকদের কাছে গোপন রেখে শিশুদের কাছে প্রকাশ করেছ৷ হ্যাঁ, পিতা, এতেই তোমার আনন্দ৷

22 ‘আমার পিতা আমায় সবই দিয়েছেন৷ পিতা ছাড়া আর কেউ জানে না পুত্র কে, আমার পুত্র ছাড়া আর কেউ জানে না পিতা কে৷ এছাড়া পুত্র যার কাছে পিতাকে প্রকাশ করতে ইচ্ছা করেন, কেবল সে-ই জানে৷’

23 এরপর শিষ্যদের দিকে ফিরে তিনি একান্তে তাঁদের বললেন, ‘তোমরা যা দেখছ, য়ে চোখ তা দেখতে পায় তা ধন্য!

24 কারণ আমি তোমাদের বলছি, তোমরা যা দেখছ, অনেক ভাববাদী ও রাজা তা দেখার ইচ্ছা করলেও তা দেখতে পান নি; তোমরা যা শুনছ, তা শোনার ইচ্ছা করলেও তাঁরা তা শুনতে পান নি৷’

25 এরপর একজন ব্যবস্থার শিক্ষক যীশুকে পরীক্ষার ছলে জিজ্ঞাসা করল, ‘গুরু, অনন্ত জীবন লাভ করার জন্য আমায় কি করতে হবে?’

26 যীশু তাকে বললেন, ‘বিধি-ব্যবস্থায় এ বিষয়ে কি লেখা আছে? সেখানে তুমি কি পড়েছ?’

27 সে জবাব দিল, ‘তোমার সমস্ত অন্তর, মন, প্রাণ ও শক্তি দিয়ে অবশ্যই তোমার প্রভু ঈশ্বরকে ভালবাসো৷’ আর ‘তোমার প্রতিবেশীকে নিজের মতো ভালবাসো৷”

28 তখন যীশু তাকে বললেন, ‘তুমি ঠিক উত্তরই দিয়েছ; ঐ সবই কর, তাহলে অনন্ত জীবন লাভ করবে৷’

29 কিন্তু সে নিজেকে ধার্মিক দেখাতে চেয়ে যীশুকে জিজ্ঞেস করল, ‘আমার প্রতিবেশী কে?’

30 এর উত্তরে যীশু বললেন, ‘একজন লোক জেরুশালেম থেকে যিরীহোর দিকে নেমে যাচ্ছিল, পথে সে ডাকাতের হাতে ধরা পড়ল৷ তারা লোকটির জামা কাপড় খুলে নিয়ে তাকে মারধোর করে আধমরা অবস্থায় সেখানে ফেলে রেখে চলে গেল৷

31 ঘটনাক্রমে সেই পথ দিয়ে একজন ইহুদী যাজক যাচ্ছিল, যাজক তাকে দেখতে পেয়ে পথের অন্য ধার দিয়ে চলে গেল৷

32 সেই পথে এরপর একজন লেবীয় এল৷ তাকে দেখে সেও পথের অন্য ধার দিয়ে চলে গেল৷

33 কিন্তু একজন শমরীয় ঐ পথে য়েতে য়েতে সেই লোকটির কাছাকাছি এল৷ লোকটিকে দেখে তার মনে মমতা হল৷

34 সে ঐ লোকটির কাছে গিয়ে তার ক্ষতস্থান দ্রাক্ষারস দিয়ে ধুয়ে তাতে তেল ঢেলে বেঁধে দিল৷ এরপর সেই শমরীয় লোকটিকে তার নিজের গাধার ওপর চাপিয়ে একটি সরাইখানায় নিয়ে এসে তার সেবা যত্ন করল৷

35 পরের দিন সেই শমরীয় দুটি রৌপ্য়মুদ্রা বের করে সরাইখানার মালিককে দিয়ে বলল, ‘এই লোকটির যত্ন করবেন আর আপনি যদি এর চেয়ে বেশী খরচ করেন, তবে আমি ফিরে এসে আপনাকে তা শোধ করে দেব৷’

36 এখন বল, ‘এই তিনজনের মধ্যে সেই ডাকাত দলের হাতে পড়া লোকটির প্রকৃত প্রতিবেশী কে?’

37 সে বলল, ‘য়ে লোকটি তার প্রতি দযা করল৷’ তখন যীশু তাকে বললেন, ‘সে য়েমন করল, যাও তুমি গিয়ে তেমন কর৷’

38 এরপর যীশু ও তাঁর শিষ্যরা জেরুশালেমের পথে য়েতে য়েতে কোন এক গ্রামে প্রবেশ করলেন৷ সেখানে মার্থা নামে একজন স্ত্রীলোক তাঁদের সাদর অভ্য়র্থনা করলেন৷

39 মরিয়ম নামে তাঁর একটি বোন ছিল, তিনি যীশুর পায়ের কাছে বসে তাঁর শিক্ষা শুনছিলেন৷

40 কিন্তু খাওযা-দাওযার নানা রকম আযোজন করতে মার্থা খুবই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন৷ তিনি যীশুর কাছে এসে বললেন, ‘প্রভু, আপনি কি দেখছেন না, আমার বোন সমস্ত কাজ একা আমার ঘাড়ে ফেলে দিয়েছে? ওকে বলুন ও য়েন আমায় সাহায্য করে৷’

41 প্রভু তখন মার্থাকে বললেন, ‘মার্থা, মার্থা তুমি অনেক বিষয় নিয়ে বড়ই উদ্বিগ্ন ও চিন্তিত হয়ে পড়েছ৷

42 কিন্তু কেবলমাত্র একটা বিষয়ের প্রযোজন আছে৷ আর মরিয়ম সেই উত্তম বিষয়টি মনোনীত করেছে, যা তার কাছ থেকে কখনও কেড়ে নেওযা হবে না৷’

11

1 যীশু এক জায়গায় প্রার্থনা করছিলেন৷ প্রার্থনা শেষ হলে পর তাঁর একজন শিষ্য এসে তাঁকে বললেন, ‘প্রভু, য়োহন য়েমন তাঁর শিষ্যদের প্রার্থনা করতে শিখিয়েছিলেন, আপনিও তেমনি আমাদের প্রার্থনা করতে শেখান৷’

2 তখন যীশু তাঁদের বললেন, ‘তোমরা যখন প্রার্থনা কর তখন বোল, ‘পিতা, তোমার পবিত্র নামের সমাদর হোক্, তোমার রাজ্য আসুক৷

3 দিনের আহার তুমি প্রতিদিন আমাদের দাও৷

4 আমাদের পাপ ক্ষমা কর, কারণ আমাদের বিরুদ্ধে যাঁরা অন্যায় করেছে, আমরাও তাদের ক্ষমা করেছি, আর আমাদের পরীক্ষায় পড়তে দিও না৷”

5

6

7 সেই লোক যদি ঘরের ভেতর থেকে উত্তর দেয়, ‘দেখ, আমায় বিরক্ত কোর না! এখন দরজা বন্ধ আছে আর ছেলেমেয়েদের নিয়ে আমি শুয়ে পড়েছি৷ আমি এখন তোমাকে কিছু দেবার জন্য উঠতে পারব না৷’

8 আমি তোমাদের বলছি, সে যদি বন্ধু হিসাবে উঠে তাকে কিছু না দেয়, তবু লোকটি বার বার করে অনুরোধ করছে বলে সে উঠবে ও তার যা দরকার তা তাকে দেবে৷

9 তাই আমি তোমাদের বলছি, তোমরা চাও, তোমাদের দেওযা হবে, খোঁজ তোমরা পাবে৷ দরজায় ধাক্কা দাও, তোমাদের জন্য দরজা খোলা হবে৷

10 কারণ যাঁরা চায়, তারা পায়৷ যাঁরা খোঁজ করে, তারা সন্ধান পায় আর যাঁরা দরজায় ধাক্কা দেয়, তাদের জন্য দরজা খোলা হয়৷

11 তোমাদের মধ্যে এমন বাবা কি কেউ আছে যার ছেলে মাছ চাইলে সে তাকে মাঝের বদলে সাপ দেবে?

12 অথবা ছেলে যদি ডিম চায় তবে তাকে কাঁকড়াবিছা দেবে?

13 তাই তোমরা যদি মন্দ প্রকৃতির হয়েও তোমাদের ছেলেমেয়েদের ভাল ভাল জিনিস দিতে জান, তবে স্বর্গের পিতার কাছে যাঁরা চায়, তিনি য়ে তাদের পবিত্র আত্মা দেবেন, এটা কত না নিশ্চয়৷’

14 একসময় যীশু একজনের মধ্য থেকে একটা বোবা ভূতকে বের করে দিলেন৷ সেই ভূত বের হয়ে যাবার সঙ্গে সঙ্গে ঐ লোকটি কথা বলতে শুরু করল৷ এই দেখে লোকেরা অবাক হয়ে গেল৷

15 কিন্তু তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলল, ‘ভূতদের রাজা বেলস্বূলের সাহায্যেই ও ভূত তাড়ায়!’

16 আবার কেউ কেউ যীশুকে পরীক্ষা করবার জন্য আকাশ থেকে কোন চিহ্ন দেখাতে বলল.৷

17 কিন্তু তিনি তাদের মনের কথা জানতে পেরে বললেন, ‘য়ে রাজ্য আত্মকলহে নিজেদের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়, সেই রাজ্য ধ্বংস হয়৷ আবার কোন পরিবার যদি নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করে, তবে সেই পরিবারও ভেঙ্গে যায়৷

18 তাই শয়তানও যদি নিজের বিরুদ্ধে নিজে দাঁড়ায় তবে কেমন করে তার রাজ্য টিকবে? আমি তোমাদের একথা জিজ্ঞেস করছি কারণ তোমরা বলছ আমি বেল্সবূলের সাহায্যে ভূত ছাড়াই৷

19 কিন্তু আমি যদি বেলস্বূলের সাহায্যে ভূত ছাড়াই, তবে তোমাদের অনুগামীরা কার সাহায্যে তা ছাড়ায়? তাই তারাই তোমাদের বিচার করুক৷

20 কিন্তু আমি যদি ঈশ্বরের শক্তিতে ভূতদের ছাড়াই, তাহলে স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে য়ে ঈশ্বরের রাজ্য তোমাদের কাছে ইতিমধ্যেই এসে পড়েছে৷

21 ‘যখন কোন শক্তিশালী লোক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তার ঘর পাহারা দেয়, তখন তার ধনসম্পদ নিরাপদে থাকে৷

22 ‘কিন্তু তার থেকে পরাক্রান্ত কোন লোক যখন তাকে আক্রমণ করে পরাস্ত করে, তখন নিরাপদে থাকার জন্য য়ে অস্ত্রশস্ত্রের ওপর সে নির্ভর করেছিল, অন্য শক্তিশালী লোকটি সেগুলো কেড়ে নেয় আর ঐ লোকটির ঘরের সব জিনিসপত্র লুটে নেয়৷

23 ‘য়ে আমার পক্ষে নয়, সে আমার বিপক্ষ৷ য়ে আমার সঙ্গে কুড়ায়না, সে ছড়ায়৷

24 ‘কোন অশুচি আত্মা যখন কোন লোকের মধ্য থেকে বের হয়ে আসে, তখন সে বিশ্রামের খোঁজে নির্জন স্থানে ঘোরাফেরা করে আর বিশ্রাম না পেয়ে বলে, ‘য়ে ঘর থেকে আমি বের হয়ে এসেছি, সেখানেই ফিরে যাব৷’

25 কিন্তু সেখানে ফিরে গিয়ে সে যখন দেখে সেই ঘরটি পরিষ্কার করা হয়েছে আর সাজানো-গোছানো আছে,

26 তখন সে গিয়ে তার থেকে আরো দুষ্ট সাতটা আত্মাকে নিয়ে এসে ঐ ঘরে বসবাস করতে থাকে৷ তাই ঐ লোকের প্রথম দশা থেকে শেষ দশা আরো ভয়ঙ্কর হয়৷’

27 যীশু যখন এইসব কথা বলছিলেন, তখন সেই ভীড়ের মধ্য থেকে একজন স্ত্রীলোক চিত্‌কার করে বলে উঠল, ‘ধন্য সেই মা, যিনি আপনাকে গর্ভে ধারণ করেছিলেন, আর য়াঁর স্তন আপনি পান করেছিলেন৷’

28 কিন্তু যীশু বললেন, ‘এর থেকেও ধন্য তারা যাঁরা ঈশ্বরের শিক্ষা শোনে ও তা পালন করে৷’

29 এরপর যখন ভীড় বাড়তে লাগল, তখন যীশু বললেন, ‘এ যুগের লোকেরা খুবই দুষ্ট, তারা কেবল অলৌকিক চিহ্নের খোঁজ করে৷ কিন্তু য়োনার চিহ্ন ছাড়া তাদেরকে আর কোন চিহ্ন দেখানো হবে না৷

30 য়োনা য়েমন নীনবীয় লোকদের কাছে চিহ্নস্বরূপ হয়েছিলেন, তেমনি এই যুগের লোকদের কাছে মানবপুত্র হবেন৷

31 দক্ষিণ দেশের রাণী বিচার দিনে উঠে এই যুগের লোকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করবেন ও তাদের দোষী সাব্যস্তকরবেন৷ কারণ শলোমনের জ্ঞানের কথা শোনার জন্য তিনি পৃথিবীর প্রান্ত থেকে এসেছিলেন, আর শলোমন এর থেকে মহান একজন এখন এখানে আছেন৷

32 বিচার দিনে নীনবীয় লোকেরা এই যুগের লোকদের বিরুদ্ধে উঠে দাঁড়াবে, তারা এদের ওপর দোষারোপ করবে, কারণ তারা য়োনার প্রচার শুনে অনুশোচনা করেছিল, আর এখন য়োনার থেকে মহান একজন এখানে আছেন৷

33 ‘প্রদীপ জে্বলে কেউ আড়ালে রাখে না বা ধামা চাপা দিয়ে রাখে না বরং তা বাতিদানের ওপরেই রাখে, য়েন যাঁরা ঘরে আসে, তারা আলো দেখতে পায়৷

34 তোমার চোখ যদি সুস্থ থাকে, তবে তোমার সমস্ত দেহটি দীপ্তিময় হবে; কিন্তু তা যদি মন্দ হয় তবে তোমার দেহ অন্ধকারময় হবে৷

35 তাই সাবধান, তোমার মধ্যে য়ে আলো আছে তা য়েন অন্ধকার না হয়৷

36 তোমার সারা দেহ যদি আলোকময় হয়, তার মধ্যে যদি এতটুকু অন্ধকার না থাকে, তবে তা সম্পূর্ণ আলোকিত হবে, ঠিক য়েমন বাতির আলো তোমার ওপর পড়ে তোমায় আলোকিত করে তোলে৷’

37 যীশু এই কথা শেষ করলে একজন ফরীশী তার বাড়িতে যীশুকে খাওযার জন্য নিমন্ত্রণ করল৷ তাই তিনি তার বাড়িতে গিয়ে খাবার আসনে বসলেন৷

38 কিন্তু সেই ফরীশী দেখল য়ে খাওযার আগে প্রথা মতো যীশু হাত ধুলেন না৷

39 প্রভু তাকে বললেন, ‘তোমরা ফরীশীরা থালা বাটির বাইরেটা পরিষ্কার কর, কিন্তু ভেতরে তোমরা দুষ্টতা ও লোভে ভরা৷

40 তোমরা মূর্খের দল! তোমরা কি জান না যিনি বাইরেটা করেছেন তিনি ভেতরটাও করেছেন?

41 তাই তোমাদের থালা বাটির ভেতরে যা কিছু আছে তা দরিদ্রদের বিলিয়ে দাও, তাহলে সবকিছুই তোমাদের কাছে সম্পূর্ণ শুচি হয়ে যাবে৷

42 কিন্তু হায়, ফরীশীরা ধিক্ তোমাদের কারণ তোমরা পুদিনা, ধনে ও বাগানের অন্যান্য শাকের দশমাংশ ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে উত্‌সর্গ করে থাক, কিন্তু ন্যায়বিচার ও ঈশ্বরের প্রতি প্রেমের বিষয়টি অবহেলা কর৷ কিন্তু প্রথম বিষয়গুলির সঙ্গে সঙ্গে শেষেরগুলিও তোমাদের জীবনে পালন করা কর্তব্য৷

43 ধিক্ ফরীশীরা! তোমরা সমাজ-গৃহে সম্মানিত আসন আর হাটে বাজারে সকলের সশ্রদ্ধ অভিবাদন পেতে কত না ভালবাস৷

44 ধিক্ তোমাদের! তোমরা মাঠের মাঝে মিশে থাকা কবরের মতো, লোকেরা না জেনে যার ওপর দিয়ে হেঁটে যায়৷

45 একজন ব্যবস্থার শিক্ষক এর উত্তরে যীশুকে বললেন, ‘গুরু, আপনি এসব যা বললেন, তার দ্বারা আমাদেরও অপমান করলেন৷’

46 তখন যীশু তাকে বললেন, ‘হে ব্যবস্থার শিক্ষকরা, ধিক্ তোমাদের, তোমরা লোকদের ওপর এমন ভারী বোঝা চাপিয়ে দাও যা তাদের পক্ষে গ্রহণ করা অসন্ভব; আর তোমরা নিজেরা সেই ভার বইবার জন্য সাহায্য করতে তাতে একটা আঙ্গুল পর্যন্ত ছোঁযাও না৷

47 ধিক্ তোমাদের, কারণ তোমরা ভাববাদীদের সমাধিগুহা গেঁথে থাকো; আর এই সব ভাববাদীদের তোমাদের পূর্বপুরুষেরাই হত্যা করেছিল৷

48 তাই এই কাজ করে তোমরা এই সাক্ষ্যই দিচ্ছ য়ে তোমাদের পূর্বপুরুষেরা য়ে কাজ করেছিল তা তোমরা ঠিক বলে মেনে নিচ্ছ৷ কারণ তারা ওদের হত্যা করেছিল আর তোমরা ওদের সমাধিগুহা রচনা করছ৷

49 এই কারণেই ঈশ্বরের প্রজ্ঞা বলছে, ‘আমি তাদের কাছে য়ে ভাববাদী ও প্রেরিতদের পাঠাবো, তাদের মধ্যে কাউকে কাউকে তারা হত্যা করবে, কাউকে বা নির্য়াতন করবে৷’

50 সেই জন্যই জগত্ সৃষ্টির শুরু থেকে আজ পর্যন্ত যত ভাববাদী হত্যা করা হয়েছে, তাদের সকলের হত্যার জন্য এই কালের লোকদের শাস্তি পেতে হবে৷

51 হ্যাঁ, আমি তোমাদের বলছি, হেবলের রক্তপাত থেকে আরন্ভ করে য়ে সখরিয়কে যজ্ঞবেদী ও মন্দিরের মধ্যবর্তী স্থানে হত্যা করা হয়েছিল, সেই সখরিয়ের হত্যা পর্যন্ত সমস্ত রক্তপাতের দায়ে দাযী হবে একালের লোকেরা৷

52 ‘ধিক্ ব্যবস্থার শিক্ষকরা কারণ তোমরা জ্ঞানের চাবিটি ধরে আছ৷ তোমরা নিজেরাও প্রবেশ করনি আর যাঁরা প্রবেশ করার চেষ্টা করছে তাদেরও বাধা দিচ্ছ৷’

53 তিনি যখন সেই জায়গা ছেড়ে চলে গেলেন, তখন ব্যবস্থার শিক্ষকরা ও ফরীশীরা তাঁর বিরুদ্ধে ভীষণভাবে শত্রুতা করতে আরন্ভ করল এবং পরে তাঁকে নানাভাবে প্রশ্ন করতে থাকল৷

54 তারা সুয়োগের অপেক্ষা করতে লাগল য়েন যীশু ভুল কিছু করলে তাই দিয়ে তাঁকে ধরতে পারে৷

12

1 এর মধ্যে হাজার হাজার লোক এসে জড়ো হল৷ প্রচণ্ড ভীড়ের চাপে ধাক্কা-ধাক্কি করে একে অপরের উপর পড়তে লাগল৷ তখন তিনি প্রথমে তাঁর শিষ্যদের বললেন, ‘ফরীশীদের খামির থেকে সাবধান থেকো৷

2 এমন কিছুই লুকানো নেই যা প্রকাশ পাবে না, আর এমন কিছুই গুপ্ত নেই যা জানা যাবে না৷

3 তাই তোমরা অন্ধকারে যা বলছ তা আলোতে শোনা যাবে৷ তোমরা গোপন কক্ষে ফিস্ফিস্করে কানে কানে যা বলবে তা বাড়ির ছাদের ওপর থেকে ঘোষণা করা হবে৷’

4 কিন্তু হে আমার বন্ধুরা, ‘আমি তোমাদের বলছি, যাঁরা তোমাদের দেহটাকে ধ্বংস করে দিতে পারে, কিন্তু এর বেশী কিছু করতে পারে না তাদের তোমরা ভয় কোর না৷

5 তবে কাকে ভয় করবে তা আমি তোমাদের বলে দিচ্ছি৷ তোমাদের মেরে ফেলার পর নরকে পাঠাবার ক্ষমতা য়াঁর আছে, তাঁকেই ভয় কর৷ হ্যাঁ, আমি তোমাদের বলছি, তাঁকেই ভয় কোর৷

6 ‘পাঁচটা চড়াই পাখি কি মাত্র কয়েক পয়সায় বিক্রি হয় না? তবু ঈশ্বর তার একটাকেও ভুলে যান না৷

7 এমন কি তোমাদের মাথার প্রতিটি চুল গোনা আছে৷ ভয় নেই, বহু চড়াই পাখির চেয়ে তোমাদের মূল্য অনেক বেশী৷

8 ‘কিন্তু আমি তোমাদের বলছি, য়ে কেউ অন্য লোকদের সামনে আমাকে স্বীকার করে, মানবপুত্রও ঈশ্বরের স্বর্গদূতদের সামনে তাকে স্বীকার করবেন৷

9 কিন্তু য়ে কেউ সর্বসাধারণের সামনে আমায় অস্বীকার করবে, ঈশ্বরের স্বর্গদূতদের সামনে তাদের অস্বীকার করা হবে৷

10 মানবপুত্রের বিরুদ্ধে কেউ কোন কথা বললে তাকে ক্ষমা করা হবে; কিন্তু কেউ পবিত্র আত্মার নামে নিন্দা করলে তাকে ক্ষমা করা হবে না৷

11 ‘তারা তখন তোমাদের সমাজ-গৃহের সমাবেশে শাসনকর্তাদের বা কর্ত্তৃত্ব সম্পন্ন ব্যক্তিদের সামনে হাজির করবে, তখন কিভাবে আত্মপক্ষ সমর্থন করবে বা কি বলবে তা নিয়ে চিন্তা কোর না৷

12 কারণ সেই সময় কি বলতে হবে তা পবিত্র আত্মা তোমাদের সেইক্ষণেই শিখিয়ে দেবেন৷’

13 এরপর সেই ভীড়ের মধ্য থেকে একজন লোক যীশুকে বলল, ‘গুরু, উত্তরাধিকার সূত্রে আমাদের য়ে সম্পত্তি রয়েছে তা আমার ভাইকে আমার সঙ্গে ভাগ করে নিতে বলুন৷’

14 কিন্তু যীশু তাকে বললেন, ‘বিচারকর্তা হিসাবে কে তোমাদের ওপর আমায় নিযোগ করেছে?’

15 এরপর যীশু লোকদের বললেন, ‘সাবধান! সমস্ত রকম লোক থেকে নিজেদের দূরে রাখ, কারণ মানুষের প্রযোজনের অতিরিক্ত সম্পত্তি থাকলেও তার জীবন তার সম্পত্তির ওপর নির্ভর করে না৷’

16 তখন তিনি তাদের একটি দৃষ্টান্ত দিলেন, ‘একজন ধনবান লোকের জমিতে প্রচুর ফসল হয়েছিল৷

17 এই দেখে সে মনে মনে বলল, ‘আমি কি করব? এতো ফসল রাখার জায়গা তো আমার নেই৷’

18 এরপর সে বলল, ‘আমি এই রকম করব; আমার য়ে গোলাঘরগুলো আছে তা ভেঙ্গে ফেলে তার থেকে বড় গোলাঘর বানাবো; আর সেখানেই আমার সমস্ত ফসল ও জিনিস মজুত করব৷

19 আর আমার প্রাণকে বলব, হে প্রাণ, অনেক বছরের জন্য অনেক ভাল ভাল জিনিস তোমার জন্য সঞ্চয় করা হয়েছে৷ এখন আরাম করে খাও-দাও, স্ফূর্তি কর,

20 কিন্তু ঈশ্বর তাকে বললেন, ‘ওরে মূর্খ! আজ রাতেই তোমার প্রাণ কেড়ে নেওযা হবে; আর তুমি যা কিছু আযোজন করেছ তা কে ভোগ করবে?’

21 ‘য়ে লোক নিজের জন্য ধন সঞ্চয় করে কিন্তু ঈশ্বরের দৃষ্টিতে ধনবান নয়, তার এইরকম হয়৷’

22 এরপর যীশু তাঁর অনুগামীদের বললেন, ‘তাই আমি তোমাদের বলছি, কি খাব বলে প্রাণের বিষয়ে বা কি পরব বলে শরীরের বিষয়ে চিন্তা কোর না৷

23 কারণ খাদ্য়বস্তু থেকে প্রাণ অনেক মূল্যবান এবং পোশাক-আশাকের থেকে দেহের গুরুত্ব অনেক বেশী৷

24 কাকদের বিষয় চিন্তা কর, তারা বীজ বোনেও না বা ফসলও কাটেও না৷ তাদের কোন গুদাম বা গোলাঘর নেই, তবু ঈশ্বরই তাদের আহার য়োগান৷ এই সব পাখিদের থেকে তোমরা কত অধিক মূল্যবান!

25 তোমাদের মধ্যে কে দুশ্চিন্তা করে নিজের আযু এক ঘন্টা বাড়াতে পারে?

26 এই সামান্য কাজটাই যদি করতে না পার তবে বাকী সব বিষয়ের জন্য এত চিন্তা কর কেন?

27 ছোট্ট ছোট্ট লিলি ফুলের কথা চিন্তা কর দেখি, তারা কিভাবে বেড়ে ওঠে৷ তারা পরিশ্রমও করে না, সুতাও কাটেনা৷ তবু আমি তোমাদের বলছি, এমন কি রাজা শলোমন তাঁর সমস্ত প্রতাপ ও গৌরবে মণ্ডিত হয়েও এদের একটার মতোও নিজেকে সাজাতে পারেন নি৷

28 মাঠে য়ে ঘাস আজ আছে আর কাল উনুনে ফেলে দেওযা হবে, ঈশ্বর তা যদি এত সুন্দর করে সাজান, তবে হে অল্প বিশ্বাসীর দল তিনি তোমাদের আরো কত না বেশী সাজাবেন!

29 আর কি খাবে বা কি পান করবে এ নিয়ে তোমরা চিন্তা কোর না, এর জন্য উদ্বিগ্ন হওযার কোন দরকার নেই৷

30 এই পৃথিবীর আর সব জাতির লোকেরা যাঁরা ঈশ্বরকে জানে না, তারাই এই সবের পিছনে ছোটে৷ কিন্তু তোমাদের পিতা ঈশ্বর জানেন য়ে এসব জিনিস তোমাদের প্রযোজন আছে৷

31 তার চেয়ে বরং তোমরা ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয়ে সচেষ্ট হও তখন এসবই ঈশ্বর তোমাদের জোগাবেন৷

32 ‘ক্ষুদ্র মেষপাল! তোমরা ভয় পেও না, কারণ তোমাদের পিতা আনন্দের সাথেই সেই রাজ্য তোমাদের দেবেন, এটাই তাঁর ইচ্ছা৷

33 তোমাদের সম্পদ বিক্রি করে অভাবীদের দাও৷ নিজেদের জন্য এমন টাকার থলি তৈরী কর যা পুরানো হয় না, স্বর্গে এমন ধনসঞ্চয় কর যা শেষ হয় না, সেখানে চোর ঢুকতে পারে না বা মথ কাটে না৷

34 কারণ য়েখানে তোমাদের সম্পদ সেখানেই তোমাদের মনও পড়ে থাকবে৷

35 ‘তোমরা কোমর বেঁধে বাতি জ্বালিয়ে নিয়ে প্রস্তুত থাক৷

36 তোমরা এমন লোকদের মতো হও যাঁরা তাদের মনিব বিয়ে বাড়ি থেকে কখন ফিরে আসবে তারই অপেক্ষায় থাকে; য়েন তিনি ফিরে এসে দরজায় কড়া নাড়লেই তখনই তাঁর জন্য দরজা খুলে দিতে পারে৷

37 ধন্য সেই সব দাস, মনিব এসে যাদের জেগে প্রস্তুত থাকতে দেখবেন৷ আমি তোমাদের সত্যি বলছি, তিনি নিজে পোশাক বদলে প্রস্তুত হয়ে তাদের খেতে বসাবেন, এবং নিজেই পরিবেশন করবেন৷

38 তিনি রাতের দ্বিতীয় প্রহরে ও তৃতীয় প্রহরে এসে যদি তাদেরকে প্রস্তুত থাকতে দেখেন তাহলে ধন্য তারা৷

39 কিন্তু একথা জেনে রেখো, চোর কোন সময় আসবে তা যদি বাড়ির কর্তা জানতে পারে তাহলে সে তার বাড়িতে সিঁদ কাটতে দেবে না৷

40 তাই তোমরাও প্রস্তুত থেকো, কারণ তোমরা য়ে সময় আশা করবে না, মানবপুত্র সেই সময় আসবেন৷

41 তখন পিতর বললেন, ‘প্রভু এই দৃষ্টান্তটি কি আপনি শুধু আমাদের জন্য বললেন, না এটা সকলের জন্য?’

42 তখন প্রভু বললেন, ‘সেই বিশ্বস্ত ও বিচক্ষণ কর্মচারী কে, যাকে তার মনিব তাঁর অন্য কর্মচারীদের সময়মতো খাবার ভাগ করে দেবার ভার দেবেন?

43 ধন্য সেই দাস, যাকে তার মনিব এসে বিশ্বস্তভাবে কাজ করতে দেখবেন৷

44 আমি তোমাদের সত্যি বলছি, মনিব সেই কর্মচারীর ওপর তাঁর সমস্ত সম্পত্তি দেখাশোনার ভার দেবেন৷

45 কিন্তু সেই কর্মচারী যদি মনে মনে বলে, ‘আমার মনিবের আসতে এখন অনেক দেরী আছে,’ এই মনে করে সে যদি তার অন্য দাস-দাসীদের মারধর করে আর পানাহারে মত্ত হয়,

46 তাহলে য়ে দিন ও য়ে সময়ের কথা সে একটুকু চিন্তাও করবে না, সেই দিন ও সেই সময়েই তার মনিব এসে হাজির হবেন৷ তার মনিব তাকে কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলবেন; আর অবিশ্বাসীদের জন্য য়ে জায়গা ঠিক করা হয়েছে, তার স্থান সেখানেই হবে৷

47 ‘য়ে দাস তার মনিবের ইচ্ছা জেনেও প্রস্তুত থাকে নি, অথবা য়ে তার মনিবের ইচ্ছানুসারে কাজ করে নি, সেই দাস কঠোর শাস্তি পাবে৷

48 কিন্তু য়ে তার মনিব কি চায় তা জানে না, এই না জানার দরুন এমন কাজ করে ফেলেছে যার জন্য তার শাস্তি হওযা উচিত্, সেই দাসের কম শাস্তি হবে৷ যাকে বেশী দেওযা হয়েছে, তার কাছ থেকে বেশী পাবার আশা করা হবে৷ যার ওপর বেশী দাযিত্ব দেওযা হয়েছে, লোকেরা তার কাছ থেকে অধিক চাইবে৷’

49 ‘আমি পৃথিবীতে আগুন নিক্ষেপ করতে এসেছি, ‘আহা, যদি তা আগেই জ্বলে উঠত৷

50 এক বাপ্তিস্মে আমায় বাপ্তাইজিত হতে হবে, আর যতক্ষণ না তা হচ্ছে, আমি ব্যাকুল হয়ে উঠেছি৷

51 তোমরা কি মনে কর এই পৃথিবীতে আমি শান্তি স্থাপন করতে এসেছি? না, আমি তোমাদের বলছি, বরং বিভেদ ঘটাতে এসেছি৷

52 কারণ এখন থেকে একই পরিবারে পাঁচজন থাকলে তারা পরস্পরের মধ্যে ভাগ হয়ে যাবে৷ তিনজন দুজনের বিরুদ্ধে যাবে, আর দুজন তিনজনের বিরুদ্ধে যাবে৷

53 বাবা ছেলের বিরুদ্ধে ও ছেলে বাবার বিরুদ্ধে যাবে৷ মা মেয়ের বিরুদ্ধে ও মেয়ে মায়ের বিরুদ্ধে যাবে৷ শাশুড়ী বৌমার বিরুদ্ধে ও বৌমা শাশুড়ীর বিরুদ্ধে যাবে৷’

54 এরপর যীশু সমবেত জনতার দিকে ফিরে বললেন, ‘পশ্চিমদিকে মেঘ জমতে দেখে তোমরা বলে থাকো, ‘বৃষ্টি আসলো বলে, আর তা-ই হয়৷’

55 যখন দক্ষিণা বাতাস বয়, তোমরা বলে থাক, ‘গরম পড়বে,’ আর তা-ই হয়৷

56 ভণ্ডের দল! তোমরা পৃথিবী ও আকাশের চেহারা দেখে তার অর্থ বুঝতে পার; কিন্তু এ কেমন য়ে তোমরা বর্তমান সময়ের অর্থ বুঝতে পার না?

57 ‘যা কিছু ন্যায়, নিজেরাই কেন তার বিচার কর না?

58 তোমাদের প্রতিপক্ষের সঙ্গে তোমরা যখন বিচারকের কাছে যাও, তখন পথেই তা মিটিয়ে নেওযার চেষ্টা কর৷ নতুবা সে হয়তো তোমাকে বিচারকের কাছে টেনে নিয়ে যাবে, বিচারক তোমাকে সেপাইয়ের হাতে দেবে আর সেপাই তোমায় কারাগারে দেবে৷

59 আমি তোমাকে বলছি, শেষ পয়সাটি না দেওযা পর্যন্ত তুমি কোন মতেই কারাগার থেকে ছাড়া পাবে না৷’

13

1 সেই সময় কয়েকজন লোক যীশুকে সেই সব গালীলীয়দের বিষয় বলল, ‘যাদের রক্ত রাজ্যপাল পীলাত তাদের উত্‌সর্গ করা বলির রক্তের সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছিলেন৷

2 যীশু এর উত্তরে বললেন, ‘তোমরা কি মনে কর এই গালীলীয়রা কষ্টভোগ করেছিল বলে অন্যান্য সব গালীলীয়দের থেকে বেশী পাপী ছিল?

3 না, আমি তোমাদের বলছি, তোমরা যদি পাপ থেকে মন না ফিরাও, তাহলে তোমরাও তাদের মত মরবে৷

4 শীলোহ চূড়ো ভেঙ্গে পড়ে য়ে আঠারো জনের মৃত্যু হয়েছিল, তাদের বিষয়ে তোমাদের কি মনে হয়? তোমরা কি মনে কর জেরুশালেমের বাকী সব লোকদের থেকে তারা বেশী দোষে দোষী ছিল?

5 না, আমি তোমাদের বলছি, তোমরা যদি পাপ থেকে মন না ফিরাও, তাহলে তোমরাও তাদের মতো মরবে৷’

6 এরপর যীশু তাদের এই দৃষ্টান্তটি বললেন, ‘একজন লোক তার বাগানে একটি ডুমুর গাছ পুঁতেছিল৷ পরে সে এসে সেই গাছে ফল হয়েছে কি না খোঁজ করল, কিন্তু কোন ফল দেখতে পেল না৷

7 তখন সে বাগানের মালীকে বলল, ‘দেখ, আজ তিন বছর ধরে এই ডুমুর গাছে ফলের খোঁজে আমি আসছি, কিন্তু আমি এতে কোন ফলই দেখতে পাচ্ছি না, তাই তুমি এই গাছটা কেটে ফেল, এটা অযথা জমি নষ্ট করবে কেন?’

8 মালী তখন বলল, ‘প্রভু, এ বছরটা দেখতে দিন৷ আমি এর চারপাশে খুঁড়ে সার দিই৷

9 সামনের বছর যদি এতে ফল আসে তো ভালোই! তা না হলে আপনি ওটাকে কেটে ফেলবেন৷

10 কোন এক বিশ্রামবারে যীশু এক সমাজগৃহে শিক্ষা দিচ্ছিলেন৷

11 সেখানে একজন স্ত্রীলোক ছিল যাকে এক দুষ্ট আত্মা আঠারো বছর ধরে পঙ্গু করে রেখেছিল৷ সে কুঁজো হয়ে গিয়েছিল, কোনরকমেও সোজা হতে পারত না৷

12 যীশু তাকে দেখে কাছে ডাকলেন, এবং স্ত্রীলোকটিকে বললেন, ‘হে নারী, তোমার রোগ থেকে তুমি মুক্ত হলে!’

13 এরপর তিনি তার ওপর হাত রাখলেন, সঙ্গে সঙ্গে সে সোজা হয়ে দাঁড়াল, আর ঈশ্বরের প্রশংসা করতে লাগল৷

14 যীশু তাকে বিশ্রামবারে সুস্থ করলেন বলে সেই সমাজগৃহের নেতা খুবই রেগে গিয়ে লোকদের উদ্দেশ্যে বললেন, ‘সপ্তাহে দুদিন তো কাজ করার জন্য আছে, তাই ঐ সব দিনে এসে সুস্থ হও, বিশ্রামবারে এসো না৷’

15 প্রভু এর উত্তরে তাঁকে বললেন, ‘ভণ্ডের দল! তোমরা কি বিশ্রামবারে গরু বা গাধা খোঁযাড় থেকে বের করে জল খাওযাতে নিয়ে যাও না?

16 এই স্ত্রীলোকটি, য়ে অব্রাহামের বংশে জন্মেছে, যাকে শয়তান আঠারো বছর ধরে বেঁধে রেখেছিল, বিশ্রামবার বলে কি সে সেই বাঁধন থেকে মুক্ত হবে না?’

17 তিনি এই কথা বলাতে যাঁরা তাঁর বিরুদ্ধে ছিল তারা সকলেই খুব লজ্জা পেল; আর তিনি য়ে অপূর্ব কাজ করেছেন তার জন্য সমবেত জনতা আনন্দ করতে লাগল৷

18 এরপর যীশু বললেন, ‘ঈশ্বরের রাজ্য কেমন, আমি কিসের সঙ্গে এর তুলনা করব?

19 এ হল একটা ছোট্ট সরষে বীজের মতো, যা একজন লোক নিয়ে তার বাগানে পুঁতল, আর তা থেকে অঙ্কুর বেরিয়ে সেটা বাড়তে লাগল, পরে সেটা একটা গাছে পরিণত হলে তার ডালপালাতে আকাশের পাখিরা এসে বাসা বাঁধল৷’

20 তিনি আরও বললেন, ‘ঈশ্বরের রাজ্যকে আমি কিসের সঙ্গে তুলনা করব?

21 এ হল খামিরের মতো, যা কোন একজন স্ত্রীলোক একতাল ময়দার সঙ্গে মেশাল, পরে সেই খামিরে সমস্ত তালটা ফুলে উঠল৷’

22 যীশু বিভিন্ন নগর ও গ্রামের মধ্য দিয়ে য়েতে য়েতে শিক্ষা দিচ্ছিলেন, এইভাবে তিনি জেরুশালেমের দিকে এগিয়ে চললেন৷

23 কোন একজন লোক তাঁকে জিজ্ঞেস করল, ‘প্রভু উদ্ধার কি কেবল অল্প কয়েকজন লোকই পাবে?’ তিনি তাদের বললেন,

24 ‘সরু দরজা দিয়ে ঢোকার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা কর, কারণ আমি তোমাদের বলছি, অনেকেই ঢোকার চেষ্টা করবে; কিন্তু ঢুকতে পারবে না৷

25 ঘরের কর্তা উঠে যখন দরজা বন্ধ করবেন, তখন তোমরা বাইরে দাঁড়িয়ে দরজায় ঘা দিতে দিতে বলবে, ‘প্রভু আমাদের জন্য দরজা খুলে দিন৷’ কিন্তু তিনি তোমাদের বলবেন, ‘তোমরা কোথা থেকে এসেছ; আমি জানি না৷

26 তারপর তোমরা বলতে থাকবে, ‘আমরা আপনার সঙ্গে খাওযা দাওযা করেছি; আর আপনি তো আমাদের পথে পথে উপদেশ দিয়েছেন৷’

27 তখন তিনি তোমাদের বলবেন, ‘তোমরা কোথা থেকে এসেছ, আমি জানি না৷ তোমরা সব দুষ্টের দল, আমার কাছ থেকে দূর হও৷’

28 তোমরা যখন দেখবে য়ে অব্রাহাম, ইসহাক, যাকোব ও সব ভাববাদীরা ঈশ্বরের রাজ্যে আছেন; কিন্তু তোমাদের বাইরে ফেলে দেওযা হয়েছে, তখন কান্নাকাটি করবে ও দাঁতে দাঁত ঘসতে থাকবে;

29 আর লোকেরা উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিম থেকে এসে ঈশ্বরের রাজ্যে নিজের নিজের আসন গ্রহণ করবে৷

30 মনে রেখো, যাঁরা আজ শেষে রয়েছে, তারা প্রথমে স্থান নেবে, আর যাঁরা আজ প্রথমে রয়েছে, তারা শেষের হবে৷’

31 সেই সময় কয়েকজন ফরীশী যীশুর কাছে এসে বললেন, ‘তুমি এখান থেকে অন্য কোথাও যাও! কারণ হেরোদ তোমায় হত্যা করতে চাইছে৷’

32 যীশু তাদের বললেন, ‘তোমরা গিয়ে সেই শিযালটাকে বল, ‘আমি আজ ও কাল ভূত ছাড়াবো ও রোগীদের সুস্থ করব, আর তৃতীয় দিনে আমি আমার কাজ শেষ করব৷’

33 আমি আমার পথে চলতেই থাকব, কারণ জেরুশালেমের বাইরে কোন ভাববাদী প্রাণ হারাবে তেমনটি হতে পারে না৷

34 ‘জেরুশালেম, হায় জেরুশালেম! তুমি ভাববাদীদের হত্যা করেছ; আর ঈশ্বর তোমার কাছে যাদের পাঠিয়েছেন তুমি তাদের পাথর মেরেছ! মুরগী য়েমন তার বাচ্চাদের নিজের ডানার নীচে জড়ো করে, তেমনি আমি কতবার তোমার লোকদের আমার কাছে জড়ো করতে চেয়েছি৷ কিন্তু তুমি রাজী হও নি৷

35 এইজন্য দেখ তোমাদের গৃহ পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকবে৷ আমি তোমাদের বলছি, যতদিন না তোমরা বলবে, ‘ধন্য তিনি, যিনি প্রভুর নামে আসছেন, ততদিন তোমরা আমায় আর দেখতে পাবে না৷’

14

1 এক বিশ্রামবারে যীশু ফরীশীদের একজন নেতৃস্থানীয় লোকের বাড়িতে নিমন্ত্রণ খেতে গেলেন৷ সেখানে সমবেত লোকেরা যীশুর প্রতি লক্ষ্য রাখছিল৷

2 যীশুর সামনে একটি লোক ছিল য়ে উদরী রোগে ভুগছিল৷

3 যীশু তখন ব্যবস্থার শিক্ষক ও ফরীশীদের লক্ষ্য করে জিজ্ঞেস করলেন, ‘বিশ্রামবারে কাউকে সুস্থ করা কি বিধিসম্মত?’

4 কিন্তু তারা সকলে চুপ করে রইল৷ তখন যীশু সেই অসুস্থ লোকটিকে ধরে তাকে সুস্থ করলেন, পরে বিদায় নিলেন৷

5 এরপর তিনি তাদের দিকে লক্ষ্য করে বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে কারোর সন্তান বা গরু যদি বিশ্রামবারে কুযায় পড়ে যায় তাহলে তোমরা কি সঙ্গে সঙ্গে তাকে সেখান থেকে টেনে তুলবে না?’

6 তারা কেউ এই কথার জবাব দিতে পারল না৷

7 যীশু দেখলেন নিমন্ত্রিত অতিথিরা কিভাবে নিজেরাই ভোজের শ্রেষ্ঠ আসন দখল করার চেষ্টা করছে৷ তাই তিনি তাদের কাছে এই দৃষ্টান্তটি নিয়ে বললেন,

8 ‘বিয়ের ভোজে যখন কেউ তোমাদের নিমন্ত্রণ করে তখন সেখানে গিয়ে সম্মানের আসনটা দখল করে বসবে না৷ কারণ তোমার চেয়ে হয়তো আরো সম্মানিত কাউকে নিমন্ত্রণ করা হয়েছে৷

9 তা করলে যিনি তোমাদের উভয়কেই নিমন্ত্রণ করেছেন, তিনি এসে তোমায় বলবেন, ‘এঁকে তোমার জায়গাটা ছেড়ে দাও!’ তখন তুমি লজ্জায় পড়বে, কারণ তোমাকে সবচেয়ে নীচু জায়গায় বসতে হবে৷

10 কিন্তু তুমি যখন নিমন্ত্রিত হয়ে যাও, সেখানে গিয়ে সবচেয়ে নীচু জায়গায় বসবে৷ যিনি তোমায় নিমন্ত্রণ করেছেন তিনি এসে এরকম দেখে তোমায় বলবেন, ‘বন্ধু এস, এই ভাল আসনে বস৷’ তখন নিমন্ত্রিত অন্য সব অতিথিদের সামনে তোমার সম্মান হবে৷

11 য়ে কেউ নিজেকে সম্মান দিতে চায় তাকে নত করা হবে, আর য়ে নিজেকে নত করে তাকে সম্মানিত করা হবে৷’

12 তখন য়ে তাঁকে নিমন্ত্রণ করেছিল, তাকে যীশু বললেন, ‘তুমি যখন ভোজের আযোজন করবে তখন তোমার বন্ধু, ভাই, আত্মীয়স্বজন বা ধনী প্রতিবেশীদের নিমন্ত্রণ কোর না, কারণ তারা তোমাকে পাল্টা নিমন্ত্রণ করে প্রতিদান দেবে৷

13 কিন্তু তুমি যখন ভোজের আযোজন করবে তখন দরিদ্র, খোঁড়া, বিকলাঙ্গ ও অন্ধদের নিমন্ত্রণ কোর৷

14 তাতে যাদের প্রতিদান দেবার ক্ষমতা নেই, সেই রকম লোকদের নিমন্ত্রণ করার জন্য ধার্মিকদের পুনরুত্থানের সময় ঈশ্বর তোমায় পুরস্কার দেবেন৷’

15 যাঁরা খেতে বসেছিল তাদের মধ্যে একজন এই কথা শুনে যীশুকে বলল, ‘ঈশ্বরের রাজ্যে যাঁরা খেতে বসবে তারা সকলে ধন্য৷’

16 তখন যীশু তাকে বললেন, ‘একজন লোক এক বিরাট ভোজের আযোজন করেছিল আর সে অনেক লোককে নিমন্ত্রণ করেছিল৷

17 ভোজ খাওযার সময় হলে সে তার দাসকে দিয়ে নিমন্ত্রিত লোকদের বলে পাঠাল, ‘তোমরা এস! কারণ এখন সবকিছু প্রস্তুত হয়েছে!

18 তারা সকলেই নানা অজুহাত দেখাতে শুরু করল৷ প্রথম জন তাকে বলল, ‘আমায় মাপ কর, কারণ আমি একটা ক্ষেত কিনেছি, তা এখন আমায় দেখতে য়েতে হবে৷’

19 আর একজন বলল, ‘আমি পাঁচ জোড়া বলদ কিনেছি, এখন সেগুলি একটু পরখ করে নিতে চাই, তাই আমি য়েতে পারব না আমায় মাপ কর৷’

20 এরপর আর একজন বলল, ‘আমি সবে মাত্র বিয়ে করেছি, সেই কারণে আমি আসতে পারব না৷’

21 সেই দাস ফিরে গিয়ে তার মনিবকে একথা জানালে, তার মনিব রেগে গিয়ে তার দাসকে বলল, ‘যাও, শহরের পথে পথে, অলিতে গলিতে গিয়ে গরীব, খোঁড়া, পঙ্গু ও অন্ধদের ডেকে নিয়ে এস৷’

22 এরপর সেই দাস মনিবকে বলল, ‘প্রভু, আপনি যা যা বলেছেন তা করেছি, তা সত্ত্বেও এখনও অনেক জায়গা আছে৷

23 তখন মনিব সেই দাসকে বলল, ‘এবার তুমি গ্রামের পথে পথে, বেড়ার ধারে ধারে যাও, যাকে পাও তাকেই এখানে আসবার জন্য জোর কর, য়েন আমার বাড়ি ভরে যায়৷

24 আমি তোমাদের বলছি, যাদের প্রথমে নিমন্ত্রণ করা হয়েছিল, তাদের কেউই আমার এই ভোজের স্বাদ পাবে না!”

25 যীশুর সঙ্গে সঙ্গে এক বিরাট জনতা চলেছিল, তাদের দিকে ফিরে যীশু বললেন,

26 ‘যদি কেউ আমার কাছে আসে অথচ তার বাবা, মা, স্ত্রী, সন্তান, ভাই-বোন, এমন কি নিজের প্রাণকেও আমার চেয়ে বেশী ভালবাসে সে আমার শিষ্য হতে পারবে না৷

27 য়ে কেউ নিজের ক্রুশ কাঁধে তুলে নিয়ে আমায় অনুসরণ না করে, সে আমার শিষ্য হতে পারে না৷

28 তোমাদের মধ্যে কেউ যদি উঁচু একটি ঘর তুলতে চায়, তবে সে কি প্রথমে তা নির্মাণ করতে কত খরচ পড়বে তার হিসাব করে দেখবে না, য়ে তা শেষ করার মতো যথেষ্ট অর্থ তার আছে কি না?

29 তা না হলে সে ভিত গাঁথবার পর যদি তা শেষ করতে না পারে, তবে যাঁরা সেটা দেখবে তারা সবাই তাকে নিয়ে ঠাট্টা করবে, আর বলবে,

30 এই লোকটা গাঁথতে শুরু করেছিল ঠিকই কিন্তু শেষ করতে পারল না৷’

31 ‘যদি একজন রাজা আর একজন রাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যায়, তবে সে প্রথমে বসে চিন্তা করবে না য়ে তার মাত্র দশ হাজার সৈন্য বিপক্ষের বিশ হাজার সৈন্য়ের মোকাবিলা করতে পারবে কিনা?

32 যদি তা না পারে তবে তার শত্রু পক্ষ দূরে থাকতেই সে তার প্রতিনিধি পাঠিয়ে সন্ধির প্রস্তাব দেবে৷

33 ঠিক সেইরকমভাবে তোমাদের মধ্যে য়ে কেউ তার সর্বস্ব ত্যাগ না করে, সে আমার শিষ্য হতে পারে না৷’

34 ‘লবণ ভাল, তবে লবণের নোনতা স্বাদ যদি নষ্ট হয়ে যায় তাহলে তা কি আবার নোনতা করা যায়?

35 তখন তা না জমির জন্য, না সারের গাদার জন্য উপযুক্ত থাকে, লোকে তা বাইরেই ফেলে দেয়৷ ‘যার শোনার মতো কান আছে সে শুনুক৷’

15

1 অনেক কর আদায়কারী ও পাপী লোকেরা প্রায়ই যীশুর কথা শোনার জন্য আসত৷

2 এতে ফরীশী ও ব্যবস্থার শিক্ষকরা এই বলে তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করতে লাগল, ‘এই লোকটা জঘন্য পাপী লোকদের সঙ্গে মেলামেশা ও খাওযা দাওযা করে৷’

3 তখন যীশু তাদের কাছে এই দৃষ্টান্ত দিলেন,

4 ‘যদি তোমাদের মধ্যে কারোর একশোটি ভেড়া থাকে, তার মধ্যে থেকে একটা হারিয়ে যায়, তবে সে কি মাঠের মধ্যে বাকি নিরানব্বইটা রেখে য়েটা হারিয়ে গেছে তাকে না পাওযা পর্যন্ত তার খোঁজ করবে না?

5 আর যখন সে ঐ ভেড়াটাকে খুঁজে পায়, তখন তাকে আনন্দের সঙ্গে কাঁধে তুলে নেয়৷

6 তারপর বাড়ি এসে তার বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশীদের ডেকে বলে, ‘এস, আমার সঙ্গে তোমরাও আনন্দ কর, কারণ আমার য়ে ভেড়াটা হারিয়ে গিয়েছিল তাকে আমি খুঁজে পেয়েছি৷’

7 আমি তোমাদের বলছি, ঠিক সেইভাবে নিরানব্বই জন ধার্মিক, যাদের মন পরিবর্তনের প্রযোজন নেই তাদের থেকে একজন পাপী যদি ঈশ্বরের কাছে মন ফিরায়, তাকে নিয়ে স্বর্গে মহানন্দ হয়৷

8 ধর, কোন একজন স্ত্রীলোকের দশটা রূপোর সিকির একটা হার ছিল৷ তার মধ্য থেকে সে যদি একটা হারিয়ে ফেলে, তাহলে সে কি প্রদীপ জে্বলে সেই সিকিটি না পাওযা পর্যন্ত ঘরের প্রতিটি জায়গা ভাল করে ঝাঁট দিয়ে খুঁজে দেখবে না?’

9 আর সে তা খুঁজে পেলে তার বন্ধু-বান্ধব ও প্রতিবেশীদের ডেকে বলবে, ‘এস, আমার সঙ্গে আনন্দ কর, কারণ আমার য়ে সিকিটি হারিয়ে গিয়েছিল তা আমি খুঁজে পেয়েছি৷’

10 আমি তোমাদের বলছি, ঠিক এইভাবে একজন পাপী যখন মন-ফিরায়, তখন ঈশ্বরের স্বর্গদূতদের সামনে আনন্দ হয়৷’

11 এরপর যীশু বললেন, ‘একজন লোকের দুটি ছেলে ছিল৷

12 ছোট ছেলেটি তার বাবাকে বলল, ‘বাবা, সম্পত্তির য়ে অংশ আমার ভাগে পড়বে তা আমায় দিয়ে দাও৷’ তখন বাবা দুই ছেলের মধ্যে সম্পত্তি ভাগ করে দিলেন৷

13 কিছু দিন পর ছোট ছেলে তার সমস্ত কিছু নিয়ে দূর দেশে চলে গেল৷ সেখানে সে উচ্ছৃঙ্খল জীবন-যাপন করে সমস্ত টাকা পয়সা উড়িয়ে দিল৷

14 তার সব টাকা পয়সা খরচ হয়ে গেলে সেই দেশে ভীষণ দুর্ভিক্ষ দেখা দিল আর সেও অভাবে পড়ল৷

15 তাই সে সেই দেশের এক ব্যক্তির কাছে দিন মজুরীর একটা কাজ চাইল৷ সেই ব্যক্তি তাকে তার শুযোর চরাবার জন্য মাঠে পাঠিয়ে দিল৷

16 শুযোর য়ে শুঁটি খায় তা খেয়ে সে তার পেট ভরাতে চাইত, কিন্তু কেউ তাকে তাও দিত না৷

17 শেষ পর্যন্ত একদিন তার চেতনা হল, আর সে বলল, ‘আমার বাবার কাছে কত মজুর পেট ভরে খেতে পায় আর এখানে আমি খিদের জ্বালায় মরছি৷

18 আমি উঠে আমার বাবার কাছে যাব, তাকে বলব, বাবা, আমি ঈশ্বরের বিরুদ্ধে ও তোমার বিরুদ্ধে অন্যায় পাপ করেছি৷

19 তোমার ছেলে বলে পরিচয় দেবার কোন য়োগ্যতা আর আমার নেই৷ তোমার চাকরদের একজনের মতো করে তুমি আমায় রাখ!’

20 এরপর সে উঠে তার বাবার কাছে গেল৷ ‘সে যখন বাড়ি থেকে বেশ কিছুটা দূরে আছে, এমন সময় তার বাবা তাকে দেখতে পেলেন, বাবার অন্তর দুঃখে ভরে গেল৷ বাবা দৌড়ে গিয়ে ছেলের গলা জড়িয়ে ধরে তাকে চুমু খেলেন৷

21 ছেলে তখন তার বাবাকে বলল, ‘বাবা, আমি ঈশ্বরের দৃষ্টিতে ও তোমার কাছে অন্যায় পাপ করেছি৷ তোমার ছেলে বলে পরিচয় দেবার য়োগ্যতা আমার নেই৷

22 কিন্তু তার বাবা চাকরদের ডেকে বললেন, ‘তাড়াতাড়ি কর, সব থেকে ভাল জামাটা নিয়ে এসে একে পরিয়ে দাও৷ এর হাতে আংটি ও পায়ে জুতো পরিয়ে দাও৷

23 হৃষ্টপুষ্ট একটা বাছুর নিয়ে এসে সেটা কাট, আর এস, আমর সবাই মিলে খাওযা দাওযা করি, আনন্দ করি!

24 কারণ আমার এই ছেলেটা মারা গিয়েছিল আর এখন সে জীবন ফিরে পেয়েছে! সে হারিয়ে গিয়েছিল, এখন তাকে খুঁজে পাওযা গেছে৷’এই বলে তারা সকলে আনন্দ করতে লাগল৷

25 ‘সেই সময় তাঁর বড় ছেলে মাঠে ছিল৷ বাড়ির কাছাকাছি এসে সে বাজনা আর নাচের শব্দ শুনতে পেল৷

26 তখন সে একজন চাকরকে ডেকে জিজ্ঞাসা করল, ‘কি ব্যাপার, এসব কি হচ্ছে?’

27 চাকরটি বলল, ‘আপনার ভাই এসেছে, আর সে সুস্থ শরীরে নিরাপদে ফিরে এসেছে বলে আপনার বাবা হৃষ্টপুষ্ট বাছুর কেটে ভোজের আযোজন করেছেন৷’

28 এই শুনে বড় ছেলে খুব রেগে গেল, সে বাড়ির ভেতরে য়েতে চাইল না৷ তখন তার বাবা বেরিয়ে এসে তাকে সান্ত্বনা দিলেন৷

29 কিন্তু সে তার বাবাকে বলল, ‘দেখ, এত বছর ধরে আমি তোমাদের সেবা করেছি, কখনও তোমার কথার অবাধ্য হই নি৷ তবু আমার বন্ধুদের সঙ্গে একটু আমোদ করার জন্য তুমি আমায় কখনও একটা ছাগলও দাও নি৷

30 কিন্তু তোমার এই ছেলে য়ে বেশ্য়াদের পেছনে তোমার টাকা উড়িয়ে দিয়েছে, সে যখন এল তখন তুমি তার জন্য হৃষ্টপুষ্ট বাছুর কাটলে৷’

31 তার বাবা তাকে বললেন, ‘বাছা, তুমি তো সব সময় আমার সঙ্গে সঙ্গে আছ; আর আমার যা কিছু আছে সবই তো তোমার৷

32 কিন্তু আমাদের আনন্দিত হয়ে উত্‌সব করা উচিত, কারণ তোমার এই ভাই মরে গিয়েছিল আর এখন সে জীবন ফিরে পেয়েছে৷ সে হারিয়ে গিয়েছিল, এখন তাঁকে খুঁজে পাওযা গেছে৷’

16

1 এরপর যীশু তাঁর অনুগামীদের বললেন, ‘কোন একজন ধনী ব্যক্তির একজন দেওযান ছিল; আর এই দেওযান তার মনিবের সম্পদ নষ্ট করছে বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠল৷

2 তখন সেই ধনী ব্যক্তি ঐ দেওযানকে ডেকে বললেন, ‘তোমার বিষয়ে আমি এ কি শুনছি? তোমার কাজের হিসাব আমায় দাও, কারণ তুমি আর আমার দেওযান থাকতে পারবে না৷’

3 তখন সেই দেওযান মনে মনে বলল, ‘এখন আমি কি করব? আমার মনিব তো আমাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করলেন৷ আমি য়ে মজুরের কাজ করে খাব তার ক্ষমতাও আমার নেই, আর ভিক্ষা করতেও আমার লজ্জা লাগে৷

4 আমার দেওযানী পদ গেলেও লোকে যাতে তাদের বাড়িতে আমায় থাকতে দেয় সে জন্য আমায় কি করতে হবে তা আমি জানি৷’

5 তখন তার মনিবের কাছে যাঁরা ধারে জিনিস নিয়েছিল তাদের প্রত্যেককে সে ডেকে তাদের প্রথম জনকে বলল, ‘আমার মনিবের কাছে তুমি কত ধার?’

6 সে বলল, ‘একশো মন অলিভ তেল৷’ তখন সেই দেওযান তাকে বলল, ‘এই নাও তোমার হিসাবের কাগজটা, তাড়াতাড়ি করে লেখ, পঞ্চাশ মন৷’

7 এরপর আর একজন লোককে সে বলল, ‘আর তুমি, তুমি কত ধার?’ সে বলল, ‘একশো মন গম৷’ সেই দেওযান তাকে বলল, ‘তোমার রসিদটা দেখি, এটাতে আশি মন লেখ৷’

8 সেই মনিব তাঁর অসত্ দেওযানের প্রশংসা করলেন, কারণ সে বুদ্ধিমানের মত কাজ করেছিল৷ এ জগতের লোকেরা নিজেদের মত লোকেদের সঙ্গে আচার আচরণে জ্যোতির সন্তানদের থেকে বেশী বিচক্ষণ৷

9 ‘আমি তোমাদের বলছি, তোমাদের জাগতিক সম্পদ দিয়ে নিজেদের জন্য বন্ধু লাভ কর, য়েন যখন তা শেষ হয়ে যাবে, তখন তারা তোমাদের অনন্ত আবাসে স্বাগত জানায়৷

10 য়ে সামান্য বিষয়ে বিশ্বস্ত হতে পারে, বড় ব্যাপারেও তাকে বিশ্বাস করা চলে৷ য়ে ছোটখাটো বিষয়ে অবিশ্বস্ত, সে বড় বড় বিষয়েও অবিশ্বস্ত হবে৷

11 তাই জাগতিক সম্পদ সম্বন্ধে তুমি যদি বিশ্বস্ত না হও, তবে প্রকৃত সত্য সম্পদের বিষয়ে কে তোমাকে বিশ্বাস করবে৷

12 অপরের জিনিসের ব্যাপারে তোমাদের যদি বিশ্বাস করা না যায়, তবে তোমাদের যা নিজস্ব সম্পদ তাই বা কে তোমাদের দেবে?

13 ‘কোন দাস দুজন কর্তার দাসত্ব করতে পারে না, হয় সে একজনকে ঘৃণা করবে ও অন্যজনকে ভালবাসবে, অথবা একজনের অনুগত হয়ে অন্য জনকে তুচ্ছ করবে৷ তোমরা ঈশ্বর ও ধন-সম্পদ উভয়েরই দাসত্ব করতে পার না৷’

14 অর্থলোভী ফরীশীরা যীশুর এই সব কথা শুনে যীশুকে ব্যঙ্গ করতে লাগল৷

15 তখন যীশু তাদের বললেন, ‘তোমরা সেই রকম লোক, যাঁরা লোকচক্ষে নিজেদের খুব ধার্মিক বলে জাহির করে থাকে, কিন্তু তোমাদের অন্তরে কি আছে ঈশ্বর তা জানেন৷ মানুষের চোখে যা মহান, ঈশ্বরের দৃষ্টিতে তা ঘৃন্য৷

16 ‘য়োহন বাপ্তাইজকের সময় পর্যন্ত বিধি-ব্যবস্থা ও ভাববাদীদের শিক্ষার প্রচলন ছিল৷ তারপর থেকে ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয় সুসমাচার প্রচার করা শুরু হয়েছে৷ আর সেই রাজ্যে প্রবেশ করার জন্য সবাই প্রবলভাবে চেষ্টা করছে৷

17 তবে বিধি-ব্যবস্থার এক বিন্দু বাদ পড়ার চেয়ে বরং আকাশ ও পৃথিবীর লোপ পাওযা সহজ৷

18 ‘য়ে কেউ নিজের স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ করে অন্য কোন স্ত্রীলোককে বিয়ে করে, সে ব্যভিচার করে; আর য়ে সেই পরিত্যক্তা স্ত্রীকে বিয়ে করে সেও, ব্যভিচার করে৷’

19 ‘এক সময় একজন ধনী ব্যক্তি ছিল, সে বেগুনী রঙের কাপড় ও বহুমূল্য পোশাক পরত; আর প্রতিদিন বিলাসে দিন কাটাতো৷

20 তারই দরজার সামনে লাসার নামে একজন ভিখারী পড়ে থাকত, যার সারা শরীর ঘায়ে ভরে গিয়েছিল৷

21 সেই ধনী ব্যক্তির টেবিল থেকে টুকরো-টাকরা য়ে খাবার পড়ত তাই খেয়ে সে পেট ভরাবার আশায় থাকত, এমনকি কুকুরেরা এসে তার ঘা চেটে দিত৷

22 একদিন সেই গরীব ভিখারী মারা গেল, আর স্বর্গদূতেরা এসে তাকে নিয়ে গেল এবং সে অব্রাহামের কোলে স্থান পেল৷ সেই ধনী ব্যক্তি ও একদিন মারা গেল, আর তাকে সমাধি দেওযা হল৷

23 সেই ধনী ব্যক্তি পাতালে নরকে খুব যন্ত্রণার মধ্যে কাটাতে থাকল৷ এই অবস্থায় সে মুখ তুলে তাকাতে বহুদূরে অব্রাহামকে দেখতে পেল; আর অব্রাহামের কোলে সেই লাসারকে দেখতে পেল৷

24 সেই ধনী ব্যক্তি তখন চিত্‌কার করে বলে উঠল, ‘হে পিতা, অব্রাহাম, আমার প্রতি দযা করুন, লাসারকে এখানে পাঠিয়ে দিন, য়েন সে এখানে এসে ওর আঙ্গুলের ডগা জলে ডুবিয়ে আমার জিভ জুড়িয়ে দেয়, কারণ আমি এই আগুনের মধ্যে বড়ই কষ্ট পাচ্ছি!’

25 কিন্তু অব্রাহাম বললেন, ‘হে আমার বত্‌স, মনে করে দেখ, জীবনে সুখের সব কিছুই তুমি ভোগ করেছ আর সেই সময় লাসার অনেক কষ্ট পেয়েছে৷ কিন্তুু এখন এখানে সে সুখ পাচ্ছে আর তুমি কষ্ট পাচ্ছ৷

26 এছাড়া তোমাদের ও আমাদের মাঝে এক মহাশূন্য স্থান আছে, যাতে ইচ্ছা থাকলেও কেউ এখানে থেকে পার হয়ে তোমাদের কাছে য়েতে না পারে, আর ওখান থেকে পার হয়ে কেউ আমাদের কাছে আসতে না পারে৷’

27 সেই ধনী ব্যক্তি তখন বলল, ‘তাহলে পিতা দযা করে লাসারকে আমার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দিন!

28 য়েন আমার য়ে পাঁচ ভাই সেখানে আছে, তাদের সে সাবধান করে দেয়, যাতে তারা এই যন্ত্রণার জায়গায় না আসে৷’

29 কিন্তু অব্রাহাম বললেন, ‘মোশি ও অন্যান্য ভাববাদীরা তো তাদের জন্য আছেন, তাঁদের কথা তারা শুনুক৷’

30 তখন ধনী লোকটি বলল, ‘না, না, পিতা অব্রাহাম মৃতদের মধ্য থেকে কেউ যদি তাদের কাছে যায়, তবে তারা অনুতাপ করবে৷’

31 অব্রাহাম তাকে বললেন, ‘তারা যদি মোশি ও ভাববাদীদের কথা না শোনে, তবে মৃতদের মধ্য থেকে উঠে গিয়েও যদি কেউ তাদের সঙ্গে কথা বলে তবু তারা তা শুনবে না৷’

17

1 যীশু তাঁর অনুগামীদের বললেন, ‘পাপের প্রলোভন সব সময়ই থাকবে, কিন্তু ধিক্ সেই লোক যার মাধ্যমে তা আসে৷

2 এই ক্ষুদ্রতমদের মধ্যে একজনকেও কেউ যদি পাপের পথে নিয়ে যায়, তবে তার গলায় এক পট্টি জাঁতা বেঁধে তাকে সমুদ্রের অতল জলে ডুবিয়ে দেওযা তার পক্ষে ভাল৷

3 তোমরা নিজেদের বিষয়ে সাবধান! ‘তোমার ভাই যদি পাপ করে, তাকে তিরস্কার কর৷ সে যদি অনুতপ্ত হয় তবে তাকে ক্ষমা কর৷

4 সে যদি এক দিনে সাতবার তোমার বিরুদ্ধে পাপ করে, আর সাতবারই তোমার কাছে ফিরে এসে বলে, ‘আমি অনুতপ্ত,’ তবে তাকে ক্ষমা কর৷’

5 এরপর প্রেরিতেরা প্রভুকে বললেন, ‘আমাদের বিশ্বাসের বৃদ্ধি করুন!’

6 প্রভু বললেন, ‘একটা সরষে দানার মতো এতটুকু বিশ্বাস যদি তোমাদের থাকে, তাহলে এই তুঁত গাছটাকে তোমরা বলতে পার, ‘শেকড়শুদ্ধ উপড়ে নিয়ে সমুদ্রে নিজেকে পোঁত!’ আর দেখবে সে তোমাদের কথা শুনবে৷

7 ‘ধর তোমাদের মধ্যে কারো একজনের দাস হাল চষছে বা ভেড়া চরাচ্ছে৷ সে যখন মাঠ থেকে আসে তখন তুমি কি তাকে বলবে, ‘তাড়াতাড়ি করে এস, খেতে বস?’

8 বরং তাকে কি বলবে না, ‘আমি কি খাব তার জোগাড় কর, আর আমি যতক্ষণ খাওযা-দাওযা করি, তুমি কোমরে গামছা জড়িয়ে আমার সেবা যত্ন কর, এরপর তুমি খাওযা-দাওযা করবে৷’

9 ঐ দাস তোমার হুকুম অনুসারে কাজ করল বলে কি তুমি তাকে ধন্যবাদ দেবে?

10 তোমাদের ক্ষেত্রে সেই একই কথা প্রয়োজ্য৷ তোমাদের য়ে কাজ করতে বলা হয়েছে তা করা শেষ হলে তোমরা বলবে, ‘আমরা অয়োগ্য দাস, আমরা আমাদের কর্তব্য করেছি৷”

11 যীশু জেরুশালেমের দিকে যাচ্ছিলেন, যাবার পথে তিনি গালীল ও শমরীযার মাঝখান দিয়ে গেলেন৷

12 তাঁরা যখন একটি গ্রামে ঢুকছেন, এমন সময় দশ জন কুষ্ঠরোগী তাঁর সামনে পড়ল, তারা একটু দূরে দাঁড়াল,

13 ও চিত্‌কার করে বলল, ‘প্রভু যীশু! আমাদের দযা করুন!’

14 তাদের দেখে যীশু বললেন, ‘যাজকদের কাছে গিয়ে নিজেদের দেখাও৷’ পথে য়েতে য়েতে তারা সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেল;

15 কিন্তু তাদের মধ্যে একজন যখন দেখল য়ে সে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেছে তখন যীশুর কাছে ফিরে এসে খুব জোর গলায় ঈশ্বরের প্রশংসা করতে লাগল৷

16 সে যীশুর সামনে উপুড় হয়ে পড়ে তাঁকে ধন্যবাদ জানাল৷ এই লোকটি ছিল অইহুদী শমরীয়৷

17 এই দেখে যীশু তাকে বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে দশ জনই কি আরোগ্য লাভ করেনি? তবে বাকী নজন কোথায়?

18 ঈশ্বরের প্রশংসা করার জন্য এই ভিন্ন জাতের লোকটি ছাড়া আর কেউ কি ফিরে আসেনি?’

19 এরপর যীশু সেই লোকটিকে বললেন, ‘ওঠ, যাও, তোমার বিশ্বাসই তোমাকে সুস্থ করে তুলেছে৷’

20 একসময় ফরীশীরা যীশুকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ঈশ্বরের রাজ্য কখন আসবে?’ যীশু তাদের বললেন, ‘ঈশ্বরের রাজ্য এমনভাবে আসে, যা চোখে দেখা যায় না৷

21 লোকেরা বলবে না য়ে, ‘এই য়ে এখানে ঈশ্বরের রাজ্য’ বা ‘ওই য়ে ওখানে ঈশ্বরের রাজ্য৷’ কারণ ঈশ্বরের রাজ্য তো তোমাদের মাঝেই আছে৷’

22 কিন্তু অনুগামীদের উদ্দেশ্যে তিনি বললেন, ‘সময় আসবে, যখন মানবপুত্রের রাজত্বের সময়ের একটা দিন তোমরা দেখতে চাইবে, কিন্তু তোমরা তা দেখতে পাবে না৷

23 লোকেরা তোমাদের বলবে, ‘দেখ, তা ওখানে! বা দেখ তা এখানে!’ তাদের কথা শুনে য়েও না, বা তাদের পেছনে দৌড়িও না৷

24 ‘কারণ বিদ্য়ুত্ চমকালে আকাশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত য়েমন আলো হয়ে যায়, মানবপুত্রের দিনে তিনি সেইরকম হবেন৷

25 কিন্তু প্রথমে তাঁকে অনেক দুঃখভোগ করতে হবে, তাছাড়া এই যুগের লোকেরা তাঁকে অগ্রাহ্য় করবে৷

26 নোহের সময়ে য়েমন হয়েছিল, মানবপুত্রের সময়েও তেমনি হবে৷

27 য়ে পর্যন্ত না নোহ জাহাজে উঠলেন আর বন্যা এসে লোকদের ধ্বংস করল, সেই সময় পর্যন্ত লোকেরা খাওযা দাওযা করছিল, বিয়ে করছিল ও বিয়ে দিচ্ছিল৷

28 লোটের সময়েও সেই একই রকম হয়েছিল৷ তারা খাওযা-দাওযা করছিল, কেনা-বেচা, চাষ-বাস, গৃহ নির্মাণ সবই করত৷

29 কিন্তু লোট য়ে দিন সদোম থেকে বেরিয়ে এলেন, তারপরেই আকাশ থেকে আগুন ও গন্ধক বর্ষিত হয়ে সেখানকার সব লোককে ধ্বংস করে দিল৷

30 য়ে দিন মানবপুত্র প্রকাশিত হবেন, সেদিন এই রকমই হবে৷

31 ‘সেই দিন কেউ যদি ছাদের উপর থাকে, আর তার জিনিস পত্র যদি ঘরের মধ্যে থাকে, তবে সে তা নেবার জন্য য়েন নীচে না নামে৷ তেমনি যদি কেউ ক্ষেতের কাজে থাকে, তবে সে কোন কিছু নিতে ফিরে না আসুক৷

32 লোটের স্ত্রীর কথা য়েন মনে থাকে৷

33 য়ে তার জীবন নিরাপদ রাখতে চায়, সে তা খোযাবে; আর য়ে তার জীবন হারায়, সেই তা বাঁচিয়ে রাখবে৷

34 আমি তোমাদের বলছি, সেই রাত্রে একই বিছানায় দুজন শুয়ে থাকবে, তাদের মধ্যে একজনকে তুলে নেওযা হবে অন্যজন পড়ে থাকবে৷

35 দুজন স্ত্রীলোক একসঙ্গে য়াঁতাতে শস্য পিষবে, একজনকে তুলে নেওযা হবে আর অন্য জন পড়ে থাকবে৷’

36

37 তখন অনুগামীরা তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘প্রভু, কোথায় এমন হবে?’ যীশু তাদের বললেন, ‘য়েখানে শব, সেখানেই শকুন এসে জড়ো হবে৷’

18

1 নিরাশ না হয়ে তাদের য়ে সব সময় প্রার্থনা করা উচিত, তা বোঝাতে গিয়ে যীশু তাদের এই দৃষ্টান্তটি দিলেন,

2 তিনি বললেন, ‘কোন এক শহরে একজন বিচারক ছিলেন৷ তিনি ঈশ্বরকে ভয় করতেন না, আবার মানুষকে গ্রাহ্য় করতেন না৷

3 সেই শহরে একজন বিধবা ছিল৷ সে বার বার সেই বিচারকের কাছে এসে বলত, ‘আপনাকে দেখতে হবে য়েন আমার প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে আমি ন্যায় বিচার পাই!’

4 কিছু দিন ধরে সেই বিচারক তার কোন কথাই শুনতে চাইলেন না৷ কিন্তু এক সময় তিনি মনে মনে বললেন, ‘যদিও আমি ঈশ্বরকে ভয় করি না আর মানুষকে মানি না,

5 তবু এই বিধবা যখন আমায় এত বিরক্ত করছে তখন আমি দেখব সে য়েন ন্যায় বিচার পায়, তাহলে সে আর বার বার এসে আমাকে জ্বালাতন করবে না৷”

6 এরপর প্রভু বললেন, ‘লক্ষ্য কর! ঐ অধার্মিক বিচারকর্তা কি বলল৷

7 তাহলে ঈশ্বর কি তাঁর মনোনীত লোকেরা, যাঁরা দিন-রাত তাঁকে ডাকছে, তারা য়েন ন্যায় বিচার পায় তা দেখবেন না? তিনি কি তাদের সাহায্য করতে অযথা দেরী করবেন?

8 আমি তোমাদের বলছি, তিনি তাদের পক্ষে ন্যায় বিচার করবেনই আর তা তাড়াতাড়িই করবেন৷ যাইহোক, মানবপুত্র যখন আসবেন, তখন কি তিনি এই পৃথিবীতে বিশ্বাস দেখতে পাবেন?’

9 যাঁরা নিজেদেরকে ধার্মিক মনে করত আর অন্যকে তুচ্ছ করত, তাদের উদ্দেশ্যে তিনি এই দৃষ্টান্তটি দিলেন,

10 ‘দুজন লোক মন্দিরে প্রার্থনা করার জন্য গেল; তাদের মধ্যে একজন ফরীশী আর অন্য জন কর-আদায়কারী৷

11 ফরীশী দাঁড়িয়ে নিজের সম্বন্ধে এইভাবে প্রার্থনা করতে লাগল, ‘য়ে ঈশ্বর, আমি তোমায় ধন্যবাদ দিচ্ছি য়ে আমি অন্য সব লোকদের মতো নই; দস্য়ু, প্রতারক, ব্যভিচারী অথবা এই কর-আদায়কারীর মতো নই৷

12 আমি সপ্তাহে দ’ুদিন উপোস করি, আর আমার আয়ের দশ ভাগের একভাগ দান করি৷’

13 ‘কিন্তু সেই কর-আদায়কারী দাঁড়িয়ে স্বর্গের দিকে মুখ তুলে তাকাতেও সাহস করল না, বরং সে বুক চাপড়াতে চাপড়াতে বলল, ‘হে ঈশ্বর, আমি পাপী! আমার প্রতি দযা কর!’

14 আমি তোমাদের বলছি, এই কর-আদায়কারী ধার্মিক প্রতিপন্ন হয়ে বাড়ি চলে গেল কিন্তু ঐ ফরীশী নয়৷ য়ে কেউ নিজেকে বড় করে তাকে ছোট করা হবে; আর য়ে নিজেকে ছোট করে তাকে বড় করা হবে৷’

15 লোকেরা একসময় তাদের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের যীশুর কাছে নিয়ে এল য়েন তিনি তাদের স্পর্শ করে আশীর্বাদ করেন৷ এই দেখে শিষ্যরা তাদের খুব ধমক দিলেন৷

16 কিন্তু যীশু সেই ছেলেমেয়েদের তাঁর কাছে ডাকলেন, আর বললেন, ‘ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের আমার কাছে আসতে দাও, তাদের বারণ কোর না, কারণ এই শিশুদের মতো লোকদের জন্যই তো ঈশ্বরের রাজ্য৷

17 আমি তোমাদের সত্যি বলছি, যদি কেউ শিশুর মতো ঈশ্বরের রাজ্যকে গ্রহণ না করে তবে সে কোনমতে তার মধ্যে প্রবেশ করতে পারবে না!’

18 ইহুদীদের একজন দলনেতা তাঁকে জিজ্ঞেস করল, ‘হে সদগুরু, অনন্ত জীবন পেতে হলে আমাকে কি করতে হবে?’

19 যীশু তাঁকে বললেন, ‘তুমি আমায় সত্ বলছ, কেন? ঈশ্বর ছাড়া আর কেউ সত্ নয়৷

20 তুমি তো ঈশ্বরের সব আজ্ঞা জান, ব্যভিচার কোর না, নরহত্যা কোর না, চুরি কোর না, মিথ্যা সাক্ষী দিও না, তোমরা বাবা-মাকে সম্মান কোর৷”

21 সে বলল, ‘আমি ছোটবেলা থেকেই সে সব পালন করে আসছি৷’

22 একথা শুনে যীশু তাকে বললেন, ‘কিন্তু তোমার মধ্যে একটি বিষয়ের এখনও ত্রুটি আছে৷ তোমার যা কিছু আছে সে সব বিক্রি করে তা গরীবদের মধ্যে বিলিয়ে দাও, তাহলে স্বর্গে তোমার ধন-সম্পদ জমা হবে, তারপর আমায় অনুসরণ কর৷’

23 কিন্তু এই কথা শুনে তার খুবই দুঃখ হল, কারণ তার প্রচুর ধন-সম্পদ ছিল৷

24 যীশু তাকে দুঃখিত হতে দেখে বললেন, ‘যাদের ধন-সম্পদ আছে তাদের পক্ষে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করা কত কঠিন!

25 হ্যাঁ, একজন ধনীর পক্ষে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করা অপেক্ষা ছুঁচের মধ্য দিয়ে উটের পার হওযা সহজ৷’

26 য়ে সব লোক একথা শুনল তারা বলে উঠল, ‘তাহলে কে উদ্ধার পেতে পারে?’

27 যীশু বললেন, ‘মানুষের পক্ষে যা সন্ভব নয় ঈশ্বরের পক্ষে তা সন্ভব৷’

28 তখন পিতর বললেন, ‘দেখুন, আমরা তো সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে আপনার অনুসারী হয়েছি৷’

29 যীশু তখন তাদের বললেন, ‘আমি তোমাদের সত্যি বলছি যাঁরা ঈশ্বরের রাজ্যের জন্য ঘর-বাড়ি, স্ত্রী, ভাই-বোন, মা-বাবা কিংবা ছেলে-মেয়ে ত্যাগ করেছে,

30 তারা প্রত্যেকে এ জীবনেই সেই সব বহুগুণে ফিরে পাবে, এছাড়া আগামী যুগে লাভ করবে অনন্ত জীবন৷’

31 যীশু তাঁর বারোজন প্রেরিতকে একপাশে ডেকে নিয়ে গিয়ে বললেন, ‘শোন! আমরা জেরুশালেমে যাচ্ছি; আর ভাববাদীরা মানবপুত্রের বিষয়ে যা কিছু লিখে গেছেন, সে সবই পূর্ণ হবে৷

32 হ্যাঁ, অইহুদীদের হাতে তাঁকে তুলে দেওযা হবে, তারা তাঁকে উপহাস করবে, গালাগালি দেবে, তাঁর গায়ে থুতু ছেটাবে৷

33 তারা তাঁকে কশাঘাত করবে ও শেষ পর্যন্ত হত্যাই করবে; আর তৃতীয় দিনে মৃত্যুর মধ্য থেকে তিনি পুনরুত্থিত হবেন৷’

34 তিনি কি বলতে চাইছেন, প্রেরিতেরা কিন্তু তার কিছুই বুঝতে পারলেন না৷ তিনি য়ে কি বলছেন তা তাঁরা বুঝতে পারলেন না, কারণ এসব কথার অর্থ তাদের কাছে গোপন রাখা হয়েছিল৷

35 যীশু যখন যিরীহোর কাছাকাছি পৌঁছালেন, তখন সেখানে রাস্তার ধারে বসে একজন অন্ধ ভিক্ষা করছিল৷

36 অনেক লোকজন যাওযার আওযাজ শুনে সেই ভিখারী ব্যাপার কি তা জিজ্ঞাসা করল৷

37 লোকেরা তাঁকে বলল, ‘নাসরতীয় যীশু সেখান দিয়ে যাচ্ছেন৷’

38 তখন সে চিত্‌কার করে বলে উঠল, ‘হে দাযূদের বংশধর যীশু, আমাকে দযা করুন৷’

39 য়ে সব লোক সেই ভীড়ের সামনে ছিল তারা তাকে চুপ করতে বলল, কিন্তু সে আরও চিত্‌কার করে বলল, ‘হে দাযূদের বংশধর আমায় দযা করুন!’

40 যীশু থেমে গেলেন, তিনি সেই অন্ধকে তাঁর কাছে নিয়ে আসতে বললেন৷ সেই অন্ধ তাঁর কাছে এলে পর তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন,

41 ‘তুমি কি চাও? তোমার জন্য আমি কি করব?’ সে বলল, ‘প্রভু, আমি য়েন দেখতে পাই৷’

42 যীশু তাকে বললেন, ‘বেশ! তুমি চোখে দেখতে পাও, তোমার বিশ্বাসই তোমাকে সুস্থ করল৷’

43 সঙ্গে সঙ্গে সে দেখতে পেল আর ঈশ্বরের প্রশংসা করতে করতে যীশুর পেছনে পেছনে চলল৷ যাঁরা এই ঘটনা দেখল তারা ঈশ্বরের প্রশংসা করতে লাগল৷

19

1 যীশু যিরীহো শহরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন৷

2 সেখানে সক্কেয় নামে একজন লোক ছিল৷ সে ছিল একজন উচ্চ-পদস্থ কর আদায়কারী ও খুব ধনী ব্যক্তি৷

3 কে যীশু তা দেখার জন্য সক্কেয় খুবই চেষ্টা করছিল, কিন্তু বেঁটে হওযাতে ভীড়ের জন্য যীশুকে দেখতে পাচ্ছিল না৷

4 তাই সবার আগে ছুটে গিয়ে য়ে পথ ধরে যীশু আসছিলেন, সেই পথের পাশে একটা সুকমোর গাছে উঠল যাতে সেখান থেকে যীশুকে দেখতে পায়৷

5 যীশু সেখানে এসে ওপর দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘সক্কেয় তাড়াতাড়ি নেমে এস, কারণ আজ আমায় তোমার ঘরে থাকতে হবে৷’

6 সক্কেয় তাড়াতাড়ি নেমে এসে মহানন্দে যীশুকে তার বাড়িতে নিয়ে গিয়ে অভ্য়র্থনা জানাল৷

7 সেখানে যাঁরা ছিল, এই দেখে তারা সকলে অনুয়োগের সুরে বলল, ‘উনি একজন পাপীর ঘরে অতিথি হয়ে গেলেন৷’

8 কিন্তু সক্কেয় উঠে দাঁড়িয়ে প্রভুকে বলল, ‘প্রভু দেখুন, আমি আমার সম্পদের অর্ধেক গরীবদের মধ্যে বিলিয়ে দেব, আর যদি কাউকে ঠকিয়ে থাকি তবে তার চতুর্গুণ ফিরিয়ে দেব৷’

9 যীশু তাকে বললেন, ‘আজ এই বাড়িতে পরিত্রাণ এসেছে, য়েহেতু এই মানুষটি অব্রাহামের পুত্র৷

10 কারণ যা হারিয়ে গিয়েছিল তা খুঁজে বের করতে ও উদ্ধার করতেই মানবপুত্র এ জগতে এসেছেন৷’

11 যীশু জেরুশালেমের কাছাকাছি এগিয়ে গেলে লোকদের ধারণা হল য়ে তখনই বুঝি ঈশ্বরের রাজ্য এসে পড়ল৷ তাই তিনি তাদের কাছে এই দৃষ্টান্তটি দিলেন৷

12 যীশু বললেন, ‘একজন সম্ভ্রান্ত বংশের লোক রাজ পদ নিয়ে ফিরে আসার জন্য দূর দেশে যাত্রা করলেন৷

13 আবার আগে তিনি তাঁর দশজন কর্মচারীকে ডেকে প্রত্যেকের হাতে একটি করে মোট দশটি মোহর দিয়ে বললেন, ‘আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত এই দিয়ে ব্যবসা কোর৷’

14 কিন্তু তাঁর প্রজারা তাকে ঘৃণা করত; আর তিনি চলে যাওযার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় লোকেরা একজন প্রতিনিধির মাধ্যমে বলে পাঠাল, ‘আমরা চাই না য়ে এই লোক আমাদের রাজা হোক্!’

15 ‘কিন্তু সেই ব্যক্তি রাজপদ নিয়ে বাড়ি ফিরে এলেন; আর য়ে কর্মচারীদের তিনি টাকা দিয়েছিলেন তাদের সকলকে ডেকে পাঠালেন৷ তিনি দেখতে চাইলেন য়ে তারা কে কত লাভ করেছে৷

16 প্রথম জন এসে বলল, ‘প্রভু, আপনার এক মোহর খাটিয়ে দশ মোহর লাভ হয়েছে৷

17 তখন মনিব তাকে বললেন, ‘খুব ভাল করেছ, তুমি খুব ভাল কর্মচারী৷ তুমি অল্প বিষয়ে বিশ্বস্ত ছিলে তাই তোমাকে দশটি শহরের শাসক হিসেবে নিযোগ করা হবে৷’

18 এরপর দ্বিতীয় জন এসে বলল, ‘প্রভু আপনার এক মোহর খাটিয়ে পাঁচ মোহর লাভ হয়েছে৷’

19 তিনি তাকে বললেন, ‘তোমাকে পাঁচটি শহরের শাসনভার দেওযা হবে৷’

20 এরপর আর একজন এসে বলল, ‘প্রভু, এই নিন আপনার মোহর, এটা আমি রুমালে বেঁধে আলাদা করে রেখে দিয়েছিলাম৷

21 আপনার বিষয়ে আমার খুব ভয় ছিল, কারণ আপনি খুব কঠিন লোক৷ আপনি যা জমা করেন নি তাই নিয়ে থাকেন, আর যা বোনেন না তার ফসল কাটেন৷’

22 তখন তার প্রভু তাকে বললেন, ‘তোমার কথা অনুসারেই আমি তোমার বিচার করব, তুমি একজন দুষ্ট কর্মচারী৷ তুমি জানতে আমি একজন কঠিন লোক, আমি যা জমা করি না তাই পেতে চাই, যা বুনি না তাই কাটি৷

23 তবে তুমি আমার টাকা কেন মহাজনদের কাছে জমা রাখনি? তাহলে তো আমি টাকার সুদটাও অন্ততঃ পেতাম৷’

24 আর যাঁরা সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল তিনি তাদের বললেন, ‘এর কাছ থেকে ঐ মোহর নিয়ে নাও আর যার দশ মোহর আছে তাকে ওটা দাও৷’

25 তখন তারা তাকে বলল, ‘প্রভু, ওর তো দশটা মোহর আছে!’

26 প্রভু বললেন, ‘আমি তোমাদের বলছি, যার আছে তাকে আরো দেওযা হবে আর যার নেই, তার য়েটুকু আছে তাও কেড়ে নেওযা হবে৷

27 কিন্তু যাঁরা আমার শত্রু, যাঁরা চায় নি য়ে আমি তাদের ওপর রাজত্ব করি, তাদের এখানে নিয়ে এসে আমার সামনেই মেরে ফেল৷”

28 এইসব কথা বলার পর যীশু জেরুশালেমের দিকে এগিয়ে চললেন৷

29 তিনি জৈতুন পর্বতের কাছে বৈত্‌ফগী ও বৈথনিযা গ্রামের কাছাকাছি এলে তাঁর দুজন শিষ্যকে বললেন,

30 ‘তোমরা ঐ গ্রামে যাও৷ ঐ গ্রামে ঢোকার মুখেই একটা বাচ্চা গাধা বাঁধা আছে দেখবে, সেটার ওপর এর আগে কেউ কখনও বসেনি, সেটা খুলে এখানে নিয়ে এস৷

31 কেউ যদি তোমাদের জিজ্ঞেস করে, তোমরা ওটা খুলছ কেন? তোমরা বোল, ‘এটাকে প্রভুর দরকার আছে৷”

32 যাদের পাঠানো হয়েছিল তাঁরা গিয়ে যীশুর কথা মতোই সব কিছু দেখতে পেলেন৷

33 তাঁরা যখন সেই বাচ্চা গাধাটা খুলছিলেন তখন তার মালিক এসে তাঁদের জিজ্ঞেস করল, ‘আপনারা এটা খুলছেন কেন?’

34 তাঁরা বললেন, ‘এটাকে প্রভুর দরকার আছে৷’

35 এরপর তাঁরা গাধাটাকে যীশুর কাছে নিয়ে এসে তার ওপর তাঁদের চাদর বিছিয়ে দিলেন, আর তার পিঠে যীশুকে বসালেন৷

36 তিনি যখন যাচ্ছিলেন, তখন লোকেরা যাত্রা পথে নিজেদের জামা-চাদর বিছিয়ে দিচ্ছিল৷

37 তিনি জৈতুন পর্বতমালা থেকে নেমে যাবার রাস্তার মুখে এসে পৌঁছালেন৷ সেই সময় যাঁরা তাঁর পেছনে পেছনে আসছিল, তারা যীশু য়ে সব অলৌকিক কাজ করেছিলেন তা দেখতে পেয়েছিল বলে আনন্দের উচ্ছাসে ঈশ্বরের প্রশংসা করতে করতে বলল,

38 ‘ধন্য! সেই রাজা যিনি প্রভুর নামে আসছেন!’ গীতসংহিতা 118:26

39 সেই ভীড়ের মধ্য থেকে কয়েকজন ফরীশী যীশুকে বলল, ‘গুরু, আপনার অনুগামীদের ধমক্ দিন!’

40 যীশু বললেন, ‘আমি তোমাদের বলছি, ওরা যদি চুপ করে, তবে পাথরগুলো চেঁচিয়ে উঠবে৷’

41 তিনি জেরুশালেমের কাছাকাছি এসে শহরটি দেখে কেঁদে ফেললেন৷

42 তিনি বললেন, ‘হায় কিসে তোমার শাস্তি হবে তা যদি তুমি আজ বুঝতে পারতে! কিন্তু এখন তা তোমার দৃষ্টির অগোচরে রইল৷

43 সেই দিন আসছে, যখন তোমার শত্রুরা তোমার চারপাশে বেষ্টনী গড়ে তুলবে৷ তারা তোমায় ঘিরে ধরবে, আর চারপাশ থেকে চেপে ধরবে৷

44 তারা তোমাকে ও তোমার সন্তানদের ধ্বংস করবে৷ তোমার প্রাচীরের একটা পাথরের ওপর আর একটা পাথর থাকতে দেবে না, কারণ তোমার তত্ত্বাবধানের জন্য ঈশ্বর য়ে তোমার কাছে এলেন, এ তুমি বুঝলে না৷’

45 এরপর যীশু মন্দিরের মধ্যে ঢুকলেন আর সেখানে যাঁরা জিনিসপত্র বিক্রি করছিল তাদের সেখান থেকে তাড়িয়ে দিতে লাগলেন৷

46 তিনি তাদের বললেন, ‘শাস্ত্রে লেখা আছে, ‘আমার গৃহ হবে প্রার্থনার গৃহ৷’ কিন্তুতোমরা এটাকে ডাকাতদের আড্ডাখানায় পরিণত করেছ৷’

47 তখন থেকে প্রত্যেক দিন তিনি মন্দিরে শিক্ষা দিতে থাকলেন৷ প্রধান যাজকরা, ব্যবস্থার শিক্ষকরা ও ইহুদী নেতারা তাঁকে হত্যা করার উপায় খুঁজতে লাগল৷

48 কিন্তু তারা কোনভাবেই কোন পথ খুঁজে পেল না, কারণ সব লোকই খুব মন দিয়ে তাঁর কথাগুলি শুনত৷

20

1 একদিন যীশু যখন মন্দিরে লোকদের শিক্ষা দিচ্ছিলেন ঈশ্বরের সুসমাচার প্রচার করছিলেন, সেই সময় প্রধান যাজকেরা, ব্যবস্থার শিক্ষকেরা ও ইহুদী নেতারা একজোট হয়ে তাঁর কাছে এল৷

2 তারা তাঁকে প্রশ্ন করল, ‘কোন ক্ষমতায় তুমি এসব করছ তা আমাদের বল! কে তোমাকে এই অধিকার দিয়েছে?’

3 যীশু তাদের বললেন, ‘আমিও তোমাদের একটা প্রশ্ন করব৷

4 বলো তো য়োহন বাপ্তিস্ম দেবার অধিকার ঈশ্বরের কাছে থেকে পেয়েছিলেন না মানুষের কাছ থেকে?’

5 তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করল, ‘আমরা যদি বলি, ‘ঈশ্বরের কাছ থেকে,’ তাহলে ও বলবে তাহলে তোমরা তাঁকে বিশ্বাস করো নি কেন?’

6 কিন্তু আমরা যদি বলি, ‘মানুষের কাছ থেকে,’ তাহলে লোকেরা আমাদের পাথর ছুঁড়ে মারবে, কারণ তারা য়োহনকে একজন ভাববাদী বলেই বিশ্বাস করে৷’

7 তাই তারা বলল, ‘আমরা জানি না৷’

8 তখন যীশু তাদের বললেন, ‘তাহলে আমিও তোমাদের বলব না, কোন্ অধিকারে আমি এসব করছি৷’

9 যীশু এই দৃষ্টান্তটি লোকদের বললেন, ‘একজন লোক একটা দ্রাক্ষা ক্ষেত করে তা চাষীদের কাছে ইজারা দিয়ে বেশ কিছু দিনের জন্য বিদেশে গেল৷

10 ফলের সময় হলে সে তার একজন কর্মচারীকে সেই চাষীদের কাছে পাঠাল, য়েন তারা ক্ষেতের ফসলের কিছু ভাগ দেয়; কিন্তু চাষীরা সেই কর্মচারীকে মারধর করে খালি হাতে তাড়িয়ে দিল৷

11 এরপর সে তার আর একজন কর্মচারীকে পাঠাল; কিন্তু তারা তাকেও মারধর করল৷ সেই কর্মচারীর প্রতি তারা জঘন্য ব্যবহার করে তাকে শূন্য হাতে ফিরিয়ে দিল৷

12 পরে সে তার তৃতীয় কর্মচারীকে পাঠাল, চাষীরা তাকেও ক্ষতবিক্ষত করে বের করে দিল৷

13 তখন সেই দ্রাক্ষা ক্ষেতের মালিক বলল, ‘আমি এখন কি করব? আমি আমার প্রিয় পুত্রকে পাঠাব, হয়তো তারা তাকে মান্য করবে৷’

14 কিন্তু সেই চাষীরা সেই ছেলেকে দেখতে পেয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে বলল, ‘এই হচ্ছে সম্পত্তির উত্তরাধিকারী, এস একে আমরা খতম করি, তাহলে আমরাই হব এই সম্পত্তির মালিক৷’

15 এই বলে তারা তাকে দ্রাক্ষা ক্ষেতের বাইরে টেনে নিয়ে গিয়ে হত্যা করল৷ ‘এখন সেই ক্ষেতের মালিক তাদের প্রতি কি করবে?

16 সে এসে ঐ চাষীদের মেরে ফেলবে ও ক্ষেত অন্য চাষীদের হাতে দেবে৷’ এই কথা শুনে তারা সবাই বলল, ‘এরকম য়েন না হয়!’

17 কিন্তু যীশু তাদের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘তাহলে এই য়ে কথা শাস্ত্রে লেখা আছে এর অর্থ কি, ‘রাজমিস্ত্রিরা য়ে পাথরটা বাতিল করে দিল, সেটাই হয়ে উঠল কোণের প্রধান পাথর?’গীতসংহিতা 118:22

18 য়ে কেউ সেই পাথরের ওপর পড়বে, সে ভেঙ্গে টুকরো-টুকরো হয়ে যাবে, আর যার ওপর সেই পাথর পড়বে সে ভেঙ্গে গুঁড়ো হয়ে যাবে৷’

19 প্রধান যাজকেরা ও ব্যবস্থার শিক্ষকরা সেই সময় থেকেই তাঁকে গ্রেপ্তার করার জন্য উপায় খুঁজতে লাগল; কিন্তু তারা জনসাধারণকে ভয় পাচ্ছিল৷ তারা যীশুকে গ্রেপ্তার করতে চাইছিল কারণ তারা বুঝতে পেরেছিল য়ে যীশু তাদের বিরুদ্ধেই ঐ দৃষ্টান্তটি দিয়েছিলেন৷

20 তাই তারা তাঁর ওপর নজর রাখতে কয়েকজন লোককে গুপ্তচররূপে তাঁর কাছে পাঠাল, যাঁরা ভাল লোক সেজে তাঁর কাছে গেল য়েন যীশুর কথা ধরে তাঁকে রোমীয় রাজ্যপালের ক্ষমতা ও বিচারের অধীনে তুলে দিতে পারে৷

21 তাই তারা তাঁকে একটি কথা জিজ্ঞেস করল, ‘গুরু, আমরা জানি, য়ে যা ন্যায় আপনি সেই কথাই বলেন ও সেই শিক্ষাই দেন; আর আমরা এও জানি য়ে আপনি কারোর প্রতি পক্ষপাত করেন না, কিন্তু ঈশ্বরের পথের বিষয়ে সত্য শিক্ষাই দেন৷

22 আচ্ছা, কৈসরকে কর দেওযা কি আমাদের উচিত?’

23 যীশু তাদের চালাকি ধরে ফেলেছিলেন, তাই বললেন,

24 ‘আমার একটা রূপোর টাকা দেখছ৷ এতে কার মূর্ত্তি ও কার নাম আছে?’

25 তারা বলল, ‘কৈসরের!’ তখন তিনি তাদের বললেন, ‘তাহলে কৈসরের যা তা কৈসরকে দাও, আর ঈশ্বরের যা তা ঈশ্বরকে দাও৷’

26 সমস্ত লোকের সামনে যীশু যা বললেন, তাতে তারা তাঁর কোন ভুল ধরতে পারল না৷ তাঁর দেওযা উত্তরে তারা বিস্ময়ে হতবাক্ হয়ে গেল৷

27 তখন সদ্দূকী সম্প্রদায়ের কয়েকজন লোক যীশুর কাছে এল৷ এই সদ্দূকীরা বলত, মৃত্যুর পর পুনরুত্থান বলে কিছু নেই৷ তারা এসে যীশুকে প্রশ্ন করল,

28 ‘গুরু, মোশি আমাদের জন্য লিখে রেখে গেছেন য়ে নিঃসন্তান অবস্থায় যদি কোন লোক তার স্ত্রীকে রেখে মারা যায়, তবে তার ভাই সেই স্ত্রীকে বিয়ে করে ভাইয়ের হয়ে তার বংশ রক্ষা করবে৷

29 এরকম একজন যাঁরা সাত ভাই ছিল, তাদের প্রথম ভাই বিয়ে করার পর নিঃসন্তান অবস্থায় মারা গেল৷

30 দ্বিতীয় ভাই তখন সেই বিধবাকে বিয়ে করল৷

31 এরপর তৃতীয় ভাই, এইভাবে সাত ভাই-ই একজন স্ত্রীকে বিয়ে করল আর তারা সকলেই নিঃসন্তান অবস্থায় মারা গেল৷

32 পরে সেই স্ত্রীও মারা গেল৷

33 এখন পুনরুত্থানের সময়ে সে কার স্ত্রী হবে, কারণ সাত জনই তো তাকে বিয়ে করেছিল?’

34 তখন যীশু তাদের বললেন, ‘এই যুগের লোকেরাই বিয়ে করে আর তাদের বিয়ে দেওযা হয়৷

35 কিন্তু মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হয়ে আগামী যুগের য়োগ্য বলে যাদের গন্য করা হবে, তারা বিয়ে করবে না বা তাদের বিয়ে দেওযাও হবে না৷

36 তারা আর মরতে পারে না, কারণ তারা স্বর্গদূতদের মতো, মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হয়েছে বলে তারা ঈশ্বরের সন্তান৷

37 জ্বলন্ত ঝোপের বিষয়ে য়েখানে লেখা হয়েছে, সেখানে মোশিও দেখিয়েছেন য়ে মৃতেরা পুনরুত্থিত হয়৷ সেখানে মোশি প্রভু ঈশ্বরকে ‘অব্রাহামের ঈশ্বর, ইসহাকের ঈশ্বর, ও যাকোবের ঈশ্বর বলে উল্লেখ করেছেন৷’

38 ঈশ্বর মৃত লোকদের ঈশ্বর নন, তিনি জীবিত লোকদেরই ঈশ্বর৷ তারা সকলেই যাঁরা আগামী যুগের য়োগ্য লোক ঈশ্বরের চোখে জীবিত থাকে৷’

39 ব্যবস্থার শিক্ষকদের মধ্যে কয়েকজন বলল, ‘গুরু, আপনি ঠিকই বলেছেন!’

40 এরপর তাঁকে আর কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস কারো হল না৷

41 কিন্তু তিনি তাদের বললেন, ‘তারা কি করে বলে য়ে খ্রীষ্ট রাজা দাযূদের পুত্র?

42 কারণ গীতসংহিতায় দাযূদ নিজেই বলেছেন, ‘প্রভু আমার প্রভুকে বললেন,

43 যতদিন না আমি তোমার শত্রুদের তোমার পাদপীঠে পরিণত করি, তুমি আমার ডানদিকে বস৷’গীতসংহিতা 110:1

44 দাযূদ তো খ্রীষ্টকে এইভাবে ‘প্রভু’ বলে সম্বোধন করলেন, তাহলে খ্রীষ্ট কিভাবে তাঁর সন্তান হলেন?’

45 সমস্ত লোক যখন এসব কথা শুনছিল, তখন যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন,

46 ‘ব্যবস্থার শিক্ষকদের থেকে সাবধান৷ তারা লম্বা লম্বা পোশাক পরে ঘুরে বেড়াতেও হাটে বাজারে লোকদের কাছ থেকে সম্মান পেতে ভালবাসে; আর সমাজগৃহে বিশেষ সম্মানের স্থানে বসতে ও ভোজসভায় সম্মানের আসন দখল করতে ও ভালবাসে৷

47 তারা একদিকে লোক দেখানো লম্বা লম্বা প্রার্থনা করে, অপরদিকে বিধবাদের সর্বস্ব গ্রাস করে, এদের ভয়ঙ্কর শাস্তি হবে৷’

21

1 যীশু তাকিয়ে দেখলেন, ধনী লোকেরা মন্দিরের দানের বাক্সে তাদের দান রাখছে৷

2 এরই মাঝে একজন অতি গরীব বিধবা তাতে খুব ছোট্ট ছোট্ট তামার মুদ্রা রাখল৷

3 তখন যীশু বললেন, ‘আমি তোমাদের সত্যি বলছি, এই গরীব বিধবা অন্য আর সকলের থেকে অনেক বেশী দান করল৷

4 আমি একথা বলছি কারণ অন্য আর সব লোক তাদের সম্পত্তির বাড়তি অংশ ঐ বাক্সে ফেলে গেল, কিন্তু এই বিধবার অভাব থাকা সত্ত্বেও জীবন ধারণের জন্য তার যা সম্বল ছিল, তাই দিয়ে গেল৷’

5 শিষ্যদের মধ্যে কেউ কেউ সেই মন্দিরের বিষয়ে এই মন্তব্য করলেন য়ে, ‘সুন্দর সুন্দর পাথর দিয়ে ও ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দানের জিনিস দিয়ে এই মন্দিরকে কেমন সাজানো হয়েছে!’

6 যীশু তাঁদের বললেন, ‘এই য়ে সব জিনিস তোমরা দেখছ, সময় আসবে যখন এর একটা পাথর আর একটার ওপর থাকবে না, সব ভেঙ্গে ফেলা হবে৷’

7 শিষ্যরা তখন যীশুকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘গুরু এসব কখন ঘটবে? আর কি চিহ্ন দেখে বোঝা যাবে এসব ঘটবার সময় এসে গেছে?’

8 যীশু বললেন, ‘সাবধান! কেউ য়েন তোমাদের না ভুলায়, কারণ অনেকেই আমার নাম ধারণ করে আসবে আর বলবে, ‘আমিই তিনি’ আর তারা বলবে, ‘সময় ঘনিয়ে এসেছে৷’ তাদের অনুসারী হযো না!

9 তোমরা যখন যুদ্ধ ও বিদ্রোহের কথা শুনতে পাবে, তাতে ভয় পেও না, কারণ প্রথমে নিশ্চয়ই এসব হবে; কিন্তু তখনও শেষ সময় আসতে বাকি!’

10 এরপর তিনি তাদের বললেন, ‘এক জাতি আর এক জাতির বিরুদ্ধে, এক রাজ্য আর এক রাজ্যের বিরুদ্ধে উঠবে৷

11 ‘মহা ভূমিকম্প হবে, বিভিন্ন জায়গায় দুর্ভিক্ষ ও মহামারী দেখা দেবে; আর আকাশের বুকে ভযাবহ ঘটনা ও মহত্ চিহ্ন দেখতে পাবে৷

12 ‘কিন্তু এসব ঘটনা ঘটার আগে, তারা তোমাদের গ্রেপ্তার করবে, তোমাদের প্রতি নির্য়াতন করবে৷ তারা বিচারের জন্য তোমাদের সমাজ-গৃহে সঁপে দেবে ও তোমাদের কারাগারে ভরবে৷ আমারই কারণে তারা তোমাদের রাজাদের ও রাজ্যপালদের সামনে টেনে নিয়ে যাবে৷

13 তাতে আমার বিষয়ে সাক্ষ্য দেবার জন্য তোমরা সুয়োগ পাবে৷

14 তোমরা মনের দিক থেকে তৈরী থেকো; আত্মপক্ষ সমর্থন করতে তখন কি বলবে, কি জবাবদিহি করবে তার জন্য চিন্তা কোর না৷

15 কারণ সেই সময় আমি তোমাদের বুদ্ধি দেব, তোমাদের মুখে এমন কথা জোগাব য়ে তোমাদের বিপক্ষরা তা অস্বীকার করতে পারবে না আবার তার প্রতিরোধও করতে পারবে না৷

16 কিন্তু তোমাদের আপন বাবা-মা ভাইও আত্মীয় বন্ধুরাই তোমাদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করে তোমাদের ধরিয়ে দেবে; এমন কি তোমাদের কাউকে কাউকে মেরেও ফেলবে৷

17 আমারই কারণে তোমরা সকলের কাছে ঘৃণার পাত্র হবে৷

18 কিন্তু তোমাদের মাথায় একটা চুলও নষ্ট হবে না৷

19 তোমরা যদি বিশ্বাসে স্থির থাক, তবেই তোমাদের প্রাণ রক্ষা পাবে৷

20 ‘তোমরা যখন দেখবে য়ে সৈন্যসামন্তরা জেরুশালেমকে চারপাশ থেকে ঘিরে ধরেছে, তখন বুঝবে য়ে তার ধ্বংসের সময় ঘনিয়ে এসেছে৷

21 তখন যাঁরা যিহূদিযায় থাকবে তারা য়েন পালিয়ে যায়৷ যাঁরা জেরুশালেমে থাকবে তারা য়েন অবশ্যই নগর ছেড়ে পালায়; আর যাঁরা গ্রামে থাকবে তারা য়েন নগরে না আসে৷

22 কারণ এই দিনগুলো হচ্ছে শান্তির দিন, যা শাস্ত্রের বাণী অনুসারে পূর্ণ হবে৷

23 ঐ দিনগুলোতে যাদের প্রসবকাল ঘনিয়ে এসেছে ও যাদের কোলে দুধের বাচ্চা আছে, সেই সব স্ত্রীলোকদের ভয়ঙ্কর দুর্দশা হবে৷ আমি একথা বলছি কারণ দেশে মহাসংকট আসছে ও এই লোকদের ওপর ঈশ্বরের ক্রোধ নেমে আসছে৷

24 তরবারির আঘাতে তারা মারা পড়বে, আর তাদের বন্দী করে সকল জাতির কাছে নিয়ে যাওযা হবে৷ যতদিন না অইহুদীদের নিরুপিত সময় পূর্ণ হচ্ছে, জেরুশালেম অইহুদীদের দ্বারা অবজ্ঞা ভরে পদদলিত হবে৷

25 ‘তখন চাঁদে, সূর্য়ে ও তারাগুলিতে অনেক বিস্ময়কর জিনিস দেখা যাবে৷ পৃথিবীতে সমস্ত জাতি হতাশায় ভুগবে৷ তারা সমুদ্র গর্জন ও প্রচণ্ডঢেউ দেখে বিহ্বল হয়ে পড়বে৷

26 পৃথিবীতে য়ে ভয়ঙ্কর অবস্থা আসছে তার কথা ভেবে ভয়েতে লোকে অজ্ঞান হয়ে যাবে, কারণ আকাশের সব শক্তিগুলি ওলোট-পালট হয়ে যাবে৷

27 এর পরই তারা মহাপরাক্রমে ও মহিমামণ্ডিত হয়ে মানবপুত্রকে মেঘে করে আসতে দেখবে৷

28 এসব ঘটনা ঘটতে দেখলে মাথা তুলে উঠে দাঁড়িও, কারণ জেনো য়ে তখন তোমাদের মুক্তি আসছে!’

29 এরপর যীশু তাদের একটি দৃষ্টান্ত দিলেন, ‘ডুমুর গাছ ও অন্যান্য গাছের দিকে দেখ৷

30 য়ে মুহূর্তে তাদের নতুন পাতা বের হয়, তা দেখে তোমরা বুঝতে পার য়ে গ্রীষ্মকাল এসে পড়ল বলে৷

31 ঠিক সেই রকম এই সব ঘটতে দেখলে তোমরা বুঝবে য়ে ঈশ্বরের রাজ্য এসে পড়েছে৷

32 ‘আমি তোমাদের সত্যি বলছি, যতক্ষণ না এসব ঘটছে, এই বংশ লোপ পাবে না৷

33 আকাশ ও পৃথিবীর লোপ পাবে, কিন্তু আমার বাক্য কখনও লোপ পাবে না৷

34 ‘তোমরা সতর্ক থেকো৷ উচ্ছৃঙ্খল আমোদ-প্রমোদে, মত্ততায়, জাগতিক ভাবনা চিন্তায় তোমাদের মন য়েন আচ্ছন্ন না হয়ে পড়ে, আর সেই দিন হঠাত্ ফাঁদের মতো তোমাদের ওপর এসে না পড়ে৷

35 বাস্তবিক, পৃথিবীর সব লোকের জন্যই সেই দিন আসবে৷

36 তাই সব সময় সজাগ থেকো, আর প্রার্থনা করো য়েন যাই ঘটুক না কেন তা কাটিয়ে উঠবার ও মানবপুত্রের সামনে দাঁড়াবার শক্তি তোমাদের থাকে৷’

37 তিনি মন্দিরের মধ্যে প্রতিদিন শিক্ষা দিতেন কিন্তু সন্ধ্যা হলে রাতে থাকার জন্য জৈতুন পর্বতে চলে য়েতেন৷

38 প্রতিদিন খুব ভোরে উঠে লোকেরা তাঁর কথা শোনার জন্য মন্দিরে য়েত৷

22

1 সেই সময় খামিরবিহীন রুটির পর্ব এগিয়ে এলে, এই পর্বকে নিস্তারপর্ব বলা হত৷

2 এদিকে প্রধান যাজকরা ও ব্যবস্থার শিক্ষকরা যীশুকে হত্যা করার উপায় খুঁজতে লাগল, কারণ তারা লোকদের ভয় করত৷

3 এই সময় যিহূদা, য়ে ছিল বারো জন প্রেরিতের মধ্যে একজন, যাকে যিহূদা ঈষ্ক রিযোতীয় বলা হত তার অন্তরে শয়তান ঢুকল৷

4 যিহূদা কেমন করে যীশুকে ধরিয়ে দেবে সে বিষয়ে পরামর্শ করতে প্রধান যাজকদের ও মন্দিরের রক্ষীবাহিনীর পদস্থ কর্মচারীদের কাছে গেল৷

5 তারা যিহূদার কথা শুনে খুবই খুশী হয়ে তাকে এর জন্য টাকা দিতে রাজী হল৷

6 যিহূদাও সম্মত হয়ে যখন লোকের ভীড় থাকবে না সেই সময় যীশুকে ধরিয়ে দেবার সুয়োগ খুঁজতে লাগল৷

7 এরপর খামিরবিহীন রুটির দিন এল, য়ে দিনে নিস্তারপর্বের মেষ বলি দিতে হত৷

8 তাই যীশু পিতর ও য়োহনকে বললেন, ‘যাও, আমাদের জন্য নিস্তারপর্বের ভোজ প্রস্তুত কর, য়েন আমরা তা গিয়ে খেতে পারি৷’

9 তাঁরা যীশুকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনি কোথায় চান, আমরা কোথায় তা প্রস্তুত করব?’

10 যীশু তাঁদের বললেন, ‘শোন! তোমরা শহরে ঢোকার মুখেই দেখতে পাবে একজন লোক এক কলসী জল নিয়ে যাচ্ছে৷ তার পেছনে পেছনে গিয়ে সে য়ে বাড়িতে ঢুকবে,

11 সেই বাড়ির মালিককে বলবে, ‘গুরু, বলেছেন, আপনার সেই অতিথিঘর কোনটা, য়েখানে আমি আমার শিষ্যদের সঙ্গে নিস্তারপর্বের ভোজ খেতে পারি৷’

12 তখন সেই লোকটি তোমাদের ওপর তলার একটি বড় সাজানো ঘর দেখিয়ে দেবে৷ তোমরা সেখানেই আযোজন কোর৷’

13 যীশু য়েমন বলেছিলেন, তাঁরা গিয়ে সেরকমই দেখতে পেলেন আর নিস্তারপর্বের ভোজ প্রস্তুত করলেন৷

14 তারপর সময় হলে যীশু তাঁর প্রেরিতদের সঙ্গে গিয়ে নিস্তারপর্বের ভোজ খেতে এলেন৷

15 তিনি তাঁদের বললেন, ‘আমার কষ্টভোগের আগে তোমাদের সঙ্গে এই নিস্তারপর্বের ভোজ খেতে আমি খুবই ইচ্ছা করেছি৷

16 কারণ আমি তোমাদের বলছি, যতদিন না ঈশ্বরের রাজ্যে এর প্রকৃত উদ্দেশ্য পূর্ণ হয় ততদিন পর্যন্ত আমি এই ভোজ আর খাবো না৷’

17 এরপর তিনি দ্রাক্ষারসের পেযালা হাতে নিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিয়ে বললেন, ‘এই নাও, নিজেদের মধ্যে এটা ভাগ করে নাও৷

18 কারণ আমি তোমাদের বলছি, ঈশ্বরের রাজ্য না আসা পর্যন্ত আমি আর দ্রাক্ষারস পান করব না৷’

19 এরপর তিনি রুটি নিয়ে ধন্যবাদ দিয়ে তা খণ্ডখণ্ডকরলেন, আর তা প্রেরিতদের দিয়ে বললেন, ‘এ আমার শরীর, যা তোমাদের জন্য দেওযা হল৷ আমার স্মরনার্থে তোমরা এটা কোর৷’

20 খাবার পর সেইভাবে দ্রাক্ষারসের পেযালা নিয়ে বললেন, ‘আমার রক্তের মাধ্যমে মানুষের জন্য ঈশ্বরের দেওযা য়ে নতুন নিয়ম শুরু হল, এই পানপাত্রটি তারই চিহ্ন; এই রক্ত তোমাদের সকলের জন্য পাতিত হল৷’

21 ‘কিন্তু দেখ! য়ে আমাকে ধরিয়ে দেবে তার হাত আমার সঙ্গে এই টেবিলের ওপরেই আছে৷

22 কারণ য়েমন নির্ধারিত হয়েছে সেই অনুসারেই মানবপুত্রকে মরতে হবে, কিন্তু ধিক্ সেই লোককে য়ে তাঁকে ধরিয়ে দেবে৷’

23 তাঁরা নিজেদের মধ্যে তখন একে অপরকে জিজ্ঞেস করতে লাগলেন, ‘আমাদের মধ্যে কে এমন লোক হতে পারে, য়ে এই কাজ করবে?’

24 সেই সময় তাঁদের মধ্যে কাকে সব থেকে বড় বলা হবে, এই নিয়ে তর্ক শুরু হল৷

25 কিন্তু যীশু তাদের বললেন, ‘অইহুদীদের মধ্যেই রাজারা তাদের প্রজাদের ওপরে কর্তৃত্ত্ব করে, আর যাঁরা তাদের শাসন করে থাকে তাদেরই আবার ‘উপকারক’ বলা হয়৷

26 কিন্তু তোমাদের মধ্যে এমনটি হওযা উচিত নয়৷ তোমাদের মধ্যে য়ে সব থেকে বড় সে হোক সবার চেয়ে ছোটর মতো আর য়ে নেতা সে হোক দাসের মতো৷

27 কে প্রধান, য়ে খেতে আসে, না য়ে পরিবেশন করে? য়ে খেতে আসে, সেই নয় কি? কিন্তু আমি তোমাদের মধ্যে দাসের মতো আছি৷

28 আমার পরীক্ষার সময় তোমরাই তো আমার পাশে দাঁড়িয়েছ৷

29 তাই আমার পিতা য়েমন আমার রাজত্ব করার ক্ষমতা দিয়েছেন, তেমনি আমিও তোমাদের সেই ক্ষমতা দান করছি৷

30 য়েন আমার রাজ্যে তোমরা আমার সঙ্গে পান আহার করতে পার, আর তোমরা সিংহাসনে বসে ইস্রায়েলের বারো বংশের বিচার করবে৷

31 ‘শিমোন, শিমোন, শয়তান গমের মতো চেলে বের করবার জন্য, তোমাদের সকলকে চেয়েছে৷

32 কিন্তু শিমোন আমি তোমার জন্য প্রার্থনা করছি, য়েন তোমার বিশ্বাসে ভাঙ্গন না ধরে; আর তুমি যখন আবার পথে ফিরে আসবে তখন তোমার ভাইদের বিশ্বাসে শক্তিশালী করে তুলো৷’

33 কিন্তু পিতর বললেন, ‘প্রভু, আমি আপনার সঙ্গে কারাগারে য়েতে এমনকি মরতেও প্রস্তুত৷’

34 যীশু বললেন, ‘পিতর আমি তোমায় বলছি, আজ রাতে মোরগ ডাকার আগেই তুমি তিনবার অস্বীকার করে বলবে য়ে তুমি আমায় চেন না৷’

35 এরপর যীশু তাঁর প্রেরিতদের বললেন, ‘আমি যখন টাকার থলি, ঝুলি ও জুতো ছাড়াই তোমাদের প্রচারে পাঠিয়েছিলাম তখন কি তোমাদের কোন কিছুর অভাব হয়েছিল?’ তাঁরা বললেন, ‘না, কিছুতেই অভাব হয় নি৷’

36 যীশু তাঁদের বললেন, ‘কিন্তু এখন বলছি, যার টাকার থলি বা ঝুলি আছে সে তা নিয়ে যাক; আর যার কাছে তলোযার নেই সে তার পোশাক বিক্রি করে একটা তলোযার কিনুক৷

37 কারণ আমি তোমাদের বলছি: ‘তিনি রোগীদের একজন বলে গন্য হবেন৷’যিশাইয় 53:12 শাস্ত্রের এই য়ে কথা তা অবশ্যই আমাতে পূর্ণ হবে: হ্যাঁ, আমার বিষয়ে এই য়ে কথা লেখা আছে তা পূর্ণ হতে চলেছে৷’

38 তাঁরা বললেন, ‘প্রভু, দেখুন দুটি তলোযার আছে!’ তিনি তাঁদের বললেন, ‘থাক, এই যথেষ্ট৷’

39

40

41 পরে তিনি শিষ্যদের থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে হাঁটু গেড়ে প্রার্থনা করতে লাগলেন৷

42 তিনি বললেন, পিতা যদি তোমার ইচ্ছা হয় তবে এই পানপাত্র আমার কাছ থেকে সরিয়ে নাও৷ হ্যাঁ, তবুও আমার ইচ্ছা নয়, তোমার ইচ্ছাই পূর্ণ হোক্!’

43 এরপর স্বর্গ থেকে একজন স্বর্গদূত এসে তাঁকে শক্তি জোগালেন৷

44 নিদারুণ মানসিক যন্ত্রণার সঙ্গে যীশু আরও আকুলভাবে প্রার্থনা করতে লাগলেন৷ সেই সময় তাঁর গা দিয়ে রক্তের বড় বড় ফোঁটার মতো ঘাম ঝরে পড়ছিল৷

45 প্রার্থনা থেকে উঠে তিনি শিষ্যদের কাছে এসে দেখলেন, মনের দুঃখে অবসন্ন হয়ে তারা সকলে ঘুমিয়ে পড়েছেন৷

46 তিনি তাঁদের বললেন, ‘তোমরা ঘুমাচ্ছ কেন? ওঠ, প্রার্থনা কর য়েন প্রলোভনে না পড়৷’

47 তিনি তখনও কথা বলছেন, সেই সময় যিহূদার নেতৃত্বে একদল লোক সেখানে এসে হাজির হল৷ যিহূদা চুমু দিয়ে অভিবাদন করার জন্য যীশুর দিকে এগিয়ে গেল৷

48 যীশু তাকে বললেন, ‘যিহূদা তুমি কি চুমু দিয়ে মানবপুত্রকে ধরিয়ে দেবে?’

49 যীশুর চারপাশে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা তখন বুঝতে পারলেন কি ঘটতে চলেছে৷ তাঁরা বললেন, ‘প্রভু, আমরা কি তলোযার নিয়ে ওদের আক্রমণ করব?’

50 তাঁদের মধ্যে একজন মহাযাজকের চাকরের ডান কান কেটে ফেললেন৷

51 এই দেখে যীশু বললেন, ‘থামো! খুব হয়েছে৷’ আর তিনি সেই চাকরের কান স্পর্শ করে তাকে সুস্থ করলেন৷

52 এরপর যীশু, যাঁরা তাঁকে ধরতে এসেছিল, সেই প্রধান যাজক, মন্দির রক্ষী বাহিনীর পদস্থ কর্মচারীদের ও ইহুদী সমাজপতিদের উদ্দেশ্যে বললেন, ‘ডাকাত ধরতে লোকে য়েমন বের হয় তোমরাও কি সেরকম ছোরা ও লাঠি নিয়ে আমাকে ধরতে এসেছ?

53 প্রত্যেক দিনই তো আমি তোমাদের হাতে মন্দিরেই ছিলাম, তখন তো তোমরা আমায় স্পর্শ কর নি, কিন্তু এই তোমাদের সময়, অন্ধকারের রাজত্বের এই তো সময়৷’

54 তারা তাঁকে গ্রেপ্তার করে মহাযাজকের বাড়িতে নিয়ে চলল৷ পিতর কিন্তু দূরত্ব বজায় রেখে তাদের পেছনে পেছনে চললেন৷

55 মহাযাজকের বাড়ির উঠোনের মাঝখানে লোকেরা আগুন জে্বলে তার চারপাশে বসল, পিতরও তাদের সঙ্গে বসলেন৷

56 একজন চাকরাণী দেখল য়ে পিতর সেই আগুনের ধারে বসেছেন৷ সে পিতরকে খুব ভালভাবে দেখে নিয়ে বলল, ‘আরে, এই লোকটাও তো ওর সঙ্গী ছিল!’

57 কিন্তু পিতর অস্বীকার করে বললেন, ‘এই মেয়ে, আমি ওঁকে চিনি না৷’

58 এর কিছুক্ষণ পরে আর একজন পিতরকে দেখে বলল, ‘আরে, তুমিও তো ওদেরই দলের একজন!’ কিন্তু পিতর বললেন, ‘না, মশায়, আমি নই৷’

59 এর প্রায় একঘন্টা পরে আর একজন বেশ জোর দিয়ে বলল, ‘নিঃসন্দেহে এ লোকটা ওরই সঙ্গী ছিল, কারণ এ তো একজন গালীলীয়!’

60 কিন্তু পিতর বললেন, ‘মশায়, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না, আপনি কি বলছেন৷’ পিতরের কথা শেষ না হতেই একটা মোরগ ডেকে উঠল৷

61 তখন প্রভু মুখ ফিরিয়ে পিতরের দিকে তাকালেন, আর প্রভুর কথা পিতরের মনে পড়ে গেল, প্রভু বলেছিলেন, ‘আজ রাতে মোরগ ডাকার আগে, তুমি আমাকে তিনবার অস্বীকার করবে৷’

62 তখন তিনি বাইরে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন৷

63

64

65 তাঁকে অপমান করার জন্য তারা অনেক কথা বলল৷

66 দিন শুরু হলে প্রবীন নেতারা, প্রধান যাজকেরা, ব্যবস্থার শিক্ষকরা সকলে মিলে সভা ডাকল আর সেই সভায় তারা যীশুকে হাজির করল৷

67 তারা বলল, ‘তুমি যদি খ্রীষ্ট হও, তবে আমাদের বল!’ যীশু তাদের বললেন, ‘আমি যদি বলি, তোমরা আমার কথায় বিশ্বাস করবে না:

68 আর আমি যদি তোমাদের কিছু জিজ্ঞেস করি, তোমরা তার জবাব দেবে না৷

69 কিন্তু মানবপুত্র এখন থেকে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের ডানদিকে বসে থাকলেন৷’

70 তখন তারা সকলে বলল, ‘তাহলে তুমি ঈশ্বরের পুত্র?’ তিনি জবাব দিলেন, ‘তোমরা ঠিকই বলেছ য়ে আমি সেই৷’

71 তারা বলল, ‘আমাদের আর অন্য সাক্ষ্যের কি দরকার? আমরা তো ওর নিজের মুখের কথাই শুনলাম৷’

23

1 এরপর তারা সকলে উঠে প্রভু যীশুকে নিয়ে পীলাতের কাছে গেল৷

2 আর তারা তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলল, ‘আমরা দেখেছি, লোকটা আমাদের জাতিকে বিপথে নিয়ে যাচ্ছে৷ এ কৈসরকে কর দিতে বারণ করে আর বলে, সে নিজেই খ্রীষ্ট, একজন রাজা৷’

3 তখন পীলাত যীশুকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কি ইহুদীদের রাজা?’ যীশু তাঁকে বললেন, ‘তুমি নিজেই সে কথা বললে৷’

4 এরপর পীলাত প্রধান যাজক ও লোকদের উদ্দেশ্যে বললেন, ‘এই লোকের বিরুদ্ধে কোন দোষই আমি খুঁজে পাচ্ছি না৷’

5 কিন্তু তারা জেদ ধরে বলতে লাগল, ‘এই লোকটি যিহূদার সমস্ত জায়গায় শিক্ষা দিয়ে লোকদের ক্ষেপিয়ে তুলছে৷ গালীল থেকে শুরু করে এখন সে এখানে এসেছে৷’

6 এই কথা শুনে পীলাত জানতে চাইলেন যীশু গালীলের লোক কিনা?

7 তিনি যখন জানতে পারলেন য়ে হেরোদের শাসনাধীনে য়ে অঞ্চল আছে যীশু সেখানকার লোক, তখন তিনি যীশুকে হেরোদের কাছে পাঠিয়ে দিলেন, কারণ হেরোদ তখন জেরুশালেমেই ছিলেন৷

8 রাজা হেরোদ যীশুকে দেখে খুবই খুশী হলেন, কারণ তিনি অনেকদিন থেকেই তাঁকে দেখতে চাইছিলেন৷ তাঁর বিষয়ে হেরোদ অনেক কথাই শুনেছিলেন এবং আশা করেছিলেন য়ে যীশু কোন অলৌকিক কাজ করে তাঁকে দেখাবেন৷

9 তিনি যীশুকে অনেক প্রশ্ন করলেন; কিন্তু যীশু তাকে কোন উত্তরই দিলেন না৷

10 প্রধান যাজকেরা ও ব্যবস্থার শিক্ষকরা সেখানে দাঁড়িয়ে প্রবলভাবে যীশুর বিরুদ্ধে দোষারোপ করতে লাগল৷

11 হেরোদ তার সৈন্যদের নিয়ে যীশুকে নানাভাবে অপমান ও উপহাস করলেন৷ পরে একটা সুন্দর আলখাল্লা পরিয়ে তাঁকে আবার পীলাতের কাছে পাঠিয়ে দিলেন৷

12 এর আগে পীলাত ও হেরোদ পরস্পর শত্রু ছিলেন; কিন্তু ঐ দিন তাঁরা পরস্পর আবার বন্ধু হয়ে গেলেন৷

13 পীলাত প্রধান যাজকদের ও ইহুদী নেতাদের ডেকে বললেন,

14 ‘তোমরা আমার কাছে এই লোকটিকে নিয়ে এসে বলছ য়ে এ লোকদের বিপথে চালিত করছে৷ তোমাদের সামনেই আমি ভালভাবে একে জেরা করে দেখলাম; আর তোমরা এর বিরুদ্ধে য়ে অভিযোগ করছ তার কোন প্রমাণই পেলাম না, সে নির্দোষ৷

15 এমন কি রাজা হেরোদও পান নি, তাই তিনি একে আবার আমাদের কাছে ফেরত পাঠিয়েছেন৷ আর দেখ, মৃত্যুদণ্ডে র য়োগ্য কোন কাজই এ করে নি৷

16 তাই একে আমি আচ্ছা করে চাবুক মেরে ছেড়ে দেব৷’

17

18 কিন্তু তারা সকলে এক সঙ্গে চিত্‌কার করে বলে উঠল, ‘এই লোকটাকে দূর কর! আমাদের জন্য বারাব্বাকে ছেড়ে দাও!’

19 শহরের মধ্যে গণ্ডগোল বানানো ও হত্যার অপরাধে বারাব্বাকে কারাবন্দী করা হয়েছিল৷

20 পীলাত যীশুকে ছেড়ে দিতে চাইলেন, তাই তিনি আবার লোকদের বোঝাতে চেষ্টা করলেন৷

21 কিন্তু তারা চিত্‌কার করেই চলল, ‘ওকে ক্রুশে দাও, ক্রুশে দাও৷’

22 পীলাত তৃতীয় বার তাদের বললেন, ‘কেন? এই লোক কি অপরাধ করেছে? মৃত্যুদণ্ডদেবার মতো কোন দোষই তো এর আমি দেখছি না, তাই একে আমি চাবুক মেরে ছেড়ে দেব৷’

23 কিন্তু তারা প্রচণ্ডচিত্‌কার করেই চলল, তাঁকে য়েন ক্রুশে দেওযা হয়, এই দাবিতে তারা অনড় থাকল৷ আর শেষ পর্যন্ত তাদের চিত্‌কারেরই জয় হল৷

24 পীলাত তাদের অনুরোধ রক্ষা করবেন বলে ঠিক করলেন৷

25 যাকে বিদ্রোহ ও খুনের অপরাধে কারাগারে রাখা হয়েছিল তাকেই তিনি মুক্তি দিলেন, আর যীশুকে তাদের হাতে তুলে দিলেন য়েন তাকে নিয়ে তারা যা চায় তা করতে পারে৷

26 তারা যখন যীশুকে নিয়ে যাচ্ছিল তখন কুরীশীর শহরের শিমোন নামে একজন লোককে সৈন্যরা ধরল, সে তখন মাঠ থেকে আসছিল৷ তারা সেই ক্রুশটা তার ঘাড়ে চাপিয়ে যীশুর পেছনে পেছনে সেটা বয়ে নিয়ে য়েতে তাকে বাধ্য করল৷

27 এক বিরাট জনতা তার পেছনে পেছনে যাচ্ছিল, তাদের মধ্যে কিছু স্ত্রীলোকও ছিল যাঁরা যীশুর জন্য কান্নাকাটি ও হা-হুতাশ করতে করতে যাচ্ছিল৷

28 যীশু তাদের দিকে ফিরে বললেন, ‘হে জেরুশালেমের মেয়েরা, তোমরা আমার জন্য কেঁদো না, বরং নিজেদের জন্য ও তোমাদের সন্তানদের জন্য কাঁদ৷

29 কারণ এমন দিন আসছে যখন লোকে বলবে, ‘বন্ধ্যা স্ত্রীলোকেরাই ধন্য! আর ধন্য সেই সব গর্ভ যা কখনও সন্তান প্রসব করে নি, ধন্য সেই সব স্তন যা কখনও শিশুদেব পান করায় নি৷’

30 সেই সময় লোকে পর্বতকে বলবে, ‘আমাদের ওপরে পড়!’ তারা ছোট ছোট পাহাড়কে বলবে, ‘আমাদের চাপা দাও!’

31 কারণ গাছ সবুজ থাকতেই যদি লোকে এরকম করে, তবে গাছ যখন শুকিয়ে যাবে তখন কি করবে?’

32 দুজন অপরাধীকে তাঁর সঙ্গে মৃত্যুদণ্ডদেওযার জন্য নিয়ে যাওযা হচ্ছিল৷

33 তারা ‘মাথার খুলি’ নামে একটা জায়গায় এসে পৌঁছাল, সেখানে ঐ দুজন অপরাধীর সঙ্গে তারা যীশুকে ক্রুশে বিদ্ধ করল৷ তারা একজনকে তাঁর বাঁদিকে, আর অন্যজনকে তাঁর ডানদিকে ক্রুশে টাঙিয়ে দিল৷

34 তখন যীশু বললেন, ‘পিতা, এদের ক্ষমা কর, কারণ এরা য়ে কি করছে তা জানে না৷’ তারা পাশার ঘুঁটি চেলে গুলিবাঁট করে নিজেদের মাঝে তাঁর পোশাকগুলি ভাগ করে নিল৷

35 লোকেরা সেখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এই দৃশ্য দেখছিল, ইহুদী নেতারা ব্যঙ্গ করে তাঁকে বলতে লাগল, ‘ওতো অন্যদের বাঁচাতো ও যদি ঈশ্বরের মনোনীত সেই খ্রীষ্ট হয় তবে এখন নিজেকে বাঁচাক দেখি!’

36 সৈন্যরা তাঁর কাছে এগিয়ে এসে তাঁকে উপহাস করতে লাগল৷ তারা পান করার সিরকা এগিয়ে দিয়ে যীশুকে বলল,

37 ‘তুই যদি ইহুদীদের রাজা, তবে নিজেকে বাঁচা দেখি!’

38 তারা একটা ফলকে ‘এ ইহুদীদের রাজা’ লিখে যীশুর ক্রুশের ওপর তা লটকে দিল৷

39 তাঁর দুপাশে যাঁরা ক্রুশের ওপর ঝুলছিল, তাদের মধ্যে একজন তাঁকে বিদ্রূপ করে বলল, ‘তুমি না খ্রীষ্ট? আমাদেরকে ও নিজেকে বাঁচাও দেখি!’

40 কিন্তু অন্য জন তাকে ধমক দিয়ে বলল, ‘তুমি কি ঈশ্বরকে ভয় কর না? তুমি তো একই রকম শাস্তি পাচ্ছ৷

41 আমরা য়ে শাস্তি পাচ্ছি তা ন্যায়, কারণ আমরা যা করেছি তার য়োগ্য শাস্তিই পাচ্ছি; কিন্তু ইনি তো কোন অন্যায় করেন নি৷’

42 এরপর সে বলল, ‘যীশু আপনি যখন আপনার রাজ্যে আসবেন তখন আমার কথা মনে রাখবেন৷’

43 যীশু তাকে বললেন, ‘আমি তোমায় সত্যি বলছি, তুমি আজকেই আমার সঙ্গে পরমদেশে উপস্থিত হবে৷’

44 তখন বেলা প্রায় বারোটা; আর সেই সময় থেকে তিনটা পর্যন্ত সমস্ত দেশ অন্ধকারে ছেয়ে গেল৷

45 সেই সময় সূর্যের আলো দেখা গেল না; আর মন্দিরের মধ্যে ভারী পর্দাটা মাঝখানে থেকে চিরে দুভাগ হয়ে গেল৷

46 যীশু চিত্‌কার করে বললেন, ‘পিতা আমি তোমার হাতে আমার আত্মাকে সঁপে দিচ্ছি৷’ এই কথা বলে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ফেললেন৷

47 সেখানে উপস্থিত শতপতি এইসব ঘটনা দেখে ঈশ্বরের প্রশংসা করে বলে উঠলেন, ‘ইনি সত্যিই নির্দোষ ছিলেন!’

48 য়ে লোকেরা সেখানে জড়ো হয়েছিল, তারা এইসব ঘটনা দেখে বুক চাপড়াতে চাপড়াতে সেখান থেকে চলে গেল৷

49 কিন্তু যাঁরা যীশুর খুবই পরিচিত ছিলেন, তাঁরা শেষ পর্যন্ত কি ঘটে দেখার জন্য দূরে দাঁড়িয়ে রইলেন৷ য়ে সব স্ত্রীলোক গালীল থেকে যীশুর সঙ্গে এসেছিলেন, তাঁরাও এদের মধ্যে ছিলেন৷

50

51

52 য়োষেফ পীলাতের কাছে গিয়ে যীশুর মৃতদেহটি চাইলেন৷

53 পরে যীশুর দেহটি ক্রুশের ওপর থেকে নামিয়ে নিয়ে একটি মসলিন কাপড়ে তা জড়ালেন৷ এরপর পাহাড়ের গা কেটে গর্ত করা একটি সমাধিগুহার মধ্যে দেহটি শুইয়ে রাখলেন৷ এই সমাধি সম্পূর্ণ নতুন ছিল, এর আগে কাউকে কখনও এখনে কবর দেওযা হয় নি৷

54 সেই দিনটা ছিল বিশ্রামবারের আযোজনের দিন, আর বিশ্রামবার প্রায় শুরু হয়ে গিয়েছিল৷

55 য়ে স্ত্রীলোকেরা যীশুর সঙ্গে সঙ্গে গালীল থেকে এসেছিলেন, তাঁরা য়োষেফের সঙ্গে গেলেন, আর সেই সমাধিটি ও তার মধ্যে কিভাবে যীশুর দেহ শাযিত রাখা হল তা দেখলেন৷

56 এরপর তাঁরা বাড়ি ফিরে গিয়ে বিশেষ এক ধরণের সুগন্ধি তেল ও মশলা তৈরী করলেন৷ বিশ্রামবারে তাঁরা বিধি-ব্যবস্থা অনুসারে কাজকর্ম বন্ধ রাখলেন৷

24

1 সপ্তাহের প্রথম দিন, সেই স্ত্রীলোকেরা খুব ভোরে ঐ সমাধিস্থলে এলেন৷ তাঁরা য়ে গন্ধদ্রব্য ও মশলা তৈরী করেছিলেন তা সঙ্গে আনলেন৷

2 তাঁরা দেখলেন সমাধিগুহার মুখ থেকে পাথরখানা একপাশে গড়িয়ে দেওযা আছে;

3 কিন্তু ভেতরে ঢুকে সেখানে প্রভু যীশুর দেহ দেখতে পেলেন না৷

4 তাঁরা যখন অবাক বিস্ময়ে সেই কথা ভাবছেন, সেই সময় উজ্জ্বল পোশাক পরে দুজন ব্যক্তি হঠাত্ এসে তাঁদের পাশে দাঁড়ালেন৷

5 ভয়ে তাঁরা মুখ নীচু করে নতজানু হয়ে রইলেন৷ ঐ দুজন তাঁদের বললেন, ‘যিনি জীবিত, তোমরা তাঁকে মৃতদের মাঝে খুঁজছ কেন?

6 তিনি এখানে নেই, তিনি পুনরুত্থিত হয়েছন৷ তিনি যখন গালীলে ছিলেন তখন তোমাদের কি বলেছিলেন মনে করে দেখ৷

7 তিনি বলেছিলেন, মানবপুত্রকে অবশ্যই পাপী মানুষদের হাতে ধরিয়ে দেওযা হবে, তাঁকে ক্রুশবিদ্ধ হতে হবে; আর তিন দিনের দিন তিনি আবার মৃত্যুর মধ্য থেকে জীবিত হয়ে উঠবেন৷’

8 তখন যীশুর সব কথা তাঁদের মনে পড়ে গেল৷

9 তারপর তাঁরা সমাধিগুহা থেকে ফিরে এসে সেই এগারো জন প্রেরিতকে ও তাঁর অনুগামীদের এই ঘটনার কথা জানালেন৷

10 এই স্ত্রীলোকেরা হলেন মরিয়ম মগ্দলীনী, য়োহানা আর যাকোবের মা মরিয়ম৷ তাঁদের সঙ্গে আরো কয়েকজন এই সব ঘটনা প্রেরিতদের জানালেন৷

11 কিন্তু প্রেরিতদের কাছে সে সব প্রলাপ বলে মনে হল, তাঁরা সেই স্ত্রীলোকদের কথা বিশ্বাস করলেন না৷

12 কিন্তুপিতর উঠে দৌড়ে সমাধিগুহার কাছে গেলেন৷ তিনি নীচু হয়ে ঝুঁকে পড়ে দেখলেন, কেবল যীশুর দেহে জড়ানো কাপড়গুলো সেখানে পড়ে আছে; আর যা ঘটেছে তাতে আশ্চর্য হয়ে ঘরে ফিরে গেলেন৷

13 ঐ দিনই দ’ুজন অনুগামী জেরুশালেম থেকে সাত মাইল দূরে ইম্মাযু নামে একটি গ্রামে যাচ্ছিলেন৷

14 এই য়ে সব ঘটনাগুলি ঘটে গেল, য়েতে য়েতে তাঁরা সে বিষয়েই পরস্পর আলোচনা করছিলেন৷

15 তাঁরা যখন এইসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করছেন, এমন সময় যীশু নিজে এসে তাঁদের সঙ্গে সঙ্গে চলতে লাগলেন৷

16 ঘটনাটি এমনভাবেই ঘটল যাতে তাঁরা যীশুকে চিনতে না পারেন৷

17 যীশু তাঁদের বললেন, ‘তোমরা য়েতে য়েতে পরস্পর কি নিয়ে আলোচনা করছ?’ তাঁরা থমকে দাঁড়ালেন, তাঁদের খুবই বিপন্ন দেখাচ্ছিল৷

18 তাঁদের মধ্যে ক্লিয়পা নামে একজন তাঁকে বললেন, ‘জেরুশালেমের অধিবাসীদের মধ্যে আমাদের মনে হয় আপনিই একমাত্র লোক, যিনি জানেন না গত কদিনে সেখানে কি কাণ্ডটাই না ঘটে গেছে৷’

19 যীশু তাঁদের বললেন, ‘কি ঘটেছে, তোমরা কিসের কথা বলছ?’ তাঁরা যীশুকে বললেন, ‘নাসরতীয় যীশুর বিষয়ে বলছি৷ তিনি ছিলেন এমন একজন মানুষ, যিনি তাঁর কথা ও কাজের শক্তিতে ঈশ্বর ও সমস্ত মানুষের চোখে নিজেকে এক মহান ভাববাদীরূপে প্রমাণ করেছেন৷

20 কিন্তু আমাদের প্রধান যাজকরা ও নেতারা তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেবার জন্য ধরিয়ে দিল, তারা তাঁকে ক্রুশবিদ্ধ করে মারল৷

21 আমরা আশা করেছিলাম য়ে তিনিই সেই যিনি ইস্রায়েলকে মুক্ত করবেন৷ কেবল তাই নয়, আজ তিন দিন হল এসব ঘটে গেছে৷

22 আবার আমাদের মধ্যে কয়েকজন স্ত্রীলোক আমাদের অবাক করে দিলেন৷ তাঁরা আজ খুব ভোরে সমাধির কাছে গিয়েছিলেন;

23 কিন্তু সেখানে তাঁরা যীশুর দেহ দেখতে পান নি৷ সেখান থেকে ফিরে এসে তাঁরা আমাদের বললেন য়ে তাঁরা স্বর্গদূতদের দর্শন পেয়েছেন, আর সেই স্বর্গদূতেরা তাঁদের বলেছেন য়ে যীশু জীবিত৷

24 এরপর আমাদের সঙ্গে যাঁরা ছিলেন তাদের মধ্যে কয়েকজন সেই সমাধির কাছে গিয়েছিলেন; আর তাঁরা দেখলেন স্ত্রীলোকেরা যা বলেছেন তা সত্য৷ কিন্তু তাঁরা যীশুকে সেখানে দেখতে পান নি৷’

25 তখন যীশু তাঁদের বললেন, ‘তোমরা সত্যি কিছু বোঝ না, তোমাদের মন বড়ই অসাড়, তাই ভাববাদীরা যা কিছু বলে গেছেন তোমরা তা বিশ্বাস করতে পার না৷

26 খ্রীষ্টের মহিমায় প্রবেশ লাভের পূর্বে কি তাঁর এইসব কষ্টভোগ করার একান্ত প্রযোজন ছিল না?’

27 আর তিনি মোশির পুস্তক থেকে শুরু করে ভাববাদীদের পুস্তকে তাঁর বিষয়ে যা যা লেখা আছে, শাস্ত্রের সে সব কথা তাঁদের বুঝিয়ে দিলেন৷

28 তাঁরা য়ে গ্রামে যাচ্ছিলেন তার কাছাকাছি এলে পর যীশু আরো দূরে যাবার ভাব দেখালেন৷

29 তখন তাঁরা যীশুকে খুব অনুরোধ করে বললেন, ‘দেখুন, বেলা পড়ে গেছে, এখন সন্ধ্যা হয়ে এল, আপনি আমাদের এখানে থেকে যান৷’ তাই তিনি তাঁদের সঙ্গে থাকবার জন্য ভেতরে গেলেন৷

30 তিনি যখন তাঁদের সঙ্গে খেতে বসলেন, তখন রুটি নিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন৷ পরে সেই রুটি টুকরো টুকরো করে তাঁদের দিলেন৷

31 সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের চোখ খুলে গেল, তাঁরা যীশুকে চিনতে পারলেন, আর তিনি সেখান থেকে অদৃশ্য হয়ে গেলেন৷

32 তখন তাঁরা পরস্পর বলাবলি করলেন, ‘তিনি যখন রাস্তায় আমাদের সঙ্গে কথা বলছিলেন ও শাস্ত্র থেকে আমাদের বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন, তখন আমাদের অন্তর কি আবেগে উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠে নি?’

33 তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে উঠে জেরুশালেমে গেলেন৷ সেখানে তাঁরা সেই এগারোজন প্রেরিত ও তাদের সঙ্গে আরো অনেককে দেখতে পেলেন৷

34 প্রেরিত ও অন্যান্য যাঁরা সেখানে ছিলেন তাঁরা বললেন, ‘প্রভু, সত্যি জীবিত হয়ে উঠেছেন৷ তিনি শিমোনকে দেখা দিয়েছেন৷’

35 তখন সেই দুজন অনুগামীও রাস্তায় যা ঘটেছিল তা তাঁদের কাছে ব্যক্ত করলেন৷ আর যীশু যখন রুটি টুকরো টুকরো করছিলেন তখন কিভাবে তাঁরা তাঁকে চিনতে পারলেন তাও জানালেন৷

36 তাঁরা যখন এসব কথা তাদের বলছেন, এমন সময় যীশু তাঁদের মাঝে এসে দাঁড়ালেন আর বললেন, ‘তোমাদের শান্তি হোক্!’

37 কিন্তু তাঁরা ভয়ে চমকে উঠলেন৷ তাঁরা মনে করলেন বোধ হয় কোন ভূত দেখছেন৷

38 কিন্তু যীশু তাঁদের বললেন, ‘তোমরা এত অস্থির হচ্ছ কেন? আর তোমাদের মনে সন্দেহই বা জাগছে কেন?

39 আমার হাত ও পা দেখ, আমার স্পর্শ করে দেখ, আত্মার এইরূপ হাড় মাংস থাকে না, কিন্তু তোমরা দেখতে পাচ্ছ আমার আছে৷’

40 এই কথা বলে তিনি তাঁদের হাত ও পা দেখালেন৷

41 তাঁদের এতই আনন্দ হয়েছিল ও য়ে তাঁরা বিশ্বাস করতে পারছিলেন না৷ তাঁরা বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে গিয়েছিলেন৷ যীশু তাঁদের বললেন, ‘তোমাদের কাছে কিছু খাবার আছে কি?

42 তাঁরা তাঁকে এক টুকরো ভাজা মাছ দিলেন৷

43 তিনি সেটি নিয়ে তাঁদের সামনে গেলেন৷

44 তিনি তাঁদের বললেন, ‘আমি যখন তোমাদের সঙ্গে ছিলাম, তখনই তোমাদের এসব কথা বলেছিলাম, আমার সম্বন্ধে মোশির বিধি-ব্যবস্থায়, ভাববাদীদের পুস্তকে ও গীতসংহিতায় যা কিছু লেখা হয়েছে তা পূর্ণ হতেই হবে৷’

45 এরপর তিনি তাঁদের বুদ্ধি খুলে দিলেন, য়েন তাঁরা শাস্ত্রের কথা বুঝতে পারেন৷

46 যীশু তাঁদের বললেন, ‘একথা লেখা আছে খ্রীষ্টকে অবশ্যই কষ্ট ভোগ করতে হবে, আর তিনি মৃত্যুর তিন দিনের দিন মৃতদের মধ্য থেকে জীবিত হয়ে উঠবেন৷’

47

48

49 আমার পিতা যা দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা আমি তোমাদের কাছে পাঠিয়ে দেব; কিন্তু তোমরা য়ে পর্যন্ত না উর্দ্ধ থেকে আসা শক্তি পরিধান করছ, সেই পর্যন্ত এই শহরেই থাক৷

50 এরপর যীশু তাঁদের বৈথনিযা পর্যন্ত নিয়ে গেলেন এবং হাত তুলে তাদের আশীর্বাদ করলেন৷

51 তিনি আশীর্বাদ করতে করতে তাঁদের ছেড়ে আকাশে উঠে য়েতে লাগলেন আর স্বর্গে উন্নীত হলেন৷

52 শিষ্যরা যীশুকে প্রণাম জানিয়ে মহানন্দের সঙ্গে জেরুশালেমে ফিরে গেলেন৷

53 আর সর্বক্ষণ মন্দিরে উপস্থিত থেকে ঈশ্বরের প্রশংসা করতে লাগলেন৷